সমালোচনা যে কেউ করতে পারে। বিশ্লেষক, ক্রেতা কিংবা শুধুই একজন দর্শক, যে হয়তো খুব ভালো করে আপনাকে জানেই না- কোনো কিছু না ভেবেই সমালোচনা করে ফেলতে পারেন। ব্যাপারটি শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়, হতে পারে কোনো কাজ বা পণ্যের ব্যাপারেও। অধিকাংশ মানুষ তার মতামত জানাতে ভালোবাসে। সমালোচনাও চলে আসে সেখান থেকেই। সমালোচনাকে নেতিবাচক কিছু হিসেবে দেখার অবশ্য কিছুই নেই। আপনি যদি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরো ব্যাপারটিকে নিয়ে নেন, তাহলে সমালোচনার অনেক ভালো দিক আপনি খুঁজে পাবেন। চলুন না, আজ সমালোচনাকে নিয়েই খানিকটা ইতিবাচক আলোচনা করে নেওয়া যাক!
সমালোচনা কেন ভালো?
সমালোচনা কেন ভালো, তার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। কী সেগুলো? দেখে নিন এক নজরে-
সমালোচনা মানুষকে আপনার কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে
একজন মানুষ আপনাকে নিয়ে, আপনার কাজ নিয়ে সমালোচনা করছেন, তার অর্থ তিনি তার মতামত আপনাকে জানাচ্ছেন। আপনি যখন কোনো একটি পণ্য বিক্রি করছেন এবং সেটা নিয়ে ক্রেতারা সমালোচনা করছে- আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে, আপনার কোন দিকগুলোতে কমতি আছে। যে তথ্য টাকা খরচ করে অন্যদের জানতে হচ্ছে, আপনি সেটা বিনা খরচায় পেয়ে যাচ্ছেন। আপনার চারপাশের মানুষ, সাধারণ ক্রেতা কী চায় তা মানুষ নিজেরাই আপনাকে জানাচ্ছে। বেশ ভালো ব্যাপার, তাই না?
সমালোচনা কোনোকিছুকে উন্নত করে
মনে করুন, আপনি একজন লেখক। আপনি চার দেয়ালের মধ্যে বসে লিখেই যাচ্ছেন। কেউ কখনো আপনার লেখা পড়লো কি না, পড়ে তাদের কেমন লাগলো- সেসব কিছুই আপনি শুনলেন না। তাহলে বুঝবেন কীভাবে যে, আপনার কাজ ভালো হচ্ছে, নাকি না? সমালোচনা আপনাকে জানতে সাহায্য করে যে, আপনার ঠিক কোন দিকটা দুর্বল। আপনাকে ভাবতে বাধ্য করে কমতি নিয়ে। মানুষ ও মানুষের কাজ সমালোচনার মাধ্যমে আরো শক্তিশালী হতে পারে।
অন্যদের চাইতে এগিয়ে রাখে আপনাকে
ভাবুন তো, যদি আপনাকে একজন ক্রেতা নিজের সমালোচনাটুকু জানান এবং এটাও জানিয়ে দেন যে, ঠিক কোন ব্যাপারটি আরেকটু ভালো করলে আপনার পণ্য একেবারে ঠিকঠাক হবে, তাহলে আপনি বাজারে বাকিদের চাইতে শুরু থেকেই এগিয়ে থাকবেন। কারণ, আপনি জানেন যে, ঠিক কোন দিকটি পরিবর্তন করলেই সেটা ক্রেতাদের কাছে বেশি পছন্দসই হবে।
সমালোচনা গ্রহণ করার পদ্ধতি
মানুষ সমালোচনা করবেই। উপরে বর্ণিত সুবিধাগুলো আপনি কারো সমালোচনা থেকে তখনই নিতে পারবেন যখন আপনি সমালোচনাকে গ্রহণ করার পদ্ধতি আয়ত্ব করবেন। ঠিক পড়েছেন! সমালোচনাকে গ্রহণ করারও রাস্তা রয়েছে। সমালোচনা থেকে আপনি তখনই ভালো কিছু পাবেন, যখন সেটাকে আপনি ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে জানবেন। সমালোচনা থেকে ইতিবাচক কিছু পেতে-
১। ভাষার দিকে নজর দিন
আপনার সমালোচক হয়তো একটু কড়াভাবেই সমালোচনা করছে। তবে সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে নিজের উত্তরগুলোকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে নিন। আপনি যদি সমালোচনা শুনে রেগে যান বা রুঢ় কথা বলেন, সেক্ষেত্রে আপনার সমালোচকও রেগে যাবেন। সমালোচনার কোনো ভালো ফল আসবে না। তাই নিজের ভাষাকে আলোচনার দিকে নিয়ে যান। কেউ সমালোচনা করলে সেই সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নিন, সমালোচনাকারীকে ধন্যবাদ জানান এবং তার সাথে আলোচনার মাধ্যমে বের করার চেষ্টা করুন যে, ঠিক কীভাবে আপনার পণ্যটিকে আরো উন্নত করে তোলা যায়।
২। সমালোচনাকে ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না
কেউ আপনার কাজ পছন্দ করেনি বলা মানে এই নয় যে, আপনার কাজ আসলেই অনেক খারাপ মানের হয়ে গেল। সমালোচনাকারীর প্রতি আক্রমণাত্মক না হয়ে সহনশীল হয়ে উঠুন। সবার কাজ সবাই ভালোবাসবে না। সবাইকে আপনি সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। তাই, যদি আপনি জানেন যে, আপনার কাজ ভালো হয়েছে এবং তারপরেও কেউ আপনাকে সমালোচনা করে, তাহলে শান্ত হয়ে শুনুন। ভাবুন এবং আরো ভালো করার চেষ্টা করুন। সমালোচনাকে ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে পেশাদারিত্বের সাথে নেওয়াও কঠিন ব্যাপার। তবে আপনি চেষ্টা করলে নিশ্চয় পারবেন!
৩) মানুষের কাছে সমালোচনা চেয়ে নিন
অনেকে সমালোচনা পেতে পছন্দ করে না। কিন্তু সমালোচনা না থাকলে আপনি আরো ভালো কিছু করবেন কীভাবে? তাই, আপনার ক্রেতাদের কাছ থেকে সমালোচনা চেয়ে নিন। সেটা আসবে মতামত হিসেবে। কিন্তু সেখান থেকেই আপনি আপনার নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন। এই যেমন- অনেক রেস্তোরাঁয় গেলেই দেখবেন খাওয়ার পর শুধু মুখে জিজ্ঞেস করে না, লিখিতভাবেও মতামত চেয়ে নেয়। কারণ, মানুষ হয়তো সামনে কিছু না বলতেই পারে। বিশেষ করে যদি সমালোচনার মতো কিছু হয়। তবে লিখিতভাবে নিশ্চয় সে সমালোচনাটুকু লিখবে। তাই, কেউ সমালোচনা না করলে, সমালোচনা চেয়ে নিন। এতে লাভটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনারই থাকবে।
৪) বিস্তারিতভাবে জানার ইচ্ছা পোষন করুন
যদি কোনোভাবে আপনার মনে হয় যে, আপনি ক্রেতার সমালোচনাটি বুঝতে পারেননি, তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করুন আবার। বিস্তারিতভাবে সমালোচককে ব্যাপারটি বোঝানোর সুযোগ দিন।
প্রশংসার চাইতে সমালোচনা কেন ভালো?
প্রশংসা পছন্দ করেন সবাই। আপনার কাজ ভালো হয়েছে- এই কথাটি শুনলে যে কারো মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। তবে অনেক সময় প্রশংসার চাইতে সমালোচনা অধিকতর ভালো হয়ে থাকে। কীভাবে? চলুন, দেখে নেওয়া যাক।
অতিরিক্ত প্রশংসা ভালো কিছু করার ইচ্ছাকে কমিয়ে আনে
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ভালো। প্রচুর পানি পান করাও শরীরের জন্য ভালো। তবে আপনি যদি অনেক বেশি পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার বা পানি বারবার পান করতে থাকেন, তাহলে সেটি আপনার শরীর খারাপ হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করবে। খুব ভালো আর মুখরোচক কোনো খাবার সামনে এনে দিলেও তখন আর সেটা খেতে পারবেন না আপনি। ঠিক তেমনি, প্রশংসা ভালো হলেও সেটা অনেক বেশি পেয়ে গেলে কাজের প্রতি অনাগ্রহ ও অবহেলা তৈরি হয়। মানুষ তখন আর ভালো কিছু করার জন্য তার যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা আর জিইয়ে রাখতে পারে না।
সমালোচনা ‘স্বাস্থ্যকর’ও হতে পারে
আপনি প্রশংসা পাচ্ছেন, তার মানে কিন্তু এই নয় যে, সেটি আপনাকে ভালো কিছু জানাচ্ছে। সমালোচনার মাধ্যমে আপনি কিছু তথ্য জানতে পারবেন। আর যদি সেটা স্বাস্থ্যকর সমালোচনা হয় তাহলে তো কথাই নেই! আপনার কাজের খারাপ কোনো দিক থাকলে, সমস্যার কোনো সমাধান থাকলে- এই সবকিছু আপনি সেই সমালোচনার মাধ্যমে খুঁজে পাবেন। কিন্তু প্রশংসা শুধু আপনাকে খুশি দেবে। হয়তো একটা সময় বিরক্তিরও কারণ হয়ে যাবে সেটা। অন্যদিকে, সমালোচনা আপনার কাজের গতি বারাবে, মান বাড়াবে। সাথে, বাড়াবে আরো ভালো কিছু পাওয়ার ক্ষুধাও।
কখনো যদি আপনার মনে হয়েও থাকে যে, সমালোচনা খুব একটা ভালো ব্যাপার নয়, তাহলে ব্যাপারটি একেবারেই ভুল। সমালোচনাকে ভয় পাচ্ছেন? তাহলে আপনি মানসিকভাবে এখনও দুর্বল। আর এর ফলে হয়তো পরবর্তীতে নেতিবাচকভাবে ভুগতে হবে আপনাকেই। তাই দ্রুত নিজেকে সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত করে দিন। সমালোচনাকে ভয় নয়, উপভোগ করুন!