গভীর রাতে প্যালেস অফ ব্রিগেডের সর্বদক্ষিণের বারান্দার হলুদ বাল্বটি জ্বলে উঠলো। বারান্দায় রাখা আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে বসে আছেন আলবেনিয়ার কমিউনিস্ট রাষ্ট্রপ্রধান এনভার হালিল হোজ্জা। তার পরনের জামার পিঠের দিকে লম্বা করে ভিজে আছে। এক বীভৎস দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠেছেন তিনি। ঘুম ভাঙার পর বুঝতে পারলেন, তার সমস্ত দেহ ঘামে ভিজে গেছে। তাই দুঃস্বপ্নের রেশ কাটিয়ে উঠতে তিনি বারান্দায় এসে বসেছেন। কিন্তু কিছুতেই তার মাথা থেকে সেই স্বপ্নের কথা তাড়াতে পারছেন না। বারবার চোখের সামনে সিনেমার মতো ভেসে উঠছে সেই দুঃস্বপ্নের খণ্ডচিত্র।
তিনি দেখেছেন পুরো পৃথিবী ফের বিশ্বযুদ্ধে মেতে উঠেছে। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে সব ধরনের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাদ যায়নি এনভার হোজ্জার স্বপ্নের রাষ্ট্র আলবেনিয়াও। তার এই স্বপ্নঘেরা আলবেনিয়ার পথে প্রান্তরে আগুন জ্বলে উঠলো। সৈনিকদের মরদেহের স্তূপে আলবেনিয়া রূপান্তরিত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে। স্বপ্ন এখানে থেমে গেলেও পারতো। কিন্তু তার জন্য আরো বিভীষিকা নিয়ে হাজির হলো এক পারমাণবিক বোমা। আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় শত্রু রাষ্ট্র থেকে এক বিধ্বংসী পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হলো। সেই বোমা ভূপাতিত হওয়া মাত্র এক চোখ ঝলসানো বিস্ফোরণে তিরানার জনগণ তেজস্ক্রিয়তার আগ্রাসনে ভস্মীভূত হয়ে গেলো। রক্ষা পাননি এনভার হোজ্জা নিজেও। স্বপ্নের মাঝে তিনি নিজের কষ্টদায়ক মৃত্যুর সাক্ষী হলেন। তিনি কীভাবে এই স্বপ্নের কথা ভুলতে পারবেন?
আরাম কেদারায় দোল খেতে খেতে তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলেন। যদি দৈবক্রমে সত্যি সত্যি যুদ্ধ বেঁধে যায়, তাহলে তিনি কীভাবে এই পারমাণবিক বোমা থেকে রক্ষা পাবেন? এর একটা বিহিত করা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। পারমাণবিক হামলা থেকে নিজের প্রাণ রক্ষার্থে এনভার হোজ্জা গড়ে তুললেন এক প্রকাণ্ড বাঙ্কার। উপরের স্বপ্নের ঘটনা কল্পনাপ্রসূত হলেও এনভার হোজ্জার পারমাণবিক বোমার ভয়ে বাঙ্কার নির্মাণের ঘটনা এক ফোঁটাও কাল্পনিক নয়। ১৯৭৮ সালে আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানার কিছুটা বাইরের দিকে গড়ে তোলা এই বাঙ্কারের নাম ছিল ‘ফ্যাসিলিটি ০৭৭৪’।
একজন এনভার হোজ্জা
১৯৪১ সালে আলবেনিয়ার রাজনীতিতে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন সাধিত হলো। প্রথাগত রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে এক নতুন সূর্যোদয় ঘটলো। রাজতন্ত্রের সিংহাসন ভেঙে আবির্ভূত হলেন এনভার হোজ্জা নামক এক কমিউনিস্ট নেতা। এর মাধ্যমে শুরু হলো কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে আলবেনিয়ার দীর্ঘ পথ চলা। প্রায় চার যুগ ধরে আলবেনিয়া শাসন করে থাকা এই নেতা দেশটির ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইতিহাসে স্থান লাভ করেন।
কিছুটা জোসেফ স্তালিনের চিন্তাধারার এনভার হোজ্জা আলবেনিয়ার আধুনিকীকরণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু তার চিন্তাধারার সাথে সবার মতের মিল হতো না। তাই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে আলবেনিয়ার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। এরই সূত্র ধরে ১৯৪৮ সালে যুগোস্লাভিয়া, ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ১৯৭৯ সালে চীনের সাথে আলবেনিয়ার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তৎকালীন আলবেনিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান বর্তমান যুগের উত্তর কোরিয়ার সাথে বেশ খানিকটা মিলে যায়। চারদিক থেকে নিষেধাজ্ঞা আসতে থাকে। এদিকে প্রায় কয়েক যুগ যাবৎ আলবেনিয়া শাসন করতে করতে যেন এনভার হোজ্জাও খানিকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ফলে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা অস্থির হয়ে উঠেন। তার মনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের অস্থির রাজনৈতিক হালচাল ঘুরপাক খেতে থাকে।
এসব কিছুর অন্তর্জালে আবদ্ধ হোজ্জা এক সময় বিশ্বাস করা শুরু করেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও শত্রুদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, শত্রুরা আর কিছুদিনে মধ্যেই আলবেনিয়া দখল করে নেবে। এমনকি পারমাণবিক বোমা হামলার সম্ভাবনার কথাও তিনি উল্লেখ করতেন তার কলাকুশলীদের নিকট। তবে তার অদ্ভুত আচরণ সবকিছুর মাত্রা ছাড়িয়ে যায় যখন তিনি তিরানায় দুটি বড় ফুটবল মাঠের সমপরিমাণ জমির উপর বাঙ্কার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেন।
বাঙ্কার নির্মাণ
এনভার হোজ্জার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার উসিলায় ১৯৭২ সালে শুরু হয় বাঙ্কার নির্মাণ। তিনি আলবেনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বমোট ১ লক্ষ ৭০ হাজার বাঙ্কার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। তবে সেগুলোর বেশিরভাগই ছিল আকারে ক্ষুদ্র। ছোট বাঙ্কারগুলোতে একসাথে মাত্র দুজন মানুষ অবস্থান করতে পারতো। কিন্তু হোজ্জার মূল আগ্রহ ছিল একটি বাঙ্কারকে ঘিরে। মালি-ই-দাজতিত পর্বতের পাদদেশে ‘ফ্যাসিলিটি ০৭৭৪’ নামক সেই বাঙ্কার নির্মাণে আলবেনীয় শ্রমিকদের লেগে যায় প্রায় ৬ বছর। তবে এই দীর্ঘ সময় ধরে নির্মাণকালে হোজ্জার নির্দেশে বাঙ্কারের বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। তাই আলবেনিয়ার সাধারণ জনগণের কেউই এই বাঙ্কারের কথা জানতে পারেনি।
মোট ১০৬ কক্ষবিশিষ্ট (মতান্তরে ৩০০) এই বিশাল বাঙ্কারের ভেতর হোজ্জার নিজস্ব নকশা অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে অফিস কক্ষ, সচিবালয়, শয়নকক্ষ, স্নানকক্ষ থেকে শুরু করে ক্যাবিনেট কক্ষও তৈরি করা হয়। বাঙ্কারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয় আধুনিক প্রযুক্তি। এর ফলে গ্রীষ্মকালে তিরানার তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে ওঠে যায়, তখনও বাঙ্কারের অভ্যন্তরে আরামদায়ক শীতল আবহাওয়া বজায় থাকে। হোজ্জার ব্যক্তিগত কক্ষে সবধরনের বিলাসিতার সরঞ্জাম এবং আসবাবপত্র দিয়ে সজ্জিত করা হয়। আর বাকি কক্ষগুলোয় সাধারণ কাঠের তৈরি আসবাবপত্র রাখা হয়।
১৯৭৮ সালে বাঙ্কার নির্মাণ শেষ হওয়ার পর এনভার হোজ্জা বাঙ্কার ঘুরে ঘুরে দেখেন আর শত্রু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেরিলা প্রতিরক্ষার পরিকল্পনা করতে থাকেন। যদিও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর কেউই এই সম্পর্কে কিছু জানতো না। পুরো বাঙ্কারটি ছিল জানালাবিহীন। পরিকল্পনামতে, পারমাণবিক বোমা ফেলার পর রাষ্ট্রের বড় বড় আমলা আর মন্ত্রীসহ এই বাঙ্কারে আশ্রয় নেবেন এনভার হোজ্জা। তারপর সঠিক সময়ে তিনি ধ্বংসস্তূপ থেকে পুনরায় গড়ে তুলবেন আলবেনিয়াকে। কিন্তু তার এই অদ্ভুত স্বপ্ন কোনোদিনই পূরণ হয়নি। ১৯৮৫ সালে এনভার হোজ্জা মৃত্যুবরণ করেন। যদিও তার মৃত্যুর পেছনে কোনো পারমাণবিক বিস্ফোরণের হাত ছিল না, এটুকুই হয়তো তার প্রাপ্তি।
তার মৃত্যুর মাত্র ৬ বছরের মাথায় আলবেনিয়ায় কমিউনিজমের বিলুপ্তি ঘটে। ১৯৯১ সালে আলবেনিয়া নিজেকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর আলবেনিয়াজুড়ে শুরু হয় অরাজকতা। ক্ষমতান্বেষী নেতাদের কোন্দলের শিকার হয় দেশটির রাজনৈতিক কাঠামো। ওদিকে হোজ্জার মৃত্যুর পর বাঙ্কারটি বন্ধ হয়ে গেলেও মাঝে মাঝে বিভিন্ন সামরিক মহড়ার উদ্দেশ্যে তা ব্যবহৃত হতো। ১৯৯৭ সালে এক রাজনৈতিক দাঙ্গায় দেশের হাজার হাজার সামরিক ঘাঁটিতে লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। এদের মধ্যে ফ্যাসিলিটি ০৭৭৪-ও বাদ যায়নি। ১৯৯৯ সালে সরকারি উদ্যোগে ফ্যাসিলিটি ০৭৭৪ এর প্রবেশদ্বার সিলগালা করে দিলে তা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
বাঙ্ক-‘আর্ট’ ফ্যাসিলিটি ০৭৭৪
১৯৪৪ থেকে ২০১৪ সাল। নাৎসি শাসন থেকে আলবেনিয়ার মুক্তির প্রায় ৭০ বছর পেরিয়ে গেছে। নাৎসিদের কুশাসন এবং অত্যাচার অবসানের পূর্তি উপলক্ষ্যে এই বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইলেন তৎকালীন আলবেনিয়া সরকার। এই উদ্দেশ্যে তারা দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ধ্বংসস্তূপ থেকে পুনরুদ্ধার করার কাজ হাতে নেন। ধ্বংসস্তূপের সেই বিশাল তালিকায় স্থান পায় এনভার হোজ্জার প্রতিরক্ষা প্রাসাদ ফ্যাসিলিটি ০৭৭৪। সেবছর মাত্র দুই মাসের জন্য বাঙ্কারের ফটক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এই খবর প্রচার হওয়া মাত্র দেশ এবং বিদেশ থেকে ইতিহাসপ্রেমী হাজারো পর্যটক তিরানায় ছুটে যান। সরকারি হিসাবমতে সেবার প্রায় ৬০ হাজার পর্যটক ফ্যাসিলিটি ০৭৭৪ দেখত এসেছিলো। আশাব্যঞ্জক প্রতিক্রিয়া দেখে সরকার বাঙ্কারটি নতুনভাবে সাজানোর প্রয়োজন মনে করেন। বাঙ্কারটি নতুনভাবে খোলার পেছনে কার্লো বোলিনো নামক এক ইতালীয় সাংবাদিকের শ্রম ছিল। শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এই ইতালীয় সাংবাদিক নতুন করে সাজিয়ে তোলেন এই বাঙ্কারকে। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তার মুখে ফুটে ওঠে শ্রম সার্থকতার বুলি,
“কাজটি একদম সহজ ছিল না। জায়গাটা বেশ স্যাঁতস্যাঁতে। খুব দ্রুত আসবাবপত্রগুলোর উপর ছত্রাক জন্ম নেয় বলে সেগুলো ক্ষয় হয়ে যায়। তবে সবচেয়ে বড় বিপত্তি দেখা দেয় যখন কমিউনিস্ট যুগের নিদর্শন এবং নথিগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়। অনেকেই ব্যাপারটি ভালো চোখে দেখেননি। কিন্তু আমি তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছি যে, কমিউনিস্ট সময়কালের ইতিহাস সংরক্ষণের মানে এই নয় যে পুনরায় তা ফিরে আসবে।”
তিরানার জনগণের অনেকেই এই বাঙ্কার সম্পর্কে জানতো। কিন্তু তারা কেউই নিশ্চিতভাবে এর অবস্থান জানতো না। ফলে পুনরায় খুলে দেয়ার পর সবাই তাজ্জব বনে গেলো। ওদিকে সাংবাদিক বোলিনো পুরো বাঙ্কারকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে শুরুর দিকের কক্ষগুলো জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলেন। সেখানে কমিউনিস্ট শাসনামলের বিভিন্ন দলিল এবং নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। বেশিরভাগ কক্ষই ঠিক যেমন ছিল হোজ্জার পরিকল্পনায়, সেরকম করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এমনকি নতুন করে শত শত আসবাবপত্র নির্মাণের কাজে হাত দেন বোলিনো। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বোলিনোর প্রচেষ্টায় প্রায় ১০০টি কক্ষ সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে। এনভার হোজ্জার প্রতিরক্ষা বাঙ্কার মাত্র কয়েক বছরের মাথায় একটি বাঙ্ক’আর্ট’-এ পরিণত হয়ে যায়।
তিরানার টাইম মেশিন
প্রায় ১৯৮ মিটার দীর্ঘ টানেল পাড়ি দিয়ে যখন পর্যটকরা বাঙ্কারের মূল কেন্দ্রে প্রবেশ করবে, ঠিক তখন তারা এক ঘোরের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকবে। একজন একনায়ক তার বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে যে শক্তিশালী দুর্গ গড়ে তুলেছেন, তা এক মুহূর্তের জন্য হলেও মনে শিহরণ জাগিয়ে তুলে। মনে হয়, এই বুঝি পাশের কক্ষ থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসবে এনভার হোজ্জা। তার চোখে মুখে প্রতীয়মান থাকবে পারমাণবিক হামলার শঙ্কা।
করিডোরের দু’পাশে অবস্থিত কক্ষগুলোর নিদর্শনগুলো যেন সাক্ষ্য দিচ্ছে এক জীবন্ত ইতিহাসের। এমনকি বাঙ্কারের একটি কক্ষকে সেই যুগের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের নমুনা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। হোজ্জা আমলের খেলাধুলা, সংবাদপত্র, বিভিন্ন আইন, চুক্তিনামা ইত্যাদি বিষয়ের ঐতিহাসিক দলিল দ্বারা পূর্ণ এই বাঙ্কার যেন আদতেই একটি ‘টাইম-মেশিন’। এই টাইম মেশিনে চড়ে আপনি কিছুক্ষণের জন্য এনভার হোজ্জার দুঃস্বপ্নের মাঝে চলে যেতে বাধ্য থাকবেন। এই বাঙ্কারের শুধু একটি কক্ষ এনভার হোজ্জার যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা হয়নি। সেই কক্ষকে নতুনভাবে সাজিয়ে একটি কনসার্ট কক্ষে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সেই কক্ষের দেয়ালে এনভার হোজ্জা এবং তার মন্ত্রীদের ছবি শোভা পেয়েছে।
এনভার হোজ্জার আমলে আলবেনিয়ায় জ্যাজ সঙ্গীত নিষিদ্ধ ছিল। সেই সিদ্ধান্তকে পরিহাস করতেই যেন এই কনসার্ট কক্ষে জ্যাজ ছাড়া অন্য কোনো সঙ্গীত বাজানো হয় না। আর দেয়ালের ছবিগুলোকে যেন জোর করে সেই নিষিদ্ধ জ্যাজ শুনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এছাড়াও পুরো বাঙ্কারজুড়ে নিরাপত্তা এবং বায়ু চলাচল নিশ্চিত করার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। পারমাণবিক হামলা থেকে বাঁচার জন্য হোজ্জা হাজারো গ্যাস মুখোশ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাঙ্কারের দেয়ালে দেয়ালে শত শত গ্যাস মুখোশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বলতে গেলে, ফ্যাসিলিটি ০৭৭৪ বাঙ্কার যেন হোজ্জা যুগের জীবন্ত নমুনা।
শত বছরের ঘটনাবহুল রাজনীতির মাধ্যমে আলবেনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রের অগ্রগতির অংশ থেকে তার অতীতকে বাদ দিয়ে দেয়া যায় না। সেটি যতই অবাঞ্চিত হোক না কেন! এ কথা শুধু আলবেনিয়া নয়, বরং সকল রাষ্ট্রের জন্যই সত্য। আর এই সত্যকে মেনে নিয়ে আলবেনিয়া তার কমিউনিস্ট যুগের অপ্রিয় সত্যকে নতুন করে তুলে ধরেছে এক শৈল্পিক উপায়ে, যার নাম বাঙ্ক-আর্ট ০৭৭৪।