দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিংবদন্তী তিন যুদ্ধজাহাজ

ধারণা করা হয় ১২০০ খিস্টপূর্ব থেকে মানুষ লোহার ব্যবহার শেখে। তবে লোহা দিয়ে জাহাজ বানানোর ইতিহাস অবশ্য এত বেশি পুরনো নয়। ১৮৫৯ সালে ফ্রেঞ্চ নৌবাহিনী প্রথমবারের মতো লোহার যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করে। ১৯ শতকের মধ্যে কাঠের জাহাজের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়। মানবসভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শত শত লোহার জাহাজ একে অন্যের মুখোমুখি হয়। বেশিরভাগ জাহাজকেই যুদ্ধের পরে ভেঙে ফেলা হয়। অনেক জাহাজের আবার সলিল সমাধি হয়ে আছে মহাসাগরের গর্ভে। তবে এর মধ্যেই কিছু যুদ্ধজাহাজ স্থান করে আছে ইতিহাসের পাতায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এরকম ৩টি জাহাজ নিয়ে আজকের আয়োজন। 

ব্যাটলশিপ বিসমার্ক

সাগর বেষ্টিত হওয়ায় ব্রিটিশদের নৌপ্রযুক্তি চর্চা অনেক আগে থেকেই ছিল। এ দিকটিতে তারা বেশ দক্ষও ছিল। পৃথিবীজুড়ে যখন উপনিবেশ স্থাপন শুরু করলো তখন থেকেই তাদের নৌবাহিনীর ক্ষমতা প্রকাশ পেতে থাকে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির একটি জাহাজ তাদের আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাটলশিপ বিসমার্ক! জার্মানির এই জাহাজটি লম্বায় ৮২৩ ফুট এবং সর্বোচ্চ ৩০ নট গতিতে চলতে পারতো।

উদ্বোধনের দিন বিসমার্ক; Image Source: Timetoast

বিসমার্ককে ডুবিয়ে দিতে ব্রিটিশরা মরিয়া হয়ে উঠে। তাদের গর্বের জাহাজ এইচএমএস হুডকে পাঠানো হয় বিসমার্ক ডুবানোর কাজে। মিত্রশক্তির আত্মসম্মানের প্রতীক এই জাহাজকে ‘দ্য মাইটি হুড’ বলে ডাকা হতো। কিন্তু শিকারি নিজেই পরিণত হয় শিকারে।

এইচএমএস হুড এবং এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলস সম্মিলিতভাবে ১৯৪১ সালের ২৪ মে সকালে বিসমার্ককে আক্রমণ করে। বিসমার্কের সাথে আরেকটি জার্মান জাহাজ ছিল। হুড প্রথমে গোলা নিক্ষেপ করে, কিন্তু গোলা গিয়ে পড়ে ৪০ ফুট দূরে। এরপর বিসমার্কের নিখুঁত নিশানায় হুডের ডেক ভেদ করে ১৫ ইঞ্চি পুরো একটি গোলা আঘাত করে, তা-ও আবার জাহাজটির গোলাবারুদ রাখার রুমে। কয়েক মিনিটের মধ্যে ডুবে যায় ব্রিটিশদের গর্ব। মাত্র ৩ জন জীবিত ফেরত আসে এইচএমএস হুড থেকে। অন্য জাহাজটি পিছু হটে।

সংঘর্ষে বিসমার্কও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। যখন গোলা ছুড়তো তখন প্রচণ্ড ঝাঁকি সৃষ্টি হতো। সেই ঝাঁকিতে তার ফায়ার কনট্রোল রাডার অকেজো হয়ে যায়। এরপর বিসমার্ক ফ্রান্সের দিকে যাত্রা করে। ফ্রান্স তখন জার্মানির দখলে। উদ্দেশ্য ছিল সেখানে গিয়ে মেরামত করবে।

এরই মধ্যে এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলস আরো দুটি ক্রুজার নিয়ে বিসমার্ককের পিছু নেয়। গর্বের জাহাজ হুড নিমজ্জিত হবার পর ব্রিটিশ নৌবাহিনী তাদের সর্বশক্তি নিয়ে বিসমার্ককে ডুবিয়ে দিতে লেগে পড়ে। দুটি এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার, ৬টি ব্যাটলশিপ, ১৩টি ক্রুজার এবং ২১টি ডেসট্রয়ার নিয়ে বিসমার্ককে কফিনে পুরতে বের হয় রয়্যাল নেভি। ফ্রান্স যাবার পথে তাড়া খেয়ে একপর্যায়ে বিসমার্ক ঘুরে দাঁড়ায় এবং তার ঠিক পেছনে থাকা ২টি জাহাজের দিকে গোলা নিক্ষেপ করতে শুরু করে। ব্রিটিশরাও গোলাবর্ষণ করে, কিন্তু কেউই হতাহত হয়নি। এই সুযোগে অপর জার্মান জাহাজটি ওই এলাকা ত্যাগ করে।

অপর জার্মান জাহাজ থেকে তোলা ছবিতে বিসমার্ক; backgroundimgfer.pw

এবার বিসমার্ক সম্পূর্ণ একা। কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েও এটি ২৭ নট গতিতে চলছিল। বিসমার্ককে খুঁজতে ব্রিটিশ এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ারও যোগ দেয়। ক্যারিয়ার থেকে টর্পেডোবাহী বিমান আকাশে উড়ানো হয়। ৮টি টর্পেডোকে পাশ কাটানোর পর নবমটি আঘাত হানে বিসমার্কে। টর্পেডোকে পাশ কাঁটাতে জাহাজের খুব দ্রুত বাঁক নিতে হয়, কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার পর বিসমার্কের দ্রুত বাঁক নেওয়ার ক্ষমতা অনেকটা কমে যায়। একইসঙ্গে জাহাজটির পোর্ট সাইডের (বাম পাশ) ২ নম্বর বয়লার রুমে পানি ঢুকে পড়ে। ক্রুরা তখন টার্বো জেনারেটর রুম যেন নিমজ্জিত না হয় সেজন্য জাহাজের গতি ১২ নটে নামিয়ে আনে। 

সর্বোচ্চ গতিতে চলা সত্ত্বেও ব্রিটিশরা বিসমার্ককে হারিয়ে ফেলে। কারণ ব্রিটিশ জাহাজগুলো সোজা পথে যেতে পারছিল না। সরলপথে এগোলে সাবমেরিনের জন্য খুব সহজ লক্ষ্য হয়ে যেতে পারে এই আশংকা থেকে ব্রিটিশরা তাদের জাহাজকে জিগ-জ্যাগভাবে এগিয়ে নিতে থাকে। এই সুযোগে আবার রাডারের দৃষ্টি থেকে গায়েব হয়ে যায় বিসমার্ক।

বিসমার্কের বেঁচে যাবার সুযোগ ছিল। কিন্তু এর ক্যাপ্টেন লুতজেনের পাঠানো বেশ বড় একটি রেডিও বার্তা ব্রিটিশরা ধরে ফেলতে সক্ষম হয়। বার্তা থেকে জার্মান এই জাহাজের অবস্থান কোথায় সে সম্বন্ধে ব্রিটিশরা একটি ধারণা পায়। ২৪ ঘণ্টা পর উপকূল থেকে উড়ে আসা একটি টহল বিমান বিসমার্ককে আবার পেয়ে যায়।

এবার ব্রিটিশরা আর হাতছাড়া করেনি। ব্রিটিশ জাহাজগুলো তখনো অনেকটা দূরে। তাই বিমান নিয়েই আক্রমণ করা হয় বিসমার্ককে। টর্পেডোর আঘাতে জাহাজটির রেডার (বাঁক নেয়ার পাখা) জ্যাম হয়ে যায়। একটি বৃত্তে জাহাজটি পাঁক খেতে আরম্ভ করে। এর মধ্যে ব্রিটিশ নৌবহর বিসমার্কের কাছে চলে আসে এবং গোলাবর্ষণ শুরু করে। বিসমার্কের করার মতো কিছুই ছিল না। শেষ গোলা থাকা পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যায়।

৭৪ মিনিটের এই মুখোমুখি সংঘর্ষে বিসমার্কের দিকে ব্রিটিশ জাহাজগুলো সব মিলিয়ে ৭০০ এর বেশি গোলা নিক্ষেপ করেছিল। গোলা শেষ হওয়ার পর শত্রুপক্ষের হাতে পড়ার থেকে জাহাজের ক্রুরা নিজেরাই জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়া উত্তম বলে মনে করে। জাহাজের কম্পার্টমেন্টগুলোর সিল করা দরজা খুলে দেয়া হয় এবং বেশ কিছু বিস্ফোরক দিয়ে জাহাজটিকে নিমজ্জিত করানো হয়। ২ হাজার জন ক্রুর মধ্যে মাত্র ১১৪ জন বেঁচে ফেরে।

ব্যাটলশিপ ইয়ামাতো

৭২ হাজার ৮০০ টনের এই জাহাজটি এ যাবৎকালে নির্মাণ করা সবচেয়ে বড় ব্যাটলশিপ। আকার ছাড়াও ইয়ামাতোর ১৮.১ ইঞ্চি কামানও জাহাজের ডেকে বসানো সবচেয়ে বড় ক্যালিবারের কামান। প্রাচীন জাপানের ইয়ামাতো প্রদেশের নাম অনুযায়ী এই জাহাজের নাম রাখা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌ আধিপত্য মোকাবেলায় ১৯৩৭ সালে জাপান জাহাজটির নির্মাণকাজ শুরু করে। ১৯৪১ সালে পার্ল হারবার আক্রান্ত হবার কয়েক সপ্তাহ পরেই ইয়ামাতোকে কমিশন করা হয়। এর মূল শক্তি ছিল ৯টি ১৮.১ ইঞ্চি কামান। এগুলো থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে ১৬২ টনের গোলা নিক্ষেপ করা যেত। জাহাজটির দ্বিতীয় শক্তি ছিল ১২টি ১৫.৫ ইঞ্চি কামান। এছাড়াও বিমান এবং নিকটবর্তী টার্গেট মোকাবেলা করতে আরো ৪০টি ছোট আকারের কামান জাহাজটির ডেকে বসানো ছিল।

সমুদ্রে জাপানি দানব ইয়ামাতো; Image: vestiges of byzantium

প্রশান্ত মহাসাগরে জাপান যখন একের পর এক যুদ্ধে হেরে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে তখন ইয়ামাতোকে মূল ভূমির দিকে পাঠানো হয়। ১৯ মার্চ, ১৯৪৫। আমেরিকার ৩টি ক্যারিয়ার থেকে জাপানের কিওর ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। জাপানি পাইলটদের প্রতিরক্ষার ফলে জাহাজগুলোর অবশ্য খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মাত্র একটি গোলা এসে ইয়ামাতোর ব্রিজে (যেখান থেকে জাহাজ চালানো হয়) আঘাত করে। এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের মূল ভূখণ্ড আক্রমণের উদ্দেশ্যে ওকিওনা দ্বীপ দখলের আগ্রাসন চালায়।

কৌশলগত কারণে এই দ্বীপটিও ইও জিমার মতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উল্লেখ্য, ইও জিমাতে ২০ হাজার সেনা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত লড়াই করে। শেষ বুলেটটি তারা নিজেদের জন্য রাখতো। মাত্র ২১৬ জন আমেরিকানদের হাতে ধরা পড়েছিল। জাপানিরা জানতো, ইও জিমার মতো এখানেও পরাজয় নিশ্চিত। শত্রুর সর্বোচ্চ ক্ষতিসাধন করে আত্মহত্যার জন্য ১ লক্ষ সৈন্য প্রস্তুত ছিল। ভূমিতে থাকা বাহিনীকে সাহায্য করতে ইয়ামাতো এবং ৯টি জাহাজ ওকিওনাতে যাত্রা করে।

ওকিওনা পৌঁছাতে যতটুকু জ্বালানি দরকার তা নিয়ে জাহাজটি যাত্রা করে এবং জ্বালানির পরিবর্তে গোলাবারুদ দিয়ে জাহাজটিকে ভর্তি করা হয়। ফেরত আসার মতো কোনো জ্বালানী সাথে নেওয়া হয়নি, অর্থাৎ নিশ্চিত আত্মত্যাগের উদ্দেশ্যে জাহাজটি যাত্রা করে। পরিকল্পনা ছিল ওকিওনার সমুদ্র সৈকতে উঠিয়ে জাহাজটিকে অনেকটা দুর্গের মতো ব্যবহার করা হবে। কিন্তু জাপানিদের বেশ কিছু রেডিও বার্তা মিত্রবাহিনী ধরে ফেলে এবং ইয়ামাতোর মিশনের সম্পূর্ণটা জেনে ফেলে।

ওকিওনা পৌঁছানোর আগেই ৬ই এপ্রিল আমেরিকান ২টি বিমান প্রথম ইয়ামাতোকে দেখতে পায়। বিমান-বিধ্বংসী কামান থেকে গোলা ছোঁড়া হয়। তবে বিমানগুলো জাহাজটির পেছনে লেগে থাকে। প্রায় ২ ঘণ্টা পর ইয়ামাতোর রাডারে আমেরিকান বিমানের বড় একটি ঝাঁক এগিয়ে আসতে দেখা যায়। বিপদ আঁচ করে অন্য জাহাজগুলো ইয়ামাতোকে মাঝে রেখে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে যায়। কিন্তু ২৮০টি আমেরিকান বিমানের সামনে জাহাজগুলোর তেমন কিছুই করার ছিল না। বেশ কয়েকটি বোমা এবং টর্পেডোর আঘাতে ইয়ামাতো পোর্টসাইড (বামপাশ) ৬ ডিগ্রি হেলে পড়ে।

অনেক সময় সামান্য হেলে পড়া জাহাজকে সোজা ও ভারসাম্যে রাখতে বিপরীত পাশের কম্পার্টমেন্টকে পানি দিয়ে পূর্ণ করে ফেলা হয়। তারা যেন এই কৌশলের আশ্রয় নিতে না পারে সেজন্য আমেরিকান বিমানগুলো জাহাজটির একদিকেই বারবার আঘাত করতে থাকে। এবার জাহাজটি ১৮ ডিগ্রি হেলে পড়ে। ৩০ মিনিট পর ইয়ামাতোর মূল কাঠামো ৪টি বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যখন বাঁচার আশা একেবারেই শেষ হয়ে যায়, তখন আবার ৪টি টর্পেডো এসে আঘাত করে। ৭ই এপ্রিল দুপুর ২টায় ক্রুদের জাহাজ পরিত্যাগ করার নির্দেশ দেন ক্যাপ্টেন। কিছুক্ষণ পর গোলাবারুদের মজুদে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণ থেকে ৬ কিলোমিটার উঁচু ধোঁয়ার মাশরুম তৈরি হয়। নিমজ্জিত হয় জাপানী দানব।

১৯৮২ সালে দক্ষিণ চীন সাগরের ২ হাজার ফুট পানির নিচে এই দৈত্যটির ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা হয়। 

ডুবে যাবার পূর্ব মুহূর্তে ইয়ামাতো। আমেরিকান বিমান থেকে তোলা ছবি

ইউএসএস মিসৌরি

অনেক ক্ষমতাবান জাহাজই যুদ্ধ করেছিল, কিন্তু তারপরেও এটি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। কিন্তু কেন? কারণ ইউএসএস মিসৌরির ডেকেই জাপানি সম্রাট হিরোহিতো আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৪৪ সালের ১১ জুন জাহাজটি কমিশন লাভ করে। জাহাজের কার্যক্ষমতা এবং আকার অনুযায়ী জাহাজকে ফ্রিগেট, ব্যাটলশিপ, ডেসট্রয়ার এরকম কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। পানামা খাল, সান ফ্রান্সিসকো, হাওয়াই দ্বীপ হয়ে এটি জাপানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। জাহাজটি যখন পানামা খাল অতিক্রম করে তখন দুই পাশে মাত্র ১ ফুট করে খালি জায়গা ছিল। পানামা খালের প্রস্থ ১১০ ফুট, যেখানে জাহাজটির সর্বোচ্চ প্রস্থ ১০৮ ফুট।

পানামা খালে ইউএসএস মিসৌরি; Source: dogdrip.net

ইউএসএস মিসৌরিতে ৩টি গান টারেট ছিল, যেগুলোর প্রত্যেকটিতে আবার ৩টি করে ১৬ ইঞ্চি কামান থাকতো। এ ছাড়াও কাছের শত্রুদের উপর আঘাত হানার জন্য ২০টি ৫ ইঞ্চি কামান ছিল। বিশাল আকার এবং ফায়ার পাওয়ারের জন্য একে মাইটি-মো বলে ডাকা হতো।

১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র যখন জাপানের আশেপাশের দ্বীপগুলো দখল করতে তুমুল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তখন মিসৌরি তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে যোগ দেয়। ১৯৪৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জাপানের নিকটবর্তী দ্বীপ ইও জিমা দখলে তুমুল লড়াই শুরু হয়। জাপান জানতো তাদের পরাজয় নিশ্চিত, এজন্য তাদের লক্ষ্য ছিল মৃত্যুর পূর্বে শত্রুর যতটা সম্ভব ক্ষতি করা। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল বি-২৯ বিমান দিয়ে জাপানের মূল ৪টি দ্বীপ আক্রমণ করা। ইও জিমা দখল করে বিমান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা গেলে দ্রুত বিজয় আসবে। মাত্র ২১ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটি দখল করতে সময় লাগে ৩৬ দিন। ইউএসএস মিসৌরি যুদ্ধের প্রথমদিকে ভূমিতে গোলাবর্ষণ করে জাপানি প্রতিরক্ষা অবস্থান ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে পদাতিক সেনারা সহজে দ্বীপে প্রবেশ করতে পারে।

এপ্রিলের ১১ তারিখ মিসৌরি জাপানের কামিকেজ হামলার শিকার হয়। কিছু ক্ষতি হলেও জাহাজটি মিশন চালিয়ে যেতে সক্ষম ছিল। এপ্রিলের ১৭ তারিখ জাপানি একটি সাবমেরিন মিসৌরির দিকে ধেয়ে আসে, কিন্তু রাডারে এর উপস্থিতি ধরা পড়ে যায় এবং সাবমেরিন নিজেই শিকারে পরিণত হয়। ইয়ো জিমার মতো আরেকটি যুদ্ধ হয় ওকিওনা দ্বীপে। এই যুদ্ধেও মিসৌরি তার দৈত্যাকার কামান দিয়ে ভূমিতে গোলাবর্ষণ করে যায় এবং অনেক বিমান ভূপাতিত করে। এরপর জাহাজটি জাপানের মূল ৪টি দ্বীপের একটি হনসুতে উপকূলীয় সামরিক স্থাপনায় হামলা করতে নিয়োজিত করা হয়।  

জাপান আত্মসমর্পণে রাজি হবার পর ২৯ আগস্ট মিসৌরি টোকিও উপসাগরে প্রবেশ করে। সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ এই জাহাজটির ডেকে জাপানের সম্রাট আনুষ্ঠানিকভাবে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরিয়ান যুদ্ধে জাহাজটি অংশগ্রহণ করে। ১৯৫৫ সালে জাহাজটিকে ডিকমিশন করা হয়।

রাতে ইউএসএস মিসৌরির গোলাবর্ষণ করার দৃশ্য; Source: Pinterest

১৯৮৪-৮৬ সালের ভেতর ইউএসএস মিসৌরিকে ব্যাপক সংস্কার করা হয়। ১৬ ইঞ্চি কামানের সাথে এতে মিসাইল বসানো হয়। ১৮৮৬ সালে একে পুনরায় কমিশন করা হয় এবং সার্ভিসে ফেরত নেওয়া হয়। এটি তার দৈত্যাকার কামান থেকে সর্বশেষ গোলাবর্ষণ করে ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর ইউএসএস মিসৌরিকে ১৯৯২ সালে আবার ডিকমিশন করা হয়। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারী মাসে এই যুদ্ধজাহাজটিকে একটি জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

তথ্যসূত্র

  1. https://ussmissouri.org/learn-the-history/the-ship/timeline
  2. https://nationalinterest.org/blog/buzz/bismarck-vs-hood-how-hitlers-most-deadly-battleship-sunk-pride-royal-navy-28347
  3. https://nationalinterest.org/blog/the-buzz/the-story-how-the-biggest-battleship-ever-died-pure-legend-20727

Related Articles

Exit mobile version