১৯৮০ সালের ৩০ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের সাউথ কেনসিংটনে অবস্থিত ইরানের দূতাবাসে ছ’জন বন্দুকধারী যুবক আক্রমণ শুরু করে। তারা জোরপূর্বক দূতাবাসের ভেতরে প্রবেশ করে ইরানি দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ মোট ২৬ জন ব্যক্তিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে।
জিম্মিকারীদের পরিচয়
সেই বন্দুকধারী যুবকেরা “ডেমোক্রেটিক রেভ্যলুশনারি ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব অ্যারাবিস্তান” নামক এক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। সংঠনটি ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ খুজেস্তানের আরবি ভাষাভাষী জনগণের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইরান সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। ওন আলি মোহাম্মেদ নামে এক যুবকের নেতৃত্বে বন্দুকধারীরা ইরান সরকারের কাছে খুজেস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করা ৯১ জন আরব রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানায়।
ইরানের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে খুজেস্তানের আরব জনগোষ্ঠীর সংকটের সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শুরু থেকে। এই অঞ্চলটি পূর্বে ইরান থেকে পৃথক একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। ১৯২৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রেজা শাহ পাহলভী ব্রিটিশ সরকারের সহায়তায় একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইরানের কাজার রাজবংশের শেষ শাহ আহমদ শাহ কাজারকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেকে ইরানের শাহানশাহ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ফলে তার ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে ইরানে পাহলভী রাজবংশের সূচনা হয়। ১৯২৫ সালের জানুয়ারি মাসে রেজা শাহ পাহলভী ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমের আরব জনগোষ্ঠীর অঞ্চল, যেটি অ্যারাবিস্তান নামে পরিচিত ছিল, সেটি অধিকার করেন এবং “খুজেস্তান” নামকরণ করেন। তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল খুজেস্তান বর্তমানে ইরানের ৩১টি প্রদেশের মধ্যে অন্যতম।
জিম্মি ঘটনার প্রেক্ষাপট
১৯৭৯ সালে ফ্রান্সে নির্বাসিত ইরানি ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বে ইরানে ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হয়। ইরানের সর্বশেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভী ১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি দেশ ছেড়ে মিশরে পালিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে পাহলভী সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
ঠিক সেই সময় ইরাকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন সাদ্দাম হুসাইন। তৎকালীন ইরাক সরকারের সাথে ইরানের পাহলভী বংশের সুসম্পর্ক বজায় ছিল। তাই ইরানের ইসলামি বিপ্লব এবং আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী ক্ষমতা গ্রহণের ঘটনা ইরাক সরকারের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ১৯৭৯ সালের পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইতোমধ্যে শাত-ইল-আরব জলাধারের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে ১৯৮০ সালের মার্চ মাসের মধ্যে দুই দেশের কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক চরম বিদ্বেষপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছায়। ফলে ইরাক সরকার ইরানকে কোণঠাসা করার লক্ষ্যে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে শুরু করে। ফলে ডেমোক্রেটিক রেভ্যলুশনারি ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব অ্যারাবিস্তান-এর মতো খুজেস্তানের কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন সেই সুযোগ ব্যবহার করে ইরান সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি করার কৌশল হিসেবে গ্রহণ করে।
জিম্মিকারীদের লন্ডনে আগমন
১৯৮০ সালের ৩০ এপ্রিল লন্ডনের সাউথ কেনসিংটনে অবস্থিত ইরানের দূতাবাসে জিম্মিকারীদের নেতা ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের বাসিন্দা ওন আলি মোহাম্মেদ এবং তার সহযোগীরা ইরাকের পাসপোর্ট ব্যবহার করে ১৯৮০ সালের ৩১ মার্চ লন্ডনে এসে পৌঁছায়। পরে তারা ইরানি দূতাবাসে হামলার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ সংগ্রহ করেছিল।
১৯৬১ সালে প্রণীত কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কূটনীতিকদের ব্যবহৃত “ডিপ্লোমেটিক ব্যাগ” সব ধরনের নিরাপত্তা তল্লাশি থেকে অব্যাহতি পেয়ে থাকে। বিভিন্ন সামরিক অভিযান নিয়ে গবেষণা করা ড. গ্রেগরি ফ্রিমন্ট-বার্নসের অভিমত অনুসারে, ইরানি দূতাবাসের বন্দুকধারী জিম্মিকারীদের ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি এবং সেগুলো যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইরাকের কূটনীতিকদের ব্যবহৃত “ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগ” এর মাধ্যমে চোরাচালান করা হয় এবং অত্যন্ত গোপনে ওন আলি মোহাম্মেদ ও তার দলের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই জিম্মি ঘটনার পূর্ব পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্ভবত তৎকালীন ইরাক সরকারের কাছে তথ্য ছিল।
জিম্মি ঘটনার সূত্রপাত
ছয়জন সশস্ত্র যুবক ৩০ এপ্রিল বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটার সময় সাউথ কেনসিংটনের প্রিন্সেস গেইট এলাকায় অবস্থিত ইরানি দূতাবাসের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। সেই সময় ইরানি দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ মোট ২৯ জন ব্যক্তি সেখানে অবস্থান করছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র তিনজন আক্রমণকারীদের কবল থেকে কোনো রকমে পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করেন। তারা প্রথমে দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ পুলিশের কনস্টেবল ট্রেভর লকের উপর আক্রমণ করে দূতাবাসের ভেতরে এগিয়ে যেতে শুরু করে। সেই ঘটনার আকস্মিকতায় দূতাবাসের ভেতরে অবস্থান করা ব্যক্তিরা কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই অস্ত্রের মুখে মোট ২৬ জন ব্যক্তিকে জিম্মি করে ফেলা হয়।
অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা ইরানি দূতাবাসের তৎকালীন অস্থায়ী প্রধান তথা ‘চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স’ গোলাম আলি আফরোজ এবং আরও ২৫ জন ব্যক্তিকে তৃতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে জিম্মি করে। জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই ইরানের নাগরিক, তবে তাদের মধ্যে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি-র সাংবাদিকও ছিলেন।
ব্রিটিশ সরকারের পদক্ষেপ
ইরান সরকার এই জিম্মি ঘটনার সাথে ব্রিটেন এবং আমেরিকার সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলে। ইরান তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল জিম্মিকে নিরাপদে উদ্ধার করার দাবি জানায়। কারণ, ১৯৬১ সালের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ইরানি দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্ব।
ঘটনার পর পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিম্মিকারীদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা শুরু করে। এই সংকট শুরুর পর করণীয় নির্ধারণে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হোয়াইটলোর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সরকারের সংকটকালীন জরুরি কমিটি Cabinet Office Briefing Rooms (COBR) এর বৈঠক আহবান করা হয়। এটি ‘কোবরা কমিটি’ নামেও বহুল পরিচিত। অন্যদিকে, পুলিশ সদস্যরা পুরো ইরানি দূতাবাস ঘিরে অবস্থান নিয়ে ওন আলি মোহাম্মেদের সাথে সরাসরি টেলিফোনে কথা বলে সংকট নিরসনে কাজ করছিল।
ওন আলি ১ মে দুপুর পর্যন্ত সময় দিয়ে ইরান সরকারকে খুজেস্তানের স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে লড়াই করা ৯১ জন আরব রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আল্টিমেটাম দেয়। পরে অবশ্য পুলিশ এবং জিম্মিকারীরা জিম্মি দশা থেকে ইরানের নাগরিক বাদে অন্য জিম্মিদের মুক্তি দিতে একটি সমঝোতায় পৌঁছে। সেই সমঝোতা অনুযায়ী কয়েক দফায় পাঁচজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তখনও ২১ জন জিম্মি ভেতরে আটকে ছিল। মুক্তিপ্রাপ্তদের কাছ থেকে পুলিশ বন্দুকধারীদের ব্যাপারে তথ্য নেয়।
জিম্মিকারীদের কৌশল
জিম্মি ঘটনার প্রতিটি মুহূর্তের অগ্রগতি কোবরা কমিটির কাছে জানানো হচ্ছিল। ইরান সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাড়া না পেয়ে জিম্মিকারীরা তাদের দাবি পূরণ হওয়ার বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে। ইরান দূতাবাসের পার্শ্ববর্তী ইথিওপিয়ান দূতাবাসের ভেতরে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা প্রবেশ করে ড্রিল মেশিন ব্যবহার করে ইরানি দূতাবাসের দেওয়াল ছিদ্র করতে থাকে। একপর্যায়ে জিম্মিকারীরা সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের আশঙ্কায় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে। তারা একসময় যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটি আরব দেশ, বিশেষ করে ইরাক, জর্ডান অথবা আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলতে চায়, যার মাধ্যমে তারা ব্রিটিশ সরকারের সাথে সমঝোতা করতে পারবে। এভাবে ৪ মে পর্যন্ত জিম্মিদশার পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়।
ইরান সরকার ব্রিটিশ সরকারের কাছে যেকোনো মূল্যে জিম্মি সংকট নিরসনের জন্য চাপ দিতে থাকে। এরপর ৫ মে দুপুর ১টার সময় ওন আলি পরবর্তী ৪৫ মিনিটের মধ্যে কোনো আরব দেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা না বলতে পারলে বন্দিদের হত্যা করার হুমকি দেয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের কোনো আরব দেশের রাষ্ট্রদূত এই সময় জিম্মিকারীদের হয়ে সমঝোতা করতে রাজি হচ্ছিলেন না। দুপুর প্রায় ১টা ৪০ মিনিটের সময় ইরানি দূতাবাসের ভেতর গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সেই সময় জিম্মিকারীরা দূতাবাসের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্বাস লাভাসানিকে হত্যা করে তার মরদেহ দূতাবাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকারের কোবরা কমিটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের অনুমোদন নিয়ে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ‘স্পেশাল এয়ার সার্ভিস’ (এসএএস) মোতায়েন করে জিম্মিদের উদ্ধারের সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়। এসএএস জিম্মি উদ্ধারে সেই বিশেষ অভিযানকে “Operation Nimrod” হিসেবে নামকরণ করে।
বিশেষ সামরিক অভিযান
অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়ার পরই এসএএস-এর কমান্ডোরা বন্দুকধারীদের হাতে জিম্মি হওয়া ইরানি দূতাবাস ভবনের ছাদ থেকে একটি করে জানালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকে। ভেতরে পৌঁছানোর সাথে সাথে জিম্মিকারীদের সাথে কমান্ডোদের প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। কমান্ডোদের অভিযানের সময় জিম্মিকারীরা আরও একজন জিম্মিকে হত্যা করে এবং দুজন জিম্মি গুরুতর আহত হয়। প্রায় ত্রিশজন এসএএস-এর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডো মাত্র ১৭ মিনিটের এই অভিযানের মাধ্যমে ১৯ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারে সক্ষম হয়।
“Operation Nimrod” পরিচালনার সময় ছয় জিম্মিকারীর মধ্যে পাঁচজন নিহত হয়, ফওজি নেজাদ নামে একজন বন্দুকধারীকে জীবিত আটক করা সম্ভব হয়। পরে তাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
যুক্তরাজ্য-ইরান কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব
জিম্মি উদ্ধারের ঘটনায় সাহসী ভূমিকা পালন করায় ইরানি দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ পুলিশের কনস্টেবল ট্রেভর লক যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘জর্জ মেডেল’ অর্জন করেন। এছাড়াও এসএএস জিম্মি উদ্ধারের ঘটনায় গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। ইরান সরকার জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়।
জিম্মি উদ্ধার অভিযানের সময় ইরানি দূতাবাসের ভবন অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে অবশ্য ব্রিটিশ সরকার সেই ভবন সংস্কারের জন্য ইরান সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেয়। এই ঘটনাকে উপজীব্য করে ১৯৮২ সালে “Who Dares Wins” এবং ২০১৭ সালে “6 Days” নামে দুটো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এছাড়াও একে কেন্দ্র করে অনেক ডকুমেন্টারি, টিভি ড্রামা, ভিডিও গেমসও তৈরি করা হয়েছে এবং কয়েকটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।