কিছুদিন পর সিরিয়া অভিযানে যাওয়া উসামার বাহিনীও মদিনায় ফিরে আসে। উসামার নেতৃত্বে প্রায় সত্তর দিনের এই অভিযানে কয়েকটি বাইজান্টাইন শহর ও খ্রিস্টান ঘাসসানীদ রাজ্যকে জয় করে মুসলিমরা। এই অভিযানে উত্তর আরবের কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী মদিনার আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য হয়, এবং পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে। উসামার বাহিনীর প্রত্যাবর্তনে আবু বকর স্বস্তি ফিরে পান।
এবার আবু বকর (রা.) বিশ্বাসঘাতক আবস ও যুবইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করেন। তিনি স্বয়ং এই অভিযানের জন্য তৈরি হন। কিন্তু সাহাবীরা তাকে এই অভিযানে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারা খলিফাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে এখন যেহেতু উসামার বাহিনী মদিনায় ফিরে এসেছে, তাই মদিনা অনেক শক্তিশালী এবং খলিফার রণক্ষেত্রে যাওয়ার থেকে মদিনায় থেকে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়াই শ্রেয়। কিন্তু আবু বকর ছিলেন দৃঢ়চেতা। তিনি একবার যে প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছেন তা থেকে কেউই তাকে ফেরাতে পারেনি। শেষপর্যন্ত আবু বকরের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী যুল-কাসসার দিকে রওনা হয়। সেখানে তিনি বিদ্রোহীদের সমূলে উৎপাটন করেন। বিদ্রোহীদের পরাজিত করার পর অনেকেই পুনরায় ইসলামে ফিরে আসে এবং যাকাত দিতে সম্মত হয়।
এবার আবু বকর (রা.) সমগ্র আরব উপদ্বীপের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করেন। তখন বিদ্রোহীরা আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। এমতাবস্থায় আবু বকর গোটা মুসলিম বাহিনীকে এগারোটি ইউনিটে বিভক্ত করেন। প্রত্যেকটি ইউনিটের সেনাপতিদের হাতে একটি করে পতাকা সোপর্দ করা হয়। তিনি এই এগারোটি ইউনিটকে সমগ্র আরব উপদ্বীপে প্রেরণ করেন।
মুসলিম জাহানের খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা.) একটি পতাকা আল্লাহর তরবারি নামে খ্যাত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জেনারেলদের একজন মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদের হাতে তুলে দিলেন। খালিদের অসাধারণ বীরত্বের জন্য মুহাম্মদ (সা.) তাকে সাইফুল্লাহ বা আল্লাহর তরবারি উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। আবু বকর খালিদকে প্রথমে তুলাইহার বিরুদ্ধে অভিযানের এবং এরপর মালিক ইবনুল নুওয়ায়রাহকে শায়েস্তা করার নির্দেশ দিলেন। খলিফা আবু বকর দ্বিতীয় পতাকাটি ইকরিমা ইবনে আবু জাহলের হাতে সোপর্দ করেন। তাকে নির্দেশ দিলেন ইয়ামামার মুসাইলিমার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার।
মুসলিম বাহিনীর তৃতীয় পতাকাটি তুলে দেওয়া হয় মুহাজির ইবনুল আবু উমাইয়ার হাতে। তাকে ইয়েমেনের সান’আর আসওয়াদ আল আনসীর অনুসারীদের দমন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আসওয়াদের অনুসারীদের দমনের পর হাযরামাওতের বিদ্রোহীদের আক্রমণের নির্দেশ দেন খলিফা। চতুর্থ পতাকাটি দেওয়া হয় খালিদ ইবনুল সাঈদকে। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী কয়েকটি গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য তাকে পাঠানো হয়।
আমর ইবনুল আসের হাতে আবু বকর মুসলিম বাহিনীর পঞ্চম পতাকাটি সোপর্দ করে তাকে আরব-সিরিয়া সীমান্তের কয়েকটি বিদ্রোহী গোত্রকে দমন করার নির্দেশ দিলেন। ষষ্ঠ পতাকাটি দেওয়া হয় হুযাইফা ইবনুল মহসিনকে, এবং তাকে আম্মানে লাকীত ইবনুল মালিক আল-আযদীকে দমন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সপ্তম পতাকাটি আরফাজাহ ইবনে হারছামাহকে দিয়ে ইয়েমেনের মাহরা গোত্রের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পাঠানো হয়।
অষ্টম পতাকা তুলে দেওয়া হয় শুরাহবিল ইবনে হাসানাহর হাতে। তাকে প্রথমে ইয়ামামায় ইকরিমার বাহিনীকে সাহায্য করতে, এবং পরবর্তীতে আরব-সিরিয়া সীমান্তে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নবম পতাকা তুরায়ফা ইবনে হাজিযের হাতে তুলে দিয়ে তাকে সুলাইম গোত্র ও হাওয়াযিন গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠানো হয়। দশম পতাকাটি সুওয়াইদ ইবনে মুকাররিনকে দিয়ে তাকে ইয়েমেনের তিহামায় অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়। মুসলিম বাহিনীর একাদশ পতাকাটি সোপর্দ করা হয় আলা ইবনুল হাদরামীকে। তাকে নির্দেশ দেওয়া হয় বাহরাইনের বিদ্রোহীদের দমন করতে।
এরপর এই এগারোটি বাহিনী মদিনা থেকে বের হয়ে যার যার গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে। মদিনায় থেকে খলিফা আবু বকর ও শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন যুদ্ধের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে যুদ্ধের মূল নেতৃত্ব দিতে থাকেন।
মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের আগে বিদ্রোহীদের কাছে খলিফা আবু বকরের একটি ফরমান পড়ে শোনায়। এই ফরমান শুনে বিদ্রোহীরা যদি মদিনার শাসন মেনে পুনরায় ইসলামের আনুগত্য প্রকাশ করে, তবে তাদের মাফ করে দেওয়া হয়, কিন্তু যদি না করে তবে তাদের যুদ্ধে আহ্বান জানানো হয়।
তখন নিজেকে নবী দাবিকারী তুলাইহা আল-আসাদী তার অনুসারীদের নিয়ে আরো বেশি সংগঠিত হয়ে নজদের বুযাখা কূপের কাছে শিবির স্থাপন করে। আশেপাশের আরো কিছু গোত্র তার দলে যোগ দেয়। তুলাইহা বিশাল বাহিনী নিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করে। খালিদ সাইফুল্লাহর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী তুলাইহার বিরুদ্ধে অগ্রসর হতে থাকে। খলিফা আবু বকর খালিদকে বনু তাঈ গোত্র থেকে অভিযান শুরু করে বুযাখার দিকে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
খালিদ তাঈ গোত্রের দিকে অগ্রসর হলে সেই গোত্রের নেতা আদি ইবনুল হাতিম তার গোত্রের লোকদের ইসলামের প্রতি অটল থেকে মদিনার আনুগত্য স্বীকারের আহ্বান জানায়। আদি ইবনুল হাতিম আগে থেকেই ইসলামের প্রতি অনুগত ছিলেন। উল্লেখ্য, তিনি বিশ্বনন্দিত চরিত্র হাতিম তাঈয়ের ছেলে। প্রথমে তার কথা না মানলেও শেষপর্যন্ত মুসলিম বাহিনী সম্পর্কে তার হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে তাঈ গোত্রের লোকেরা তুলাইহার পক্ষ ত্যাগ করতে রাজি হয়। মুসলিমদের অভিযানের খবরে তাঈ গোত্র ইসলামে ফিরে এসে যাকাত প্রদানে সম্মত হয়। এভাবে বানু জাদীলাহ গোত্রও মদিনার শাসন মেনে নেয়।
এরপর খালিদ বুযাখার রণক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হন। সেখানে গিয়ে মুসলিম বাহিনী তুলাইহার সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে তুলাইহার বাহিনী মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেনি। মুসলিমদের তীব্র আক্রমণের মুখে তুলাইহার বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এ অবস্থা দেখে তুলাইহা পালিয়ে সিরিয়ায় চলে যায়। এরপর তুলাইহার বিদ্রোহী বাহিনীও পালাতে শুরু করে। এ সময় অনেক বিদ্রোহী ইসলাম গ্রহণ করে মদিনার কর্তৃত্ব মেনে নেয়। তারপর সেখানকার বিদ্রোহী গোত্রগুলোও যাকাত দিতে সম্মত হয়ে মদিনার শাসন মেনে নেয়। এরপর খালিদ বুযাখায় আরো কিছুদিন অবস্থান করে আশেপাশের দুর্বৃত্ত ও দুষ্কৃতকারীদের দমন করেন। তখন তিনি উম্মে যিমূল নামক এক নারী বিদ্রোহীকেও দমন করেন। এর মাধ্যমে আরবের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিদ্রোহ সম্পূর্ণভাবে দমন করা হয়। কিছুদিন পর তুলাইহা আরবে ফিরে এসে সম্পূর্ণরূপে মুসলিম হয়ে যায়।
ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব গোত্র সক্রিয়ভাবে বিদ্রোহ করে, সেসবের মধ্যে তামীম গোত্র ছিল অন্যতম। এটি ছিল আরবের অন্যতম বৃহৎ গোত্র। মুহাম্মদ (সা.) মালিক ইবনুল নুওয়ায়রাহকে তামীম গোত্রের একটি শাখায় মূলত যাকাত সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেছিলেন। মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর মালিক মদিনায় যাকাত পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন সাজাহ বিনতে হারিস নাম্নী জনৈকা মহিলা নিজেকে নবী দাবি করে। তিনি ইরাক থেকে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে আরবে আসেন। এ সময় আরো কয়েকটি গোত্র তার দলে মিলিত হয়। মালিক ইবনুল নুওয়ায়রাহও তখন সাজাহর পক্ষে যোগ দেয়। সাজাহ এবার সমগ্র আরব অঞ্চল বিজয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে। তামীম বংশের যেসব গোত্র আনুগত্য স্বীকার করেনি, তাদের উপর আক্রমণ করে সাজাহর বাহিনী। এ সময় বিভিন্ন গোত্রের মুসলিমরা সাজাহ ও মালিকের বাহিনীকে রুখে দেয়।
এরপর সাজাহ ইয়ামামার দিকে অগ্রসর হয়। ইয়ামামায় তখন মুসাইলিমার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ইয়ামামা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পুরোদমে প্রস্তুত। এমন সময় সাজাহর বাহিনী ইয়ামামার বিরুদ্ধে অভিযানে আসছে জেনে মুসাইলিমা বিচলিত হয়ে পড়েন। ইকরিমা ও শুরাহবিলের বাহিনী তখন ইয়ামামার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, এবং খালিদের বাহিনীও ইয়ামামার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এমতাবস্থায় সাজাহ ও মুসাইলিমা দুজনই নিজেদের মধ্যে সন্ধি করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। একপর্যায়ে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। মুসাইলিমার সাথে কিছুদিন অবস্থান করার পর সাজাহ যখন ফেরত আসছিল, তখন তিনি খালিদের মুখোমুখি হন। খালিদের বাহিনী দেখে সাজাহ ও তার বাহিনী পালিয়ে যায়। এরপর সাজাহ আত্মগোপন চলে যান।
খালিদ যখন একের পর এক অঞ্চল বিজয় করে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন তা দেখে মালিক ইবনুল নুওয়ায়রাহ অত্যন্ত হতাশ হন। খালিদ কয়েকদিনের মধ্যেই মালিকের কাছে বুতাহে পৌঁছেন। মালিক তখনও যাকাত প্রদান ও ইসলামের প্রতি বেশ দ্বিধান্বিত। খালিদ তখন মালিকসহ তার অনুসারীদের বন্দী করে। এ সময় সেই গোত্রের অনেকে ইসলামের আনুগত্য প্রকাশ করে। তখন খালিদের বাহিনী মালিক ইবনে নুওয়ায়রাহকে হত্যা করে।
এরপর খালিদ এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মুসাইলিমার বিরুদ্ধে এগিয়ে যান। খালিদের এই বাহিনীতে অনেক হাফেজসহ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেক সাহাবীও ছিল। খালিদ ইয়ামামায় পৌঁছে দেখেন- প্রায় ৪০,০০০ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মুসাইলিমা অপেক্ষা করছে। খালিদ তার বাহিনীকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করে সাজালেন। কিছুক্ষণ পরেই তুমুল যুদ্ধ শুরু হলো। প্রথমে মুসাইলিমার বাহিনীর তীব্র আক্রমণে মুসলিমরা পিছু হটে। কিন্তু খালিদ তাদেরকে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখে জোর আক্রমণের নির্দেশ দেন। এরপর খালিদও তার ইউনিট নিয়ে মুসাইলিমার বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই আক্রমণে উভয় বাহিনী অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খালিদ বুঝতে পারেন- এভাবে যুদ্ধ করলে সাফল্য আসবে না। তাই তিনি সরাসরি মুসাইলিমার উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। এমতাবস্থায় খালিদ তার বাহিনী নিয়ে মুসাইলিমার উপর তীব্র আক্রমণ করেন। এই আক্রমণ প্রতিহত করতে না পেরে মুসাইলিমা পালিয়ে যেতে শুরু করে। মুসাইলিমাকে পালাতে দেখে তার বাহিনীও ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
কিছুদূর পর ছিল সুউচ্চ প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত একটি বাগান। মুসাইলিমা তার কিছু অনুসারীসহ বাগানে প্রবেশ করে ফটক বন্ধ করে দেয়। এরপর মুসলিম বাহিনী এই বাগান অবরোধ করে। বাগানে প্রবেশের কোনো পথ দেখতে পা পেয়ে ইবনু মালিক নামক এক মুসলিম তার সাথীদের তাকে দেয়ালের উপর তুলে বাগানের ভেতর ফেলে দেওয়ার অনুরোধ করে। প্রথমে মুসলিমরা অসম্মতি জানালেও তার বার বার অনুরোধের প্রেক্ষিতে তারা রাজি হয়। এরপর তাকে দেয়ালের উপর তুলে বাগানের ভেতর ফেলে দেওয়া হয়। বাগানে প্রবেশ করেই তিনি দরজা খুলে দেন।
দরজা খুলে দিতেই মুসলিমরা স্রোতের মতো বাগানে প্রবেশ করে তীব্র আক্রমণ শুরু করে। এ সময় ওয়াশী মুসাইলিমার মুখোমুখি হয়। উহুদের যুদ্ধে হামযা (রা.)-কে হত্যার প্রায়শ্চিত্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ওয়াশীর বর্শার আঘাতেই মুসাইলিমা নিহত হয়। এই খবর শুনে মুসাইলিমার বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এরপর সেই বাহিনীর অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে মদিনার কর্তৃত্ব মেনে নেয়। এরই সঙ্গে ইয়ামামার বিদ্রোহ দমন হলো। প্রায় তিনশত সত্তর জন কোরআনের হাফিজ এই যুদ্ধে নিহত হয়। এই যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে আরবের বিদ্রোহ অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিছুদিনের মধ্যেই বাহরাইন, ওমান, ইয়েমেন ও হাযরামাওতের বিদ্রোহ দমন করে মুসলিম বাহিনী। প্রায় এক বছরের এই সামরিক অভিযানে সমগ্র আরবের বিদ্রোহ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। গোটা আরব উপদ্বীপে আবারও ইসলামের পতাকা উত্তোলিত হয়। অর্থাৎ রিদ্দার যুদ্ধে মুসলিমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
রিদ্দার যুদ্ধ ছিল ইসলামের ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। ইসলাম যখন সবেমাত্র দাঁড়াতে শুরু করেছিল, তখনই এক বিশাল বিদ্রোহ দেখা দেয় যা ইসলামের অস্তিত্বকে সংকটের মুখে ফেলে। এই যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয়ের ফলে ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষা পায়। আবু বকরের (রা.) দৃঢ় নেতৃত্বে এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ইতিহাসবিদরা তাঁকে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলে অভিহিত করেন। তাঁর কঠোর নেতৃত্ব, সময়োপযোগী ও সাহসী পদক্ষেপ এবং দৃঢ় প্রত্যয়ের ফলেই এই যুদ্ধে মুসলিমরা বিজয়ী হয়। রিদ্দার যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদ তার সাইফুল্লাহ উপাধির যৌক্তিকতা প্রমাণ করেন। রণক্ষেত্রে খালিদের বীরত্ব ও নেতৃত্বের মাধ্যমেই মুসলিমদের বিজয় অর্জিত হয়।
এই যুদ্ধে যদি বিদ্রোহীরা জয়লাভ করত, তবে রাজনৈতিক ইসলাম হয়তো বিনষ্ট হয়ে যেতো। সেই সঙ্গে আধ্যাত্মিক ইসলামও ব্যাপক বিকৃতির শিকার হতো। রিদ্দার যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে ইসলাম আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে সমগ্র আরব উপদ্বীপ একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্রের পুনর্জন্ম হয়। এরপর ঐক্যবদ্ধ আরবরা উপদ্বীপ থেকে বেরিয়ে বিশ্বব্যাপী নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়। অস্তিত্ব সংকটে থাকা এই রাজনৈতিক ইসলামই এরপর রোমান বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য ও সাসানী পারস্য সাম্রাজ্যকে বিজয় করে পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।