একটি ছবি কখনো কখনো অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি ছবির প্রভাব এতটাই বিস্তৃত হতে পারে যে, তা কল্পনাও করা যায় না। ডেভিড কার্বির মৃত্যুশয্যার তেমনই একটি ছবি। এটি বিশ্বব্যাপী এইডসের মহামারী সংক্রমণ এবং এর পরিণতি সম্পর্কে মানুষের ধ্যানধারণা বদলে দিয়েছিল।
এইডসের উৎপত্তি এবং বিস্তারের শুরুর দিকে, এইডস নিয়ে কোনো কাজ করার প্রধান অন্তরায় ছিল তখনকার সামাজিক এবং পারিবারিক রক্ষণশীলতা। এইডসকে মরণব্যধি হিসেবে চিহ্নিত করা হতো এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অচ্ছুৎ মনে করা হতো। সামাজিক এবং পারিবারিক পরিমণ্ডলে এইডস এবং এইচআইভি নিয়ে এতটাই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হতো যে, একজন এইডস রোগীকে শেষপর্যন্ত পরিবার পরিজন থেকে দূরে, একা একঘরে করে রাখা হতো। কিন্তু একটি ছবি এসব রক্ষণশীল ও নেতিবাচক সামাজিক এবং পারিবারিক ধারণাকে বদলে দেয়। ছবিটির অন্যতম এবং তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা হচ্ছে, এইডসের কারণে পারিবারিক মূল্যবোধের কোনো অবক্ষয় তো হয়ই না, বরং পারিবারিক মূল্যবোধের উন্নতির জন্য পরিবারের সঠিক মূল্যায়নই জরুরী।
১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে লাইফ (LIFE) ম্যাগাজিন ডেভিড কার্বি নামক এক যুবকের ছবি প্রকাশ করে। ছবিতে দেখা যায়, এইডসে আক্রন্ত হয়ে ডেভিড কার্বির জরাজীর্ণ দেহ মৃত্যুশয্যায় পড়ে আছে এবং তার চারপাশে পরিবারের দুঃখ ভারাক্রান্ত সদস্যরা তাকে ঘিরে আছেন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগমুহূর্তে কার্বি শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, যেন তার জগতটা কোথাও বাঁধা পড়ে আছে। মৃত্যুশয্যায় ডেভিড কার্বির শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের এই ছবিটির চিত্রগ্রাহক তেরেসা ফ্রারে। ১৯৯০ সালে তেরেসা ফ্রারে একজন সাংবাদিকতার ছাত্রী ছিলেন। ছবিটি প্রকাশিত হবার পর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এইডসের ভয়ংকর মহামারী রূপ চিত্রিত করে। সেসময় পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে শুরু করেছিল।
ডেভিড কার্বি যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর একটি ছোট্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। ১৯৮০’র দিকে তিনি একজন এলজিবিটি অ্যাক্টিভিস্ট বা স্বেচ্ছাসেবী কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে যখন তিনি ক্যালিফোর্নিয়াতে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে জীবনযাপন করতেন, তখন তিনি প্রথম জানতে পারেন যে, তার শরীরে মরনব্যধি এইডস বাসা বেঁধেছে। এরপর তিনি পুনরায় তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং জীবনের শেষ দিনগুলো পরিবারের সান্নিধ্যে কাটাতে চান। কার্বির ইচ্ছে অনুসারে তার বাবা-মা তাকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসতে কোনো বাঁধা দেননি।
ছবির ফটোগ্রাফার তেরেজা ফ্রারে ডেভিড কার্বির জীবনের শেষ দিনগুলোর কথা স্মৃতিচারণ করে বলেন,
“ডেভিড কার্বি যেদিন মারা যায়, সেদিন আমি পেতার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। পিটার নস্টার হাউজে পেতাই ডেভিডের শেষ দিনগুলোতে তার দেখাশোনা করতেন। সেখানকার কয়েকজন স্টাফ পেতাকে নিয়ে ডেভিডকে দেখতে যায় এবং পেতা আমাকে তার সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি সেখানে গিয়ে ডেভিডের কক্ষের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। একসময় কার্বির মা বাইরে এসে আমাকে ভেতরে যেতে অনুরোধ করেন। তারা ডেভিডের জীবনের অন্তিম মুহূর্তে ডেভিডকে বিদায় জানানোর স্মৃতিগুলো ছবি তুলে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন। কক্ষে প্রবেশের পর আমি এক কোনে চুপচাপ অনড় দাঁড়িয়ে, ভেতরের হৃদয়বিদারক মুহূর্তের ছবি তুলছিলাম। ঠিক তার পরপরই আমার মনে হচ্ছিল, এই কক্ষে আমার নিজ চোখের সামনে অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া একইসাথে অবিশ্বাস্য এবং অকল্পনীয়।
ছবি তোলার আগে আমি ডেভিডকে একবার জিজ্ঞেস করে নিয়েছিলাম, মৃত্যুশয্যায় ছবি তুলতে তার কোনো আপত্তি আছে কিনা। সে বলেছিল, “ব্যক্তিগত লাভের নিমিত্তে যদি এই ছবিগুলো ব্যবহার না হয়, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।” তারপর থেকে এখন পর্যন্ত, ছবিটির বিনিময়ে আমি কখনো কোনো পারিশ্রমিক দাবি করিনি। যেহেতু ডেভিড নিজে একজন এইডস অ্যাক্টিভিস্ট ছিলেন, তাই তিনি সমাজ এবং পরিবারের উপর এইডসের প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটি বিশ্ববাসীকে জানাতে চেয়েছিলেন।”
ছবিটি সাধারণ চোখে দেখলে হয়তো মনে হতে পারে, একজন আইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুশয্যায় তার পরিবার-পরিজনের দুঃখ বেদনা ফুটে উঠেছে। কিন্তু আরো গভীরভাবে দেখলে, ছবিটির সামগ্রিক পরিবেশ এর অভিব্যক্তিকে আরো বেশি বিস্তৃত করেছে বলে বোঝা যায়।
তৎকালীন সময়ে বেশিরভাগ মানুষ এইডস বলতে বুঝতো, অচ্ছুৎ এই রোগের শেষ পরিণাম মৃত্যু। এইডসকে পুরুষ সমকামীদের রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হত। অর্থাৎ এইচআইভি এবং এইডস সম্পর্কে মানুষের সঠিক এবং সামগ্রিক কোনো ধারণা ছিল না। লাইফ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ছবিটির মূল ক্যাপশন ছিলো, “এইডস এবং সামাজিক গোঁড়ামির বিরুদ্ধে দীর্ঘ তিন বছর লড়াই করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ডেভিড কার্বি। স্ট্যাফোর্ড ওহাইও এইডস ফাউন্ডেশনের বত্রিশ বছর বয়সী এই প্রতিষ্ঠাতা এবং নেতা তার পাশে বাবা, বোন এবং ভাগ্নীকে রেখে স্বস্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার ঠিক আগমুহূর্তে ডেভিড ফিসফিস করে বলেছিলেন, “এবার আমি প্রস্তুত”।”
১৯৬০-৮০ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় সংগঠিত অবাধ যৌনাচারের পক্ষে আন্দোলন এবং এইচআইভি ও এইডসের প্রাদুর্ভাব সামলানোর ক্ষেত্রে কৌশলগত ত্রুটির কারণে, সেখানে এইচআইভি বা এইডসের প্রাদুর্ভাব প্রকট আকার ধারণ করে। উপর্যুক্ত সময়কালে বিবাহবদ্ধ গতানুগতিক একমুখী যৌন প্রথার সামাজিক সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে অবাধ যৌনাচার আন্দোলন প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৯৯০ সালের এপ্রিলে ডেভিডের মৃত্যুর সাত মাস পর নভেম্বরে ছবিটি লাইফ ম্যাগাজিনে প্রথম প্রকাশিত হয়। এরপর শত শত পত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং টেলিভিশনে ছবিটি এতবার পুনঃপ্রকাশ এবং প্রদর্শন হয়েছে যে, ধারণা করা হয় এখন পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় একশ কোটি মানুষ ছবিটি দেখেছে। ছবিটির প্রকাশ এবং প্রচার যতই বৃদ্ধি পেয়েছে, ততই এটি নিয়ে বিতর্ক জন্মেছে।
ডেভিডের মৃত্যুশয্যায় তার পরিবারের সান্ত্বনা প্রদানের ছবিটি লাইফ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হবার পর, ছবিটি ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো এ্যাওয়ার্ড অর্জনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী আরো সুনাম কুড়ায়। কিন্তু এর দুই বছর পর, বেনেটন নামক পোশাক কোম্পানি ছবিটি রঙিন মুদ্রণ করে বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইনে ব্যবহার করার পর ছবিটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। আমেরিকা এবং বিশ্বব্যাপী কিছু মানুষ এবং রোমান ক্যাথলিকরা ছবিটিতে কুমারী মাতা মেরির হাতের একটি দেয়ালচিত্র দেখে দাবি করেন, ছবিটির মাধ্যমে কুমারী মাতা মেরীর ক্রুশবিদ্ধ যীশুকে ধরে রাখার ঐতিহাসিক চিত্রটিকে ঠাট্টা করা হয়েছে।
টি-শার্ট বিক্রির বিজ্ঞাপন হিসেবে বেনেটন কোম্পানির এই মর্মান্তিক ছবির ব্যবহার দেখে এইডসের বিরুদ্ধে এবিং এইচআইভি সংক্রামণ প্রতিরোধে লড়াই করে যাওয়া হাজারো স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়েন। তারা বেনেটন কোম্পানির এই বিজ্ঞাপন ও প্রচারণাকে মৃত্যুর উপর পুঁজিবাদী শোষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। যুক্তরাজ্যের উচ্চ পর্যায়ের দাতব্য এইডস সংস্থা ‘হেগিন্স টেরেন্স’ বিজ্ঞাপনটিকে আক্রমণাত্মক এবং অনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করে এর প্রকাশ এবং প্রচার নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। এরপর এলি, ভোগ, মেরি ক্ল্যারির মতো পাওয়ারহাউজ ফ্যাশন ম্যাগাজিন এই বিজ্ঞাপন গ্রহণ এবং প্রচার থেকে সরে আসে।
কার্বি পরিবার পরবর্তীতে বেনেটন কোম্পানির এমন চতুর প্রচারণার ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ডেভিড কার্বির মা লাইফ ম্যাগাজিনকে বলেন,
“তেরেসার তোলা ছবিটি বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেনেটন কোম্পানির সাথে আমাদের কোনোরূপ চুক্তি বা অনুমোদন ছিল না। বিজ্ঞাপনটি প্রকাশের পর আমি তাদের কাছ থেকে দুটো পয়সাও দাবি করিনি, বরং মানুষের অভিবাক্তি এবং প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। আমাদের ছেলে ডেভিডকে এবং আমাদেরকে একটা সময়ে কেউই চিনতো না, কিন্তু এই বিজ্ঞাপন প্রচারের পর থেকে আমাদের সন্তান হারানোর দুঃসহ দুঃখবোধ সম্পর্কে মানুষ ধারণা পাবে এমনটাই আশা করেছিলাম”।
এইডসের ভয়ংকর শারীরিক প্রভাব বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন,
“আমাদের সন্তান মৃত্যুশয্যায় একপ্রকার অনাহারেই মারা গিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম, মানুষকে এইডসের ভয়াবহতা মানুষকে বোঝানোর জন্য এটিই আসল সময় এবং মাধ্যম। বেনেটন কোম্পানির প্রচারণার অংশ হিসেবে যদি মানুষের মধ্যে এইডস সম্পর্কে সচেতনটা বৃদ্ধি করা যেত, তাহলে তো ভালই হতো। ডেভিড যে অন্য সকলের মতো, সুস্থ-সবলভাবে আমাদের মাঝেই ছিল, মানুষের মধ্যে এই বোধটা জাগ্রত করার এটিই ছিল শেষ সুযোগ”।
অনাথ আশ্রমে তেরেসা ফ্রারে ডেভিডের ছবি তোলা শুরু করার মোটামুটি অল্প সময়ের পরই ডেভিড মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু অদ্ভুত এবং অভূতপূর্ব ঘটনা হচ্ছে, তেরেসা ডেভিডের ছবি তোলার জন্য যেটুকু সময় ডেভিডের সাথে কাটিয়েছিলেন, তার চাইতেও বেশি সময় কাটিয়েছিলেন পেতার সাথে। পেতা যখন ডেভিড কার্বির দেখাশোনা করতেন, তখন তিনি নিজেও এইচআইভি আক্রান্ত ছিলেন।
ডেভিডের মৃত্যুর পর ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পেতার সাথে তেরেসা ফ্রারে প্রায় দুই বছর ধরে কাজ করেছিলেন, ছবি তুলেছিলেন এবং পেতার দেখাশোনা করেছিলেন। ১৯৯২ এর শরতে, পেতা সেই সন্ন্যাস আশ্রমেই মৃত্যুবরণ করেন। পেতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ফটোগ্রাফার তেরেসা ফ্রারে বলেন,
“পেতার জীবনটা ছিল অদ্ভুত। তিনি ছিলেন অর্ধেক নেটিভ আমেরিকান, অর্ধেক শ্বেত এবং পিটার নস্টর সন্ন্যাস আশ্রমের একজন সেবা গ্রাহক। এতকিছুর পরেও তিনি একজন শক্ত মন-মানসিকতার মানুষ ছিলেন।”
ডেভিড কার্বির মৃত্যুর পর কার্বি পরিবার পেতার পাশে এসে দাঁড়ায়। ১৯৯২ সালের শুরুর দিকে পেতার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যেতে শুরু করে। পেতা যেমনটা সন্ন্যাস আশ্রমে ডেভিডের পাশে ছিলেন, ডেভিডের দেখাশোনা করেছিলেন; ডেভিডের বাবা বিল কার্বি এবং মা কী কার্বি পেতার শেষ দিনগুলোতে পেতার পাশে থেকে তার দেখাশোনা করেছিলেন।
ডেভিড কার্বি এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে যখন আবার ওয়াহাইওতে ফিরে এলেন। তখন নিজে বাসার কাছে সন্ন্যাস আশ্রমে ডেভিডের চিকিৎসা এবং ডেভিডের প্রতি সকলের আচরণ দেখে, ডেভিডের বাবা-মা খুব মর্মাহত হয়েছিলেন। সেখানে ডেভিডকে যিনি খাবার দিয়ে যেতেন, এইচআইভি সংক্রমণের ভয়ে তিনি ডেভিডকে একবারের জন্যও তাকে স্পর্শ করতে দেননি। ভগ্ন এবং অসুস্থ শরীর নিয়ে ডেভিডকে তার কক্ষের দরজার সামনে থেকে খাবার নিয়ে খেতে হতো। কার্বি পরিবার নিজের ছেলের এমন দুর্দশা দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, মৃত্যু পূর্ববর্তী সময় ডেভিড যে দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে পার করেছিলেন, পেতার ক্ষেত্রে তারা সেটি ঘটতে দিবেন না।
ফটোগ্রাফার তেরসা ফ্রারে পিটার নস্টারে ডেভিডের ছবি তোলা এবং এর পরবর্তী প্রভাব ব্যখ্যা করতে গিয়ে বলেন,
“এইচআইভি এবং এইডস নিয়ে কাজ করা ছিল আমার জন্য বেশ কঠিন এবং দুঃসাহসিক ব্যাপার। তখনকার সময়ে এইচআইভি আক্রান্তদের একটা কমিউনিটি খুঁজে পাওয়া একটু কঠিনই ছিল। কিন্তু পিটার নস্টার আশ্রমে কাজ করার অনুমতি পাওয়ার পর আমি বুঝতে পারি, একটু গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হয়েছি। কিন্তু আমি কখনো ভাবতেও পারিনি, একটা ছবির কারণে পুরষ্কার পাবো, পৃথিবীব্যাপী সমালোচিত হবো, বেনেটন কোম্পানি বিতর্কের অংশ হয়ে যাব! কিন্তু এর পরেও আমি পেতা এবং কার্বি পরিবারের সাথে সময় কাটিয়েছি, অনেক ছবি তুলেছি। কিন্তু হঠাৎ একদিন সেসব ছবির কথা মানুষ ভুলে যায় এবং মন থেকে হারিয়ে যায়।”
ভুলে যাক বা মন থেকে হারিয়ে যাক- অন্তত এতটুকু বলা যায় যে, সেগুলোকে দারুণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু লাইফ ম্যাগাজিন তেরেসা ফ্রারের কাছ থেকে ছবিগুলো পুনরায় উদ্ধার করে প্রকাশ করে। কার্বির ছবিটি নিয়ে যখন বেনটন কোম্পানি বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিল এবং চারদিকে বিতর্ক চলছিল, তখন ছবির ফটোগ্রাফার তেরেসা ফ্রারে এতটাই মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন যে, ডেভিডের বাবা বিল কার্বি তাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বলেছিলেন,
“বেনেটন আমাদের শোষণ করেনি বা ব্যবহারও করেনি। উপরন্তু আমরাই বেনেটন কোম্পানির প্রচারণার সুবাদে ডেভিডকে এবং এইডসের ভয়াবহতাকে সারা পৃথিবীর মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি, যা ডেভিডেরও স্বপ্ন ছিল।”
বেনেটন কোম্পানি বিতর্কের অবসানের পর তেরেসা ফ্রারে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ফটোসাংবাদিকতা চালিয়ে যান। এবং সময়ের সাথে সাথে এইডস এবং এইচআইভি নিয়ে মানুষের রক্ষণশীল ধ্যানধারণা আরো নমনীয় হতে থাকে। পিটার নস্টার হাউজের পরিচালক, বার্ব কর্ডেল ছবিটি সম্পর্কে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন,
“এইডস এবং এইচআইভি আক্রান্তদের তরে মানুষের হৃদয়কে নমনীয় করতে এই ছবিটি এখন পর্যন্ত সবচাইতে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। একবার এই ছবিটির দিকে তাকালে, আপনি কখনোই একজন এইডস রোগীকে ঘৃণা করতে পারবেন না। কখনোই না।”
–
দ্রষ্টব্য: ছবিটি সর্বপ্রথম লাইফ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হলেও,পরবর্তীতে টাইম পত্রিকা ম্যাগাজিনটির স্বত্ব কিনে নেয়। নির্ভরযোগ্যতার খাতিরে এই লেখার অধিকাংশ তথ্য-উপাত্ত এবং উক্তি টাইম ম্যাগাজিন থেকে নেয়া হয়েছে।
Feature Image: Rare Historical Photos.