গত সেপ্টেম্বরে প্রিন্সেস বিয়াত্রিস অব ইয়র্ক ধনকুবের এডওয়ার্ডো মাপেলি মোজির সঙ্গে বাগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে রাজপরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিয়ের সময়সূচী জানাবেন বলেও ঘোষণা দেন তিনি। ব্রিটিশ রাজপরিবারের মুখপাত্র এই বিয়ের দিনক্ষণ নিয়ে এখন অবধি নিশ্চিতভাবে কিছু জানায়নি। তবে ইংরেজ সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন রটেছে আগামী বছরের জুন মাসে রাজকীয় এই বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা ভাবছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তবে প্রিন্সেস বিয়াত্রিসের বাবা প্রিন্স এন্ড্রুর নতুন সম্পর্কের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর এই বিয়ে নিয়ে নানারকম জটিলতা তৈরি হয়েছে। সে যা-ই হোক, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের বিয়ের অনুষ্ঠান পৃথিবীর অন্য যেকোনো মানুষের বিয়ের অনুষ্ঠানের চেয়ে আলাদা এবং মর্যাদাপূর্ণ। একেক সময় একেক রাজা কিংবা রাজপুত্রের বিয়েতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তারা।
ব্রিটিশ রাজপরিবার নিয়ে গবেষণারত ইতিহাসবিদ ক্যারোলিন হ্যারিস সর্বাধিক আলোচিত এবং বিখ্যাত কয়েকটি রাজকীয় বিয়ে নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেগুলোর থেকে প্রথম ৫টি বিয়ে নিয়ে আজ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১২ জানুয়ারি ১৪৮৬: সপ্তম হেনরি এবং এলিজাবেথ অব ইয়র্ক
১৪৮৫ সালে রিচমন্ডের আর্ল হেনরি টিউডর তৎকালীন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় রিচার্ডকে বোসোর্থ যুদ্ধের ময়দানে পরাজিত করেন। যুদ্ধজয়ের পর তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। একই বছর রাজা সপ্তম হেনরি হিসেবে তার রাজ্যাভিষেক হয়। সিংহাসনে আরোহনের পরেই তিনি চতুর্থ এডওয়ার্ডের মেয়ে এবং তৃতীয় রিচার্ডের ভাগ্নে এলিজাবেথ অব ইয়র্ককে বিয়ে করার ঘোষণা দেন। মূলত হেনরি টিউডরের মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে টিউডর পরিবারের শাসনামল শুরু হয়েছিল।
নতুন রাজার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার সুযোগ ছিলো না। কারণ পিতৃহীন এলিজাবেথের অভিভাবক তৃতীয় রিচার্ডও পরাজিত হয়ে সিংহাসন হারিয়েছেন। যুদ্ধ থামানো এবং ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে হলে এই প্রস্তাবটি মেনে নিতে হতো তাদেরকে।
১৪৮৫ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজপ্রাসাদের তৎকালীন মুখপাত্র স্যার থমাস লভেল এই ঘটনাটিকে শুধুমাত্র একটি সান্ত্বনা হিসেবেই উল্লেখ করেন। মূলত নতুন রাজপরিবার হিসেবে সাধারণ মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্যই রাজা সপ্তম হেনরি এলিজাবেথকে বিয়ে করেন।
খুব ধুমধাম করেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার পর ওয়েস্টমিনস্টার হলে একটি ভোজের আয়োজন করা হয়। ইয়র্কের এলিজাবেথ তার বিয়ের সময় নীল, বেগুনি এবং টোনা রংয়ের গাউন উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। বিয়ের ৮ মাসের মাথায় হেনরি-এলিজাবেথ দম্পতির প্রথম সন্তান আর্থুর জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় এটি নিয়ে বেশ সমালোচনা হলেও ইতিহাসবিদরা মনে করেন এলিজাবেথ বিয়ের অনুষ্ঠানের পূর্বেই আর্থুরকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। কারণ সে সময় বিয়েটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
২৬ জুলাই ১৫৫৪: প্রথম মেরি এবং স্পেনের ভবিষ্যৎ রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ
রাজা অষ্টম হেনরির প্রথম স্ত্রী অ্যারাগন অব ক্যাথরিনের কন্যা প্রথম মেরি ছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম নারী শাসক। তার মা ক্যাথরিন ছিলেন তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যের রাজা পঞ্চম চার্লসের আত্মীয়। ১৫১৯ সালে চার্লস স্পেনের রাজা হওয়ার সুবাদে ব্রিটিশদের সঙ্গে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছিল। যদিও প্রথমদিকে এসব নিয়ে জনসম্মুখে তেমন আলোচনা হতো না। কিন্তু যখন চার্লস তার পুত্র দ্বিতীয় ফিলিপের সঙ্গে ক্যাথরিন ও ব্রিটিশ রাজা অষ্টম হেনরির বিয়ের প্রস্তাব দেন ঠিক তখনই ইংল্যান্ড জুড়ে ব্যাপক হট্টগোল শুরু হয়। কারণ রাজা চার্লস ক্যাথলিক হওয়ায় ইংরেজ খ্রিস্টানরা এটি মেনে নিতে পারেনি। তখন ইংরেজদের আশঙ্কা ছিলো দুই রাজার মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক সৃষ্টির মধ্য দিয়ে স্প্যানিশরা মহাদেশীয় যুদ্ধে ব্রিটিশদের জড়িয়ে ফেলবে।
অন্যদিকে, মেরি দ্বিতীয় ফিলিপের একটি ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে সাথে সাথে বিয়েতে সম্মতি জানান। যদিও ইতিহাসবিদদের ধারণা, এই বিয়েতে মেরির মা গোপনে ইন্ধন দিচ্ছিলেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তাকে একজন ইংরেজকে বিয়ে করার জন্য অনুরোধ জানালেও তাতে রাজি হননি মেরি। পার্লামেন্ট রাজকন্যার ইচ্ছা মেনে নিয়ে বিয়ের পর ব্রিটেনে দ্বিতীয় ফিলিপ এবং স্প্যানিশদের অবস্থান, ঘুরতে আসা এবং সঙ্গে সৈন্যবাহিনী, অস্ত্রসস্ত্র বহনের উপর নানারকম নিষেধাজ্ঞা জারি করে নতুন আইন পাশ করে।
বিয়ের পূর্বে দ্বিতীয় ফিলিপের পরিচয় ছিলো শুধুমাত্র রাজপুত্র। অতঃপর পঞ্চম চার্লস তাকে নেপলস ও সিসিলির রাজা ঘোষণা করে বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে ফিলিপকে স্পেনের পরবর্তী রাজা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফিলিপ এবং প্রথম মেরির রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানটি উইনচেস্টার ক্যাথেড্রালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ক্যাথেড্রালের পুঁথিতে লিপিবদ্ধ তথ্যানুযায়ী সেদিন পুরো ক্যাথেড্রালের দেয়ালগুলোকে দামী পর্দা ও সোনা খচিত কাপড়ে আবৃত করা হয়। বিয়েতে মেরি মুক্তা খচিত বেগুনি সাটিন এবং ফিলিপ সোনা দ্বারা আবৃত কাপড় পরিধান করেন। বিয়ের দিন উইনচেস্টার ক্যাথেড্রালে বিশাল ভোজ এবং নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিয়ের কয়েক মাস পর মেরি সন্তানসম্ভবা এমন গুঞ্জন রটে। অতঃপর ১৫৫৫ সালের প্রথমদিকে সবার থেকে আড়ালে চলে যান তিনি। ঐ বছর কয়েক দফায় গুঞ্জন রটে তিনি পুত্রসন্তানের মা হয়েছেন। যদিও ১৯৫৫ সালের এপ্রিলে সন্তান ছাড়াই তিনি আবারও জনসম্মুখে আসেন এবং রাজপরিবারের মুখপাত্র নিশ্চিত করেন তিনি মা হতে পারেননি। অতঃপর ১৫৫৮ সালে জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে বিয়ের আগের বছর ইংল্যান্ডের ইতিহাসের প্রথম নারী শাসক হিসেবে রানী প্রথম মেরির অভিষেক হয়। তার মৃত্যুর পর তার বোন রানী প্রথম এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেন।
পহেলা মে ১৬২৫: প্রথম চার্লস এবং হেনরিয়েটা মারিয়ার বিয়ে
রাজা প্রথম চার্লস ও ফ্রান্সের রাজা ত্রয়োদশ লুইয়ের ছোট বোন হেনরিয়েটা মারিয়ার বিয়ে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত হয়। কারণ চার্লস ছিলেন তখনকার সময়ের ব্রিটিশ চার্চের সুপ্রিম গভর্নর, অন্যদিকে মারিয়া এবং তার পরিবার রোমান ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন। তবে চার্লস ক্যাথলিক কাউকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন শুধুমাত্র তার প্রয়াত পিতা ষষ্ঠ জেমসের ইচ্ছায়।
১৬২৫ সালের পহেলা মে প্যারিসের নটরডেম ক্যাথেড্রালের সামনে রাজা চার্লস এবং হেনরিয়েটা মারিয়ার বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে খুব অল্প কয়েকজন ইংরেজ অতিথি উপস্থিত ছিলেন। স্বয়ং বরও বিয়ের আসর থেকে খানিকটা দূরে বসতে বাধ্য হন। ক্যাথলিকরা তাদের রীতিনীতির কথা বলে চার্লসকে বিভিন্নভাব বিদ্রূপ করে। ফরাসি রাজা সোনা ও রৌপ্যময় সুসজ্জিত পোশাক পরে বোনকে রাজমুকুট পরিয়ে বিয়ের আসরে প্রবেশ করেন। তখন মারিয়া একটি নীল রংয়ের বিয়ের পোশাক পরিধান করেন যাতে ফরাসি রাজপ্রসাদের প্রতীক অঙ্কন করা হয়েছিল। এছাড়াও তার পোশাকে সোনা খচিত কিছু অংশ ছিলো।
বিয়ের ছয় সপ্তাহ পর চার্লস এবং হেনরিয়েটা মারিয়া ইংল্যান্ডে একসাথ হন। অতঃপর ডোভার থেকে লন্ডন অবধি তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলে। হেনরিয়েটা-চার্লস দম্পতি সর্বমোট ৯ জন সন্তান লাভ করেন। ভিন্ন মতাবলম্বী হয়েও দুজন দুজনের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি করলেও সেকালে তাদের বিয়ে নিয়ে বিতর্কের শেষ হয়নি। আইরিশদের বিদ্রোহে মদদ দেয়াসহ মোট ৮টি অভিযোগে ১৬৪৯ সালে রাজা প্রথম চার্লসের শিরশ্ছেদ করার পাশাপাশি তার স্ত্রীকে অপসারণ করা হয়। ১৬৬৯ সালে হেনরিয়েটা মারিয়াও মৃত্যুবরণ করেন।
১০ ফেব্রুয়ারি ১৮৪০: রানী ভিক্টোরিয়া এবং প্রিন্স আলবার্টের বিয়ে
একজন শাসক হিসেবে রানী ভিক্টোরিয়া ছিলেন অসাধারণ। ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি প্রিন্স আলবার্টকে নিজে থেকেই বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখন প্রশ্ন উঠেছিল কেন তিনি অতীতের রানী এবং রাজকন্যাদের মতো কোনো সম্রাটকে বেছে নেননি। ভিক্টোরিয়া তখন রাজপরিবারের অন্যদের জানিয়ে দেন নিজের ইচ্ছার কথা। প্রকৃতপক্ষে রানী ভিক্টোরিয়া চেয়েছিলেন আর দশজন ব্রিটিশ নারীও যাতে ভবিষ্যতে তাকে অনুসরণ করে নিজের পছন্দের পুরুষকে স্বামী হিসেবে বেছে নেয়। রাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ধরা-বাধা নিয়মের মধ্য দিয়ে বিয়েসহ নারীদের জীবনের সব সিদ্ধান্ত নিতো তাদের পরিবার। ভিক্টোরিয়া ব্রিটিশ নারীদের সেই নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছেন।
ভিক্টোরিয়া এবং আলবার্টের বিয়ের অনুষ্ঠান সেন্ট জেমস প্যালেসের চ্যাপল রয়ালে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে আর দশজন রাজপরিবারের সদস্যের মতো সোনা, রৌপ্য পরিপূর্ণ পোশাক পরিধান করেননি তিনি। বিয়েতে পোশাক হিসেবে কমলা ফুলের নকশা করা স্কার্ফ সম্বলিত একটি সাদা সিল্কের পোশাক বেছে নেন। বর্তমানে ব্রিটেনের নারীরা নিজেদের বিয়েতে যে পোশাকগুলো পরিধান করেন সেগুলোর প্রচলন শুরু হয় রানী ভিক্টোরিয়ার বিয়ের পর থেকেই। ছোটবেলায় ভিক্টোরিয়া তার মায়ের সঙ্গে ইংল্যান্ডের অনেক শহরে ভ্রমণ করে পোশাক সম্পর্কে বেশ ধারণা অর্জন করেন। ফলে নিজের বিয়ের পোশাক পছন্দ করতে দেশীয় কাপড় এবং ডিজাইন প্রাধান্য দিয়েছিলেন তিনি।
সেকালে অস্তিত্ব সংকটে পড়া স্পিটালফিল্ড অঞ্চল থেকে সিল্ক সংগ্রহ করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করেন ভিক্টোরিয়া, যাতে সেখানকার শিল্পপতিরা ব্যবসা চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা পায়। এছাড়াও পোশাকের ফিতাগুলো আনা হয়েছিল হনিটনের গ্রাম থেকে এবং বিয়ার আনা হয় ডেভর থেকে। বিয়েকে কেন্দ্র করে পার্কে অনেক মানুষ জমায়েত হয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। রানীর ব্যক্তিগত সংবাদবাহকরা বিয়ের জনপ্রিয়তা এবং সাধারণ মানুষের সমর্থন কেমন ছিলো তা লিখে রাখেন। বাকিংহাম প্যালেসে সকালের নাস্তার মধ্য দিয়ে দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। নাস্তার টেবিলে ৩০০ পাউন্ডের একটি কেক রাখা ছিল।
ভিক্টোরিয়া তার স্বামী আলবার্টের সঙ্গে বেশ খুশি এবং আন্তরিক ছিলেন। যদিও তিনি তার কাজকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতেন। রাজকার্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় তিনি বিয়ের পর মাত্র ৩ দিন যেতে না যেতেই হানিমুন সমাপ্ত করে রাজসভায় ফেরেন। যদিও তার এমন মনোভাবে মোটেও নাখোশ ছিলেন না প্রিন্স আলবার্ট।
১০ মার্চ ১৮৬৩: ভবিষ্যৎ রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড এবং আলেকজান্দ্রার বিয়ে
রানী ভিক্টোরিয়া তার বড় ছেলে প্রিন্স আলবার্ট এডওয়ার্ডের স্ত্রী হিসেবে ডেনমার্কের রাজকন্যা আলেকজান্দ্রাকে বেছে নেন। অতীতে বেশিরভাগ রাজকন্যা বা রাজপুত্রের বিয়ের ক্ষেত্রে ফরাসি, স্প্যানিশ ও জার্মান রাজপরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য দিলেও শুধুমাত্র ভিক্টোরিয়া নিজের ছেলেদের ক্ষেত্রে একটু ভিন্নপন্থা অবলম্বন করেন। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর সমুদ্রকন্যা খ্যাত আলেকজান্দ্রাকে বরণ করতে মুখিয়ে ছিলো গোটা ব্রিটেন। বিয়ের অনুষ্ঠান লন্ডনের বাইরে আয়োজন করায় বেশ সমালোচিত হন রানী। ১৮৬১ সালে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী প্রিন্স আলবার্ট মারা যাওয়ায় তিনি তখনও ভারাক্রান্ত ছিলেন। তাই জনসম্মুখে আসতে চাননি রানী ভিক্টোরিয়া।
যদিও তিনি নিজেই অতিথিদের তালিকা তৈরি করেন ও সবার পোশাক কেমন হবে তা নির্ধারণ করে দেন। আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে শোক সম্বলিত ধূসর, লিলাক এবং সাদা জামা পরার নির্দেশ দেয়া হয়। রাজপরিবারের লোকজন, আত্মীয়, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি বরের চারজন বন্ধুকেও বিয়েতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে বিয়ের পর মধ্যাহ্নভোজে শুধুমাত্র ৩৮ জন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। স্বয়ং রানী ভিক্টোরিয়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। মূলত প্রয়াত আলবার্টের শোকে রানী বিয়ের কিছু আনুষ্ঠানিকতা তাৎক্ষণিক বাতিল করেন।
কথিত আছে, অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচ শতাধিক অতিথি লন্ডনে ফিরে যান, আবার অনেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। কারণ ট্রেনে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সেদিন সবক’টা স্টেশনে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। বিয়েতে প্রিন্সেস আলেকজান্দ্রা ফিতা সম্বলিত সাদা সিল্কের পোশাক পরেন যাতে গোলাপ, থিসলস ও শ্যামরোকসের প্রতীক নকাশা করা ছিলো। মূলত ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্যই ড্যানিশ রাজা এই নকশাগুলো নির্ধারণ করেন।
ইতিহাসের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/