১৭৯০ এর দশকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকান বিপ্লব সফলভাবে শেষ হয়। তখন দক্ষিণ মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ২০০ বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘোষণা করে ব্রিটিশরা। ১৩টি কলোনির সমন্বয়ে পৃথিবীর বুকে নতুন ও স্বাধীন দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে। ইতিহাস বলে- স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে বিপ্লবে রূপান্তরিত করতে অনেক ত্যাগ সহ্য করেন তৎকালীন আমেরিকানরা।
এছাড়াও ব্রিটিশদের অনেক নতুন-পুরাতন আইন ঘটনাচক্রে আমেরিকান বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল। পৃথিবীর প্রায় সবকটি স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে একটি ঘটনা প্রায় একই। আর সেটি হলো শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া আইন ও সেটির বিরোধিতা করা। স্বাধীনতাকামীদের উপর নতুন নতুন যেসব আইন প্রয়োগ করে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় সেগুলো মূলত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে আরো তীব্র করে তোলে। যেমনভাবে ব্রিটিশ শাসকদের নতুন আইনগুলো কলোনিস্টদের দিন দিন ক্ষিপ্ত করেছিল।
আজ এমনই ৭টি ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। মূলত স্বাধীনতাকামী ঔপনিবেশিকদের সঙ্গে শাসকগোষ্ঠীর এই ঘটনাগুলো আমেরিকান বিপ্লবকে বাস্তবে রূপান্তরিত করেছিল।
১. স্ট্যাম্প আইন
আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে ফরাসিদের ঐতিহাসিক সেভেন ইয়ার্স ওয়ার ১৭৫৬ সাল থেকে ১৭৬৩ সাল পর্যন্ত চলেছিল। অতঃপর প্যারিস চুক্তির মধ্য দিয়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে কানাডা এবং মিসিসিপি আদানপ্রদান করে ফরাসিরা। এতে করে আমেরিকার মানচিত্র আরো দীর্ঘ হয়। এই যুদ্ধে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্রিটিশরা। যার ফলে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী আমেরিকান ঔপনিবেশিকদের কাছ থেকে কর আদায়ের উপায় খুঁজতে থাকে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কর আদায়ের জন্য স্ট্যাম্প আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় কংগ্রেস। এই আইনের মূল লক্ষ্য ছিল কর আদায় করে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এবং আমেরিকায় ব্রিটিশ যোদ্ধার সংখ্যা বাড়ানো, যাতে প্যারিস চুক্তিতে পাওয়া নতুন ভূখণ্ড নিরাপদ থাকে। ১৭৬৫ সালের ২২ মার্চ পার্লামেন্টে স্ট্যাম্প আইন পাশ হয়। কিন্তু এই আইন পাশের পর ব্রিটিশদের সঙ্গে ঔপনিবেশিকদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আগের নিয়মানুযায়ী স্থানীয় নেতারা শুধুমাত্র নিজ অঞ্চলের কর আদায় করে আবার বিনিয়োগ করতে পারতো। কিন্তু নতুন আইন অনুযায়ী আমেরিকার অর্থ সোজাসুজি ব্রিটিশ কোষাগারে জমা হবে। এছাড়াও এই কর আদায়কারীরা ছিলেন শাসকগোষ্ঠীর বিশ্বস্ত লোক। আর এই বিষয়টি কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি ঔপনিবেশিক নেতারা।
ব্রিটিশদের এই অযৌক্তিক দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে তারা। স্থানীয় আদিবাসীদের উষ্কে দেয়ার মধ্য দিয়ে নিউ ইয়র্কসহ অন্যসব কলোনিতে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের মুখে মাত্র ১ বছরের মাথায় আইনটি বাতিল করে ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু একই সময় আমেরিকার অভ্যন্তরে ভূমির উপর ঔপনিবেশিক শাসকদের কর্তৃত্ব কেড়ে নেয়ার জন্য নতুন আইন পাশের চেষ্টা করে তারা। আর এই বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান প্রায় ১০ বছর স্থায়ী হয়।
চ্যাম্পলিন কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক উইলার্ড টেরনি রেন্ডলের মতে, সেবার বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে সকল অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশদের স্ট্যাম্প আইন বাতিল করান ঠিকই, কিন্তু নতুন করে জন্ম নেয়া ঘৃণা তারা দমাতে পারেনি। এই ঘটনার পর কলোনিস্টরা পুরোপুরিভাবে ব্রিটিশদের বিরোধিতা শুরু করে। একসময় যারা আদি-আমেরিকানদের দমাতে ব্রিটিশদের নিকট নত ছিলো, তারাও ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব পোষণ করে।
২. টাউনশ্যান্ড আইন
ব্রিটিশ সরকার ১৭৬৭ সালে নতুন আরেকটি আইন প্রণয়ন করে। দ্য টাউনশ্যান্ড অ্যাক্ট হিসেবে পরিচিত এই আইনটিও কর আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়। এর আগে স্ট্যাম্প আইনটি কার্যকর করতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্রিটিশরা কৌশল অবলম্বন করে। তারা স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতির প্রমাণ জনসম্মুখে উপস্থাপনের চেষ্টা করে যাতে আইন পাশ হলে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে না জড়ায়। ব্রিটিশদের এই উদ্দেশ্যটি সফল হয়েছিল। তারা চা, কাগজপত্র, গ্লাস, রং, আঠাসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানির উপর কর ধার্য করে। আর এই কর আদায়ের জন্য নতুন করে আমেরিকান কাস্টমস বোর্ড গঠন করা হয়। সেই সাথে নতুন আদালত গঠন করা হয় যেখানে স্থানীয় জুরির সদস্যরা ছিলেন না। পুরো কার্যক্রমটি পরিচালনা করেই ক্ষান্ত হয়নি ব্রিটিশ সরকার।
কলোনির লোকেরা যাতে নতুন করে আন্দোলন করতে না পারে সেজন্য ব্রিটেন থেকে গুপ্তচর নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে এই আইনের বিরোধিতা করে ব্রিটিশ পণ্য বর্জন কর্মসূচি পালন করে আমেরিকানরা। বোস্টনে টাউনশ্যান্ড আইন বিরোধী কর্মসূচিতে অনেক বেসামরিক লোককে হত্যা করা হয়। ইতিহাসে ঐ ঘটনাকে বোস্টন হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব আরো দৃঢ় হয়।
৩. বোস্টন হত্যাকাণ্ড
আমেরিকানরা কর দিতে কখনোই অস্বীকৃতি জানায়নি। বরঞ্চ তারা চেয়েছিল শুধুমাত্র আঞ্চলিক শাসকরা কর আদায় করুক এবং তা আমেরিকার উন্নয়নে কাজে ব্যয় করা হোক। কিন্তু ব্রিটিশদের পর পর দুটি নতুন আইনের কারণে বিপাকে পড়ে জনসাধারণ এবং আঞ্চলিক শাসকরা। ১৭৭০ সালে, নতুন আইন কার্যকরে বোস্টন শহরের দেয়ালে দেয়ালে ঝুলছিল আইন সংক্রান্ত পোস্টার। আর সেগুলো পাহারা দিতো ইংরেজ সেনারা।
ব্রিটিশ দখলদারদের সঙ্গে বোস্টনের বাসিন্দাদের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা মার্চ মাসের এক বিকেলে আবারো জ্বলে ওঠে। একজন শিক্ষানবিশ ছাত্রের সঙ্গে কয়েকজন ব্রিটিশ সৈন্যের বাকবিতণ্ডার কারণে প্রায় ২০০ জন বাসিন্দা মিলে ৭ জন ব্রিটিশ সৈন্যকে ঘিরে ধরে। তর্কাতর্কির মাঝে সেনাদের দিকে বরফ ছোঁড়েন কয়েকজন। এতে করে ক্ষিপ্ত হয়ে একযোগে গুলি চালায় সেনারা। যখন নীরবতা শেষ হয় তখন তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে নিহতদের মধ্যকার একজনের পরিচয় জানা যায়। নিহত আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ক্রিসপাস এটোকস ছিলেন একজন নাবিক।
এই হত্যার পর আমেরিকায় ব্রিটিশদের পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়। চিত্রশিল্পী পল রেভার ঐ হত্যাকাণ্ডের একটি ছবি এঁকে কলোনিস্টদের সহায়তায় বোস্টনের দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়ে দেন। ইতিহাসবিদদের মতে, বোস্টন হত্যাকাণ্ডকে ব্রিটিশ সেনারা সহজে ধামাচাপা দিতে চাইলেও রেভারের আঁকা ছবির জন্য তা সম্ভব হয়নি। এতে করে আরো একবার ব্রিটিশদের দোষারোপ করার প্রমাণ হাতে পায় স্থানীয় শাসকরা।
৪. বোস্টনের চা ধ্বংস
মাত্র কয়েক দশকের মাথায় একাধিক নতুন আইন এবং হত্যাকাণ্ডের পর বোস্টন শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় ব্রিটিশ সরকার। পরবর্তীতে টাউনশ্যান্ড আইনের বেশিরভাগ শর্তাবলী বাতিল করে তারা। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে ভুগতে থাকা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্বার্থে নতুন চা আইন পাশ করে ব্রিটিশরা। নতুন আইনের কারণে যেসব আমেরিকান ব্যবসায়ী ডাচদের থেকে চা ক্রয় করে ব্যবসাবাণিজ্য করতো তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মূলত ব্রিটিশরা আমেরিকান ব্যবসায়ীদেরকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে চা কিনতে বাধ্য করেনি। বরঞ্চ ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়া এমন কয়েকজন ব্যবসায়ীকে চা আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। এই আইনের কারণে আমেরিকায় চায়ের দাম পুরোপুরি কমে যায়।
এতকিছুর পরেও আমেরিকানরা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে চা কেনার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। তারা চেয়েছিল আঞ্চলিক সব দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে। নতুন চা নীতিকে নিন্দা জানাতে একদল বিদ্রোহী বোস্টন বন্দরের কয়েকটি জাহাজ থেকে ৯২,০০০ পাউন্ড ব্রিটিশ চা সমুদ্রে নিক্ষেপ করে নষ্ট করে। অতঃপর জাহাজের কোনো নাবিক কিংবা কর্মীকে আহত না করেই তারা নাটকীয়ভাবে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চায়।
এই ঘটনার পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডার ১০০০ পাউন্ড অর্থ পরিশোধ করে আবারও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। বাহ্যিকভাবে ব্রিটিশরা আমেরিকানদের নানারকম অবমাননা গুরুত্ব সহকারে না দেখলেও বোস্টনের লোকেদের চা নষ্ট করার বিষয়টি তাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়। ইতিহাসবিদদের মতে, এই ঘটনাটি ব্রিটিশদের প্রণীত নতুন আইনের প্রতি আমেরিকানদের ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
৫. বাধ্যতামূলক আইন
বিদ্রোহীদের দ্বারা নষ্টকৃত চায়ের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে তৎপর হয়ে ওঠে ব্রিটিশরা। বোস্টন বন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে তারা। এছাড়াও কলোনির নির্বাচিত বিচারক এবং কমিশনারদের বরখাস্ত করে সেখানে ব্রিটেন থেকে কর্মকর্তা পাঠানো হয়। এসব করেই ক্ষান্ত হয়নি ব্রিটিশরা। ঐ সময় আমেরিকায় নিযুক্ত সেনাদের অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়। পাশাপাশি সবগুলো অঞ্চলে ঘোষণা করা হয় যে, শহরে মিছিল-মিটিং করতে হলে প্রশাসনিক অনুমতি নিতে হবে। ১৭৭৪ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে বাধ্যতামূলক আইন পাশ করে তা কার্যকর করা হয়। কিন্তু এরও এক দশক আগে পাশ করা কোয়ার্টারিং আইনটি সদ্য পাশকৃত বাধ্যতামূলক আইনকে প্রভাবিত করে।
কোয়ার্টারিং আইন অনুসারে ব্রিটিশ সেনারা ব্যারাকে অবস্থান করবে এবং স্থানীয় প্রশাসন তাদের খাবারদাবারের ব্যবস্থা করবে। তবে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত সৈন্যরা স্থানীয় লোকজনের বাড়িতে বা অতিরিক্ত জমিতে ঘর করে বসবাস করতে পারবে। ১৭৭৪ সালে বাধ্যতামূলক আইনটি পাশের ফলে শহরের মতো গ্রামেও সৈন্য সংখ্যা বেড়ে যায়। এতে করে বাড়তি সৈন্যের খাবারদাবার, চিকিৎসা কিংবা তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। যদিও সৈন্যরা স্থানীয়দের বাড়িতে থাকার জন্য বাড়তি চাপ প্রয়োগ করতো না। তারা শুধুমাত্র খাবার, চিকিৎসা, বাসস্থান বাবদ জনসাধারণ এবং কলোনিস্টদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা শুরু করে। দুই আইনের সংমিশ্রণে আমেরিকানরা অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়।
৬. লেক্সিংটন এবং কনকোর্ড
বোস্টনে নতুন আইন কার্যকরের এক বছর পর ব্রিটিশ জেনারেল থমাস গেজ একদল যোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে লেক্সিংটন অভিমুখে যাত্রা করেন। এই অভিযানে থমাস গেজের উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক নেতা স্যাম অ্যাডামস ও জন হ্যানকককে গ্রেফতার করার পর ক্যালিফোর্নিয়ার কনকোর্ডে গুম করে তাদের অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করা। কিন্তু আমেরিকান গুপ্তচররা ব্রিটিশদের এই পরিকল্পনা আগেই জেনে যায়। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৭৭৫ সালের ১৯ এপ্রিল তারিখে লেক্সিংটনে ৭৭ জন আমেরিকান মিলিশিয়া ব্রিটিশ সেনাদের যাত্রাপথে অবরোধ গড়ে তোলে। মুখোমুখি সংঘর্ষে ৭ জন মিলিশিয়া ঘটনাস্থলে নিহত হলেও ব্রিটিশদের অভিযান পণ্ড হয়। মিলিশিয়ারা ব্রিটিশ বাহিনীকে নানাভাবে প্রভাবিত করে বোস্টনে ফেরত পাঠায়।
রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষের পর মোট ৭৩ জন ব্রিটিশ সেনা নিহত হয় এবং আহত হয় আরও ১৭৪ জন। এছাড়াও ২৩ জনকে সংঘর্ষের পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় মিলিশিয়ারা তাদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। তবে লেক্সিংটনের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার পর আমেরিকানদের প্রতি আরো বিরূপ ভাবাপন্ন হয় ব্রিটিশরা। আর এর মধ্য দিয়ে আমেরিকায় সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়।
৭. উপকূলীয় শহরে ব্রিটিশদের আক্রমণ
আমেরিকান বিপ্লবের শুরুতে উত্তরাঞ্চলের লোকেদের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের লোকেদের ভূমিকাগত মতবিরোধ তৈরি হয়। দক্ষিণাঞ্চলের লোকেরা সমস্ত খাতে ইংরেজদের উপর নির্ভরশীল ছিলো। তারা খাদ্যশস্য, ফলমূল ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করতো। এতে করে বিপ্লবের শুরুতে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে উত্তরাঞ্চলের নেতারা। উত্তরের লোকেরা দক্ষিণের লোকেদের অলস এবং অকর্মণ্য ভাবতো। তবে পোর্টল্যান্ড, মেইন, নরফক এবং ভার্জিনিয়া সবগুলো কলোনি একতাবদ্ধ হয়েছিল। যদিও এর আগেই ফলমাউথ, ম্যাসাচুসেটসের সমুদ্র তীরবর্তী কয়েকটি শহরে হামলা চালায় ব্রিটিশ নৌবাহিনী। শত শত ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার পাশাপাশি লুটপাট করে তারা।
ইতিহাসবিদ হগার হুকের মতে, ফলমাউথের ক্ষয়ক্ষতি দেখে স্বয়ং জর্জ ওয়াশিংটন বিস্মিত হন। একইভাবে নরফোকে একটানা সাত ঘণ্টা অগ্নিসংযোগ করে ব্রিটিশরা। মাইলের পর মাইল কাঠের বাড়িঘর জ্বালানো হয় সেদিন। দক্ষিণাঞ্চলের লোকেরা এসব দেখার পর পুরোপুরি হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। অথচ তারা জানতো ব্রিটিশরা কৃষ্ণাঙ্গ আমোরিকানদের সবরকম আইন থেকে মুক্ত করে দিচ্ছিল। বিনিময়ে আমেরিকানদের দমনে শুধুমাত্র তাদের সহায়তা চেয়েছিল।
অতঃপর দুই উপকূলীয় অঞ্চলের নেতারা উপলব্ধি করেন যে, স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণের নেতারা ব্রিটিশদের গোলামি ছেড়ে বিপ্লবে সমর্থন জানায়। দুই উপকূলীয় অঞ্চলের নেতাদের একতাবদ্ধতা দেখে গোটা আমেরিকার মানুষই সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আমেরিকানদের রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধ একটানা ৭ বছর স্থায়ী হয়।
ইতিহাসের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/