গ্রেট নর্দার্ন ওয়ারে প্রুশিয়ার ভূমিকা তুলনামূলকভাবে নগণ্য হলেও ফ্রেডেরিক বেশ কিছু সফলতা লাভ করেছিলেন। রাশিয়ার মতো বিশাল শক্তিশালী সাম্রাজ্যের সাথে মিত্রতা স্থাপিত হয়েছে, শত্রু সুইডেন পরিণত হয়েছে নখদন্তহীন বাঘে। অস্ট্রিয়া আর পোল্যান্ডের সাথে সম্পর্কও মোটামুটিভাবে স্থিতাবস্থায় আছে। তবে ফ্রেডেরিকের ইচ্ছে বিশ্বে প্রুশিয়ার পরিচিত হবে পরাশক্তি হিসেবে, তার শত্রুরা প্রুশিয়ার ক্ষতি করবার আগে দুবার ভাববে। তার জানা ছিল একমাত্র সামরিক শক্তি সংগঠিত করার মাধ্যমেই তিনি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন। প্রুশিয়ান বাহিনীর সংখ্যা এবং সেনাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তিনি কার্যক্রম হাতে নেন।
আনহাউটের লিওপোল্ড
সামরিক বিষয়ে ফ্রেডেরিকের তুমুল আগ্রহ থাকলেও সেনাপতি হিসেবে তিনি ছিলেন গড়পড়তা মানের। সংস্কারের কাজে দরকার ছিল ক্যারিশম্যাটিক কোনো জেনারেল। পুরনো বন্ধু লিওপোল্ডকে তিনি মূল দায়িত্ব দিলেন। জেনারেল লিওপোল্ড স্প্যানিশ সাকসেশন ওয়ারে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। নিয়ম-শৃঙ্খলার ব্যাপারে তিনি ছিলেন ফ্রেডেরিকের মতোই কঠোর। নিয়মিত প্রশিক্ষণে তারা প্রুশিয়ান সেনাদের লড়াইয়ের সামর্থ্য বাড়াতে মনোযোগী হন। মাঝে মাঝে ফ্রেডেরিক নিজেই গ্যারিসনে উপস্থিত হয়ে সেনাদের ড্রিল করতেন।
সংস্কার
ফ্রেডেরিকের আগে প্রুশিয়ান বাহিনীর সুনির্দিষ্ট রাজকীয় ইউনিফর্ম ছিল না, সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনার অভাব ছিল। ফ্রেডেরিক এগুলোকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেন। সেনাদের রাজকীয় পরিচ্ছদ প্রদান করা হলো। লড়াইয়ের জন্য রাষ্ট্র থেকে প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ, কামান আর অন্যান্য মালামাল সরবরাহ করা হয়। তাদের মার্চ করার ধরনে পরিবর্তন করে আরো সুশৃঙ্খল পদ্ধতি প্রবর্তিত হলো।
ফ্রেডেরিক সেনা নিয়োগের সিস্টেম ঢেলে সাজালেন। এর আগে বহু লোককে সেনাবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে ধরে আনা হত। ভাড়াটে সৈন্য বা মার্সেনারী, যারা ছিল মূলত বিদেশি, তাদেরও যোদ্ধা হিসেবে আলাদা দাম ছিল। ফ্রেডেরিক এক ফুঁৎকারে এসব উড়িয়ে দিলেন। মার্সেনারী আর স্থানীয় লোকজন নিয়ে অনেক সম্পদশালী অভিজাতের ছোট ছোট মিলিশিয়া ছিল। ফ্রেডেরিক সমস্ত মিলিশিয়া ভেণে দেন। তিনি ক্যান্টন সিস্টেম (জার্মান Kantonsystem or Kantonssystem) চালু করেন, যেখানে রাষ্ট্রকে অনেকগুলো এলাকা বা ক্যান্টনে ভাগ করা হয়। প্রতিটি ক্যান্টনের দায়িত্বে ছিল একটি রেজিমেন্ট, যা গঠনের জন্য ক্যান্টন থেকে সেনা সংগৃহীত হত। যুদ্ধ করতে সক্ষম সকল পুরুষকেই নিজ নিজ ক্যান্টনের রেজিমেন্টে প্রশিক্ষণ নিতে হত। সেরা লোকদের নিয়ে তৈরি হত পেশাদার সেনাদল। ফ্রেডেরিকের মৃত্যুকালে, ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীর আকার ছিল প্রায় আশি হাজার, যা জনসংখ্যার অনুপাতে ইউরোপের বৃহত্তম ছিল (মোট প্রুশিয়ান জনগণের ৩.৬ শতাংশই সেনাবাহিনীতে কাজ করত)। প্রতি নয়জন পুরুষের একজন ছিল সৈন্য।
স্বাভাবিকভাবেই বিরাট সেনাদল পরিচালনার জন্য বিপুল অর্থের দরকার। ফ্রেডেরিকের অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন এক্ষেত্রে খুব ভাল ফল দেয়। রাজার বিভিন্ন পদক্ষেপে ইতোমধ্যে প্রুশিয়ান অর্থনীতি প্রথম ফ্রেডেরিকের সময়ের খারাপ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জনগণের কাছ থেকে সুষ্ঠুভাবে কর আসছে, কোষাগার ভরে আছে টাকা-পয়সাতে। অসম্ভব মনে হলেও ইতিহাস স্বীকৃত সত্য যে ফ্রেডেরিক রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের সত্তর থেকে আশি ভাগই সামরিক খাতে বরাদ্দ দিতেন। যেখানে বড় বড় শক্তিগুলো হয়তো দিত সর্বোচ্চ বিশ ভাগ।
ফ্রেডেরিকের বিপুল এই সামরিক ব্যয়ের তুলনা আধুনিক যুগেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফ্রেডেরিকের পরেও প্রুশিয়ান রাজারা ঠিক তার মতো না হলেও সেনাবাহিনীর পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন। প্রুশিয়ান সেনাবাহিনী সম্পর্কে অনেক পরে জগদ্বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক, ঐতিহাসিক এবং লেখক ভলতেয়ার একটা কথা বলেছিলেন, “দেশের থাকে সেনাবাহিনী, আর প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীর আছে আস্ত একটা দেশ” (“Where some states have an army, the Prussian Army has a state.”)। তবে সত্যিকার অর্থে এই কথা প্রথম বলেছিলেন হাইনরিখ বিয়েরেনহর্স্ট (Georg Heinrich Berenhorst) নামে এক প্রুশিয়ান সেনা কর্মকর্তা, যিনি সেভেন ইয়ার্স ওয়ারে অ্যাডজুটেন্ট হিসেব দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে এজন্য প্রুশিয়াকে খুব বেশি দোষও দেয়া যাবে না, কারণ তার চারদিকে শত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের সমষ্টি। অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন বিভিন্ন সময়ে প্রুশিয়ার সাথে সংঘাত জড়িয়েছে, জার্মানির মধ্যেও তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড প্রুশিয়াকে ঘিরে রেখেছে। সুতরাং প্রুশিয়ান রাজারা ধারণা করতেন তাদের টিকে থাকতে হলে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী থাকতেই হবে।
জাঙ্কার
প্রুশিয়ান সমাজের উঁচু শ্রেণী ছিল জাঙ্কার (Junkers)। এরা ছিল উপমহাদেশের জমিদারদের মতো। জাঙ্কারদের ছিল নিজস্ব ভূ-সম্পত্তি আর বিরাট ধনভান্ডার। সাধারণ জনতা প্রুশিয়ান সেনাদলে সম্মুখ সারির যোদ্ধার কোটা পূর্ণ করত, আর তাদের অফিসাররা আসত জাঙ্কার পরিবারগুলো থেকে। তৎকালীন প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীতে বিরাজমান সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস বেশ ভালভাবেই তাই প্রতিফলিত হচ্ছিল। অফিসার পদ উত্তরাধিকার সূত্রে হাতবদল হত। জাঙ্কার পিতামাতার সন্তানেরা প্রুশিয়ান বাহিনীতে প্রথমেই উচ্চপদস্থ অফিসার হিসেবে যোগ দিতে পারতেন। ১৭৩৩ সালে বার্লিনে একটি ক্যাডেট স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়, যার উদ্দেশ্যই ছিল জাঙ্কার পরিবারের সন্তানদের সমরকৌশল শেখানো, যাতে স্কুল থেকে বের হয়েই তারা সেনাদলের যোগ দিতে পারে।
পটসড্যাম জায়ান্টস
প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীর সিক্সথ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট গঠিত হয়েছিল ১৬৭৫ সালে। ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের সময় তা পরিণত হয় অদ্ভুত এক খেয়ালের ফসলে। কেন কে জানে তার মনে হয়েছিল লম্বা লোকেরা ভাল যোদ্ধা হতে পারবে, যত লম্বা তত ভাল। ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে নাকি তিনি বলেছিলেন সুন্দরী মেয়েরা তাকে একদমই আকর্ষণ করে না, যতটা করে লম্বা লম্বা সৈন্যরা। ফলে তিনি অন্তত ছয় ফুট দুই ইঞ্চির মতো লম্বা হতে হবে এই শর্তের উপর ভিত্তি করে রেজিমেন্টকে পুনর্বিন্যাস করেন, যার আনুষ্ঠানিক নাম হয় দ্য গ্র্যান্ড গ্রেনাডিয়ারস অফ পটসড্যাম (The Grand Grenadiers of Potsdam)। তবে তারা সুপরিচিত ছিল পটসড্যাম জায়ান্টস (Potsdam giants/Lange Kierls/Tall Men) নামে।
পটসড্যাম জায়ান্টসে ফ্রেডেরিকের মৃত্যুকালে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার হাজার সেনা ছিল। তাদের বেতন, খাবার দাবার, বাসস্থান সবই ছিল সাধারণ সেনাদের থেকে উন্নতমানের। অফিশিয়াল লালনীল পোশাকের সাথে দেড় ফুট উঁচু হ্যাট মাথায় থাকায় তাদেরকে আরো বেশি লম্বা মনে হত। ফ্রেডেরিক এদেরকে কখনো কোনো যুদ্ধে ব্যবহার করেননি। তাদের দায়িত্ব ছিল রাজার খেয়াল চাপলে তার সামনে দিয়ে সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজ করতে করতে হেঁটে যাওয়া। ফ্রেডেরিক যখন অসুস্থ থাকতেন তখন তিনি নির্দেশ দিতেন পটসড্যাম জায়ান্টরা যাতে তার ঘরের জানালার নিচ দিয়ে মার্চ করে। তাদের দেখে তিনি প্রসন্ন অনুভব করতেন।
এই রেজিমেন্টে লোক আনা হত নানা উপায়ে, তার অনেকগুলোই সাধু ছিল না। লম্বা লোকেরা কেউ কেউ নিজেরাই ভাল বেতন আর সুযোগ-সুবিধার লোভে এই দলে ভিড়ত। আবার প্রুশিয়ার বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলো ফ্রেডেরিককে খুশি করতে মাঝে মাঝে লম্বা লোক পাঠাত পটসড্যাম জায়ান্টসের জন্য। এছাড়া কোনো পরিবারের সন্তানদের যদি লম্বা হবার ইতিহাস থাকত, তাহলে রাজকীয় ডিক্রি অনুযায়ী তাদের লাল স্কার্ফ দিয়ে চিহ্নিত করা হত যাতে পরিণত বয়সে এদের রিক্রুট করা যায়।
তবে অনেক রিক্রুটকেই জোরপূর্বক ধরে আনা হয়েছিল। ফ্রেডেরিকের সাঙ্গপাঙ্গরা তক্কে তক্কে থাকত যদি লম্বা কোনো লোক পাওয়া যায়, তাহলে সে যে অঞ্চলেরই হোক না কেন তাকে অপহরণ করে প্রুশিয়ায় নিয়ে আসা হত। তার ঠিকানা হত পটসড্যাম জায়ান্টস। উদাহরণস্বরূপ জেমস কার্কল্যান্ডের কথা বলা যায়। এই আইরিশ ব্যক্তি ছিলেন সাত ফুট এক ইঞ্চি লম্বা, জায়ান্টদের মধ্যেও জায়ান্ট। তিনি কিন্তু স্বেচ্ছায় আসেননি। কার্কল্যান্ডকে লন্ডনে প্রুশিয়ান রাষ্ট্রদূত ব্যারন ব্রকের (Baron Borck) অধীনে কাজ করবার প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করা হয়। বন্দি কার্কল্যান্ডকে পোর্টসমাউথে নোঙর করা এক জাহাজে তুলে প্রুশিয়াতে নিয়ে আসা হয়েছিল।
জনশ্রুতি আছে, একবার নাকি এক লম্বা অস্ট্রিয়ান কূটনীতিককে একই কারণে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল, আরেকবার ধর্মীয় বয়ান চলার মাঝখানে এক পাদ্রিকে তুলে আনা হয়। জার্মানির ইউলিখের (Jülich) হতভাগ্য এক কাঠমিস্ত্রির গল্পও বলা যেতে পারে। কোনো এক কাজে শহর দিয়ে যাচ্ছিলেন মেজর জেনারেল ভন হম্পেশ (Baron von Hompesch)। লম্বা চওড়া কাঠমিস্ত্রিকে দেখেই তিনি বুঝে গেলেন এই লোক পটসড্যাম গ্রেনাডিয়ার দলের উপযুক্ত। কিন্তু স্বাভাবিক উপায়ে তাকে নিযুক্ত করা যাবে না ভেবে হম্পেশ ছলনার আশ্রয় নিলেন। তিনি মিস্ত্রির দোকানে ঢুকে লম্বা এক বাক্স বানাবার ফরমাশ দিলেন। ক্রেতা পাওয়ার খুশিতে বাগ বাগ মিস্ত্রি দ্রুতই বাক্স তৈরি করে ফেলল।
হম্পেশ বাক্স দেখে এমন ভাব করলেন যেন তিনি একদমই খুশি নন। কাঠমিস্ত্রি বেচারা জানতে চাইল কী সমস্যা। হম্পেশ তাকে তিরস্কার করলেন এই বলে যে তিনি যেরকম লম্বা করতে বলেছেন এই বাক্স তেমন না। এতে তো কাঠমিস্ত্রিরই জায়গা হবে না। সহজ সরল মিস্ত্রি প্যাঁচ বুঝল না, বাক্স যথেষ্ট লম্বা প্রমাণ করতে নিজেই বাক্সে ঢুকে পড়ল। সাথে সাথে চতুর হম্পেশ তাকে বাক্সবন্দী করে তাকে জায়ান্টসদের ব্যারাকে পাঠিয়ে দিলেন। দুর্ভাগ্যবশত বাক্সের চারদিকে বাতাস চলাচলের ফুটো করতে তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, ফলে গন্তব্যে পৌঁছার আগেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে দুর্ভাগা মিস্ত্রি মারা যায়।
লম্বা সৈন্যদের আরো লম্বা করতে ফ্রেডেরিক অমানবিক কিছু গবেষণা চালান বলে দাবি করা হয়। এর একটি ছিল বিশেষভাবে তৈরি তক্তার উপর তাদের বেঁধে দুদিক থেকে টেনে লম্বা করার প্রচেষ্টা। অনেক সৈন্য এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মারা যায়, কেউ কেউ পালায়। পালিয়ে যাওয়াদের ধরতে পারলে শাস্তি ছিল তৎক্ষণাৎ মৃত্যু। তবে শেষ পর্যন্ত রাজা এই এক্সপেরিমেন্ট বাতিল করেন। তার আরেক শখ ছিল লম্বা লম্বা নারী খুঁজে বের করে তাদের সাথে জায়ান্টদের বিয়ে দেয়া। তার ধারণা ছিল এদের সন্তান হবে আরো লম্বা, এবং তাদেরকে তিনি পরিণত বয়সে সৈন্যদলে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
লম্বা নারীদের এই বিষয়ে ফ্রেডেরিকের ব্যাপারে একটি মজার গল্প প্রচলিত আছে। একবার ফ্রেডেরিক পাইক পেয়াদা নিয়ে বের হয়েছেন রাজ্য পরিভ্রমণে। পথিমধ্যে লম্বা এক নারীকে দেখতে পেয়ে তিনি ঘোড়া থামিয়ে ফেললেন। এই নারীকে তার জায়ান্টদের সাথে বিয়ে দিতে হবে, এই চিন্তা তার মাথায় খেলে গেল। অবিলম্বে তিনি সহচরকে নির্দেশ দিলেন কাগজ-কলম আনতে। মেয়েটিকে দাঁড়াতে বলে হিজিবিজি অক্ষরে লিখে ফেললেন চিঠি, রাজকীয় সিল ছাপ্পর দিয়ে তার হাতে সেই চিঠি তুলে দিলেন। তাকে নির্দেশ দিলেন অনতিবিলম্বে নিকটবর্তী শহরের প্রুশিয়ান গ্যারিসনে গিয়ে সেখানকার প্রধানের হাতে এই চিঠি অর্পণ করতে। এরপর কী করতে হবে তিনিই বলে দেবেন।
সেই নারী তো আর রাজার চিঠি খুলে পড়েনি। সে রাজকীয় দায়িত্ব পালন করার মানসে রওনা হয়ে গেল। ফ্রেডেরিকও কেল্লাফতে মনে করে নিশ্চিন্তে নিজের পথে চলে গেলেন। এদিকে সেই নারী হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, আবার বাড়িতে মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করার কথা দিয়ে এসেছে। এমন সময় এক চার ফুটের মতো লম্বা বুড়ি মহিলার সাথে তার দেখা। মহিলা যাচ্ছিল শহরে, মেয়েটির কাছ থেকে আনুপূর্বিক সব ঘটনা শুনে সে চমৎকার এক সমাধান দিল। যেহেতু বুড়িকে শহরে যেতেই হবে, আর মেয়েটিরও জরুরি কাজ আছে, সুতরাং তার চিঠি বুড়ি মহিলাই পৌঁছে দিতে পারে। রাজকীয় গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারবে ভেবে রোমাঞ্চিত বুড়ি পা চালিয়ে শহরে এসে উপস্থিত হলো। গ্যারিসনের কমান্ডারের কাছে পৌঁছে দিল চিঠি।
পত্র পাঠ করে কম্যান্ডারের চোখ চড়কগাছ। তিনি একবার চিঠির দিকে তাকান, আরেকবার তাকান সামনে দাঁড়ানো খর্বাকৃতির বুড়ি মহিলার দিকে। চিঠিতে স্বয়ং ফ্রেডেরিকের হাতে লেখা আদেশ, অবিলম্বে এই পত্র বহনকারীকে জায়ান্টদলের নতুন সদস্য ম্যাকডোয়েলের সাথে বিয়ে দিতে হবে। রাজার নির্দেশ শিরোধার্য, কাজেই বিয়ে হয়ে গেল।
ফ্রেডেরিক উইলিয়াম জীবদ্দশায় প্রুশিয়ার সেনাবাহিনীকে পোলিশ সাকসেশন ওয়ারে ব্যবহার করলেও পটসড্যাম জায়ান্টস কখনো রণক্ষেত্রের মুখ দেখেনি। তাদের সবসময়ই সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হত। ফ্রেডেরিকের পরবর্তী রাজা এই সৈন্যদের অন্যান্য ইউনিটে ভাগ করে দেন, তবে দ্য গ্র্যান্ড গ্রেনাডিয়ারস অফ পটসড্যাম নামে এই রেজিমেন্ট কাগজে কলমে হলেও থেকে যায় ১৮০৬ সাল অবধি। তার পরে চিরতরে বিলুপ্ত করে দেয়া হয় খেয়ালি রাজার এই অদ্ভুত দল।