Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গর্ভাবস্থায় চাই স্বাস্থ্যসম্মত স্ন্যাকস

গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই গর্ভবতী মায়েদের শরীরে ভিটামিন এ, সি, ডি, ফলিক এসিড, আয়রন, ক্যালসিয়ায়ম ও সব পুষ্টিগুণের চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ হওয়া প্রয়োজন। আর নানা রকম পুষ্টির চাহিদা শরীরে পূরণ হওয়ার একটি উপায় হলো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া। তাই মূল খাবারের মাঝের সময়ে যখন খিদে পায়, তখন স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়া দরকার। এই স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসগুলোর মধ্যে থাকতে পারে ফলমূল, বাদাম ও শস্য জাতীয় খাবার ইত্যাদি। আর যথাসম্ভব ফাস্ট ফুড খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। আর গর্ভাবস্থায় মূল খাবারের মাঝে মাঝে দিনে কয়েকবার স্ন্যাকস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ একবারে পেট ভরে অতিরিক্ত না খেয়ে অল্প পরিমাণে কয়েকবার খাওয়া ভালো।

টক দই

দুগ্ধ জাতীয় যেকোনো খাবার গর্ভবতী মায়েদের জন্য বেশ উপকারি। কারণ এসব খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা গর্ভে থাকা শিশুর কঙ্কাল কাঠামো বিকাশে সাহায্য করে। এছাড়াও টক দইতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ভিটামিন বি। আর এটি হজমে সাহায্য করে এবং গর্ভাবস্থায় ইস্ট ইনফেকশন বা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। একে আরও স্বাস্থ্যসম্মত করে তুলতে লো-ফ্যাট টক দইয়ের সাথে বাদাম, ফল ও উচ্চ মাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ সিরিয়াল দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়। টক দই অন্য যেকোনো দুগ্ধজাত খাবার থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এতে থাকে প্রোবায়োটিকস্‌ নামের ব্যাকটেরিয়া, যা হজমে সাহায্য করে। অনেকেরই ল্যাকটোজেন অ্যালার্জির সমস্যা থাকে। অর্থাৎ দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার হজম বা সহ্য করতে পারে না। তারা নির্দ্বিধায় টক দই খেতে পারেন। কারণ এতে করে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। তবে প্রোবায়োটিকস্‌ সমৃদ্ধ টক দই হলে তা অধিক কার্যকরী হয়।

টক দই থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে থাকে; Image Source: www.today.com

ড্রাই ফ্রুটস

ড্রাই ফ্রুটস বা শুষ্ক ফলমূলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ক্যালরি ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেল। শুষ্ক ফলমূলে তাজা ফলের মতোই পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। তাই ড্রাই ফ্রুটস খেলে ভিটামিন, মিনারেল, ফোলেট, আয়রন ও পটাসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। আলু বোখরা, খেজুর, কিসমিস জাতীয় শুকনো ফলগুলো তাই গর্ভবতী মায়ের জন্য খাওয়া ভালো।

সালাদ

হালকা ড্রেসিং দেয়া সালাদ গর্ভবতী মায়েদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে। সেই সালাদে বাঁধাকপি, লেটুস পাতা, টুনা মাছ, মটরশুঁটি, বিট, টমেটো, শশা, ক্যাপসিকাম, ভাপানো ব্রকলি, পালং শাক, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, তিল, তিসি, ছোলা সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর উপাদান দেয়া যেতে পারে।

সালাদ গর্ভবতী মায়েদের জন্য স্বাস্থ্যকর; Image Source: YouTube

গাজর

পুষ্টিতে ভরপুর এই সবজিটি কাঁচাই খাওয়া যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় স্ন্যাকস হিসেবে এই গাজর বেশ কার্যকরী ফল দেয়। স্বাস্থ্যসম্মত এই সবজিটি স্ট্রেস কমাতে এবং বিষণ্ণতা বা অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় গাজর খাওয়া ঠিক নয়। গর্ভাবস্থায় আপনার জন্য যথাযথ পরিমাণ কী তা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিন।

বাদাম

কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং পলিফেনল, আখরোটে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা গর্ভে থাকা বাচ্চার চোখ এবং মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে, হিজলি বাদামে (ক্যাশুনাট) রয়েছে ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়ামের মতো মিনারেল। তাই গর্ভাবস্থায় এগুলো স্ন্যাকস হিসেবে খেলে গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা শিশু দুজনের জন্যই অনেক উপকারি হবে। তবে যথাযথ পরিমাণটি অবশ্যই চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিবেন।

সিদ্ধ ডিম

অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ হয়। ডিমের সাদা অংশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। আর হলুদ অংশ অর্থাৎ কুসুমে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব পুষ্টি উপাদান, যেমন- কোলিন। এই কোলিন ভ্রূণের মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্র এবং সার্বিকভাবে পুরো শরীর বিকাশে সাহায্য করে। একটি ডিমে প্রায় ১১৩ মিলিগ্রাম কোলিন থাকে যা একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের পরামর্শ অনুযায়ী কোলিনের চাহিদার ২৫ শতাংশ পূরণ করে। আর ফোলেট গর্ভে থাকা শিশুর যেকোনো ধরনের সমস্যার সমাধান করে। বিকেলবেলা বা মূল খাবারের মাঝে যখনই খিদে লাগে, তখনই আপনি একটি ডিম সিদ্ধ করে খেয়ে নিতে পারেন। একটি বড় ডিমে ৭৭ ক্যালরি, উচ্চ মাত্রার প্রোটিন এবং ফ্যাট থাকে। এছাড়াও এতে থাকে ভিটামিন ও মিনারেল।

একটি ডিম সিদ্ধ করে খেয়ে নিতে পারেন; Image Source: Anova Recipes – Anova Culinary

অর্ধেকটা কলা

অন্যান্য ফলের চাইতে কলাতে প্রাকৃতিকভাবে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। আর এ কারণে এতে ক্যালরির পরিমাণও কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু তাই বলে যে গর্ভাবস্থায় কলা না খেয়ে থাকতে হবে তা কিন্তু নয়! কলা থেকে আপনি পেতে পারেন প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি ও বি৬। ভিটামিন বি৬ লোহিত রক্ত কণিকা গঠনে সাহায্য করে। আর কিছু গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে, কলা মর্নিং সিকনেস বা গর্ভাবস্থায় সকাল বেলার অসুস্থতা ভাবও কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

শুকনো অ্যাপ্রিকট

অ্যাপ্রিকটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেটা-ক্যারোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার কারণে এই ফলটি এরকম উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়ে থাকে। শরীরে বেটা-ক্যারোটিন ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। আর এই ভিটামিন এ দাঁত, হাড় ও ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও বিকশিত করতে সাহায্য করে। তাজা অ্যাপ্রিকট খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এই ফলটি সাধারণত বসন্তকালেই সহজলভ্য। তবে আজকাল সব সুপার মার্কেটগুলোতেই শুষ্ক অ্যাপ্রিকট পাওয়া যায়। এমনই খাওয়া ছাড়াও ডেজার্ট বা মিষ্টি আইটেমে দিয়ে শুষ্ক অ্যাপ্রিকট খেয়ে নিতে পারেন।

এই ফলটি সাধারণত বসন্তকালেই সহজলভ্য; Image Source: Bite

মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেটা-ক্যারোটিন, একটি উদ্ভিদ যৌগ যা শরীরে যাওয়ার পর ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়ে যায়। বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ খুব প্রয়োজনীয়। এছাড়াও বেশিরভাগ কোষ ও কলা বা টিস্যু বিভাজনের জন্যও এর প্রয়োজন রয়েছে। ভ্রূণের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বেড়ে ওঠার জন্যও এর গুরুত্ব অপরিসীম। গর্ভাবস্থায় মায়েদের স্বাভাবিকের তুলনায় ১০-৪০ শতাংশ পরিমাণ বেশি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যদিও প্রাণীজ খাবারের উৎস থেকে পাওয়া ভিটামিন এ এই অবস্থায় অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এতে করে বিষক্রিয়া হতে পারে। মিষ্টি আলু হলো বেটা-ক্যারোটিনের খুব ভালো একটি উৎস। এছাড়াও এতে রয়েছে ফাইবার, যা অল্পতেই পেট ভরে ফেলতে সাহায্য করে। তাছাড়া মিষ্টি আলু ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং হজমশক্তিরও উন্নয়ন ঘটায়।

মিষ্টি আলু হলো বেটা-ক্যারোটিনের খুব ভালো একটি উৎস; Image Source: fao.org

শস্য জাতীয় খাবার

গর্ভাবস্থায় শরীরে ক্যালরির চাহিদা বেড়ে যায়। আর শস্য জাতীয় খাবার এই অতিরিক্ত ক্যালরির চাহিদা শরীরে পূরণ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে এই চাহিদা বেড়ে যায়। শস্য জাতীয় খাবারে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন ও উদ্ভিদ যৌগ। ওটসে্‌ রয়েছে বেশ ভালো পরিমাণে প্রোটিন, যা গর্ভাবস্থায় বেশ প্রয়োজনীয়। তাছাড়া শস্য জাতীয় খাবারে স্বাভাবিকভাবে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ফাইবার ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। আর এই সব পুষ্টি উপাদানগুলোই একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে চাহিদা থাকে।

Feature Image Source: NetDoctor

Related Articles