ডাচ কমান্ডে বদল
ট্রম্প ফিরে গেছেন নেদারল্যান্ডসে। হাউজ অফ অরেঞ্জ তাকে নিয়োগ করেছিল বলে আগে থেকেই এস্টেট জেনারেলরা তাকে সরানোর মওকা খুঁজছিল। ব্লেকের হাত থেকে ডাচ বাণিজ্য জাহাজ রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হলো নৌবাহিনীর কমান্ড। ট্রম্পের স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস অ্যাডমিরাল উইট ডি উইথ।
প্লাউমাইথের পর ডি রুইটার তার সাথে থাকা বাণিজ্য জাহাজগুলো পার করে দিয়ে আবার চ্যানেলে ফেরত আসেন। বহরের বেশ কয়েকটি জাহাজ মেরামতের জন্য নেদারল্যান্ডসে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। খর্বশক্তির এই দল নিয়ে ডি রুইটার চাচ্ছিলেন না অ্যাডমিরাল ব্লেক আর আয়েস্কুর যৌথ বহরের মুখোমুখি হতে। তার কাছে খবর ছিল- শেটল্যান্ড থেকে ব্লেক ফিরে এসেছেন। কাজেই তিনি দ্রুত চ্যানেল ত্যাগ করে যোগ দেন উইট ডি উইথের বহরের সাথে।
৩০ সেপ্টেম্বরের দিকে দুই অ্যাডমিরাল কাদিজের বহরের সাথে মিলিত হন এবং অক্টোবরের ৪ তারিখ নিরাপদেই রৌপ্য নিয়ে নেদারল্যান্ডসে ফিরে আসেন। এরপর ৬৪টি জাহাজ নিয়ে উইট ডি উইথ আবার ইংলিশ চ্যানেলে ফিরে যান, খোঁজ করতে থাকেন ব্রিটিশদের।
ব্যাটল অব কেন্টিশ নক
কেন্টিশ নক উত্তর সাগরের একটি অগভীর অংশ। এখানেই ১৬৫২ সালের ৮ অক্টোবর ব্লেক দেখা পান উইট ডি উইথের। উইট ডি উইথ একগুঁয়ে প্রকৃতির লোক ছিলেন। ডি রুইটারসহ সমরবিদেরা তাকে পরামর্শ দিয়েছিল এই মুহূর্তে ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধ না করতে। কারণ তখন বাতাস প্রতিকূল, বইছে প্রবল ঝড়। কিন্তু উইট ডি উইথের চোখে তখন ব্রিটিশদের চূড়ান্তভাবে শায়েস্তা করে সাগরের দখল বুঝে নেবার স্বপ্ন। কিন্তু তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই অশান্ত সমুদ্রের ভেতর দিয়ে দুঃসাহসিকভাবে আক্রমণ করে বসল ব্রিটিশরা। চারদিক থেকে কামানের গোলায় দিশেহারা করে দিল ডাচ নাবিকদের।
ডি রুইটার ছিলেন ভ্যান বা সম্মুখসারির নেতৃত্বে। তার উপরেই চলল সবচেয়ে বেশি গোলাগুলি। উইট ডি উইথ মধ্যভাগে আর ডি ওয়াইল্ডট পশ্চাদ্ভাগের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশরা এত তড়িৎ আঘাত হেনেছিল যে ডি উইথ তার পরিকল্পনা গুছিয়ে নেয়ারই সময় পাননি। ২০টি ডাচ জাহাজ প্রথম আক্রমণের মুখেই পালিয়ে গেল। তবে ডি রুইটার আর ডি উইথ লড়ে গেলেন সমানতালে। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার নেমে এলে ব্লেক বিরতি নিলেন। ডাচদের তিনটি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল, আর তিনটি ছিনিয়ে নেয় শত্রুরা। অন্যদিকে ব্রিটিশদের একটিমাত্র যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে পেরেছিল ডাচরা।
পরদিন সাগর ছিল শান্ত। ব্লেকের দলে আরো ১৬টি জাহাজ এসে যোগ দিল। ডি রুইটার অনেক কষ্টে উইট ডি উইথকে বোঝাতে সক্ষম হন যে যুদ্ধ করা হবে চূড়ান্ত বোকামি। তারা দ্রুত পাল তুললেন নেদারল্যান্ডসে দিকে। ব্লেক কিছুটা গদাই লস্করি চালে তাদের ধাওয়া করেন, কারণ ডাচ ফ্লিটের মূল শক্তি ধ্বংস করে দিয়েই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। এই যুদ্ধের পর সাময়িকভাবে সাগরে রয়্যাল নেভির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
ট্রম্পের পুনর্বহাল
নেদারল্যান্ডসে পৌঁছলে ডি উইথ আর ডি রুইটারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠলেও তাদের সাথের ক্যাপ্টেনরা কমান্ডারদের সাহসিকতার পক্ষে সাক্ষ্য দিলে তারা বেকসুর খালাস পেয়ে যান। উইথ অসুস্থ শরীরে ছুটি নেন। ডি রুইটার অবসরের চিন্তা করছিলেন, কিন্তু ডাচরা তার মতো দক্ষ ও অভিজ্ঞ কাউকে হারাতে নারাজ ছিল। ট্রম্পকে নতুন করে কম্যান্ড ফিরিয়ে দিয়ে ডি রুইটারকে নিযুক্ত করা হলো তার সহকারী হিসেবে।দ্রুত নতুন একটি বহর গড়ে তোলা হলো ব্রিটিশদের মোকাবেলা করতে।
ব্যাটল অব ডানজিনেস
সেই বছরের শীত চলে আসতে থাকে। কিন্তু এর মধ্যেই ট্রম্প ৮৫টি রণতরী নিয়ে ৩০০ বাণিজ্য জাহাজকে পাহারা দিয়ে রওনা দিলেন। ব্রিটিশরা দাবি করে ৮৫ নয়, ডাচদের রণতরী ছিল শতাধিক। ১০ ডিসেম্বর তিনি ইংলিশ চ্যানেলে ব্লেকের দেখা পেলেন। ব্লেকের সাথে ব্রিটিশ রেকর্ড অনুযায়ী ছিল ৩৭টি রণতরী, আর ডাচদের হিসেব বলে ব্রিটিশ জাহাজের সংখ্যা ছিল ৫২টি। বহরের সাথে আরো জাহজ ছিল, সেগুলোকে ব্লেক চ্যানেলের তীরবর্তী অন্যান্য বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
১৬৫২ সালের ১০ ডিসেম্বর কেন্টের উপকূলে ডানজিনেসের এলাকাতে ট্রম্প ব্লেকের উপর আক্রমণ করেন। গারল্যান্ড আর বন অ্যাডভেঞ্চার নামে দুটি ব্রিটিশ ফ্রিগেট ডাচরা দখল করে নেয়। ব্লেক নিজেও অনেকক্ষণ শত্রুদের হাতে অবরুদ্ধ ছিলেন, পরে আয়েস্কু এসে তাকে উদ্ধার করেন। রাতের অন্ধকারে ব্লেক টেমস ধরে পালালেন, তা না হলে ট্রম্প সম্ভবত সম্পূর্ণ ব্রিটিশ বহরই ধ্বংস করে দিতেন। ট্রম্প কেন্টের উপকূলে সেনাও নামানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রায় ১০০ লোক হারিয়ে তাকে পিছু হটতে হয়।
এদিকে ব্লেকের পরাজয়ের পর সাময়িকভাবে ইংলিশ চ্যানেলের কর্তৃত্ব চলে যায় ডাচ ফ্লিটের হাতে। ব্লেক দ্রুত নতুন করে নৌবহর গড়ে তুললেন। ৬৬টি জাহাজ নিয়ে পোর্টল্যান্ডের কাছে তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন ট্রম্পের জন্য, যিনি ৭৪-৮০টি জাহাজ নিয়ে ২৫০টি বাণিজ্য জাহাজকে প্রহরা দিয়ে ইংলিশ চ্যানেল ধরে এগিয়ে আসছেন।
ব্যাটল অব পোর্টল্যান্ড
২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৬৫৩।
পোর্টল্যান্ডের কাছে এসে ব্লেককে দেখতে পেলেন ট্রম্প। ব্রিটিশ বহর ছিল বিক্ষিপ্ত। এই সুযোগ নিতে ট্রম্প দ্রুত হামলা করলেন। ফলে বেশ কিছুক্ষণের জন্য মাত্র ১২টি জাহাজ নিয়ে ব্লেক ট্রম্পের মোকাবেলা করছিলেন। ডি রুইটারের সাথে লড়াই বেধে গেল ব্রিটিশ ফ্রিগেট প্রস্পেরাসের। ব্রিটিশ ফ্রিগেটের ৪০ কামানের আঘাতে ডি রুইটারের জাহাজ প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরোয়া না করে ডাচরা লাফিয়ে পড়ল প্রস্পেরাসের ডেকে। কিন্তু প্রস্পেরাসের ১৭০ জন নাবিকের প্রবল প্রতিরোধে তারা পিছু হটে। তবে ডি রুইটারের উৎসাহে আবার তার নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
এবার প্রস্পেরাস ডাচদের হাতে চলে যায়। সেদিনের যুদ্ধে এটিই একমাত্র জাহাজ যেখানে ডাচরা দখল নিতে পেরেছিল। কিন্তু ব্লেক তার পতাকাবাহী জাহাজ ট্রায়াম্ফ নিয়ে এগিয়ে এসে প্রস্পেরাস পুনর্দখল করলেন, সাথে সাথে সেখানে থেকে যাওয়া ডাচদেরও বন্দি করেন তিনি।কিন্তু ডাচদের গোলাগুলিতে ট্রায়াম্ফ প্রায় অচল হয়ে পড়ে, ব্লেক নিজেও উরুতে আঘাত পান।
রাত পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। ব্লেক ডাচদের সাতটি জাহাজ ধংস করে দেন। ব্রিটিশ ফ্রিগেট ডাচ বহরের সাথে থাকা কয়েকটি বাণিজ্য জাহাজও আক্রমণ করে। ডাচরা ব্রিটিশদের একটিমাত্র জাহাজ বিধ্বস্ত করতে সক্ষম হয়। ডি রুইটারের ৩০ জন নাবিক মারা যায়, সাথে সাথে প্রস্পেরাসে তার যেসব সৈনিক ছিল তারাও বন্দি হয় ব্রিটিশদের হাতে। ডি রুইটারের জাহাজের পাল, মাস্তুল সবই ভেঙে পড়বার উপক্রম। ফলে রাতের বেলায় আলো জ্বালিয়ে মেরামতে লেগে পড়ল নাবিকেরা। দুই পক্ষই তখন পাশাপাশি ইংলিশ চ্যানেল ধরে চলছিল, তবে যুদ্ধ ছিল বন্ধ। সবাই ব্যস্ত ছিল নিজ নিজ ক্ষতি সারাই করতে।
পরদিন ওয়াইট দ্বীপের কাছে এসে ট্রম্প অফিসারদের নিয়ে সভায় বসলেন। সিদ্ধান্ত হলো তারা পিছিয়ে যাবেন। বাণিজ্য জাহাজগুলো আগে আগে পাঠিয়ে দিয়ে ট্রম্প তাদের পেছনে নিজের বহরকে অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকারে সাজিয়ে রওনা দিলেন। ওদিকে ব্লেক কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও দুপুর বারোটার ভেতরই ডাচদের ধরে ফেলেন। তার কয়েকটি জাহাজ এগিয়ে গিয়েছিল ডাচ বাণিজ্য জাহাজগুলো ধাওয়া করতে। এদিকে দুটো থেকে সন্ধ্যা অবধি ডাচদের যুদ্ধজাহাজ তাড়া করে ব্লেক পাঁচটির মতো জাহাজ ছিনিয়ে নেন। তৃতীয় দিন নতুন করে লড়াই চললে ডি রুইটারের জাহাজ প্রায় অচল হয়ে পড়ে। ট্রম্প তখন ডি রুইটারকে টেনে সরিয়ে নিলেন।
এদিকে ব্লেকের দল ভারি হচ্ছিল। ফলে নতুন উদ্যমে তিনি ডাচদের ধাওয়া করলেন। ট্রম্প পালাচ্ছিলেন ফরাসি উপকূলের দিকে। ডাচ জাহাজ তীর ঘেঁষে অগভীর পানিতে চলার উপযুক্ত ছিল, যে সুবিধা ব্লেকের ছিল না। একে কাজে লাগিয়ে রাতের আঁধারে ট্রম্প ফরাসি উপকূল ধরে পালিয়ে যান। তার এগারটি জাহাজ এই যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায়, ৫০ জন ডাচ ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে যায় ব্রিটিশরা। এই লড়াইয়ের পর ইংলিশ চ্যানেলে ধরে ডাচ জাহাজের চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে তারা বাধ্য হয় স্কটল্যান্ডের উপকূল ঘেঁষে বিকল্প পথে বাণিজ্য করতে।
দেশে ফিরে এলে ডি রুইটারের বীরত্বের জন্য তাকে সম্মানিত করেন এস্টেট জেনারেলরা। তাকে তৎকালীন মুদ্রায় ১,৫০০ গিল্ডার পুরস্কার দেয়া হল। তিনি এতদিন লড়াই করছিলেন বিনা বেতনে, এবার থেকে তার জন্য ২০০ গিল্ডারের মাসিক বেতন নির্ধারণ করে দেয়া হয়। পূর্ববর্তী বছরের জন্যেও একইহারে বেতন হিসেবে সমপরিমাণ অর্থও তার জন্য বরাদ্দ করা হলো।
ইত্যবসরে ব্রিটিশরা কয়েকটি ডাচ বাণিজ্য বহর দখল করে নেয়। তাদের ফাঁকি দিয়ে ট্রম্প ২০০ বাণিজ্য জাহাজ স্কটল্যান্ডের তীর ঘেঁষে ফ্রান্স আর স্পেনে পৌঁছে দেন। তিনি এস্টেট জেনারেলদের হুঁশিয়ারি দেন ডাচ নাবিকদের প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত সরঞ্জাম আর উন্নতমানের জাহাজের ব্যবস্থা না করলে ব্রিটিশদের কাছে হার অনিবার্য। কিন্তু এস্টেট জেনারেলরা এক সামরিক অফিসারের কথায় কান দিলেন না। বিপরীতে ব্রিটিশ সরকার কিন্তু ব্লেককে নৌবাহিনী সুসংগঠিত করতে সবরকম সাহায্য সহযোগিতা করে আসছিল।
ভুমধ্যসাগর
প্রথম অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের ভূমধ্যসাগরে ছিল ডাচ জয়জয়কার। এখানে লড়াই যখন শুরু হয় তখন ডাচ বহর ফরাসি বন্দর তুঁলোতে একত্রে ছিল। অন্যদিকে ব্রিটিশ বহর ছিল লেগহর্ন আর স্মিরনা বন্দরে ছড়ানো। লেগহর্নের বহরের অধিনায়ক ছিলেন অদক্ষ অফিসার অ্যাপলটন, আর স্মিরনাতে ব্যাডিলি। ডাচ অধিনায়ক ছিলেন সুদক্ষ সেনানায়ক ভ্যান গ্যালেন।
ব্রিটিশরা ভূমধ্যসাগরে তেমন একটা নজর না দেয়ায় সেখানে অতিরিক্ত কোনো সহায়তা যাচ্ছিল না। অন্যদিকে ভ্যান গ্যালেনকে নেদারল্যান্ডস থেকে নিয়মিতই সাহায্য পাঠানো হচ্ছিল। ১৬৫৩ সালের চৌঠা মার্চ ব্যাটল অফ লেগহর্নে গ্যালেনের হাতে অ্যাপলটন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। গ্যালেনের উদ্দেশ্য ছিল অ্যাপলটন আর ব্যাডিলি যাতে একত্র হতে না পারেন। তার কৌশল সফল হয় এবং ব্যাডিলি আসার আগেই তিনি ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাস্ত করেন। ফলে ব্যাডিলি যখন পৌঁছান, তখন দূর থেকে অসহায়ভাবে নিজেদের জাহাজ পুড়তে দেখা ছাড়া তার আর কিছু করার ছিল না। এই সংঘর্ষের পর ভূমধ্যসাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে নেয় ডাচরা। তবে ভ্যান গ্যালেন লড়াইয়ে নিহত হন। পোর্টল্যান্ডের পর ব্লেক কয়েকটি ব্রিটিশ জাহাজ ভূমধ্যসাগরে পাঠিয়েছিলেন সেখানকার কমান্ডারদের সাহায্যে। তবে এতে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।
ব্রিটিশ প্রস্তুতি
পোর্টল্যান্ডের যুদ্ধে জয়ী হলেও ব্রিটিশদের ক্ষয়ক্ষতি একদম উড়িয়ে দেবার মতো ছিল না। অ্যাডমিরাল ব্লেকের আঘাতও তাকে কিছুদিনের জন্য শয্যাশায়ী করে দেয়। সেই ক্ষত সেরে উঠতে না উঠতেই তিনি কাবু হয়ে পড়লেন প্রবল সর্দি-কাশিতে। কমান্ডারের অভাবে ডাচদের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী নতুন করে সাজাতে দেরি হচ্ছিল। তাছাড়া বহু নাবিক আহত এবং অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের স্থানে নতুন মানুষের দরকার হয়ে পড়ে।
তাড়াহুড়ো করে সেনাবাহিনী থেকে অনেক সৈনিককে নৌবাহিনীতে স্থানান্তর করা হলো। কিন্তু তাদের ঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো যথেষ্ট লোকও ব্লেকের হাতে ছিল না। তবে শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ বহর পাল তুলতে সক্ষম হয়। মঙ্ক এবং ডুয়ান নামে দুই অফিসারের নেতৃত্বে ৮৮ কামানের নতুন তৈরি জাহাজ রেজল্যুশন নিয়ে ব্রিটিশরা যাত্রা করল ১৬৫৩ সালের মাঝামাঝি। তাদের গন্তব্য নেদারল্যান্ডসের উপকূল।
নতুন ডাচ বহর
ডাচরাও নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছিল। ভন ট্রম্পকে দায়িত্ব দিয়ে তার বহর পাঁচ ডিভিশনে ভাগ করে দেয়া হলো। ডি রুইটারের অনিচ্ছাসত্ত্বেও অনেক চাপাচাপি করে তাকে গছিয়ে দেয়া হলো চতুর্থ ডিভিশন। ডি রুইটার এস্টেট জেনারেলদের লিখেছিলেন যুদ্ধ করার জন্য যে জাহাজ এবং সরঞ্জাম দেয়া হচ্ছে তা খুবই নিচুমানের এবং রয়্যাল নেভির সাথে লড়াই করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু তারপরেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে নিয়ে ১৬৫৩ সালের ২২ এপ্রিল (মতান্তরে ২৯ মার্চ) ৩৬ কামানের জাহাজ গেক্রুন্ড লিফেড (Gekroonde Liefde) প্রস্তুত করে ১৪৫ জন নাবিকসহ বেরিয়ে পড়লেন তিনি। চতুর্থ ডিভিশন তার সঙ্গী হলো। এস্টেট জেনারেলরা ডি রুইটারের মতামত বিবেচনায় নিয়ে মার্চেই আরো ৩০টি জাহাজ বানানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু সেগুলো বহরে সংযুক্ত হতে সময়ের দরকার, সেই সময় ব্রিটিশরা দেবে কি?