মাঞ্চুসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি এবং একজন জিপসি রোজ ব্ল্যাঞ্চার্ড | পর্ব-১

২০১৬, জুলাই ৫; গ্রিন কাউন্টি, মিসৌরি, যুক্তরাষ্ট্র। বিচারকের সামনে বন্ধুর সাথে মিলে মাকে হত্যার কথা স্বীকার করল ২৫ বছর বয়সী জিপসি রোজ ব্ল্যাঞ্চার্ড। দণ্ড দেয়ার সময় সরকারি উকিল ড্যান প্যাটারসন আসামীর প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শনের আহ্বান জানান। বিচারক জিপসিকে ‘সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার’-এর দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন, যা পূর্বপরিকল্পনার অনুপস্থিতিতে হত্যাকান্ড বোঝায়।

গ্রিন কাউন্টির সরকারি উকিল ড্যান প্যাটারসন; Image Source: greenecountymo.gov

যদিও ড্যান প্যাটারসনের কাছে তথ্যপ্রমাণ ছিল যে জিপসি আর তার বন্ধু ছক কষেই পুরো ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তারপরও এই কেসের অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি ‘ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডার’, বা ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুনের অভিযোগ আনা থেকে বিরত থাকেন। এই দোষে দোষী হলে চূড়ান্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অন্তত কম করে হলেও প্যারোলের সুযোগ ছাড়া যাবজ্জীবন। তবে ড্যান প্যাটারসন সাংবাদিকদের জানান- তিনি মনে করেন না এই শাস্তি আসামীর প্রাপ্য।

অদ্ভুত ব্যাপার তো! নিজের মাকে চিন্তা-ভাবনা করে খুনের পরেও আসামীর প্রতি সরকারি উকিল সহানুভূতি প্রকাশ করছেন! এমনকি সংবাদপত্র থেকে জনতা সবার সমর্থনই জিপসির দিকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে জিপসির মা-ই ভিলেন।

মায়ের নিজের পরিবারও জিপসির পক্ষে। তার দাদা বলছেন- তার মেয়ে উচিত শাস্তিই পেয়েছে। জিপসির বাবা রড আর সৎ মা ক্রিস্টিও সবসময় মেয়ের পাশেই আছেন। কিন্তু কেন জিপসির প্রতি এত সহানুভূতি? কারণ, জিপসির মা বিরল এক রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে, যার নাম ‘মাঞ্চুসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি’। 

মাঞ্চুসেন সিনড্রোম

মাঞ্চুসেন সিনড্রোমের মধ্যে দুটি রোগ পড়ে। একটি মাঞ্চুসেন সিনড্রোম, আরেকটি মাঞ্চুসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি (Munchausen Syndrome by Proxy)। এই নামে সাধারণের কাছে পরিচিত হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় রোগের নাম পাল্টে গেছে। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন এগুলোকে ফ্যাকটিশাস ডিজঅর্ডার (Factitious disorders) গোত্রভুক্ত করেছে, যার মানে শারীরিক বা মানসিক সমস্যার মিথ্যে লক্ষণ সৃষ্টি করার রোগ।

মাঞ্চুসেন সিনড্রোমকে বলা হয় ‘ফ্যাকটিশাস ডিজঅর্ডার ইম্পোজড অন সেলফ’ (factitious disorder imposed on self), যার মানে দাঁড়ায় ঐচ্ছিকভাবে নিজেই নিজের শরীরে নানা লক্ষণ তৈরি করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। মাঞ্চুসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সিকে নাম দেয়া হয়েছে ‘ফ্যাকটিশাস ডিজঅর্ডার ইম্পোজড অন আদার’ (Factitious disorder imposed on Other), যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি তার উপর নির্ভরশীল কাউকে বলির পাঁঠা বানিয়ে বারে বারে ডাক্তারের কাছে ছুটে যান।

ফ্যাকটিশাস ডিজঅর্ডার; Image Source: step2.medbullets.com

নামকরণ

মিডিয়া আর সাধারণ মানুষের কাছে কিন্তু মাঞ্চুসেন নামটিই বেশি জনপ্রিয়। এই নামের উৎস জার্মানির হ্যানোভারের এক ভদ্রলোক, ব্যারন মাঞ্চুসেন। ব্যারন মাঞ্চুসেনের জন্ম ১৭২০ সালের ১১ মে। যুবাবয়সে রাশিয়ান সেনাদলে নাম লিখিয়ে অটোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তিনি।অবসরের পর জন্মভূমিতে ফিরে নানা গল্প ফেঁদে বসেন। সৈনিক থাকাকালীন নানা অ্যাডভেঞ্চার রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা করেন উৎসাহী লোকদের সামনে।

মাঞ্চুসেনের গল্প তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয় “Vademecum für lustige Leute”  (Manual for Merry People) গ্রন্থে। সব গল্পের উৎস হিসেবে তাকে উল্লেখ করা হলেও বেশ কিছু গল্প অনেক আগে থেকেই লোকমুখে প্রচলিত ছিল।

গাঁজাখুরি গল্প বলিয়ে হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে যান ব্যারন মাঞ্চুসেন; Image Source: brendanmyers.net

তবে গাঁজাখুরি গল্প বলিয়ে হিসেবে মাঞ্চুসেনের নাম স্মরণীয় করে রাখেন জার্মান লেখকন রুডলফ এরিখ রাস্প। তিনি আগের প্রকাশিত গল্পগুলো নিয়ে ১৭৮৫ সালে লন্ডন থেকে ইংরেজিতে একটি বই প্রকাশ করেন, নাম দেন ‘রাশিয়াতে ব্যারন মাঞ্চুসেনের চমকপ্রদ অভিযান’ (Baron Munchausen’s Narrative of His Marvellous Travels and Campaigns in Russia)। তবে বইয়ের লেখক হিসেবে নিজের নাম উহ্য রাখেন রাস্প।

রাস্পের বইটি ১৭৮৬ সালে আবার জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেন কবি গটফ্রিড অগাস্ট বার্গার। তার অনুবাদই মাঞ্চুসেনের গল্পের সংকলন হিসেবে সর্বাধিক প্রচারিত। একে রেফারেন্স ধরে পরবর্তীতে আরো অনেকগুলো বই লেখা হয়, যা মাঞ্চুসেনের গল্প বলে দাবি করা হলেও আদতে ছিল লোককথা থেকে ধার করা। ইংরেজিতে এই গল্পগুলো বিখ্যাত হয়ে যায় ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব ব্যারন মাঞ্চুসেন’ নামে।

ব্যারন মাঞ্চুসেনের গল্পের কাটতি ছিল বেশ; Image Source: eldstimevaultgames.com

১৯৫১ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক রিচার্ড অ্যাশার হাসপাতালে এমন কিছু রোগীর সন্ধান পান যারা সত্যিকারের কোনো অসুখ ছাড়াই চিকিৎসার জন্য চাপাচাপি করছিল। এই রোগীরা হাসপাতালে আসত কঠিন রোগের লক্ষণ নিয়ে, নিজের দুঃখকষ্টের কথা এমনভাবে বর্ণনা করত যে তাদের ভর্তি করা ছাড়া উপায় থাকত না।  

কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হবার পর থেকেই তাদের সমস্যা আরো বেড়ে যেত। শত চেষ্টা সত্ত্বেও রোগের কারণ নির্ণয় করা যেত না। উল্টো প্রতিদিনই তারা অভিযোগ করত নতুন নতুন সমস্যার। তারা দাবি করত ওষুধ আর সার্জারির। অ্যাশার এমন কিছু রোগী দেখেছিলেন যাদের পেটে অনেক সার্জারির দাগ ছিল, এরা নিজেরা চিকিৎসককে চাপ দিয়ে এসব অপারেশন করাতো!

ড. রিচার্ড অ্যাশার; Image Source: medicalrepublic.com.au

এসব রোগী প্রায়ই ওয়ার্ডে চেঁচামেচি করত। যখন অ্যাশারের সহকর্মীরা জানালেন তাদের কোনো চিকিৎসা দিতে তারা অপারগ, কারণ শারীরিকভাবে তারা সম্পূর্ণ সুস্থ, তখন তারা রাগ দেখিয়ে বের হয়ে যেত।

পরবর্তীতে এদের অতীত ঘেঁটে দেখা যায়- এরা বিভিন্ন সময়ে নানা হাসপাতালে গিয়ে এমন করে চিকিৎসার দাবি করত। অনেকেই চিকিৎসককে বিভ্রান্ত করতে বিভিন্নভাবে লক্ষণ তৈরি করত, যেমন কাচের টুকরো খেয়ে ফেলা, ওষুধ নিজের শরীরে প্রবেশ করানো ইত্যাদি। হাসপাতালে চিকিৎসা দিলে ঠিকমতো ওষুধ খেত না তারা, সার্জারি করলে সেলাই টেনে ছুটিয়ে ফেলত। 

অ্যাশার বুঝতে পারলেন- এসব রোগীর সমস্যা শারীরিক নয়, মানসিক। তাদের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণের প্রতি একধরনের আসক্তি আছে, একে তারা ব্যবহার করে মানুষের মনোযোগ ও সহানুভূতি লাভের পন্থা হিসেবে। এই আসক্তি মেটাতেই তারা এসব করছে। ব্যারন মাঞ্চুসেনের নামে প্রচলিত গালগপ্পো তার জানা ছিল। এসব রোগী সেরকম গল্প বানিয়ে আসছিল বলে তিনি এই রোগের নাম দিলেন ‘মাঞ্চুসেন সিনড্রোম’।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় নার্স বেভারলি অ্যালিটের কথা। নিজের হাত পাথর ফেলে বার বার জখম করে তিনি হাসপাতালে আসতেন। তার মানসিক সমস্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে নিজের দায়িত্বে থাকা এগার শিশুর মধ্যে চারজনকে খুন করেন তিনি!

শিশুহত্যার দায়ে দণ্ডিত হন বেভারলি অ্যালিট; Image Source: medium.com

এ তো গেল মাঞ্চুসেনের কথা, কিন্তু মাঞ্চুসেন বাই প্রক্সি কী জিনিস? সহজভাবে বললে- এই প্রক্সি শ্রেণীকক্ষে প্রক্সি দেয়ার মতো। যার মানসিক সমস্যা, তিনি নিজের শরীরে লক্ষণ সৃষ্টি না করে তার উপর নির্ভরশীল আরেকজনকে ব্যবহার করেন। তারপর সেই মানুষকে নিয়ে ছুটে যান হাসপাতালে। তাকে অসুস্থ দাবি করে নিজে প্রচুর সেবাশুশ্রূষা করতে থাকেন। উদ্দেশ্য থাকে এর দ্বারা সামাজিকভাবে সহানুভূতি আদায়।

ব্রিটিশ চিকিৎসক রয় মিডৌ মাঞ্চুসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি নামটি ১৯৭৭ সালে প্রথম ব্যবহার করেন। এক গবেষণা প্রবন্ধে ২টি কেসের কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রথম ক্ষেত্রে মা তার বাচ্চাকে ৬ সপ্তাহ বয়স থেকে অল্প অল্প করে বিষপ্রয়োগ করে যাচ্ছিল। ১৫ মাস বয়সে বাচ্চাটি মারাই যায়।

দ্বিতীয় মা তার বাচ্চার প্রস্রাবের নালিতে সংক্রমণ হয়েছে বলে ভুয়া তথ্য দেন। তিনি বাচ্চার প্রস্রাবের নমুনা দূষিত করে বহু অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করাতে ডাক্তারকে বাধ্য করেন। যেহেতু বাচ্চার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়, ফলে মায়ের কথা শুনেই চিকিৎসকদের কাজ করতে হচ্ছিল। ধরা পড়ে যাবার ভয়ে মা বেশিদিন বাচ্চাকে এক ডাক্তারের কাছে না রেখে বদল করতেন।

মিডৌ প্রস্তাব করেন- এই মায়েরা বাচ্চাকে রোগী বানিয়ে আদতে নিজেদের অসুস্থ মানসিক চাহিদা পূরণ করছেন। রোগীর সেবক হিসেবে সবার কাছ থেকে যে সহানুভূতি পাচ্ছেন তারা সেটাই তাদের আসক্তিকে বর্ধিত করতে থাকে। ফলে নিজের সন্তানকে হত্যাও করে ফেলতে পারেন এরা। 

১৯৮০ সালে ব্রিটিশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভায় মিডৌর লেখা নিয়ে আলোচনা হয়। আরো বেশ কয়েকজন শিশু বিশেষজ্ঞ এমন রোগী পাবার কথা জানান। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই সমস্যা দেখা গিয়েছিল মায়েদের মধ্যে। 

মাঞ্চুসেন বাই প্রক্সির মূল লক্ষণই হলো সেবাদাতা কর্তৃক নির্ভরশীল ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ করা। দুর্লভ এই রোগ সাধারণত মায়েদের মধ্যেই দেখা যায়। শিশুরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর শিকার হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যানে এক লাখ শিশুর মধ্যে সর্বোচ্চ দুটি এরকম কেস পাওয়া যায়। একে শিশু নির্যাতন হিসেবে আইনে লিপিবদ্ধ করা আছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বয়স্ক ব্যক্তিদের সেবাদাতারাও মাঞ্চুসেন বাই প্রক্সিতে ভুগতে পারেন। 

রোগীর মধ্যে কী দেখা যায়

মাঞ্চুসেন বাই প্রক্সিতে আক্রান্তদের শনাক্ত করা খুব কঠিন। অনেকগুলো বিষয় একত্র করে রোগ সন্দেহ করা যেতে পারে, তবে কোনো ল্যাবরেটরি টেস্ট করে সমস্যা বের করা যায় না।

এই রোগীরা অসুস্থ মানুষের ব্যাপারে অতিরিক্ত পরিচর্যা প্রদর্শন করেন। তারা চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। চিকিৎসকের কাছ থেকে সন্দেহজনকভাবে মাত্রাতিরিক্ত মনোযোগ দাবি করেন তারা। বার বার চিকিৎসক বদল, ধরা পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদিও তাদের মধ্যে প্রকট।  

এছাড়া, এসব রোগীর ক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রেই রোগের ইতিহাস যাচাইয়ের কোনো উপায় থাকে না। কেবল সেবাদাতার কথার উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে সেবাদাতা ভুল বা বানানো তথ্য দেন। ওষুধ প্রয়োগ করে বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে লক্ষণ সৃষ্টির চেষ্টাও করেন তারা। চিকিৎসকের কাছে তারা দাবি করেন বহু ইনভেস্টিগেশনের। 

মাঞ্চুসেন বাই প্রক্সির নানা লক্ষণ; Image Source: youtube.com

আগেই বলা হয়েছে- রোগ সন্দেহ করা যায়, তবে নির্দিষ্ট করে শনাক্ত করা খুব কঠিন কাজ। সাধারণত তিনটি প্রশ্নের উত্তর জেনে চিকিৎসক মনে করতে পারেন মাঞ্চুসেন বাই প্রক্সির কথা।

  • সেবাদাতা যে ইতিহাস বর্ণনা করছেন যে তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
  • অসুস্থ ব্যক্তি কি এমন কোনো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন যাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে বেশি?
  • কেউ কি চিকিৎসার ব্যাপারে ডাক্তারকে বার বার প্রভাবিত করছে?   

মাঞ্চুসেন বাই প্রক্সির চিকিৎসাই হচ্ছে রোগীর উপর নির্ভরশীল মানুষকে সরিয়ে নেয়া। মানসিক চিকিৎসার পর অনেক রোগী ভালো হয়েছেন বলে দাবি করেন। তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে দিলে ১৭-৫০% ক্ষেত্রে রোগের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

This is a Bengali language article about Munchausen Syndrome by Proxy and one of the most publicized cases about it. Necessary references are mentioned below.

  1. Baron Münchhausen: Hanoverian storyteller. Encyclopedia Britannica.
  2. Faedda, N., Baglioni, V., Natalucci, G., Ardizzone, I., Camuffo, M., Cerutti, R., & Guidetti, V. (2018). “Don't Judge a Book by Its Cover: Factitious Disorder Imposed on Children-Report on 2 Cases.” Frontiers in pediatrics6, 110.
  3. D., Kanomata, E. Y. Feldman, R. J. & Neto, A. M. (2017). “Munchausen syndrome and Munchausen syndrome by proxy: a narrative review”. einstein;15(4):516-21.
  4. Asher, Richard. “Munchausen Syndrome.” British Medical Journal vol. 2,4950 (1955): 1271.
  5. Meadow R. (1995). “What is, and what is not, 'Munchausen syndrome by proxy?”. Archives of disease in childhood72(6), 534–538.
  6. Souid A-K, Keith DV, Cunningham AS (1998). “Munchausen Syndrome by Proxy.” Clinical Pediatrics.;37(8):497-503.

Feature Image: verywellmind.com

Related Articles

Exit mobile version