কথায় আছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের বেশিরভাগই ‘হোয়াইটওয়াশড’ বা ধবল ধোলাইয়ের কবলে পড়ে বিকৃত হয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ইতিহাস বইয়ে প্রাধান্য দেয়া হয় কেবলমাত্র ককেশীয়দের, আরও নির্দিষ্ট করে বললে ককেশীয় পুরুষদের। সমালোচকরা বলেন, কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি এই অবিচার শুধু আমেরিকান ছাত্রদের ভুল শিক্ষাই দিচ্ছে না, বরং জাতি হিসেবে নিজেদের সংকীর্ণ মনের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। বৈদ্যুতিক বাতি, কম্পিউটার থেকে শুরু করে জিপিএসের আবিষ্কারকের নাম সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ ব্লাড ব্যাংকের প্রথম উদ্যোক্তা, নারীদের গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার নেপথ্যের নায়ক, নারীদের ভোটাধিকারে অবদান রাখা ব্যক্তি কিংবা আমেরিকার প্রথম চিকিৎসকের নাম জিজ্ঞেস করলে ভাবতে হবে কিছুক্ষণ। ইতিহাসে যারা দিব্যি রাজত্ব করতে পারতেন, শুধুমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে তাদের দাবিয়ে রেখেছে শত বছরের অপসংস্কৃতি।
শতাব্দীর ভুল, বলা ভালো অন্যায়, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া তো কখনোই সম্ভব নয়। তবুও সম্প্রতি কয়েকজন সচেতন আমেরিকান সেই ভুল কিছুটা হলেও শুধরে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, কৃষ্ণাঙ্গদের অজানা সাফল্যের কথা তুলে ধরতে তাদের কাহিনী লিপিবদ্ধ করা শুরু করেছেন। ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে নাম লেখানোর যোগ্য তেমনি পাঁচ কৃষ্ণাঙ্গের কথা জেনে নেয়া যাক।
১. সুসান লা ফ্লেশে পিকট
ঐতিহাসিকগণ সুসানকে আদি আমেরিকার প্রথম চিকিৎসক হিসেবে অভিহিত করেন। সারা জীবনব্যাপী চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন সুসান লা ফ্লেশে পিকট, কর্মের মাধ্যমে সেই জ্ঞান সাধারণ মানুষের উপকারে ব্যবহার করেছেন। ১৮৬৫ সালের ১৭ জুন নেব্রাস্কার ওমাহা ভারতীয় রিজার্ভেশনে জন্ম নেন সুসান। প্রথম জীবনে আর দশজন কৃষ্ণাঙ্গ আদি আমেরিকানের মতোই দুর্দশা আর কষ্টের সম্মুখীন হন তিনি। ফেডারেল সরকার তখন কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য নতুন জায়গা বরাদ্দ দিয়ে মূল শহর থেকে তাদের সরিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। ‘নতুন জায়গা’ নামক এলাকাটি ছিল পুরোপুরি অনুর্বর, রোগ-শোক আর দারিদ্র্যের বাসা।
হাজার সমস্যা মাথায় নিয়েও সুসান কখনো স্কুল কামাই করেননি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে পেনসিলভানিয়ার মহিলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন, সে সময় এই একটি কলেজেই নারীদের পড়ালেখার অনুমতি ছিল। প্রথম কোনো আদি আমেরিকান হিসেবে মেডিকেল ডিগ্রি অর্জনের রেকর্ড করেন তার। প্রথম স্থান অধিকার করে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর ওমাহা ভারতীয় রিজার্ভেশনে ফিরে আসেন সুসান। নিজ উদ্যোগেই অত্র এলাকার চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। বিভিন্ন গোত্রের, নানা বর্ণের হাজারেরও বেশি রোগীর চিকিৎসা করতেন তিনি। আর বেতন? সুসানের বাৎসরিক আয় ছিল ৫০০ ডলারেরও কম। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বা নেভির চিকিৎসকরা মাসেই এর দশগুণ কামাতেন, সে সুযোগের দিকে কখনো ফিরেও তাকাননি তিনি।
নিজের বাবা-মায়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে সুসান টের পান, আগে থেকে কিছু সুরক্ষার ব্যবস্থা নিলে অসুখ-বিসুখের মাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। প্রথমেই তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেন, পাশাপাশি আমরা এখন যেমন মশার কামড় থেকে বাঁচতে ক্রিম ব্যবহার করি, তেমন কিছু প্রতিষেধক ওষুধ আবিষ্কার করেন। তখনকার দিনে এমন সব উদ্যোগের কথা ছিল কল্পনাতীত। ধীরে ধীরে নিজস্ব একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেন সুসান। পরবর্তীতে ওয়াশিংটন ডি.সি.তে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছে দাবী জানান, আদি কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদেরও সাধারণ আমেরিকানদের সমান অধিকার দিতে হবে। জমি জালিয়াতি আর ফটকাবাজির মিথ্যা মামলা থেকে তাদের মুক্তি দিতে হবে। আমেরিকার সর্বত্র চিকিৎসা সেবা উন্নত করার দাবীও জানান তিনি। অন্যদের অধিকার আদায়ের দাবীতে লড়ে যাওয়া এই নারী মাত্র ৫০ বছর বয়সে হাড়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
২. মেরি অ্যাকুই
মেরি অ্যাকুইয়ের কথা বলতে হলে ফিরে যেতে হবে উনবিংশ শতাব্দীর সেই সময়টিতে, যখন গর্ভধারণ বা গর্ভপাতের উপরে নারীর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এ ধরনের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে দিয়েছিল সরকার। সময়ের বিদ্রোহী এক নারী চিকিৎসক মেরি তখন নারীদের ঘরে ঘরে এ ব্যাপারে টিপস দিয়ে আসতেন, তাদের সাহস যোগাতেন। প্যারেন্টহুড বা বাবা-মা কীভাবে সন্তানের লালন-পালন করলে তারা ভালো মানুষ হয়ে উঠবে সে ব্যাপারে কাজ করতেন মেরির সমসাময়িক এক নারী মার্গারেট স্যাঙ্গার। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, মার্গারেটের আড়ালে চাপা পড়ে যায় মেরির অবদান, ইতিহাসে তার কথা প্রায় নেই বললেই চলে।
১৮৭২ সালের ৭ এপ্রিল ম্যাসাচুসেটসে জন্মগ্রহণ করেন মেরি অ্যাকুই। পেশাগত জীবনে চিকিৎসক মেরি আজীবন কাজ করে গেছেন শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যোন্নয়ের জন্য, দরিদ্র রোগীদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য। ডাক্তারির পাশাপাশি ধীরে ধীরে তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে, নারীদের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে শ্রমিকদের আট ঘণ্টা কাজের অধিকার নিয়েও লড়াই করে গেছেন। ১৯১৩ সালে এক পুলিশের হাতে প্রহৃত হওয়ার পর তিনি সহিংস বা নৈরাজ্যবাদী আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং র্যাডিকেল লেবার মুভমেন্টের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। প্রথাবিরোধী এই নারী একটি সন্তান দত্তক নিয়ে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাকে তিন বছরের কারাবাস ভোগ করতে হয়। জনগণের প্রিয় এই মুখ ১৯৫২ সালের ১৩ জুলাই, ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে তা প্রতিটি পত্রিকায় শোক সংবাদ হিসেবে ছাপা হয়। কিন্তু তার এই রাজনৈতিক অবদান বা পরিবার পরিকল্পনায় তার ভূমিকার কথা রয়ে গেছে অগোচরে।
৩. চার্লস আর ড্রিউ
ইতিহাস যে কেবল নারী বলে মেরি অ্যাকুইয়ের কথা ভুলে গেছে, তা কিন্তু নয়। এই তালিকায় আছেন আফ্রিকান-আমেরিকান চার্লস রিচার্ড ড্রিউও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার চিকিৎসক এবং চিকিৎসা গবেষক ড্রিউয়ের ব্লাড ব্যাংক তৈরির ধারণাটি কেবল যুদ্ধের সময়েই কাজে লাগেনি, বরং তা বদলে দিয়েছে গোটা মানব সভ্যতার ইতিহাস।
ওয়াশিংটন ডি.সির মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা কৃষ্ণাঙ্গ এই ব্যক্তি ১৯৩৩ সালে মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে তিনি সার্জন হিসেবে যোগ দেন সরকারি হাসপাতালে। প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে ‘আমেরিকান বোর্ড অফ সার্জারি’তে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তিনি। কয়েক বছরের মধ্যে অর্জনের ঝুলিতে আরেকটি ‘প্রথম’ খেতাব পুরে নেন ড্রিউ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম গ্র্যাজুয়েশন করা আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে নাম লেখান তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই গ্র্যাজুয়েট তার অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর সুযোগ পান। যুদ্ধের সময় আহত সৈনিকদের বাঁচানোর জন্য কী পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, তা সহজেই অনুমেয়। সে সময় নিউ ইয়র্কের সৈন্যদের জন্য রক্ত আসত গ্রেট ব্রিটেন থেকে। তাতে লেগে যেত প্রচুর সময়, মারা যেত অনেক সৈন্য। এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন ড্রিউ। নিউ ইয়র্ক শহরে প্রথম ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে রক্ত সংগ্রহ করার অভিনব একটি পন্থা আবিষ্কার করেন তিনি। তার সেই ব্লাড ব্যাংকটি বর্তমানে ‘আমেরিকান রেড ক্রস ব্লাড ব্যাংক’ নামে পরিচিত।
আফসোস, এত মহান উদ্যোগ নেয়া মানুষটিকে কিছুদিনের মধ্যেই নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হতে হয়। কারণ উপরমহল থেকে নির্দেশ দেয়া হয়, কৃষ্ণাঙ্গ কোনো সৈনিকের রক্ত শ্বেতাঙ্গ সৈনিকদের দেয়া যাবে না! রাগে-দুঃখে সেখান থেকে পদত্যাগ করেন ড্রিউ। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। আরও বড় বিস্ময় তখনো অপেক্ষা করছিল তার জীবনে। কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে রক্তদান করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে আঘাত গুরুতর হওয়ার কারণে তাকে জরুরী মেডিকেল সেবা প্রদান করা হয়, যা তখনকার দিনের আফ্রিকান-আমেরিকানদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। চিকিৎসকদের এই জরুরী সেবা বদান্যতার পরেও অবশ্য বাঁচানো যায়নি ড্রিউকে।
৪. ফ্যানি লিউ হ্যামার
রোজা পার্কস কিংবা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের পাশে তার নাম শোভা না পেলেও, নাগরিক অধিকার আন্দোলনে ফ্যানি লিউ হ্যামারের ভূমিকা অবশ্যই স্বীকৃতির দাবীদার। ১৯১৭ সালে মিসিসিপিতে জন্ম নেয়া ফ্যানির প্রথম জীবনের গল্পকে শুনলে বোঝা যাবে, কেন তিনি সবার অধিকার আদায়ের ব্যাপারে এতটা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বাবা-মায়ের ২০ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ফ্যানি ১২ বছর বয়সেই স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন। স্কুল থেকে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে তুলো সংগ্রহের কাজ করা ফ্যানির শিক্ষাটা তাই ছিল পুরোপুরি জীবন থেকে নেয়া।
১৯৬১ সালে অনিচ্ছাকৃত এক সার্জারির মাধ্যমে ফ্যানির জরায়ু অপসারণ করে ফেলা হয়। আফ্রিকান-আমেরিকান বা কৃষ্ণাঙ্গদের বংশবৃদ্ধি রোধের উদ্দেশ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার নারীদের জোর করে বন্ধ্যা করে ফেলার এই রীতিটি তখন একেবারে ডাল-ভাত ছিল। নিজের জীবনে এই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা অর্জন করে বিষয়টি নিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য উঠে-পড়ে লাগেন তিনি। এই ট্রমার থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন। আমেরিকার নাগরিকদের ভোটাধিকার, নাগরিক নিরাপত্তা আন্দোলন প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করেন মানবহিতৈষী এই নারী। স্তন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ১৯৭৭ সালে মাত্র ৫৯ বছর বয়সে মারা যান ফ্যানি।
৫. এলিজাবেথ জেনিংস গ্রাহাম
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সমার্থক একটি নাম রোজা পার্কস। অথচ বহু আগে থেকে এই বিষয়ে সহমত পোষণ করা আরও একজন নারী, এলিজাবেথ জেনিংস গ্রাহাম রয়ে গেছেন প্রদীপের আড়ালে। পরিবহন ব্যবস্থায় বর্ণবাদভিত্তিক বৈষম্য দূর করতে ১৮৫৪ সালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি, রোজা পার্কস কাজ শুরু করেছিলেন আরও একশো বছর পরে। ১৮৩০ সালে নিউ ইয়র্কের দুই প্রখ্যাত ব্যক্তির সন্তান হিসেবে জন্ম নেন তিনি। তার বাবা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ কোনো পেটেন্ট ধারক ব্যক্তি, মা ছিলেন নিউ ইয়র্ক শহরের সাহিত্য সভার স্পিকার। এলিজাবেথের মাকে ক্রীতদাসের জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাধীন পৃথিবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন তার বাবা। কাজেই মুক্ত পৃথিবীতে স্বাধীন মানুষ হিসেবেই জন্ম নেন এলিজাবেথ। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।
১৮৫৪ সালের জুলাই মাসের এক রবিবারে গির্জায় যাওয়ার পথে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা তাকে ইতিহাসে জায়গা করে দেয়। দেরি হয়ে যাচ্ছিল বিধায় রাস্তায় চলমান এক বাসে দৌড়ে ওঠার চেষ্টা করেন তিনি। কন্ডাকটর তাকে নেমে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সে সময় আমেরিকার রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। সেই ঘোড়ার গাড়ি থেকে শুরু করে বাস পর্যন্ত প্রতিটি পরিবহন ব্যবস্থাই ছিল বর্ণবাদের অনিয়মের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এলিজাবেথ গাড়িতে উঠলে অসম্মানিত বোধ করে উপস্থিত ব্যক্তিরা। কন্ডাকটরের কথায় এলিজাবেথ না নামলে তাকে জোর করে নামিয়ে দেয়া হয়, এতে তিনি আহতও হন, আর তার চেয়েও আজব ব্যাপার হলো এলিজাবেথকে অপসারণ করতে সহায়তা করে স্বয়ং পুলিশ! এই ঘটনাটি খুব দ্রুত মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
একজন মুখ খুললে তার দেখাদেখি এগিয়ে আসে আরও অনেকে, এই ঘটনাটিও তার জলজ্যান্ত একটি প্রমাণ। বেশ কিছু কৃষ্ণাঙ্গের কাছ থেকে একই অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় সরকার। পরবর্তীতে এক তরুণ আইনজীবী, যিনি পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন, চেস্টার এ. আর্থারের সহযোগিতায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করে জিতে যান এলিজাবেথ। ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে দেয়া হয় ২৫০ ডলার। তারপর? তারপর মহাকালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছেন এলিজাবেথ। এই ঘটনার পর তার জীবনে কী কী পরিবর্তন আসে, তিনি কতটুকু খুশি হন সেসব নথিবদ্ধ করে রাখার প্রয়োজন পড়েনি কারো। কাজেই ১৮৬৩ সালে নিউ ইয়র্কের এক দাঙ্গায় খুঁজে পাওয়া যায় তার উপস্থিতি। কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের জন্য তিনি যে স্কুলটি তৈরি করেছিলেন তার রেকর্ড থেকে জানা যায়, ১৯০১ সালে মারা যান তিনি।
ফিচার ইমেজ: nih.gov