১৬৬৬ সালের শীতে দুই পক্ষ বড় কোনো সংঘর্ষে জড়ায়নি। তবে দ্বিতীয় চার্লস এ সময় আত্মঘাতী এক সিদ্ধান্ত নেন। চলমান যুদ্ধ শুধু ডাচ নয়, ব্রিটিশ অর্থনীতির উপরেও বেশ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছিল। এর সাথে যোগ হয় অগ্নিকান্ড আর প্লেগের ক্ষতি। অব্যহতভাবে সাগরে অভিযান চালাতে গিয়ে রাজকোষ থেকে খরচ হচ্ছিল বিপুল অর্থ। লন্ডনের অগ্নিকান্ডের পর অর্থের সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিল।
অর্থ সাশ্রয়ে চার্লস সিদ্ধান্ত নিলেন বড় জাহাজগুলো বন্দরে রেখে ছোট ছোট যুদ্ধজাহাজ নামানো হবে। তাদের মূল টার্গেট থাকবে ডাচ বাণিজ্য জাহাজ, ফলে ডাচ অর্থনীতি ধসে পড়বে। তবে শুধু চার্লস নয়, এই পরিকল্পনার জন্য তৎকালীন লর্ড চ্যান্সেলর, প্রধান কোষাধ্যক্ষ আর কম্যান্ডার মঙ্কও ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা তখনই শুধু সফল হবে, যখন শত্রুপক্ষের কোনো সংগঠিত নৌবহর থাকবে না।
চার্লসসহ অন্যরা মনে করেছিলেন- বার বার সংঘর্ষে নেদারল্যান্ডসের নৌবাহিনীর ক্ষমতা এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে তারা বাণিজ্য বহরের প্রতিরক্ষাও ঠিকমতো দিতে পারবে না। এই ধারণা ছিল সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত। ফলে ১৬৬৬ সালের শরতে দেখা গেল সাগরে রয়্যাল নেভির বড় জাহাজের বহর না থাকায় ডাচরা সীমিত আকারে ইংলিশ চ্যানেলে অবরোধ জারি করতে পারছে, ফলে ব্রিটিশ বাণিজ্য জাহাজগুলো উল্টো আক্রমণের শিকার হতে থাকে। ১৬৬৭ সালের মার্চে আলাদা এক আক্রমণে আটলান্টিকের উত্তর-পূর্ব উপকূলে সুরিনামের উপনিবেশ থেকে ব্রিটিশদের হটিয়ে দেয় ডাচরা।
শান্তি আলোচনা
যুদ্ধের ফলে দুই পক্ষই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল। তাছাড়া কয়েকবার মোকাবেলার পরেও উদ্দিষ্ট লক্ষ্য হাসিল করতে না পেরে চার্লস ১৬৬৭ সালের মে মাসে নেদারল্যান্ডসে প্রতিনিধি প্রেরণ করলেন। ২০ মে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে সুইডিশ রাষ্ট্রদূত পৌঁছলে ব্রেডা শহরে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক আরম্ভ হয়।
কিন্তু দুই পক্ষই যার যার অবস্থানে অনড় ছিল, ফলে আলোচনায় কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। কাজেই ডি উইট মনস্থির করলেন লড়াইয়ের প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে। ৭২টি রণতরী সাগরে নামানোর জন্য কাজ চলতে থাকে। তার মাথায় তখন দুঃসাহসী এক পরিকল্পনা, যা সফল ফলে গোটা ইংল্যান্ডের অস্তিত্ব কেঁপে উঠবে।
ডি উইটের পরিকল্পনা খুব সাধারণ, কিন্তু এর বাস্তবায়ন ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি চাচ্ছিলেন টেমস ধরে ইংল্যান্ডের হৃদপিণ্ডে চকিত হামলা চালিয়ে ফিরে আসতে। তিনি জানতেন- এই কাজে সফল হলে ব্রিটিশ গর্ব প্রচণ্ড ধাক্কা খাবে, তাদের কাছে এই আক্রমণই হবে পরাজয়ের শামিল।
ডি উইট জানতেন- ব্রিটিশদের ভারি জাহাজগুলো সব নোঙর করা। তার উপরে লন্ডন অগ্নিকান্ডের পর থেকে রয়্যাল নেভির উর্ধ্বতন কম্যান্ডে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা। ফলে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা কিছুটা দুর্বল। ডি উইটের এই পরিকল্পিত হামলা ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে রেইড অফ মেডওয়ে নামে।
১৬৬৭ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে ভ্যান ঘেন্টের অধীনস্থ একটি ছোট বহর এডিনবার্গের দিকে যেতে চেষ্টা করেছিল। তবে তাদের ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়। এরপর গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ডাচরা টেমস ধরে আক্রমণ চালাতে আসছে। ফলে কিছু প্রতিরক্ষা গ্রহণ করা হয়, যার মধ্যে একটি ছিল নদীতে চেইন ফেলে জাহাজের অগ্রযাত্রা ব্যহত করা।
তবে ডাচদের আর কোনো দেখা না পেয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই গুজব বন্ধ হয়ে গেলে প্রতিরক্ষা আবার শিথিল হয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে, ভ্যান ঘেন্টের অভিযান ছিল টেমস বরাবর তথ্য সংগ্রহ, এডিনবার্গে আক্রমণ আসলে তার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু ব্রিটিশরা ডাচদের এই চাল ধরতে পারেনি।
মেডওয়ে (Medway)
১৪ জুন, ১৬৬৭।
৬০-৭০টি রণতরি টেক্সেল থেকে বেরিয়ে এলো। সেভেন প্রভিন্সেস জাহাজে চেপে তাদের কম্যান্ডে ডি রুইটার। তার সঙ্গী হয়েছেন গ্র্যান্ড পেনশনারের ভাই, কর্ণেলিস ডি উইট। ডি রুইটারের বহর ভাগ হলো তিনটি স্কোয়াড্রনে। প্রথম স্কোয়াড্রন তার হাতে থেকে যায়, দ্বিতীয়টির দায়িত্ব নেন লেফটেন্যান্ট অ্যাডমিরাল ভ্যান নেস, আর তৃতীয় স্কোয়াড্রনের নেতৃত্ব নিলেন লেফটেন্যান্ট অ্যাডমিরাল ভ্যান ঘেন্ট আর মেপেল। তবে কাউকে যাত্রার আসল উদ্দেশ্য জানানো হয়নি, পুরো পরিকল্পনা জানতেন একমাত্র ডি উইট।
সাগরে নির্দিষ্ট দূরত্ব আসার পর ডি উইট যখন পরিকল্পনা প্রকাশ করেন, তখন ডাচ অফিসারদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। অনেকেই একে আত্মহত্যার নামান্তর বলে অভিহিত করেন। ডি রুইটার সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন যে এটা রাষ্ট্রীয় আদেশ, কাজেই ব্যক্তিগত ভাল লাগা না লাগার মূল্য এখানে শূন্য। তিনি প্রস্তুত হলেন অভিযান সফল করতে।
১৯ জুনে ডাচরা টেমসের অদূরে এসে পৌঁছল। তাদের পরিকল্পনা মেডওয়ে নদী ধরে এগিয়ে যাওয়ার। এর অংশ হিসেবে ভ্যান ঘেন্টকে ১৭টি হালকা জাহাজ আর ফ্রিগেট দিয়ে পাঠানো হলো কেন্টের উপকূলের গ্র্যাভেসেন্ড আর টেমসের উত্তর তীরের এক শহর টেমস হ্যাভেনের মাঝে। সেখানে বার্বাডোসে বাণিজ্য করার জন্য ২০টি জাহাজ আছে ১০টি ফ্রিগেটের পাহারায়। ১,০০০ সৈনিক নিয়ে ডি উইট ঘেন্টের সাথে রওনা হলেন।
১৯ জুনেই ভ্যান ঘেন্ট টেমস ধরে দৌড় লাগালেন। তবে তিনি ধরার আগেই ব্রিটিশ জাহাজগুলো স্থানত্যাগ করে। তবে ঘেন্ট নিরাশ হলেন না। পরদিন সকালে এসে পৌঁছলেন শার্নেস দুর্গের অদূরে। এখানে এক ঘণ্টা ধরে গোলাবর্ষণের পর ইংল্যান্ডের মাটিতে নামল ৮০০ ডাচ সৈন্য। দুর্গের মাথায় ব্রিটিশ পতাকা ছুড়ে ফেলে উত্তোলিত হলে নেদারল্যান্ডসের ঝাণ্ডা। প্রচুর মালামাল ঘেন্টের হস্তগত হলো।
ডি রুইটার আরো কিছু জাহাজ আগে আগে পাঠিয়ে দিলেন মেডওয়ে ধরে। তাদের উপর কঠিন নির্দেশ ছিল শুধু পর্যবেক্ষণের। কোনোভাবেই তীরে সেনা নামানোর অনুমতি ছিল না। তবে ক্যাপ্টেন ভ্যান ব্র্যাকেল নামে এক অফিসার এই আদেশ অমান্য করেন। ফলে ডি রুইটার এসে পৌঁছলে তাকে আটক করা হয়।
এদিকে ডাচদের অকস্মাৎ আগমনে ব্রিটিশরা তখন দিশেহারা। দ্রুত হাই কমান্ডের নির্দেশে নিজেদের বেশ কিছু জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া হলো নদীতে, যাতে ডাচরা এগোতে না পারে। এ কাজ করতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় ব্রিটিশরা ভুল করে একদম নতুন একটি রণতরী এবং প্রয়োজনীয় রসদ বহনকারী আরেকটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। এ অনেকটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।
ডি উইট আলাদা হয়ে ততক্ষণে মেডওয়ের তীরে চ্যাথাম শহর অবধি চলে গেছেন। ডি রুইটার দ্রুত তার সাথে মিলিত হন। তাদের পাঠানো চারটি ফায়ারশিপ ব্রিটিশরা ঠেকিয়ে দেয়। নদীতে ডুবিয়ে দেয়া জাহাজও তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
নিকটবর্তী আপনর (Upnor Castle) দুর্গের সামনে সজ্জিত ৬টি রণতরীও ডাচদের বিরুদ্ধে প্রস্তুত। কিন্তু ডি রুইটারের জানা ছিল না ব্রিটিশদের তথৈবচ অবস্থা। তাদের জাহাজগুলো কৌশলগত অবস্থানে নেই, এমনকি অভাব রয়েছে দক্ষ নাবিক আর কামান চালানোর লোকের।
ডি রুইটার আর ডি উইট মিলে মুহুর্মুহু তোপ দেগে গেলেন নদীর ধার জুড়ে সমস্ত ব্রিটিশর ঘাঁটিতে। ইত্যবসরে ক্যাপ্টেন ব্র্যাকেল অনুমতি প্রার্থনা করলেন তার জাহাজ নিয়ে সর্বাগ্রে এগিয়ে যাবার। ডি রুইটার তাকে মুক্ত করে দেন, তিনি জানতেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ অমান্য করার শাস্তি থেকে রেহাই পেতেই ব্র্যাকেল এই দুঃসাহসিক কাজের দায়িত্ব নিতে চাইছেন।
ব্র্যাকেল ঠিকই নদীতে ফেলে রাখা চেইন আর ডুবিয়ে দেয়া জাহাজের বাধা পেরিয়ে চলে যান, ব্রিটিশ রণতরীর সামনে গিয়ে গর্জে উঠল তার কামান। ভ্যান রেইন ঠিক তার পেছনেই ছিলেন, তিনি আরেকটি জাহাজ পুড়িয়ে দেন। এরপর ডাচদের শিকার হলো পঞ্চম চার্লস জাহাজ। এর সমস্ত নাবিক নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেলেও চার্লসের ক্যাপ্টেন ডগলাস নড়লেন না। তাকে জাহাজ ত্যাগের অনুরোধ জানালে তিনি প্রত্যুত্তর দিলেন যে তার পরিবারের কেউই কখনো দায়িত্বের জায়গা থেকে সরেনি। তিনি জাহাজের সাথে পুড়ে মারা যান।
ডি রুইটার আরো এগিয়ে গেলেন। ভ্যান হুনিগেন (The Fort van Hooningen) দুর্গে আক্রমণ করে জ্বালিয়ে দেয়া হলো। এর কাছে নদীতে নোঙর করা ছিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীর গর্ব, ৮২ কামানের ফ্ল্যাগশিপ রয়্যাল চার্লস। মাত্র কয়েকজন নাবিক জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত ছিল। তাদের হটিয়ে সহজেই ডাচরা রয়্যাল চার্লস কব্জা করে নেয়।
২৩ জুন আপনর দুর্গে হামলা করা হয়। পাঁচটি ফায়ারশিপ আর কামান ব্যবহার করে দুর্গ আর অবশিষ্ট রণতরীগুলো ধ্বংস করে দেয়া হলো। রয়্যাল নেভির সেরা জাহাজগুলোর অন্যতম, ৮২ কামানের সেন্ট জেমস, ৭৬ কামানের রয়্যাল ওক আর ৯০ কামানের রয়্যাল লন্ডন সবগুলিকে গ্রাস করল আগুনের লকলকে শিখা। ডাচদের চোখের সামনে সলিল সমাধি হলো ইংল্যান্ডের তিন জাহাজের। ব্রিটিশদের প্রচণ্ড এই ক্ষতির বিপরীতে ডাচরা হারিয়েছিল ৫০ জন সেনা।
ব্রিটিশরা তাড়াহুড়ো করে মঙ্ককে প্রেরণ করল তাদের অবশিষ্ট শক্তি দিয়ে। তিনি মনোযোগ দিলেন ঝুঁকিতে থাকা ব্রিটিশ রণতরীগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার জন্য। মূলত তার তড়িৎ পদক্ষেপেই ডি রুইটার আরো বেশি ক্ষতি করতে ব্যর্থ হন।
তবে এর মধ্যেই ডাচরা যা করেছে তা ইংল্যান্ডের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। লন্ডনের অধিবাসীরা এর আগে তাদের এত কাছ থেকে বহিঃশত্রুর কামানের গর্জন শোনেনি, যা টেমস আর মেডওয়েতে বিচরণ করা ডাচ জাহাজ তাদের শুনতে বাধ্য করেছিল। অর্থনৈতিক আর সামরিক ক্ষতির পাশাপাশি ব্রিটিশ মনস্তত্ত্বে মেডওয়ের হামলা প্রবল প্রভাব বিস্তার করে। এ ছিল একরকম পরাজয়। ফলে চার্লসের উপর চাপ বাড়ে শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত করবার।
এদিকে ২৪ তারিখে ডি রুইটার ভ্যান ঘেন্টকে ফেরো দ্বীপের দিকে পাঠান। আরেক বহরকে দায়িত্ব দেন দখল করা রয়্যাল চার্লস আর জোনাথান নামে আরেকটি জাহাজ দেশে নিয়ে যেতে। গ্র্যাভেসেন্ডের দিকে আক্রমণ করতে শেপি দ্বীপে অবতরণ করানো হয় মেরিন সেনা, তবে বিভিন্ন কারণে শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়নি। জুলাইয়ের শুরুতে টেমস বরাবর আরেকটি অভিযানও গ্র্যাভেসেন্ড ছাড়িয়ে যেতে ব্যর্থ হলো। ডি রুইটার হারউইচের কাছে ল্যান্ডগার্ড দুর্গে হামলার ইচ্ছায় প্রায় ২,০০০ লোক তীরে নামালেও কামান ছোঁড়ার জন্য জাহাজ তীরের যথেষ্ট কাছে আসতে না পারলে ডাচরা রণেভঙ্গ দেয়।
এদিকে ইংল্যান্ড থেকে মেডওয়ের হামলার খবর এসে পৌঁছলে ডাচদের হাত শক্তিশালী হয়ে যায়। ফলে আলোচনায় অগ্রগতি হলো। খসড়া একটি চুক্তি চার্লসের কাছে প্রেরণ করা হয়। এস্টেট জেনারেলরা ডি রুইটারকে বলে দিলেন- চার্লস চূড়ান্ত চুক্তি অনুমোদনের আগপর্যন্ত ব্রিটিশদের ব্যতিব্যস্ত রাখতে।
ডি রুইটার তার বহর নিয়ে আগস্টের শুরুতে এজন্য ইংলিশ চ্যানেল ধরে ডার্টমাউথ অবধি চলে এলেন, তার সহযোগী ভ্যান নেস আরেকটি বহর নিয়ে টেমসে প্রবেশ করলেন। তবে সেখানে ব্রিটিশ রণতরীর বাধায় তিনি নদীর মুখে সরে যান।
মেডওয়ের হামলার পর সাগরে কর্তৃত্ব চলে যায় ডি রুইটারের হাতে। ইংল্যান্ড রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর ঘরের দোরগোড়ায় এরকম অপমানজনক হামলা তাদের কখনো সইতে হয়নি। ডি রুইটার তাদের নৌবাহিনীকে সাময়িকভাবে প্রায় অকার্যকর করে দিয়েছেন, ক্ষতি করেছেন মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ডের। সবচেয়ে বড় লজ্জার ব্যাপার হলো- চার্লসের নামানুসারে রয়্যাল নেভির প্রধান ফ্ল্যাগশিপ রয়্যাল চার্লস দখল করে নিয়ে গেছেন তিনি। চার্লসের সামনে তখন চুক্তি মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
যদিও চতুর্দশ লুই ডাচদের তেমন কোনো সাহায্যই করেননি, তবে যুদ্ধের ফায়দা তুলতে তার আগ্রহের অভাব ছিল না। তার মনোযোগ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রিটিশ উপনিবেশের দিকে। ১৬৬৬ সালের এপ্রিলে ফরাসীরা সেন্ট কিটস দ্বীপ দখল করে। একই বছরের নভেম্বরে অ্যান্টিগা, আর পরবর্তী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মন্সেরাত চলে যায় ফরাসি নিয়ন্ত্রণে। ঘরে পর্যুদস্ত থাকলেও দ্বিতীয় চার্লস ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়তে রাজি ছিলেন না। ১৬৬৭ সালের এপ্রিলে স্যার জন হ্যামন্ড শক্তিশালী একটি বহর নিয়ে হাজির হলেন। মন্সেরাতের কাছে মে মাসের ২০ তারিখ তিনি ফরাসিদের বিরুদ্ধে জয় পান। পরের মাসে মার্টিনিকের সংঘাতে ফরাসিরা চূড়ান্তভাবে পরাস্ত হলে লুই ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশা ত্যাগ করেন।
ব্রেডার চুক্তি
চার্লসের সম্মতি পেয়ে ১৬৬৭ সালের জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত হলো ব্রেডার চুক্তি। নেভিগেশন আইন পরিবর্তন করে ডাচদের ব্রিটিশ পন্য আমদানি-রপ্তানি সহজ করা হয়। জাহাজে তল্লাশির ধারাও করা হলো নমনীয়। দুই পক্ষই একে অপরকে উত্যক্ত না করে স্বাধীনভাবে বাণিজ্যের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। নিউ ইয়র্কের দাবি ডাচরা পরিত্যাগ করে, তবে সুরিনাম রেখে দেয় তারা। শেষ হলো দ্বিতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধ।
ডি রুইটার আগস্ট মাসে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন মাউন্টসবের ধারে ইংলিশ চ্যানেলে। ২৪ আগস্ট তার কাছে শান্তিচুক্তির খবর পৌঁছলে তিনি দেশের পথ ধরলেন। নেদারল্যান্ডসের হেল্ভেটস্লুইসে এসে ১৫ অক্টোবর নোঙর করলেন তিনি। এস্টেট জেনারেলসহ ডাচ নাগরিকেরা বিজয় বীরের মতোই তাদের অভ্যর্থনা জানাল।