আটাশ বছর বয়সি দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন ৫৯ হাজার বর্গ মাইলের এক রাজ্য, যার জনসংখ্যা ২২ লাখের কিছু বেশি। তার হাতে সর্বময় ক্ষমতা; কোনো সংসদ, সংবিধান বা প্রতিষ্ঠানই তার লাগাম টেনে ধরার ক্ষমতা রাখে না। তিনি সৌভাগ্যবান যে তাকে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে না, কারণ বাবা ভগ্নস্বাস্থ্যের প্রুশিয়াকে ততদিনে সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে মজবুত করে তুলেছেন। ইউরোপের বড় শক্তি এখনও সে নয়, কিন্তু প্রধান শক্তিগুলো তাকে আর হেলাফেলার দৃষ্টিতে দেখে না। ফ্রেডেরিক এতে সন্তুষ্ট নন। তিনি চান অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসের মতো পরাশক্তির কাতারে নাম লেখাতে। তখনও কেউ ভাবেনি, কিন্তু ফ্রেডেরিক হতে যাচ্ছেন প্রুশিয়ার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে লম্বা সময় শাসন করা রাজা। প্রুশিয়াকে এমনই উচ্চতায় নিয়ে যাবেন যে ইতিহাসে চিরকালের জন্য তার নাম লেখা হবে ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট নামে। নেপোলিয়নের মতো জেনারেলও যাকে শ্রদ্ধা করবেন।
ফ্রেডেরিকের পরিবর্তন
রাজা হবার পর ফ্রেডেরিকের মধ্যে বড় বড় কিছু পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়। কবিতা লেখা, গানবাজনা প্রিয় ফ্রিটজ সরে গিয়ে সেখানে আবির্ভূত হলেন কঠিন এক সেনাপতি। সামরিক বিষয়ে যার অসীম আগ্রহ। তিনি প্রুশিয়ান সৈন্যসংখ্যা অবিলম্বে ৯০ হাজারে উপনীত করেন। কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন ক্ষমতার কাণ্ডারি কে। বলা হয়, সেনাবাহিনীর এক অফিসার তার কাছে জানতে চাইল তারা কি আগের পদ এবং ক্ষমতা বজায় রাখতে পারবে কি না। ফ্রেডেরিকের উত্তর ছিল, পদ…অবশ্যই। ক্ষমতা… সে তো আমি।
দুঃসময়ের বন্ধুরা আশা করেছিল ফ্রেডেরিক হয়তো এবার তাদের পুরস্কৃত করবেন। তিনি সেরকম কোনো লক্ষণ দেখালেন না। যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো সময় তাকে আহত করেছিল তাদের প্রতিও তিনি কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। সমস্ত মনোযোগ ঢেলে দেন রাজকার্যে। প্রতিদিন নাকি ভোর চারটায় উঠে তিনি দিনের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। প্রাতঃকৃত্যের প্রয়োজনে বরাদ্দ করতেন সাকুল্যে পনের মিনিট।
শিল্প-সংস্কৃতিতে নতুন রাজা পৃষ্ঠপোষকতা আরম্ভ করলেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষে একটি অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস বানানো হলো। তিনি বিতর্কের বিরোধী ছিলেন না, বরঞ্চ ভিন্ন ভিন্ন মতের বক্তব্য শুনতেন। তবে তার পরিষ্কার কথা ছিল একটাই, যে যা-ই বলুক দিন শেষে তার কথাই আইন এবং সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে তা মেনে চলতে হবে। তার নির্দেশ মানার ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে তিনি রাজি ছিলেন না।
ভলতেয়ারের সাথে সাক্ষাৎ
ফরাসি দার্শনিক এবং লেখক ফ্রাসোঁয়া-মারি আহুয়ে (Francois-Marie Arouet) পরিচিত ভলতেয়ার নামেই। তার সাথে তরুণ রাজপুত্র ফ্রেডেরিকের পত্র যোগাযোগ ছিল প্রায় চার বছর ধরে। পরস্পর লেখালেখি বিনিময় করতেন তারা। বয়সের পার্থক্য (প্রায় সতের বছর) সত্ত্বেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। রাজা হয়ে ফ্রেডেরিক ভলতেয়ারের সাথে দেখা করতে মনস্থির করলেন। ১৭৪০ সালের সেপ্টেম্বরে ক্লিভসের ময়ল্যান্ড দুর্গে তার মিলিত হবেন বলে ঠিক হয়। ফ্রেডেরিক যাত্রাপথে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবে ভলতেয়ার তার ঘরে ঢুকলে নাকি তিনি উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। তিন দিন ধরে তারা বিভিন্ন বিষয়ে গভীর আলোচনা করেন।
ফ্রেডেরিকের সাথে ভলতেয়ারের সম্পর্ক টেকেনি। ফ্রান্সে বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়ে ভলতেয়ারকে দুবার প্রুশিয়ার দরবারে আশ্রয় নিতে হয়। দ্বিতীয়বার তিনি প্রায় দুই বছর থাকলেন। কিন্তু এই সময় তার আচার আচরণে ফ্রেডেরিক বিরক্ত হন, ভলতেয়ারও ফ্রেডেরিককে স্বেচ্ছাচারী একনায়ক বলে চিহ্নিত করেন। নীরবে পুরনো দুই বন্ধু আলাদা হয়ে যান, এরপর তারা আর যোগাযোগ করেননি।
এরস্টাল দুর্গের গল্প
বর্তমান বেলজিয়ামের মাস নদী থেকে কয়েক মাইল দুরে লিঁজ শহর (Liege)। এর কাছেই এরস্টাল দুর্গ, যা বংশানুক্রমে এরস্টাল পরিবার ভোগদখল করছে। এখানে বর্তমানে থাকেন ৮২ বছরের এক বিশপ। ফ্রেডেরিকের চোখ পড়ল দুর্গের দিকে। তিনি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এর উপর নিজের দাবি খাড়া করলেন। ভলতেয়ার নাকি তাকে সাহায্য করেছিলেন এই কাজে। দুই হাজার লোক পাঠানো হল দুর্গের দখল নিতে। ফ্রেডেরিকের উদ্দেশ্য ছিল হয় দুর্গ কুক্ষিগত করা, না হয় এর বিনিময়ে পণ হাসিল। অবশেষে এখনকার বাজারমূল্যে প্রায় দুই লাখ ডলারের বিনিময়ে ফ্রেডেরিক তার লোকদের প্রত্যাহার করে নেন। ভলতেয়ার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, এই টাকা পুরোটাই খরচ হয়েছিল রাজার আমোদপ্রমোদে।
সিলিসিয়া
প্রুশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কাছে, পোল্যান্ড আর প্রুশিয়ার মধ্যে সম্পদশালী এক অস্ট্রিয়ান প্রদেশ সিলিসিয়া (Silesia)। দুই মিলিয়ন মানুষের এই অঞ্চলে পাহারা দিচ্ছে দুই হাজারেরও কম অস্ট্রিয়ান সেনা, সেখানকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও খুব দুর্বল। ফ্রেডেরিক ঠিক করলেন- সিলিসিয়া তিনি দখল করে নেবেন। সময়টাও ছিল অনুকূল। সবেমাত্র ষষ্ঠ চার্লস মারা গেছেন। সিংহাসনে চব্বিশ বছরের অনভিজ্ঞ এক তরুণী, মারিয়া থেরেসা। তিনি এই মুহূর্তে আবার গর্ভবতী, ফলে স্বামী স্টেফান তাকে রাজকার্যে সহায়তা করছেন। অস্ট্রিয়ান সামরিক শক্তিও বছরের পর বছরের রক্তক্ষয়ে ভঙ্গুর। সেনাবাহিনী পূর্বের ছায়ামাত্র, রাজকোষে নেই যথেষ্ট অর্থ। ফলে ফ্রান্স এবং প্রুশিয়া শকুনের দৃষ্টি দিল অস্ট্রিয়ার ভূখণ্ডের দিকে। তবে মারিয়া থেরেসা সম্বন্ধে তাদের জানা অনেক বাকি ছিল।
অস্ট্রিয়ান উত্তরাধিকার
এটা সত্য যে ষষ্ঠ চার্লস অনেক কষ্টে প্র্যাগম্যাটিক স্যাঙ্কশনে’র স্বপক্ষে সমর্থন আদায় করেছিলেন। কিন্তু তিনি মারা যাবার সাথে সাথেই স্বার্থের তাগিদে অনেকেই পূর্বের প্রতিজ্ঞা ভুলে গেল। মারিয়া থেরেসা সিংহাসনে বসলেন, হলি রোমান এম্পেরর হিসেবে প্রস্তাব করলেন স্বামী স্টেফানের নাম। এর ফলে স্টেফান সম্রাট হলেও আদতে ক্ষমতার নাটাই থাকবে থেরেসার কাছেই। ইউরোপিয়ান রাজাদের ছিল ভিন্ন এজেন্ডা। বাভারিয়া থেকে চার্লস আলবার্ট বৈবাহিক সূত্রে হাবসবুর্গ উত্তরাধিকার দাবি করে বসলেন। হলি রোমান এম্পেরর নির্বাচনেও নিজেকে দাঁড়া করলেন তিনি। পঞ্চদশ লুই ভাবলেন, ইউরেকা! চার্লস আলবার্টকে কোনভাবে অস্ট্রিয়ার রাজা বানাতে পারলে চিরশত্রু হাবসবুর্গদের প্রতিপত্তি নস্যাত করে দেয়া যাবে, অস্ট্রিয়াকে করে ফেলা যাবে ফ্রান্সের আজ্ঞাধীন। তিনি মিত্রতার হাত প্রসারিত করলেন বাভারিয়ার দিকে, চার্লস আলবার্টের পেছনে জড়ো হলো ফরাসিরা।
ইংলিশ চ্যানেলের ওপার থেকে ফ্রেডেরিকের মামা দ্বিতীয় জর্জ ফরাসিদের বাড়াবাড়িতে সতর্ক হবার প্রয়োজন অনুভব করলেন। একে তো সেকেন্ড ট্রিটি অফ ভিয়েনার পর থেকে ব্রিটিশ-ফরাসি সম্পর্ক শীতল, অন্যদিকে উপনিবেশ স্থাপন নিয়ে ফরাসি আর ইংরেজ কোম্পানির দ্বন্দ্ব চলমান। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে এসেছে নতুন করে জ্যাকোবাইট বিদ্রোহের আভাস। এই জ্যাকোবাইটরা ইংল্যান্ডের সিংহাসনের উপর স্কটিশ স্টুয়ার্ট বংশের (House of Stuart) দাবি সমর্থন করে। দ্বিতীয় জর্জ জার্মান বিধায় তাকে তারা ইংল্যান্ডের বৈধ রাজা মানতে চাইত না।
হাউজ অফ স্টুয়ার্টের দাবি কিন্তু ফেলনা ছিল না। এই পরিবার বনেদি এক বংশ, যারা চতুর্দশ শতক থেকেই স্কটল্যান্ডে রাজত্ব করছে। স্কটিশ রাজা চতুর্থ জেমসের সাথে ইংল্যান্ডের টিউডর রাজবংশের মার্গারেট টিউডরের বিয়ে সিংহাসনে তাদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করে। প্রথম এলিজাবেথের মৃত্যুর (১৬০৩ খ্রিষ্টাব্দ) সাথে টিউডর ধারা শেষ হয়ে গেলে মার্গারেটের নাতি হন ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস। শুরু হলো স্টুয়ার্ট বংশীয় শাসন। প্রোটেস্ট্যান্ট-ক্যাথলিক দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে ১৬৮৫ সালে স্টুয়ার্টদের দ্বিতীয় চার্লসের পর দ্বিতীয় জেমস রাজা হলেও প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েন। তার বিরুদ্ধপক্ষের চক্রান্তে ডাচ উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ সিংহাসন দখল করে নেন, একে ব্রিটিশরা বলত দ্য গ্লোরিয়াস রেভুলিউশন। জেমসের সমর্থকেরা রাজার ল্যাটিন নাম জ্যাকোবাসের আদলে নিজেদের বলত জ্যাকোবাইট। পাঁচবার তারা সিংহাসন ছিনিয়ে নেবার পরিকল্পনা করে, যার শেষবার ছিল ১৭৪৫ সালে (’45 rebeliion)।
অস্ট্রিয়ান সাকসেশন ওয়ার
১৭৪০-৪৮ পর্যন্ত অস্ট্রিয়ান উত্তরাধিকারের সংঘর্ষ আসলে ছিল ইউরোপিয়ান শক্তিগুলোর নিজ নিজ স্বার্থ চরিতার্থের খেলা। মারিয়া থেরেসার সিংহাসন লাভের ছল দেখিয়ে প্রত্যেকেই নিজের আখের গুছিয়ে নিতে চাইছিল। ফলে একপক্ষে ফ্রান্স, প্রুশিয়া, বাভারিয়া আর স্যাক্সোনি একাট্টা হয়। অন্যদিকে অস্ট্রিয়ার সাথে যোগ দেয় ব্রিটিশরা। ফ্রেডেরিক চাইছিলেন সিলিসিয়া, আর সম্ভব হলে এর পার্শ্ববর্তী মোরাভিয়া। ফরাসিদের লক্ষ্য হাবসবুর্গদের চূড়ান্ত পতন। বাভারিয়া চায় হলি রোমান এম্পেরর পদ এবং অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ। স্যাক্সোনির আশা সীমানা বৃদ্ধি। মারিয়া থেরেসার লড়াই অস্তিত্ব রক্ষার, আর দ্বিতীয় জর্জ সমূলে উৎপাটন করতে চান ফরাসি এবং জ্যাকোবাইট হুমকি। ফলে অস্ট্রিয়ান সাকসেশন ওয়ার ছিল কয়েকটি যুদ্ধের সমষ্টি: প্রথম এবং দ্বিতীয় সিলিসিয়ান লড়াই, ফরাসি-ব্রিটিশ, ফরাসি-অস্ট্রিয়ান সংঘাত এবং জ্যাকোবাইট বিদ্রোহ।
প্রথম সিলিসিয়ান লড়াই
১৭৪০ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
দিগন্তে দেখা দিল কামানের সারি, তার পেছনে বেয়োনেটের মিছিল। প্রুশিয়ার পতাকা উড়িয়ে ফ্রেডেরিক প্রবেশ করলেন সিলিসিয়ার অভ্যন্তরে। সিলিসিয়ার উপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি ১৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দের এক প্রস্তাবিত চুক্তির (Treaty of Brieg) দোহাই দেন। এর মাধ্যমে সিলিসিয়ার স্বায়ত্তশাসিত ডাচি ব্রিগের উপরে হনজোলার্নদের উত্তরাধিকার দেয়া হয়েছিল। যদিও আলোচনায় জড়িত সকল পক্ষই (বোহেমিয়া আর হাবসবুর্গরা) এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিল, তা সত্ত্বেও ফ্রেডেরিক একে ব্যবহার করলেন। তার এই দুঃসাহসী কাজে ফরাসিরা বিস্মিত হয়ে নাকি ফ্রেডেরিককে পাগল বলেছিল। কিন্তু ফ্রেডেরিক বদ্ধপরিকর। তিনি ক্রসেন নগরীর পাশ দিয়ে দক্ষিণে অগ্রসর হলেন। ১৭৪১ সালের তেসরা জানুয়ারি সিলিসিয়ার রাজধানী ব্রেস্লাউ ফ্রেডেরিকের হাতে চলে যায়। ৯ মার্চ গ্লগাউ’য়ের পতন হলো। তবে প্রধান শহর নিসে (Neisse) তখনও অস্ট্রিয়ানদের শক্ত ঘাঁটি। এদিকে সম্রাজ্ঞীর উৎসাহে উদ্দিপ্ত হয়ে মার্শাল নেইপার্গের (Neipperg) নেতৃত্বে প্রায় ২০ হাজার অস্ট্রিয়ান সেনা নিসের দক্ষিণে মভিৎজ (Mollwitz) গ্রামে শিবির ফেলল।
ব্যাটল অফ মভিৎজ
এই যুদ্ধ রাজা হিসেবে ফ্রেডেরিকের প্রথম লড়াই। তার সামরিক অভিজ্ঞতার ঝুলি এর আগে ছিল প্রায় শূন্য।ফলে তিনি যুদ্ধ পরিচালনার ভার তুলে দেন ফিল্ড মার্শাল শ্রেরিনের (Schwerin) হাতে। এই প্রথম এবং এই শেষ। আর কখনোই ফ্রেডেরিক নিজে উপস্থিত থাকাকালে আর কাউকে সৈন্যদলের ভার নিতে দেননি।
এপ্রিলের নয় তারিখ ভারি তুষারপাতে রাস্তাঘাট খারাপ হয়ে পড়েছিল। এর মধ্যেই পরদিন প্রুশিয়ান বাহিনী অতর্কিত আক্রমণ চালায়। সামনে কামান সাজিয়ে পাঁচটি ইনফ্যান্ট্রি কলাম এগিয়ে আসতে থাকে অস্ট্রিয়ান শিবিরের দিকে। দুই পাশে ছিল অশ্বারোহীরা। অস্ট্রিয়ানরা প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও প্রুশিয়ানদের তারা কাঁচা লড়িয়ে মনে করত। ফলে আত্মবিশ্বাসের সাথে জেনারেল রোমেরের অধীনে অশ্বারোহী আর ইনফ্যান্ট্রির একদল প্রুশিয়ানদের ডানবাহুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। সেদিকের দুর্দশা দেখে ফ্রেডেরিক নিজে এগিয়ে গেলেন, কিন্তু লাভ হলো না। ডান বাহু ভেঙে পড়ছে দেখে শ্রেরিন রাজাকে পরামর্শ দিলেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যেতে। ফ্রেডেরিক প্রথমে ওপেন (Oppeln), পরে সেখান থেকে লুভেন (Löwen) শহরে চলে যান।
ওদিকে প্রুশিয়ান ইনফ্যান্ট্রির মূল অংশ পাথুরে দেয়ালের মতো অগ্রসর হতে থাকলে অস্ট্রিয়ান লাইনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। সারি সারি বন্দুকের গুলিবর্ষণে অস্ট্রিয়ান ব্যূহ তছনছ হয়ে গেলে মভিৎজ ছেড়ে নেইপার্গ সিলিসিয়া ত্যাগ করেন। জয় হয় ফ্রেডেরিকের। সাম্রাজ্যের অন্যদিকে ফরাসি আর বাভারিয়ানদের আক্রমণে তটস্থ অস্ট্রিয়ানরা অক্টোবরে অস্থায়িভাবে ক্লেন স্নেলেনডর্ফ (Klein Schnellendorf) চুক্তির মাধ্যমে সাময়িক অস্ত্রবিরতি স্বাক্ষর করে। ১৭৪১ সালের ১১ নভেম্বর রাজধানীতে ফিরে ফ্রেডেরিক বিজয় উদযাপন করেন। ফরাসিরা দ্রুত তাকে দলে ভিড়িয়ে নেয়। স্যাক্সোনি আর বাভারিয়ার সাথে একজোট হয়ে মোরাভিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা হয়। মোরাভিয়া পাবে স্যাক্সোনি, কিন্তু তারা সিলিসিয়ার সীমান্তবর্তী মোরাভিয়ার পাঁচ মাইল জায়গা ফ্রেডেরিকের কাছে ছেড়ে দেবে, যা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
অস্ত্রবিরতি শেষ হলে ১৭৪২ সালের জানুয়ারিতে ফ্রেডেরিক আবার সিলিসিয়া দিয়ে ঢুকে পড়েন। বেশ কয়েক জায়গাতে অস্ট্রিয়ানদের পরাস্ত করলেও মোরাভিয়া অধিকার করতে তিনি ব্যর্থ হন। এসময় মিত্রদের অসহযোগিতায় তিনি তিতিবিরক্ত হয়ে ওঠেন। এদিকে ফরাসি হুমকি বৃদ্ধি পেলে মারিয়া থেরেসা জুনের ১১ তারিখে প্রুশিয়ার সাথে নতুন করে ব্রেস্লাউ চুক্তি স্বাক্ষর করলেন (Treaty of Breslau)। সিলিসিয়ার অল্প কিছু এলাকা রেখে বাকি সবই দিতে দেয়া হলো ফ্রেডেরিককে। সিলিসিয়াতে ফ্রেডেরিকের ভেল্কি দেখে সবাই তার নামের সাথে দ্য গ্রেট যোগ করল।