১
১৫৬৯ সালের শুরুর দিকে রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনী রাজপুতদের শক্তিশালী দুর্গ রণথম্ভোর বিজয় সম্পন্ন করে। রণথম্ভোর বিজয়ের পর সম্রাট আকবর দৃষ্টি দেন আরেকটি শক্তিশালী রাজপুত ঘাঁটি কালিঞ্জর দুর্গের দিকে। দুর্গটি অবরোধ করতে সম্রাট আকবর প্রেরণ করেন মজনু খান কাকশালকে। ১৫৬৯ সালের আগস্ট মাস নাগাদ দুর্গ অবরোধ শুরু হয়ে যায়।
মজার বিষয় হচ্ছে, এই অবরোধে মুঘল সেনাবাহিনীকে খুব সামান্যই প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। মূলত একে একে চিতোর আর রণথম্ভোরের মতো শক্তিশালী দুর্গের পতন দেখে কালিঞ্জরের অধিপতি রাজা রামচন্দ্র মুঘল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মতো বোকামি করতে যাননি। অবরোধ শুরু হওয়া মাত্রই তিনি সোজাসাপ্টা আত্মসমর্পণ করে ফেললেন।
আকবর কালিঞ্জর দুর্গ বিজয়ের সংবাদ পাওয়ার পর মজনু খান কাকশালকেই দুর্গের অধিপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। আর রাজা রামচন্দ্রকে এলাহাবাদে একটি জায়গীর প্রদান করা হয়।
এদিকে একে একে চিতোর, রণথম্ভোর আর কালিঞ্জর বিজয়ের পর আকবরের সামনে গুজরাট অভিযানের পথ পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক ভিত শক্তিশালী করার জন্য আকবরের গুজরাট দখল করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
প্রাচীনকাল থেকেই বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা গুজরাটের বন্দরগুলো ছিল হিন্দুস্তানের মূল ভূখণ্ড থেকে অন্যান্য মুসলিম ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগের সহজ একটি মাধ্যম। বহিঃবাণিজ্য ছাড়াও মক্কায় হজ্বযাত্রার জন্য গুজরাটের বন্দরগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। তাছাড়া গুজরাটের রাজনৈতিক অবস্থাও সে সময় স্থিতিশীল ছিল না। যেহেতু গুজরাট পূর্বেও কিছুদিন মুঘল শাসনের আওতায় ছিল, তাই আকবর চাইছিলেন, এই সুযোগে পুনরায় গুজরাটকে মুঘল শাসনাধীনে নিয়ে আসতে।
২
১৫৩৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বাসঘাতক পর্তুগীজদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহ। বাহাদুর শাহের মৃত্যুর পর কিছুদিনের জন্য গুজরাটের মসনদে বসেন জামান মির্জা। সম্পর্কের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন সম্রাট হুমায়ুনের সৎ বোন মাসুমা বেগমের স্বামী। সম্রাট হুমায়ুনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে গুজরাটে সুলতান বাহাদুর শাহের আশ্রয়ে ছিলেন তিনি। বাহাদুর শাহ কোনো উত্তরসূরী রেখে যেতে পারেননি। সে সুযোগে তিনি গুজরাটের মসনদে আরোহণ করেন। মসনদে আরোহণের পর তিনি বাহাদুর শাহের হত্যাকারী পর্তুগীজদের উপযুক্ত শাস্তি দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন।
কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মসনদে বসামাত্র তিনি পর্তুগীজদের অর্থ সাহায্য তো দিলেনই, সেইসাথে তাদের সমুদ্র তীরবর্তী বিপুল পরিমাণ ভূখণ্ডও দান করলেন। এবার ক্ষেপে গেলেন সাবেক সুলতান বাহাদুর শাহের আমিরেরা।
শেষপর্যন্ত আর জামান মির্জা গুজরাটের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। সিন্ধুর দিকে পালিয়ে যান তিনি। জামান মির্জার পতনের পর আমিরদের সমর্থনে ১৫৩৮ সালের মার্চ গুজরাটের মসনদে বসেন বাহাদুর শাহের ভাই লতিফ খানের ১১ বছর বয়সী পুত্র মাহমুদ খান। ‘মাহমুদ শাহ’ নাম নিয়ে তিনি গুজরাট শাসন করতে থাকেন।
তবে ক্ষমতা এমনই এক বস্তু, যার স্বাদ সবাই নিতে চায়। একদিকে মাহমুদ শাহ অল্প বয়স্ক, অন্যদিকে তিনি অনভিজ্ঞও। কাজেই যা হওয়ার, তা-ই হলো। মসনদে বসে তিনি একদণ্ড শান্তি পেলেন না। আমিরদের একদল নতুন এই সুলতানের আনুগত্য প্রকাশ করলেও বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেল আরেকটি দল।
গুজরাটের ক্ষমতার প্রশ্নে তাই নতুন এই সুলতানকে লাগাতার যুদ্ধ করে যেতে হলো। তবে শেষ রক্ষা আর হলো না। বেশ দীর্ঘ ঘটনাবহুল সময় পাড়ি দিয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কবলে পড়লেন তিনি। প্রাসাদেই বোরহান নামে এক ভৃত্যের দেওয়া বিষ পান করে ১৫৫৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন।
১৫৫৪ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছর গুজরাট শাসন করেন তৃতীয় আহমেদ শাহ। এ সময়গুলো আসলে গুজরাটের জন্য বেশ দুঃসময় ছিল। আহমদে শাহ গুজরাটের শাসক হলেও অনেকটা নামমাত্র শাসক ছিলেন। উচ্চকাঙ্ক্ষী সুযোগসন্ধানী আমিররা নিজেদের মাঝে গুজরাট ভাগ করে নিয়ে ইচ্ছামতো শাসন কাজ পরিচালনা করছিল। শেষপর্যন্ত ১৫৬১ সালে তৃতীয় আহমেদ শাহও গুপ্তহত্যার শিকার হয়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।
এরপর বলির পাঁঠা হিসেবে গুজরাটের মসনদে বসানো হলো তৃতীয় মুজাফফর শাহকে। কাজটি করলেন তৃতীয় আহমেদ শাহের অনুগত আমির ইতিমাদ খান। ধারণা করা হয় তৃতীয় মুজাফফর শাহ আসলে মাহমুদ শাহের পুত্র। তৃতীয় মুজাফফর শাহকে বলির পাঁঠা বলা হলো এ কারণে যে, যদিও তিনি শাসক হিসেবে মসনদে বসেছিলেন, কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল তার আমিরদের হাতেই। আর এই আমিরদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আমির ইতিমাদ খান।
সুলতান যদি দুর্বল হন, ফাঁকা মাঠে আমিররাই তখন দাপট দেখাতে শুরু করে। গুজরাটে দীর্ঘদিন ধরে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সুলতানকে পাত্তা না দিয়ে আমিররা যে যার মতো যার যার অংশ শাসন করতে থাকে। সুযোগ পেলেই অবশ্য একে অন্যের অধীনে থাকা ভূমি দখলের চেষ্টা চালাতে থাকে।
ক্ষমতার অন্তর্দ্বন্দ্বের এমনই এক পরিস্থিতিতে আমির ইতিমাদ খান যখন অন্য আমিরদের দ্বারা কোণঠাসা হয়ে গেলেন, তখন তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের কাছে সাহায্য চাইলেন। আর অন্যদিকে আকবরও তো তখন চাইছিলেন গুজরাট বিজয় করতে!
৩
ইতিমাদ খানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৫৭২ সালের ৪ জুলাই সম্রাট আকবর গুজরাট বিজয়ের উদ্দেশ্যে তার রাজধানী ফতেহপুর সিক্রি ত্যাগ করেন।
আকবর প্রথমেই ১০,০০০ সৈন্যের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী একটি অগ্রবর্তী বাহিনী প্রেরণ করে নিজে মূল সেনাবাহিনীর সাথে পেছনে অবস্থান করেন। অগ্রবর্তী বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মীর মুহাম্মদ খান আতাকা, খান কালান নামেই যিনি বেশি পরিচিত। মীর মুহাম্মদ খান আতাকা সরাসরি সিরোহীতে (Sirohi) গিয়ে ঘাঁটি গেড়ে অবস্থান নেন। সিরোহীর রাজপুত রাজা এসময় মুঘল সাম্রাজ্যের আনুগত্য ঘোষণা করেন। কিছুদিন পরেই আকবর তার মূল সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রবর্তী এ বাহিনীর সাথে মিলিত হলেন।
সম্মিলিত মুঘল সেনাবাহিনী সিরোহী থেকে যাত্রা শুরু করে দিসা (Deesa) শহরে গিয়ে উপস্থিত হলো। এখানেই গুপ্তচরদের মাধ্যমে খবর পাওয়া গেলো যে শের খান ফুলাদী ইতোমধ্যেই মুঘল সেনাবাহিনীকে পাশা কাটিয়ে পুরো সেনাবাহিনীকে অক্ষত অবস্থায় সাথে নিয়ে ইদরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। এই শের খান ফুলাদী মূলত এসময় আহমেদাবাদ অবরোধ করে রেখেছিলেন শহরটি জয় করার জন্য।
যা-ই হোক, আকবর মানসিংহকে সেনাবাহিনীর একাংশের কমান্ড দিয়ে দায়িত্ব দিলেন শের খান ফুলাদীকে ধাওয়া করার জন্য। এদিকে অবশিষ্ট সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি রওয়ানা দিলেন দিসা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে পাটান (Patan) শহর বরাবর।
পাটানে মুঘল সেনাবাহিনীকে বাধা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। তাই খুব সহজেই শহরটি দখলে চলে আসলো। শহরটির দায়িত্ব সৈয়দ আহমেদ খান বারহার উপর ন্যস্ত করে আকবর যাত্রা শুরু করলেন গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদ বরাবর।
৪
আহমেদাবাদের অবস্থা তখন করুণ। গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহ তো আমিরদের অন্তর্দ্বন্দ্বে বেশ বেকায়দা অবস্থায় ছিলেন। সুলতানের এই শোচনীয় অবস্থায় তিনি মূলত আমির ইতিমাদ খানের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছিলেন। এই বেকায়দা অবস্থা থেকে বের হতেই তিনি শের খান ফুলাদীর সহায়তা চেয়েছিলেন। অন্যদিকে আমিরদের এই চতুর্মুখী দ্বন্দ্বে নিজেকে রক্ষা করতেই আকবরের সহায়তা চেয়েছিলেন ইতিমাদ খান। শেষপর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হলেন তিনি। আকবরের আগমন সংবাদে শের খান ফুলাদী পালিয়ে নিজের জীবন বাঁচালেন। নতুন ঝামেলায় পড়লেন পুতুল সুলতান মুজাফফর শাহ। শের খান ফুলাদী পালিয়ে যাওয়ার পর তিনিও এদিক-ওদিক উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।
এদিকে আহমেদাবাদের কাছাকাছি আসতেই আহমেদাবাদ থেকে ইতিমাদ খান, মীর আবু তুরাব, সৈয়দ হামিদ বুখারীসহ গুজরাটের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ আকবরের দরবারে এসে আনুগত্য স্বীকার করলেন।
আকবর মুজাফফর শাহের পলায়নের খবর শুনে সুলতানের খোঁজে গুপ্তচরদের প্রেরণ করলেন। গুপ্তচররা সুলতানকে একটি শস্যক্ষেতের পাশ থেকে উদ্ধার করে দরবারে নিয়ে আসলেন। অসহায় সুলতানের প্রতি আকবর তেমন কঠোর হতে পারেননি। তিনি সুলতানের জন্য বার্ষিক ভাতার ব্যবস্থা করে আগ্রা পাঠিয়ে দেন।
এদিকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই আহমেদাবাদ বিজয়ের পর সম্রাট দৃষ্টি দিলেন বরোদা আর সুরাটের দিকে। এ অঞ্চল দু’টি বিদ্রোহী ইব্রাহীম হুসেন মির্জা আর মুহাম্মদ হুসেন বরোচের অধীনে ছিল। ১৫৭২ সালের ২ ডিসেম্বর আকবর আহমেদাবাদ ত্যাগ করে ক্যাম্বে বরাবর অগ্রসর হতে লাগলেন।
৫
৬ ডিসেম্বর আকবর ক্যাম্বে গিয়ে পৌঁছান। এরপর কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে ১২ ডিসেম্বর ক্যাম্বে ত্যাগ করে বরোদা (বড়োদরা) বরাবর যাত্রা করলেন। যাত্রার দু’দিন পর বরোদা শহরের বিপরীত দিকে তিনি সেনাছাউনি ফেললেন। ছাউনি ফেলে আকবর গুজরাটের শাসনভার গুছিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছিলেন। অনেক ভেবেচিন্তে গুজরাটের গভর্নর হিসেবে খান-ই-আযম মির্জা আজিজ কোকলতাশকে নিয়োগ করলেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরই মির্জা আজিজ কোকলতাশ ছুটলেন আহমেদাবাদের উদ্দেশে।
এদিকে আকবর বিদ্রোহী মির্জাদের ঘাঁটি সুরাট দখল করার পরিকল্পনা করলেন। সৈয়দ মুহাম্মদ খান বরোদা, শাহ কুলি খান মাহরাম, খাই-ই-আলম, ফাযিল খান, রাজা ভগবান দাস, দোস্ত মুহাম্মদ খান, কুমার মানসিংহ, আসলিম খান, বাবা দোস্ত, মুহাম্মদ খান মুঘল, কাকর আলী খান, মীর্জা আলী আলম শাহী প্রমুখের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি অংশকে সুরট দুর্গ অবরোধ করতে প্রেরণ করেন। এ দুর্গেই অবস্থান করছিলেন বিদ্রোহী মুহাম্মদ হুসেন মির্জা।
মুঘল সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রার কথা শুনেই বিদ্রোহী মুহাম্মদ হুসেন মির্জা রুস্তম খান রুমিকে হত্যা করে বসেন। সম্ভবত রুস্তম খান রুমি মুঘলদের সাথে সমঝোতা করতে চাইছিলেন। যা-ই হোক, রুস্তম খান রুমিকে হত্যার পর মুহাম্মদ হুসেন মির্জা নিজেই এগিয়ে আকবরের মুখোমুখি হওয়ার পরিকল্পনা করলেন। গুপ্তচরদের মাধ্যমে দ্রুতই এই তথ্য আকবরের কাছে পৌঁছে গেল। বিদ্রোহী মুহাম্মদ হুসেন মির্জার এই ধৃষ্টতায় আকবর রীতিমতো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। পূর্বে প্রেরিত বাহিনীটিকে পিছু হটে আকবরের সাথে যোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়ে মীর বকসী শাহবাজ খানকে প্রেরণ করে আকবর নিজেই সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হলেন।
১৮ ডিসেম্বর আকবর মাত্র ৪০ জন অশ্বারোহীসহ মাহি (মহিন্দ্রী) নদীর তীরে এসে উপস্থিত হলেন। এখানেই তিনি খবর পেলেন যে মুহাম্মদ ইব্রাহীম হুসেন মীর্জা নদীর অপর তীরে সরনাল শহরে অবস্থান করছিলেন। ইব্রাহীম হুসেন মীর্জার লোকবল এসময় আকবরের তুলনায় অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও আকবর আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আক্রমণ চালানোর আগেই পিছু হটতে বলা সেনাবাহিনীর একাংশ আকবরের সাথে এসে যোগ দিলো। তবে এতে আকবরের মোট লোকবল দাঁড়ালো মাত্র ২০০ জনে, অন্যদিকে তখনো ইব্রাহীম হুসেন মীর্জার সাথে ১০০০ এরও বেশি সৈন্য ছিল।
সংখ্যায় কম হলেও আকবর আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দিয়ে নদী পার হলেন।
৬
ইব্রাহীম হুসেন মীর্জা ভেবেছিলেন, সংখ্যায় কম হওয়ায় আকবর এ যাত্রায় পিছু হটে চলে যাবেন। কিন্তু এরপরও আকবর এগিয়ে আসায় তিনি কিছুটা হতভম্ব হয়ে সরনাল থেকে বের হয়ে খোলা প্রান্তরে যুদ্ধের জন্য অবস্থান নিতে এগিয়ে গেলেন। আকবরও নদী পাড়ি দিয়ে সোজা ইব্রাহীম হুসেনকে ধাওয়া করতে থাকেন। একপর্যায়ে উভয় সেনাবাহিনীই যুদ্ধের জন্য মুখোমুখি অবস্থানে এসে দাঁড়ায়।
সংখ্যায় বেশি হওয়ায় ইব্রাহীম হুসেন মীর্জার আক্রমণ বেশ তীব্র ছিল। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে আক্রমণের এই তীব্রতা সহ্য করে শেষপর্যন্ত মুঘল সেনাবাহিনী বিদ্রোহী এই বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করতে সক্ষম হয়। শেষপর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মুঘল সেনাবাহিনী বিদ্রোহী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। তবে এ যুদ্ধে রাজা ভগবন্ত দাসের ভাই ভূপতি মারা যান।
রাত হয়ে যাওয়ায় এই স্বল্প সংখ্যক সৈন্যকে আর ছড়িয়ে দিতে চাননি আকবর। তাই পালিয়ে যাওয়া বিদ্রোহী সৈন্যদের আর ধাওয়া করা সম্ভব হয়নি। ঐ রাতটি সরনালেই কাটিয়ে দেন আকবর। অন্যদিকে ইব্রাহীম হুসেন মির্জা সিরোহীর দিকে পালিয়ে যান।
১৮ ডিসেম্বর আকবর বরোদা ফিরে যান। যুদ্ধে অংশ নেয়া প্রতিটি সৈন্যকেই বিপুল ধনসম্পদ পুরস্কার দেওয়া হয়। একইসাথে চরম সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য রাজা ভগবন্ত দাসকে নিজস্ব পতাকা ও নাকাড়া দেওয়া হয়।
এদিকে আকবর তখনো তার মূল লক্ষ্য সুরট দুর্গটি অধিকার করতে পারেননি। আকারে ছোট হলেও মির্জাদের বিদ্রোহ দমন করতে দুর্গটি দখল করা জরুরি ছিলো। আকবর তাই এবার সুরাট দুর্গটি দখলের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন।
[এই সিরিজের পূর্বে প্রকাশিত পর্বটি পড়ুন এখানে। সিরিজের সবগুলো লেখা পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।]