শনভেল্ডের পর এস্টেট জেনারেল এবং স্টাডহোল্ডার ডি রুইটারকে অভিনন্দন প্রেরণ করেন। রিয়ার অ্যাডমিরাল হানকে পাঠানো হলো ইংল্যান্ডে শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে। ২৫ জুন ফিরে এসে হান রিপোর্ট করলেন যে, তিনি জানতে পেরেছেন ৩০,০০০ সৈন্য নিয়ে জিল্যান্ড আক্রমণের ছক কষছেন চার্লস। এজন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৭০টির মতো জাহাজ।
ডাচ নৌবহরকে প্রয়োজনীয় রসদ ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হলো। ২৮ জুন এস্টেট জেনারেলদের সাথে এক বৈঠকে ডি রুইটারের সামনে এক পরিকল্পনা পেশ করলেন তারা। ইংলিশ চ্যানেল বরাবর পুনর্গঠিত ডাচ ফ্লিট চক্কর মেরে আসবে। আশা করা যায় এতে করে ব্রিটিশদের মাঝে তাদের শক্তি সম্পর্কে কোনো ভুল ধারণা থাকবে না, তারা বুঝবে সংঘাত চালিয়ে যাওয়া নিষ্ফল।
ডি রুইটার তার বহর নিয়ে টেমসের কাছে হারউইচে উপস্থিত হলেন। ভ্যান গেল্ডারের হাতে কয়েকটি জাহাজ দিয়ে তিনি এরপর ফিরে এলেন জিল্যান্ডের ওয়ালচেরেন দ্বীপের ওয়েস্টক্যাপেলের (Westkapelle) তীরে। ভ্যান গেল্ডার কয়েকদিন পর তার সাথে এসে যোগ দেন। নতুন কোনো খবর তার কাছে ছিল না।
এই সময় ব্রিটিশ বাহিনীতে নানা রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব আশা দেখাচ্ছিল যে হয়তো তারা আর লড়াই চালাতে চাইবে না। তবে সেই আশায় গুড়েবালি পড়ে ২৮ জুলাই। খবর এলো- প্রায় ১০০ জাহাজ নিয়ে রুপার্ট টেমস থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
২৯ তারিখ ডি রুইটার পাল তুললেন। পরদিন দুই পক্ষই কাছাকাছি চলে আসে। কিন্তু ব্রিটিশ-ফরাসি জোট যুদ্ধ না করে দক্ষিণে সরে যেতে থাকে, ডি রুইটার তাদের অনুসরণ করলেন। কিন্তু একপর্যায়ে তার মনে ভাবান্তর উপস্থিত হয়, আচ্ছা এটা আমাদের জিল্যান্ডের উপকূল থেকে সরিয়ে নেবার চাল নয়তো? অবিলম্বে তিনি ওয়েস্টক্যাপেলে ফেরত এলেন। শত্রুরা এরপর উত্তরদিকে মুখ ঘোরালো। মাস নদীর মুখ ধরে শেভেনিঙ্গেন পার হয়ে গেল তারা। ৪ আগস্ট এসে পৌঁছল টেক্সেলের বাইরের সাগরে।
এদিকে রুপার্টের বহরের আগমনে পুরো নেদারল্যান্ডসে তখন শঙ্কা। ৭ আগস্ট প্রিন্স অব অরেঞ্জের বার্তা ডি রুইটারের হাতে এসে পড়ে। তাকে উত্তরে যাবার আদেশ দেয়া হয়েছে। পরদিন ডি রুইটার শেভেনিঙ্গেন এসে পৌঁছেন।
এ সময় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হচ্ছিল। উপমহাদেশ থেকে মূল্যবান মালামাল ভর্তি বাণিজ্য কাফেলা আসার দিন ঘনিয়ে এসেছে, অনেক কর্মকর্তার মত ছিল- নৌবাহিনীকে এখন যুদ্ধে না নামিয়ে বাণিজ্য বহর পাহারা দিয়ে আনতে পাঠানো হোক। কারণ, এত সম্পদ শত্রু যদি কেড়ে নিতে চায়! আবার অনেকে লড়াইয়ের পক্ষে মত দিচ্ছিলেন।
শেভেনিঙ্গেনে থাকাকালীন উইলিয়াম জাহাজে এসে উঠলেন। সবাইকে উৎসাহিত করে ডি রুইটারের সাথে আলোচনায় বসলেন তিনি। সিদ্ধান্ত হলো লড়াইয়ের। ডি রুইটার ১৩ তারিখ যাত্রা করে ছয়দিন পর ছোট্ট গ্রাম ক্যাম্পেরদুনের (Kamperduin) কাছে এসে নোঙ্গর ফেললেন। অনুকূল বাতাসের প্রতিক্ষায় তিনি ১৯ তারিখও এখানে বসে থাকলেন।
অবশেষে ২০ তারিখ সকাল দশটার সময় তিনি শত্রুবহরের দেখা পান। তবে রুপার্ট কোনো সংঘাতে না গিয়ে সরে যেতে থাকেন। তীর বরাবর ডি রুইটার তাকে অনুসরণ করলেন। বাতাস ছিল ব্রিটিশদের পক্ষে, তারপরেও তারা সেদিন যুদ্ধ করতে অনীহা দেখায়।
ব্যাটল অব টেক্সেল (Battle of Kijkduin/Texel)
প্রত্যেক যোদ্ধার স্মরণীয় কিছু যুদ্ধ থাকে। ডিউক অব ওয়েলিংটন অনেক লড়াইতে ব্রিটিশদের নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তার সেরা যুদ্ধ বলতে ওয়াটারলুর নামই সর্বাগ্রে আসবে। তেমনি নেপোলিয়নের সমস্ত বিজয়ের মাঝেও আলাদাভাবে উচ্চারিত হয় অস্টারলিটজের নাম। অ্যাডমিরাল হোরাশিও নেলসন ব্যাটল অব দ্য নাইলের মতো বিখ্যাত যুদ্ধে অংশ নিলেও ব্রিটিশমানসে তাকে জীবন্ত করে রেখেছে ট্রাফালগার। তেমনি মিখিয়েল ডি রুইটারের যে লড়াইয়ের কারণে ডাচ জনগণ এবং ঐতিহাসিকেরা এখনও তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন, তা ব্যাটল অব টেক্সেল।
ব্যাটল অব টেক্সেলকে তৃতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণী সংঘাত বললে অত্যুক্তি হবে না। কারণ, শত্রুরা জয়ী হলে পুরো নেদারল্যান্ডসের উপকূল অরক্ষিত হয়ে পড়বে। ফলে সেখানে ঘাঁটি করে থাকা ফরাসিদের অবাধে জলপথে রসদপত্র সরবরাহ করা যাবে, এতে লম্বা সময় অবরোধ করে থাকতে পারবে তারা। বাঁধ খুলে দিয়ে সাময়িকভাবে ফরাসি অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার সফলতাও মুখ থুবড়ে পড়বে।
সাগরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারলে নৌবাহিনী পানির বাধা পেরিয়ে অ্যামস্টারডামসহ বড় শহরগুলোতে সরাসরি সেনা নামাবে। নেদারল্যান্ডসের শহর নগরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল ধরে ব্রিটিশ-ফরাসি জোট ছোট ছোট জাহাজে করে একেবারে নেদারল্যান্ডসের প্রাণকেন্দ্রে আঘাত হানার সক্ষমতা অর্জন করবে। কাজেই ডাচদের কিছুতেই এই লড়াইতে হারা চলবে না। নেদারল্যান্ডসের স্বাধীনতা নির্ভর করছে এখন তাদের ফ্লিট আর লেফটেন্যান্ট অ্যাডমিরাল ডি রুইটারের উপর।
২১ আগস্ট, ১৬৭৩
টেক্সেল অঞ্চলের কিকডুইন (Kijkduin) শহরের উপকূলের কাছে ব্যুহ রচনা করেছে সত্তরটি ডাচ রণতরী। নেদারল্যান্ডসের ব্যাপারে লুই আর চার্লসের পরিকল্পনা সফল হবার পেছনে এই শেষ বাধা। তীরে দাঁড়িয়ে দূর থেকে তাকিয়ে আছে অনেক মানুষ। আজকেই বোঝা যাবে কার হাতে যাবে নেদারল্যান্ডসের ভাগ্য।
প্রাথমিক রণসজ্জায় ডি রুইটার মধ্যভাগে থেকে ব্যাঙ্কার্টকে রেখেছিলেন রিয়ারে আর ট্রম্পকে ভ্যানে। অন্যদিকে, খোলা সাগরে দাঁড়িয়ে থাকা রুপার্টের কাছে ৬০টি জাহাজ, মিত্র ফরাসিদের সাথে ৩০টি। জোটের ভ্যান তৈরি করেছে ফরাসিদের হোয়াইট স্কোয়াড্রন, যার নেতৃত্বে আগের মতোই ডি এস্ট্রে। তার অন্যতম সহকারী মার্টেল।
রিয়ারে এডওয়ার্ড স্প্রাগের ব্লু স্কোয়াড্রনকে রেখে নিজের রেড স্কোয়াড্রন নিয়ে লাইনের মাঝখান গঠন করেছেন রুপার্ট নিজে। স্প্রাগের সাথে ট্রম্পের আগে থেকেই রেষারেষি ছিল, চার্লসের কাছে এবার স্প্রাগ প্রতিজ্ঞা করে এসেছেন জীবিত বা মৃত ডাচ অ্যাডমিরালকে তিনি নিয়ে যাবেন ইংল্যান্ডে।
রুপার্টের পরিকল্পনা ছিল ডি এস্ট্রে ফরাসীদের কয়েকটি জাহাজ নিয়ে ঘুরে ডাচদের পাশ থেকে আঘাত করবেন। এদিকে তিনি ডি রুইটারকে টোপ দেখিয়ে আস্তে আস্তে নিয়ে আসবেন খোলা সাগরের দিকে। ফলে ডি এস্ট্রে যখন ডাচদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেন তখন যাতে তীরের অগভীর সাগরের দিকে তারা পালাতে না পারে, যেখানে ব্রিটিশ আর ফরাসিদের বড় জাহাজগুলো যেতে পারছে না। এরপর তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে জাহাজে থাকা সৈনিকদের নামিয়ে দেয়া হবে উপকূলে, পতন ঘটবে ডাচদের সাধের রিপাবলিকের।
সকাল সাতটার দিকে ওয়েদার গেজ নিয়ে ডি রুইটার আচমকা ফর্মেশন পরিবর্তন করলেন, উদ্দেশ্য রুপার্টের লাইনের সাথে সমান্তরালে থাকা। নতুন ব্যুহে ট্রম্প চলে গেলেন পেছন বা রিয়ারে, সামনে চলে এলেন ব্যাঙ্কার্ট। ডি রুইটার মাঝখানেই রয়ে গেলেন। তার পরিকল্পনা ছিল ব্রিটিশদের থেকে ফরাসিদের বিচ্ছিন্ন করে রুপার্টের সাথে ফয়সালা করা।
ডি রুইটার ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন ব্রিটিশ সর্বাধিনায়কের দিকে। ওদিকে ডি এস্ট্রেকে মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে দেখে সুযোগ নিলেন ব্যাঙ্কার্ট। ডি এস্ট্রের অনুপস্থিতিতে ভ্যান সামলাচ্ছিলেন মার্টেল। ব্যাঙ্কার্ট নিজের ১২টি জাহাজ নিয়ে হামলে পড়লেন তার উপর। ফলে ফরাসিদের মধ্যে দেখা দিল বিশৃঙ্খলা।
ডি এস্ট্রে তখনও প্রতিকূল বাতাস ঠেলে নিজের উদ্দিষ্ট অবস্থানের দিকে যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন, ডাচদের আক্রমনে নাকাল মিত্রদের দেখেও এগিয়ে আসেননি। যুদ্ধের বাকি সময়টা তিনি কোনো ভূমিকাই পালন করেননি। ব্রিটিশদের সাহায্য করতে তার এই গা-ছাড়া ভাব রুপার্টকে ক্রুদ্ধ করে তোলে।
ব্যাঙ্কার্টের আঘাতের ফলে ব্রিটিশ আর ফরাসি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে দু-টুকরো হয়ে গেল ব্রিটিশ-ফরাসি বহরের লাইন। ঠিক ১৩২ বছর পর ট্রাফালগারে আরেকবার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবেন এক ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল, হোরাশিও নেলসন। তবে আজকের দিনটা ডি রুইটারের জন্যই তোলা। তিনি রুপার্টকে অনুসরণ করে ঠিকই খোলা সাগরের দিকে চলে এসেছেন। তুমুল যুদ্ধ লেগে গেছে দুই জাহাজে। ব্রিটিশ-ফরাসি লাইনের ভ্যান ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে ব্যাঙ্কার্ট তার সাথে যোগ দিয়েছেন। দুই দিক থেকে কামানের গোলায় ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছেন ব্রিটিশ সর্বাধিনায়ককে।
স্প্রাগের ব্লু স্কোয়াড্রনের দায়িত্ব ছিল রুপার্টের সহযোগিতায় আসা। কিন্তু পুরনো শত্রু ট্রম্পকে এগিয়ে আসতে দেখে স্প্রাগ সেই কথা ভুলে তিনি ট্রম্পের সাথে জড়িয়ে পড়লেন তুমুল সংঘর্ষে। তিন ঘণ্টা দুই অ্যাডমিরালের জাহাজ ভয়াবহ লড়াই চালায়। গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিন তিনবার জাহাজ পরিবর্তন করতে হয় দুজনকেই। তৃতীয়বার যখন জাহাজ পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নৌকায় চাপলেন স্প্রাগ, তখনই এক গোলা এসে নৌকা দিল চুরমার করে। ডুবে মারা গেলেন দুর্ধর্ষ ব্রিটিশ নৌ সেনাপতি।
এদিকে ঘন কুয়াশা আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল ডি রুইটার আর রুপার্টের জাহাজ। কুয়াশা কেটে গেলে দেখা গেল সাগরে ছড়িয়ে আছে জাহাজের ভাঙা অংশ আর মৃতদেহ। তবে কামান দাগা থেমে যায়নি। ডি রুইটার আর ব্যাঙ্কার্ট ট্রম্পের সাথে যোগ দিতে সরে যেতে থাকলে রুপার্টও অনুগামী হন। চলতে থাকে তীব্র সংঘর্ষ।
ডাচ অ্যাডমিরাল সুইরস আর ডি লিফড নিহত হন, কিন্তু তাদের অফিসারেরা পিছিয়ে না গিয়ে সংঘাত জারি রাখে। ডি রুইটার একবার স্প্রাগের পরিত্যক্ত জাহাজ দখল করবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু রুপার্ট তাকে ব্যর্থ করে দেন। অবশেষে সন্ধ্যা সাতটার দিকে অন্ধকারের ভেতর আর লড়াই সম্ভব হলো না। দুই পক্ষই পিছিয়ে গেল। পরদিন নতুন করে কোনো সংঘাত হয়নি। শেষ হয়ে গেছে ব্যাটল অব টেক্সেল।
আশ্চর্যজনকভাবে, ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো পক্ষের কোনো জাহাজই ডোবেনি বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়নি। তবে হাজারের মতো নাবিক আর সেনা হতাহত হয়েছে, যার দুই-তৃতীয়াংশই ব্রিটিশ-ফরাসি জোটের। সামরিকভাবে দেখলে এই যুদ্ধ অমীমাংসিত। কিন্তু নৌ ঐতিহাসিক, এমনকি তৎকালীন ফরাসি ও ব্রিটিশদের মধ্যেও কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল না যে ডাচরাই এই সংঘাতের বিজয়ী।
ডিউক অব ইয়র্ক মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেছিলেন- সম্ভবত ডি রুইটারকে টেক্কা দেয়ার মতো অ্যাডমিরাল এই জমানায় নেই। এই সংঘর্ষের পর রসদপত্র আর লোকবলের অভাবে রুপার্ট বাধ্য হন দেশে ফিরে যেতে, লড়াই চালানোর সামর্থ্য তার আর ছিল না।ফলে বাণিজ্য জাহাজগুলো নির্বিঘ্নে ফিরে আসতে পারে। তাদের বয়ে আনা মালামাল নতুন গতি সঞ্চারিত করে ডাচ অর্থনীতিতে।
ওদিকে দৃশ্যপট থেকে নৌবাহিনী অন্তর্হিত হলে ডাঙায় থাকা ফরাসি সেনাদের লম্বা সময় লড়াই করবার মতো সাজসরঞ্জামের অভাব দেখা দেয়। তাছাড়া, পানির বাধা অতিক্রম করার কোনো রাস্তাও তাদের জানা ছিল না। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয় জোটের ভেতরে।
ডি এস্ট্রে যুদ্ধের পুরোটা সময় অনেকটা দর্শকের ভূমিকায় অভিনয় করে গেছেন। তিনি দাবি করেন- বাতাস অনুকূল না হওয়ায় তার পক্ষে সম্ভব হয়নি রুপার্টের সহায়তায় এগিয়ে আসা। ওদিকে রুপার্ট ব্যর্থতার দোষ ফরাসিদের কাঁধে চাপিয়ে অভিযোগ করেন ব্রিটিশদের সাহায্য করার কোনো ইচ্ছাই আসলে তাদের নেই।
টেক্সেলে ডি এস্ট্রের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে অনেকেই অনেক তত্ত্বের অবতারণা করেন। কেউ কেউ মনে করেন, ফরাসি নৌবহর যতটা সম্ভব অক্ষত রাখতে তার উপর লুইয়ের চাপ ছিল, যে কারণে শতভাগ উদ্যম নিয়ে তিনি যুদ্ধ করেননি। অনেকে আবার দেস্টের ব্যাখ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন। তবে ইংল্যান্ডে জনগণ রুপার্টের কথাই বিশ্বাস করল, কারণ চিরশত্রু ফরাসিদের বিরুদ্ধে জোট নিয়ে আগে থেকেই তারা ক্ষুব্ধ ছিল। এরকম অবিশ্বাসী মিত্রের থেকে তো অদম্য শত্রুই ভাল।
ট্রিটি অব ওয়েস্টমিন্সটার
টেক্সেলের পর ডি রুইটার চারদিক থেকে প্রশংসার বন্যায় ভেসে যান। তার ছেলেকে রিয়ার অ্যাডমিরাল হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হলো। ইংল্যান্ডের উপকূল থেকে এক চক্কর ঘুরে আসার পরিকল্পনা হলেও ঝড়ের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
তৃতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধে বছরখানেক অতিবাহিত হয়ে গেলেও ডি রুইটারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোনো বিজয় রয়্যাল নেভি দেখাতে পারেনি। মরার উপর খাঁড়ার ঘার মতো ১৬৭৩ সালের আগস্টেই নিউ ইয়র্ক আবার ডাচ নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ব্রিটিশ নাগরিকরাও ফরাসিদের সাথে চার্লসের দহরম মহরম নিয়ে প্রচণ্ডভাবে বিরক্ত হয়ে পড়ছে। হাওয়া যে অনুকূল নয়, চার্লস তা বিলক্ষণ বুঝতে পারলেন। গোল্লায় যাক লুই! আগে তো নিজের চামড়া বাঁচাই!
১৬৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি।
ওয়েস্টমিন্সটারে স্বাক্ষরিত চুক্তি যতি টানল তৃতীয় অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের। ডাচরা যত দ্রুত সম্ভব চার্লসের সাথে ঝামেলা চুকিয়ে লুইয়ের বিহিত করতে চাচ্ছিল, তাদের চোখে ফ্রান্সই তখন মূল শত্রু। কাজেই অনেক নমনীয়ভাবেই যুদ্ধশেষের চুক্তি করে তারা। সাগরে ব্রিটিশ জাহাজ দেখলে প্রথম ফাঁকা তোপ দেগে স্যালুটে রাজি হয় ডাচরা।
স্পেনের পশ্চিম উপকূলের ফেনেস্টার অন্তরীপ থেকে নরওয়ের নিকটবর্তী সাগর অবধি ব্রিটিশ জলসীমা চিহ্নিত হলো। ক্ষতিপূরণ হিসেবে চার্লসকে দুই লাখ পাউন্ড দিতেও সম্মত হয় ডাচরা। নিউ ইয়র্কের উপনিবেশের উপর থেকেও সমস্ত দাবি প্রত্যাহার করে তা ব্রিটিশদের দেয়া হয়। বিপরীতে, প্রিন্স অব অরেঞ্জের ক্ষমতাপ্রাপ্তি আর ব্রিটিশ জলসীমায় ডাচ মৎস্যশিকারি জাহাজ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করল না ইংল্যান্ড।