শুরুর কথা
অটোম্যান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ওসমান গাজীর প্রথম সন্তানের নাম ছিলো ওরহান গাজী। ১২৮১ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়কালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দাদা আর্তুগ্রুল শখ করে নাতির নাম রেখেছিলেন ওরহান।
বাবা-মায়ের আদর-শাসনে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকেন ওরহান গাজী। তার শৈশব ও কৈশোর সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় নি। সুঠাম দেহের অধিকারী ওরহান বাবা ওসমান গাজীর বেশ প্রিয় ছিলেন। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই হয়তো তিনি ছেলেকে সবসময় নিজের সাথে সাথে রাখতেন, হাতে-কলমে শেখাতে চাইতেন একজন সুলতানের নানা দায়িত্ব-কর্তব্য। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, বিশ বছর বয়সী ওরহানকে একবার ওসমান গাজী ছোট প্রদেশ নাকিহিরের দেখাশোনা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ১৩০৯ সালে তিনি সেখান থেকে রাজধানী সগুতে ফিরে আসেন।
১৩২৬ সালে সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান ওসমান গাজী। এরপরই তার স্থলাভিষিক্ত হন ওরহান গাজী, নাম লেখান উদীয়মান অটোম্যান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সুলতান হিসেবে। অত্যন্ত সহৃদয়, ক্ষমাশীল, ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন ওরহান গাজী। ধর্মশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞগণ ছিলেন তার বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র। চারিত্রিক দৃঢ়তা, ধৈর্যশীলতা, আশেপাশের লোকজনের নিয়মিত খোঁজখবর রাখার মতো গুণাবলী অল্প সময়ের মাঝেই ওরহানকে জনতার হৃদয়ে পাকাপোক্ত আসন তৈরি করে দিয়েছিলো।
ওরহান গাজীর সিংহাসন প্রাপ্তি ও আলাউদ্দিন পাশার দূরদর্শিতা
সিংহাসনে বসার পর অবশ্য ওরহান গাজী পুরো অটোম্যান সাম্রাজ্য নিজে চালানোর ভার নিতে চাইলেন না। ছোট ভাই আলাউদ্দিন পাশাকে তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন দুই ভাই সাম্রাজ্য ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য। কিন্তু এতে দ্বিমত পোষণ করেন আলাউদ্দিন। যেহেতু তাদের বাবা ওরহানকেই সুলতানীর জন্য মনোনীত করে গেছেন, তাই সেখানে কোনো পরিবর্তন আনতে চাইলেন না তিনি। পাশাপাশি সাম্রাজ্য ভাগের ব্যাপারেও তার ছিলো ঘোরতর আপত্তি। নিজের ভাগ হিসেবে তাই আলাউদ্দিন কেবল বুর্সার কাছাকাছি একটি গ্রাম থেকে পাওয়া রাজস্বই চাইলেন। ওরহান অবশ্য আলাউদ্দিনের কোনো কথাই শুনতে চাইলেন না। বরং অটোম্যান সাম্রাজ্যের উজির হওয়ার জন্য তাকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানালেন। বড় ভাইয়ের এমন অনুরোধে সাড়া না দিয়ে পারেন নি আলাউদ্দিন।
আলাউদ্দিন পাশা অটোম্যান সাম্রাজ্যের উজির হয়ে আসা ছিলো ওরহান গাজীর জন্য বিশেষ কিছু। উত্তরসূরিদের মতো যদিও সেনাবাহিনীকে সরাসরি বিভিন্ন নির্দেশ পালন থেকে তিনি বিরত ছিলেন, তবে রাষ্ট্রের সামরিক-বেসামরিক বিষয়াদির সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজটি দক্ষ হাতে তিনিই সামলাতেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, আলাউদ্দিনের পরামর্শেই অটোম্যানরা নিজেদেরকে সেল্জুকদের সামন্ত রাজ্য ভাববার গণ্ডি থেকে মুক্ত হতে পেরেছিলো। মুদ্রায় সেল্জুক সম্রাটের ছবি ব্যবহার ও দোয়ায় তার নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বাদ দেয়া হয় এর অংশ হিসেবে।
শুধু তাই নয়। এর আগে অটোম্যানদের নিয়মিত কোনো সেনাবাহিনী ছিলো না। যুদ্ধের কিছুকাল আগে ঘোষণা দেয়া হলে আগ্রহীরা তাতে সাড়া দিতো। সেখান থেকে তাদের বেছে দিয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার পর যুদ্ধে পাঠানো হতো। ক্রমবর্ধমান একটি সাম্রাজ্যের জন্য এ অবস্থার পরিবর্তন ছিলো খুব জরুরি। সেই সত্যটি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন আলাউদ্দিন পাশা। সেজন্য ‘জেনিসারি’ নামে বেতনভুক্ত ও নিয়মিত এক সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন তিনি। পদাতিক বাহিনীর সদস্যদের বলা হতো পিয়াদা এবং অশ্বারোহী বাহিনীর সদস্যদের বলা হতো সিপাই। কমান্ডারদের অধীনে দশজন, একশোজন ও এক হাজারজনের বিভিন্ন দলকে ভাগ করে দেয়া হতো। উচ্চ প্রশিক্ষণ ও উচ্চ বেতনপ্রাপ্তি জেনিসারিদের উচ্চ সামাজিক মর্যাদার ব্যাপারটিও নিশ্চিত করেছিলো।
১৩২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে বসলেও সাম্রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব আরো আগেই পেয়েছিলেন ওরহান গাজী। মূলত ওসমান গাজীর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতাই ওরহান গাজীকে তখন অটোম্যান সাম্রাজ্যের শাসনভার নিজ হাতে তুলে নিতে বাধ্য করেছিলো।
রাজ্য জয়ের অভিযান
ওরহান গাজীর বিজয়গুলো এসেছিলো মূলত উত্তর-পশ্চিম আনাতোলিয়ায় বাইজান্টাইনদের অধিকৃত এলাকাগুলো নিজের দখলে আনার মাধ্যমে। ১৩২১ সাল থেকেই শুরু হয়েছিলো তার অভিযান। সেই বছর তার বাহিনী বুর্সার মুদান্য়া বন্দরের দখল নিয়ে নিলে বহির্বিশ্ব থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্নই হয়ে যায় বুর্সার বাসিন্দারা। এরপর তিনি একদল সেনাকে কৃষ্ণ সাগরের পশ্চিম উপকূলে, একটি দলকে কোসাইলীর দখল নিতে এবং আরেকটি দলকে মারমারা সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দখল নিতে পাঠান। ইতোমধ্যে ১৩২৬ সালে পতন ঘটে যায় বুর্সার। বুর্সা দুর্গের কমান্ডার এভ্রোনোস বে অটোম্যানদের বশ্যতা স্বীকার করে নিলে তাকে একটি অশ্বারোহী বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে এভ্রোনোসের ছেলে এবং নাতিরাও অটোম্যানদের অধীনে বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেয় এবং বলকান অঞ্চলে অটোম্যানদের আধিপত্য বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করে। বুর্সা নগরী দখলে আনার পর ওরহান বসফরাসের দিকে তার বাহিনী প্রেরণ করেন। মারমারা সাগরের উপকূলবর্তী শহরগুলোও ততদিনে চলে আসে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতাকাতলে।
পেলেকাননের যুদ্ধঃ ১৩২৮ খ্রিষ্টাব্দে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন আন্দ্রোনিকোস তৃতীয় পালাইয়োলোগোস। ততদিনে বাইজান্টাইন তার অতীত শক্তি হারিয়ে ধুঁকতে থাকা এক সাম্রাজ্য। নতুন সম্রাট তাই হারানো এলাকাগুলো ফিরে পেতে চাইলেন, নিকোমিডিয়া ও নাইসীয়াতে বাইজান্টাইন শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন তিনি। কিন্তু পেলেকাননে হালকা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ওরহানের বাহিনীর কাছে শোচনীয় পরাজয়ের শিকার হতে হয় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত বাইজান্টাইন বাহিনীকে। হারানো রাজ্যাংশ পুনরুদ্ধার তো দূরের কথা, এরপর আর কখনোই কোনো বাইজান্টাইন সম্রাট এশিয়াতে সামরিক অভিযান চালানোর সাহস করে উঠতে পারেন নি।
নাইসীয়া অবরোধঃ ১৩২৮ সালে নাইসীয়া (বর্তমান ইজ্নিক) শহর অবরোধ করে বসে ওরহান গাজীর বাহিনী। ১৩২৯ সালে তৃতীয় আন্দ্রোনিকোস অটোম্যানদের এ অবরোধ ভেঙে দিতে আক্রমণ করে বসেন। শুরুর দিকে কিছুটা সফলতা পেলেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য আন্দ্রোনিকোসের মুখে হাসিটা আর লেগে থাকে নি। ১৩৩১ সালে পতন ঘটে নাইসীয়ার। তখনকার দিনে নাইসীয়া ছিলো বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের এশীয় শহরগুলোর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একে নিজেদের সাম্রাজ্যভুক্ত করে আরেকটু মজবুত ভিতের উপর দাঁড়াতে সক্ষম হয় অটোম্যান সাম্রাজ্য।
নিকোমিডিয়ার পতনঃ নাইসীয়ার পতনের পর নিকোমিডিয়ার (বর্তমান ইজ্মিত) পতন ছিলো কেবলই সময়ের ব্যাপার। এর পতন ঠেকাতে সম্রাট আন্দ্রোনিকোস ওরহানকে ঘুষ পর্যন্ত দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ফায়দা হয় নি তাতে। অবশেষে ১৩৩৭ সালে অটোম্যান আক্রমণের মুখে পতন ঘটে এ শহরটিরও। ওরহান গাজীর ছেলে সুলায়মান পাশা দিয়েছিলেন এ অভিযানের নেতৃত্ব।
অন্যান্যঃ ১৩৩৮ সালে উস্কুদারও চলে আসে অটোম্যানদের অধীনে। তখন পর্যন্ত কৃষ্ণ সাগরের উপকূলবর্তী শহর সাইল থেকে শুরু করে উস্কুদারের আগপর্যন্ত এবং পাফ্লাগোনিয়ার বন্দর নগরী আম্সারাতে বাইজান্টাইনদের আধিপত্য বজায় ছিলো। কিন্তু বিচ্ছিন্ন সেসব এলাকা অটোম্যানদের জন্য কখনোই হুমকিস্বরুপ ছিলো না। সর্বশেষ ১৩৪৫ সালে কারেসীর (বর্তমান বালিকেসির ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ) দখলও নিয়ে নেন ওরহান গাজী। এর ফলে প্রায় পুরো উত্তর-পশ্চিম আনাতোলিয়া জুড়ে অটোম্যান সাম্রাজ্যের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। বুর্সা, নিকোমিডিয়া, নাইসীয়া ও পার্গেমাম ছিলো এর চার শক্তিশালী স্তম্ভ।
অভ্যন্তরীন উন্নয়ন
কারেসী জয়ের পর হঠাৎ করেই রাজ্য জয়ের অভিযান থেকে সরে আসেন ওরহান গাজী। এবার তিনি নজর দেন নিজের ঘর তথা অটোম্যান সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃঢ়করণের দিকে। সামরিক-বেসামরিক নানা স্থাপনা গড়ে উঠতে থাকে এ সময়। শাসন ব্যবস্থাকে আরো মজবুত ও কার্যকর করার পাশাপাশি নজর দেয়া হয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নের দিকেও। তাদেরকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে গড়ে তোলা হয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য সবার মাঝে তুলে ধরতে নির্মাণ করা হয় অসংখ্য মসজিদ। তখন বিভিন্ন সুরম্য অট্টালিকাও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলো, যার কিছু কিছু আজও টিকে আছে।
১৩৪১ সালে তৎকালীন সম্রাট তৃতীয় আন্দ্রোনিকোসের মৃত্যু হলে সমস্যার মুখে পড়ে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য। সম্রাটের নয় বছর বয়সী ছেলে ও উত্তরাধিকার জন পঞ্চম পালাইয়োলোগোসের অভিভাবকত্ব নিয়ে সাম্রাজ্যে বেঁধে যায় এক গৃহযুদ্ধ। প্রায় ৬ বছর ধরে চলা এ যুদ্ধের এক পক্ষে ছিলেন প্রধান মন্ত্রী জন ষষ্ঠ ক্যান্টাকুজিনোস এবং অপরপক্ষে সম্রাজ্ঞী আন্না, প্যাট্রিয়ার্ক অফ কনস্টান্টিনোপল জন ষষ্ঠ কালেকাস ও মেগাডিউক অ্যালেক্সিওস অ্যাপোককোস। শেষ পর্যন্ত অটোম্যানদের সাহায্য নিয়ে এ যুদ্ধে জয়লাভ করেন জন ষষ্ঠ ক্যান্টাকুজিনোস। অটোম্যান ও বাইজান্টাইনদের মাঝে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে তিনি তার দ্বিতীয় মেয়ে থিওডোরার সাথে ওরহানের বিয়ে দিতে মনস্থির করেন। শেষ পর্যন্ত মহা ধুমধামে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
পতনোন্মুখ বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য
ওরহান ও থিওডোরার বিয়ের মাধ্যমে অটোম্যানদের সাথে সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হলেও বাইজান্টাইনদের পতন তাতে ঠেকানো যায় নি। বরং দিনে দিনে সেই গতি যেন আরো বৃদ্ধিই পাচ্ছিলো। তখন তাদের শাসন ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলো যে, পার্শ্ববর্তী সমুদ্র পথগুলোতে বাণিজ্য নিয়ে ইতালীর উপকূলীয় বাণিজ্যিক শহরগুলোর মাঝে দ্বন্দ্ব মারাত্মক আকার ধারণ করে।
জলপথে বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ গোল্ডেন হর্নের একদিকে ছিলো জেনোয়ার শহর গালাতা। ১৩৪৮ সালে একবার বাইজান্টাইনরা তাদের অংশে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে শুল্কের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিলো। এ নিয়ে তখন জেনোয়ার সাথে তাদের যুদ্ধও বেঁধেছিলো। ১৩৫২ সালে বাণিজ্যিক এসব বিষয় নিয়েই জেনোয়ার সাথে ভেনিসের যুদ্ধ বেঁধে যায়। যুদ্ধে ভেনিসের পক্ষাবলম্বন করেন বাইজান্টাইন সম্রাট। মজার ব্যাপার হলো, শ্বশুরের পক্ষকে সমর্থন জানানো বাদ দিয়ে এবার বরং জেনোয়াকে সাহায্য করতেই নিজের নৌবহর প্রেরণ করেছিলেন ওরহান গাজী। এর পেছনে অবশ্য ভেনিশিয়ান জলদস্যুদের হাতে তার সমুদ্র উপকূলবর্তী শহরগুলোর বিভিন্ন সময় নাজেহাল হওয়াই মূল কারণ ছিলো। যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জয় লাভ করে জেনোয়া, শক্তি আরো হ্রাস পায় বাইজান্টাইনদের।
এমন ঘোলাটে অবস্থার মাঝেই আবার ওরহানের ছেলে সুলায়মান পাশা সিন্বি দুর্গ দখল করে নেন। এর ফলে দার্দানেলেস প্রণালীর ইউরোপিয়ান অংশে অটোম্যানদের স্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু তাই নয়। ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্যালিপোলি শহরে সুলায়মান অভিবাসী ও বিভিন্ন শহরের অধিবাসী তুর্কীদের এনে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। এতে অটোম্যানদের সাথে বাইজান্টাইনদের সম্পর্ক আরো ঘোলাটে হয়।
ওদিকে বাইজান্টাইনদের মাঝে গেম অফ থ্রোন্স তখন ভালোই জমে উঠেছিলো। ১৩৪১ সালের বিদ্রোহে জন ষষ্ঠ ক্যান্টাকুজিনোসের জয়লাভের পর সিদ্ধান্ত হয়েছিলো যে, পরবর্তী দশ বছর তিনি রাজপ্রতিভূ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এরপর জন পঞ্চম পালাইয়োলোগোস প্রাপ্তবয়স্ক হলে সাম্রাজ্যের দায়িত্ব তার হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু ক্ষমতার লোভ ছাড়া তো আর অত সহজ নয়। তাই পঞ্চম পালাইয়োলোগোসকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেন ষষ্ঠ ক্যান্টাকুজিনোস! কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই তিনি ফিরে আসেন এবং বিদ্রোহের মাধ্যমে বাইজান্টাইনদের সিংহাসন দখল করে নিতে সক্ষম হন। ক্ষমতার এ দ্বন্দ্বে দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে ওরহানের কাছে সাহায্য চাচ্ছিলো। আর ওরহানও যাকে তার সাম্রাজ্যের জন্য সুবিধাজনক মনে হচ্ছিলো, তাকেই সাহায্য করে যাচ্ছিলেন।
বেলা শেষের কাব্য
ওরহান গাজীর বড় ছেলে সুলায়মান পাশাই ছিলেন অটোম্যান সাম্রাজ্যের পরবর্তী সম্ভাব্য সুলতান। এ লক্ষ্যে তাকে সেভাবেই গড়ে তোলা হয়েছিলো। সামরিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন ব্যাপারে সুলায়মানের অভিজ্ঞতাও ছিলো প্রশংসনীয় পর্যায়ের। কিন্তু এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যায় ১৩৫৭ সালে। মারমারা সাগরের উপকূলে বোলায়ীরের কাছে ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হন সুলায়মান পাশা। এ আহতাবস্থা থেকে আর সুস্থ হতে পারেন নি তিনি। সুলায়মানের কবরের পাশেই কবর দেয়া হয়েছিলো তার সেই ঘোড়াটিকে। সেই কবর দুটো আজও দেখা যায়।
নিজের বড় ছেলের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে বেশ ভেঙে পড়েন ওরহান গাজী। জীবনের শেষ দিনগুলোতে সাম্রাজ্যের অধিকাংশ শাসনভার দ্বিতীয় পুত্র মুরাদের হাতে তুলে দিয়ে বুর্সাতেই নীরবে-নিভৃতে সময় পার করতে থাকেন তিনি। অবশেষে ছত্রিশ বছরের বর্ণাঢ্য সুলতানীর পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ১৩৬২ সালে আশি বছর বয়সে বুর্সাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অটোম্যান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় এ সুলতান।
অটোম্যানদের নিয়ে আজকের লেখার ইতি টানছি এখানেই। পরবর্তী পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি।