মানবসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সংক্রমক রোগের বিস্তার ঘটেছে হাজার বছর ধরে। আদিকাল থেকেই মানুষ সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করছিল। তাই খাদ্যের চাহিদা মেটাতে গিয়ে প্রাণীদের সাথে ব্যাপকভাবে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে তারা। প্রাণিজগতের একেবারে কাছে পৌঁছাতে মানুষ যতটা সময় নিয়েছিল তার থেকে বেশি সময় নিয়েছিল সেগুলোর লালনপালন শিখতে। আর এই বিরাট পার্থক্যটুকু হাজার বছরের ইতিহাসে মানবসভ্যতাকে বার বার ঝু্ঁকির মধ্যে ফেলে। গবেষকদের মতে, মানুষ নিজের অজান্তে বিভিন্ন প্রাণীর শরীর থেকে বিস্তার ঘটা রোগের প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল। এছাড়াও অপরিচ্ছন্নতা এবং সুষ্ঠুভাবে লালনপালনের পদ্ধতি না জানার ফলে প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে সহজেই বিভিন্ন রকম রোগ ছড়িয়ে পড়তো।
মানবসভ্যতা দ্রুতগতি অর্জন করেছিল বলে হাজার কিলোমিটার ব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। যদিও এর জন্য অনেক সময় লেগেছে, তবে সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের বসতিও গড়ে উঠেছিল। গবেষকরা মনে করেন যখন থেকে মানুষ বাণিজ্যের জন্য এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতায়াতের প্রচলন ঘটায় তখন থেকেই বিভিন্ন প্রকার রোগ মহামারির রূপ পেতে শুরু করে। আর এই মহামারিগুলো শত বছর ধরে পৃথিবীর মানুষকে যত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে ততটাই সভ্য হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। আর এই সভ্য হওয়ার পথে প্রতিটি সূর্যোদয়ে নতুন নতুন গবেষণা এবং সমাধানের পথ খুঁজে নিয়েছে মানবজাতি।
মানবজাতিকে হুমকিতে ফেলা মহামারি প্রতিরোধে সফলতা যেমন এসেছে তেমনি কোনো কোনো রোগের বিলুপ্তি ঘটাতেও সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা। প্রতিটি মহামারি আমাদেরকে নতুন নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থা শিখিয়েছে। এছাড়াও বুঝিয়েছে প্রতিষেধক থেকেও প্রতিরোধ উত্তম। তাইতো বলা যায় ইতিহাসের সবথেকে উন্নত সভ্যতায় এসে শুধুমাত্র মহামারির কারণে মানবজাতির বিলুপ্তির ভয় একেবারেই চলে গেছে। সময়ের পরিক্রমায়, মানুষের সচেতনতায় শেষ হওয়া কিছু মহামারি নিয়ে থাকলো আলোচনা।
ব্ল্যাক ডেথ
প্লেগ কখনোই মানবজাতি থেকে একেবারে বিলুপ্ত হয়নি। বরঞ্চ শত বছর পর পর এই মহামারিতে মৃত্যুবরণ করে লাখ লাখ লোক। ব্ল্যাক ডেথ সর্বপ্রথম ১৩৪৭ সালে ইউরোপে ধরা পড়ে। ইতিহাসবিদদের মতে সেবার মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে শুধুমাত্র ইউরোপেই ২০০ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এতদিন গবেষকরা দাবি করতেন প্রায় ২ হাজার বছর আগে এশিয়া অঞ্চলে প্লেগ রোগটি সংক্রমিত হয়েছিল। যদিও সাম্প্রতিকালের এক গবেষণায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালেও ইউরোপে প্লেগ রোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। যাই হোক, ১৩৪০ এর দশকে সিরিয়া, পার্সিয়া, মিশর, চায়না এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই ব্ল্যাক ডেথ মহামারির আকার ধারণ করে।
ইতালিয়ান লেখক জোভান্নি বোকাচ্চিও তার লেখার মাধ্যমে ব্ল্যাক ডেথের লক্ষণ বর্ণনা করেন। আর সেই আলোকে বলা যায় প্রথমে চুলকানির ফলে পুরো শরীর ফুলে যেত এবং ছোট ছোট আপেলের মতো ফোসকা পড়তো। আক্রান্ত ব্যক্তি দিন দিন দুর্বল হতে থাকতেন এবং একসময় সবগুলো ফোসকা থেকে রক্ত পড়ত। শেষপর্যন্ত ফুসফুসের ক্ষতি করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করত।
উনিশ শতকের শুরুতে ফরাসি জীববিজ্ঞানী আলেক্সান্দ্রে ইয়েরসিন ব্ল্যাক ডেথ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ আবিষ্কার করেন। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী এই রোগের জীবাণু ইদুরের মাধ্যমে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ছড়িয়ে পড়তো। সে সময় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাসরত ইউরোপিয়ানদের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ইঁদুরের বসবাস ছিল উল্লেখযোগ্য।
গত বছর প্রাদুর্ভাব ছড়ানো করোনাভাইরাসের সময় সবথেকে আলোচিত একটি বিষয় ছিল কোয়ারেন্টিন বা বিচ্ছিন্নকরণ। মূলত ছোঁয়াচে এবং বায়ুর মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ মানুষদের থেকে আলাদা রাখার ব্যবস্থাকে কোয়ারেন্টিন বলা হয়। আর এই কোয়ারেন্টিন ধারণা সর্বপ্রথম আসে ব্ল্যাক ডেথের সময়ে। যদিও প্রথমদিকে ব্ল্যাক ডেথ প্রতিরোধের কোনো উপায় জানতেন না ইউরোপের মানুষেরা। তবে কয়েকজন চিকিৎসকের পরামর্শে ভেনিসের নিয়ন্ত্রণাধীন রাগুসা বন্দরে আগত যাত্রীদের আলাদা জায়গায় আইসোলেশনের ব্যবস্থা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে তারা সুস্থ সেটি প্রমাণ করে ছাড়পত্র পেতেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। তথ্যানুযায়ী সে সময় ভেনিসের বন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের প্রথমে ৩০ দিন এবং পরবর্তীতে ৪০ দিন পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকার নিয়ম কার্যকর করেছিল। তাদের দেখাদেখি ইউরোপের সব দেশ একই পন্থায় ব্ল্যাক ডেথের প্রাদুর্ভাব কমিয়ে আনে।
দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন
ব্ল্যাক ডেথের তাণ্ডব যখন ইউরোপের গুটিকয়েক দেশ থেকে পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে তখন কয়েকটি জনবহুল শহরে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করেছিল এটি। গবেষকদের মতে ব্ল্যাক ডেথের পর কয়েকটি মহামারি একেবারে কাবু করে ফেলে ইউরোপীয়দের জীবনযাত্রাকে। ১৩৪৮ সাল থেকে ১৬৬৫ সাল অবধি সর্বমোট ৪০ বার প্লেগ সংক্রমিত হয় লন্ডন সহ এর আশেপাশের শহরগুলোতে। মাত্র ৩০০ বছরের ব্যবধানে এই তাণ্ডবলীলা চালানো মহামারির কারণে লন্ডনের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল নারী এবং শিশু।
ধারাবাহিকভাবে যখন প্লেগ লন্ডনবাসীর জীবনযাপনে হুমকি সৃষ্টি করছিল ঠিক তখনি আইসোলেশন এবং সেফারেশনের মতো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় রাজপরিবার। প্রথমে মানুষদের ঘোষণার মাধ্যমে সচেতন করা হলেও পরবর্তীতে আইন প্রণয়ন করে প্লেগ প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নেয় ব্রিটিশরা। ১৫০০ এর দশকের শুরুতে পাশকৃত আইন অনুযায়ী আক্রান্ত রোগীদের বাড়ির সামনে চিহ্নিতকারী সাইনবোর্ড ঝুলানো থাকত। এছাড়াও ইতোমধ্যেই প্লেগে আক্রান্ত হয়েছে এমন রোগী জনসম্মুখে বের হলে একটি বিশেষ সাদা মেরু বা চিহ্ন বহন করতেন যাতে করে অন্যরা তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পারে।
সে সময়ের চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন কুকুর এবং বিড়ালের মাধ্যমে লন্ডনে এই প্লেগ ছড়িয়েছে। তাই প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ প্রাণী হত্যা করা হতো। যদিও এত এত ব্যবস্থা গ্রহণ করেও এই মহামারির শেষ ধাক্কা সামাল দিতে পারেনি লন্ডনবাসী। বলা হয় ৩০০ বছরের মধ্যে সবথেকে মারাত্মক মহামারি সংঘটিত হয়েছিল ১৬৬৫ সালে। মাত্র ৭ মাসের ব্যবধানে লন্ডনের ১ লাখের বেশি নাগরিক প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। সে সময় আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িঘর পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল যাতে তারা জনসম্মুখে এসে অন্যদের মাঝে সংক্রমণ ঘটাতে না পারে। এছাড়াও রাজপরিবারের নির্দেশনা অনুযায়ী সবরকম অনুষ্ঠান দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রাখা হয়। বাড়িঘরের দরজার ‘রেড ক্রস’ দিয়ে সতর্কবাণী প্রচার করেন অনেকে। যদিও এর বিকল্প ব্যবস্থা তখনও খুঁজে পায়নি চিকিৎসাবিজ্ঞান। ইতিহাসবিদদের মতে অসুস্থদের ঘরবন্দী রেখে এবং মৃতদের গণকবরে সমাধিস্থ করেই লন্ডনের মানুষ ও প্রশাসন ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এই মহামারি মোকাবেলা করেছিল।
গুটিবসন্ত
কয়েক শতাব্দী ধরে গুটিবসন্ত ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হয়েছিল। গবেষকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রতি দশজন আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৩ জনই মৃত্যুবরণ করতেন সে সময়। আক্রান্তদের সকলেই গুটিবসন্তের দাগ বহন করতেন সারাজীবন। আধুনিক বিশ্বের গবেষকরা মনে করেন পঞ্চাদশ শতকে ইউরোপীয় ভ্রমণকারী এবং বণিকদলের মাধ্যমে গুটিবসন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়েছিল। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় শুধুমাত্র আমেরিকা এবং মেক্সিকোতে ১০ মিলিয়নের অধিক আদিবাসী এই রোগে মৃত্যুবরণ করেছিল। কয়েক শতাব্দী আগে ঐ অঞ্চলের আধিবাসীরা এই রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন না করায় আদিবাসীদের সংখ্যা ১ মিলিয়নে নেমে গিয়েছিল। তখনকার এই ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হিসেবে মেক্সিকো উপকূলে স্প্যানিশ জাহাজের নিয়মিত যাতায়াত এবং যাত্রী বহনকে দায়ী করেন গবেষকগণ।
যাই হোক, ভ্যাকসিনের মাধ্যমে নির্মূল করা প্রথম মহামারি এই গুটিবসন্ত। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে ব্রিটিশ ডাক্তার এবং গবেষক এডওয়ার্ড জেনার সর্বপ্রথম কাউফক্স (Cowfox) নামক একটি প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন যা মানবদেহে গুটিবসন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা গঠন করতে পারে। জেনার এটি প্রস্তুত করার পর তার বাগানে কাজ করা ৯ বছর বয়সী ছেলের উপর প্রথম পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেন।
কাউফক্স ভ্যাকসিন গ্রহণের পর ছেলেটি কোনোপ্রকার অসুস্থতায় ভোগেনি, বরঞ্চ জীবনে কখনোই গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়নি। এছাড়াও এডওয়ার্ড জেনার এই রোগ নিয়ে তার গবেষণার সবরকম তথ্য এবং অনুশীলনের ফলাফল নথি আকারে প্রকাশ করেন যাতে ভবিষ্যতে এই রোগ নিয়ে উচ্চতর গবেষণায় চিকিৎসকরা সফল হতে পারেন। জেনারের গবেষণা এবং নথি প্রকাশের কারণে সুফল পেয়েছে আধুনিক বিশ্বের মানুষ। ১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুটিবসন্ত একেবারেই পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়।
কলেরা
উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইংল্যান্ডে ব্যাপকভাবে কলেরার সংক্রমণ ঘটে। কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। ইংল্যান্ডে যখন এই রোগটি মহামারির আকার ধারণ করেছিল তখন প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল সেখানকার দূষিত বায়ুর কারণে এই রোগটি ছড়িয়েছে। এছাড়াও জনসম্মুখে এটি মিয়াসমা ‘miasma’ নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ডাক্তার জন স্নো এই রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেন। তার গবেষণায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তিনি জানান, বায়ু থেকে নয় বরঞ্চ দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে এই রোগ ছড়ায়।
জন স্নো গোয়েন্দার মতো একটি তদন্ত পরিচালনা করেন। তিনি ১০ দিনের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের তালিকা তৈরি করেন এবং তাদের বাসস্থল, ব্যবহৃত পানির উৎস খুঁজে বের করেন। তদন্তের পর শুধুমাত্র ব্রড স্ট্রিট পাম্পের পানি ব্যবহার করা প্রায় ৫০০ জন কলেরা আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত করেন ডাক্তার জন স্নো। ব্রড স্ট্রিট পাম্পের পানি পান করতেন এর পাশেপাশের নাগরিকগণ। এছাড়াও জন স্নো তার বইয়ে পাম্পের পানি দূষণ নিয়েও বর্ণনা করেছিলেন। যদিও বিষয়টি অনুধাবনের পর স্থানীয় প্রশাসনকে রাস্তার পাশে পাম্পের যাবতীয় সুযোগসুবিধা বন্ধ করতে অনুরোধ করেন তিনি। তার নির্দেশনা অনুযায়ী রাস্তার পাশের হ্যান্ডেলটি সরিয়ে নেয়ার ফলে আশেপাশের জায়গাগুলো শুকিয়ে যায় এবং কলেরার সংক্রমণ কমতে শুরু করে।
জন স্নোয়ের গবেষণা এবং গৃহীত উদ্যোগ সমূহ রাতারাতি কলেরা নির্মূল করেনি। কিন্তু এটি শহরের স্যানিটেশন উন্নত করে পানি দূষণ কমিয়ে নিরাপদে পানি সংরক্ষণের বিষয়গুলোকে একটি বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার দিকে ধাবিত করেছিল। গবেষকরা মনে করেন ইংল্যান্ডের দেখাদেখি ইউরোপের শহরগুলোতে স্যানিটেশন এবং পানি দূষণ কমানোর কার্যক্রম শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। আধুনিক বিশ্বের উন্নত দেশগুলো কলেরা পুরোপুরি নির্মূল করতে পারলেও দরিদ্র দেশসমূহে যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে কলেরা একেবারে নির্মূল সম্ভব হয়নি। তবে পানি সংরক্ষণে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করে নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে পারলে কলেরা একেবারে নির্মূল করা সম্ভব।
প্লেগ অব জাস্টিনিয়ান
পৃথিবীর ইতিহাসের মারাত্মক ক্ষতিসাধনকারী ৩টি মহামারির মধ্যে প্লেগ অব জাস্টিনিয়ান অন্যতম। আনুমানিক ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে এটি বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের তৎকালীন রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে সংক্রমিত হয়। মূলত মিশরে নতুন একটি অঞ্চলের দখল নেয়ার পর সেখান থেকে উপহার হিসেবে খাদ্যশস্য পাঠানো হয় সম্রাট জাস্টিনিয়ানের সম্মানার্থে। আর এই খাদ্যশস্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে কনস্টান্টিনোপলে পৌঁছায়। কিন্তু এসব খাদ্যশস্য বোঝাই জাহাজে করে একপ্রকার কালো ইদুর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছিল যা বাইজান্টাইনদের ইতিহাসের সবথেকে ক্ষতিসাধনকারী মহামারির সামনে দাঁড় করিয়েছিল।
কনস্টান্টিনোপলে তাণ্ডব সৃষ্টি করে এই প্লেগের ধ্বংসযজ্ঞ ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে বন্যার মতো সংক্রমিত হয়। গবেষকদের হিসেবে তখন প্রায় ৩০ থেকে ৫০ মিলিয়নের মতো মানুষ প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে যা ছিল তখনকার পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। ডি পল ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক থমাস মকাইটিস এই প্লেগ বিলুপ্তির কারণ হিসেবে তখনকার মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উল্লেখ করেন। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলা ব্যতীত অন্য কোনো নির্দেশনা কিংবা চিকিৎসা ব্যবস্থার বিষয়ে তথ্য খুঁজে পাননি তিনি। বরঞ্চ যারা এই মহামারির মধ্যেও জীবিত ছিলেন তাদেরকে সৌভাগ্যবান হিসেবে উল্লেখ করেন অধ্যাপক থমাস মকাইটিস।