সানজু ছিলেন চিঈ (Ch’i) রাজ্যের বাসিন্দা। সমর কৌশলের উপর তার লেখালেখির সুবাদে একদিন তিনি অউ (Wu) এর রাজা হো-লু (Ho-lü) এর ডাক পেলেন। রাজা হো-লু আগেই সানজুর ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ পড়েছিলেন। তাই এবার সানজুর সৈন্যদল কমান্ডের একটা মহড়া দেখার খায়েস করলেন। শর্ত হলো, এই মহড়ায় সৈন্য হিসেবে থাকবে রাজার হেরেমখানার রুপসী নর্তকিরা। সানজু বললেন, “তথাস্তু।”
সানজু এক চৈনিক মার্সেনারি জেনারেল, স্ট্র্যাটেজিস্ট আর দার্শনিক। লোকে তাকে সান জি নামেও ডাকে। বাঁশের চাটাইয়ের ওপর লিখে যাওয়া তার বই ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ প্রায় দু’হাজার বছর ধরে যুদ্ধবিদ্যার ছাত্রদের অন্যতম পাঠ্য। মাও সে-তুং, গিয়াপ আর হালের জেনারেল ম্যাক আর্থারের মতো সেনানায়কেরাও তার এই বই থেকে প্রেরণা নিয়েছেন বলে স্বীকার করে গেছেন। যা-হোক, যথাসময়ে রাজার হেরেমখানা থেকে একশ আশিজন (মতান্তরে তিনশ) রূপবতী নর্তকি হাজির হলে সানজু ঝটপট তাদের দুটো উপদলে ভাগ করে ফেললেন। দুই উপদলের কমান্ডার হল রাজার প্রিয়তমা দুই নর্তকি। প্রথমেই সানজু তাদের শেখালেন কিভাবে অস্ত্র ধরতে হয়। তারপর বললেন, “আমি যখন কমান্ড দিব, ‘সামনে’, তখন আপনারা আপনাদের হৃদপিণ্ড বরাবর সামনের দিকে অস্ত্র তাক করবেন; আবার আমি যখন বলব ‘বামে’, তখন বাম দিকে ফিরবেন; যখন বলব ‘ডানে’, তখন ডানে ফিরবেন; আর যখন বলব ‘পেছনে’, তখন সবাই উল্টো ঘুরে পেছনদিকে ফিরবেন।”
নর্তকিরা সবাই বলল, “বুঝেছি, বুঝেছি।” তারপরও সানজু আরো তিনবার তার কমান্ডগুলো পুনরাবৃত্তি করলেন আর পাঁচবার পুরো ড্রিলটা ব্যাখ্যা করলেন। অবশেষে তিনি যখন সবাইকে ডানে ফেরার কমান্ড দিলেন, ওমনি নর্তকিরা সবাই হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ল। সানজু বললেন, “আন্ডারকমান্ড যদি বুঝতেই না পারে কোন আদেশে তার কী করতে হবে তাহলে সেটা কমান্ডারের নিজের সীমাবদ্ধতা।” সুতরাং তিনি তার কমান্ডগুলো আবার তিনবার বললেন এবং পুরো ড্রিল আরো পাঁচবার বুঝিয়ে বললেন। তারপর সবাইকে এবার বামে ফেরার কমান্ড দিলেন। আবারো নর্তকিরা সবাই হাসিতে লুটিয়ে পড়ল। এবার সানজু বললেন, “আদেশে ত্রুটি থাকলে অবশ্যই সেটা সেনাপতির দোষ। কিন্তু এই ত্রুটি দূর করার পরও যদি তার আদেশ প্রতিপালিত না হয়, এর দায় কর্মকর্তাদের।” সুতরাং তিনি দুই উপদলের নেতৃত্বে থাকা দুই নর্তকির শিরোচ্ছেদের নির্দেশ দিলেন।
রাজা হো-লু তার টেরাসে বসেই মহড়া দেখছিলেন। প্রিয় দুই নর্তকির শিরোচ্ছেদের উপক্রম দেখে তিনি সত্বর সানজুর কাছে দূত পাঠালেন যেন তিনি ক্ষান্ত হন। কিন্তু সানজু জানালেন, “জাহাপনার নির্দেশেই আমি সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি, আর একজন সেনাপতি তার নিজ সেনাবাহিনী যথাযথভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে জাহাপনার সব অনুরোধ রাখতে বাধ্য নন।” অতএব ঐ দুই নর্তকির শিরোচ্ছেদ নিশ্চিত করা হল এবং তাদের পরবর্তী জৈষ্ঠ দুজন নর্তকি দুই দলের নতুন নেতা হিসেবে নিয়োগ পেল। এরপর সানজুর কমান্ড দিতে দেরি, কিন্তু আদেশ পালনে কোনো খুঁত পাওয়া গেল না। তখন সানজু রাজার কাছে বার্তা পাঠালেন যে, এখন তার সেনাদল জাহাপনার পরিদর্শনের জন্য প্রস্তুত, আর এখন এরা জাহাপনার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠিত হবে না।
ঈষৎ মনক্ষুন্ন রাজা হো-লুর ততক্ষণে সৈন্য পরিদর্শনের সব ইচ্ছা উবে গেছে। সানজু বললেন, “জাহাপনারা শুধু ফাঁকা বুলি শুনতেই পছন্দ করেন। এর বাস্তবায়নটা আর দেখতে চান না।” রাজা হো-লু কিন্তু সেনাপতি হিসেবে সানজুর সক্ষমতা ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরে তাকে তার সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পরে সানজু পশ্চিমের শক্তিশালী রাষ্ট্র্র চু-কে পরাস্ত করে ইং পর্যন্ত এগিয়ে যান; উত্তরে তিনি চি আর চিন রাষ্ট্র্রকেও পরাভূত করেন। চৈনিক সামন্তরাজদের তালিকায় অউ রাজ্যের কৃতিত্বের অনেকটাই আদতে সানজুর অবদান।
উয়েহ চুয়েহ শু এর ভাষ্যমতে, অউ রাজ্যের প্রধান ফটকের দশ লি দূরেই বিশাল যে সমাধিটা দেখা যেত, তা ছিল সানজুর। সানজুর মৃত্যুর এক শতাব্দীরও পরে সানপিনের জন্ম। তিনি ছিলেন সানজুর বংশধর। সামরিক শিক্ষায় সানপিন আর পাং চুয়ান ছিলেন সহপাঠী। একসময় পাং চুয়ান অয়েই রাজ্যের রাজা হুই-এর সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পাং চুয়ান জানতেন যে, সমরকলায় তিনি সানপিনের সমকক্ষ নন। তাই ঈর্ষান্বিত পাং চুয়েন নিজ প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিশ্চিহ্ন করতে সাজানো এক মামলায় সানপিনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। শাস্তি স্বরুপ তখনকার নিয়মানুযায়ী সানপিনের দু’পা কেটে নেয়া হয় আর দাগী হিসেবে মুখে উল্কি এঁকে দেয়া হয়। পরে সানপিন চি রাজ্যের রাজদূতের সহায়তায় গোপনে অয়েইর রাজধানী তা লিয়াং থেকে পালিয়ে চি’র সেনাপতি তিয়েনচির আতিথ্য গ্রহণ করেন।
তিয়েনচি প্রায়ই চি’র রাজকুমারদের সাথে ঘোড়দৌড়ে বাজি লাগতেন। সানপিন লক্ষ্য করলেন, এই ঘোড়দৌড়ে মূলত সেরা, মাঝারি আর দুর্বল এই তিন শ্রেণীর ঘোড়া পরস্পরের সাথে প্রতিযোগীতা করত। তাই কৌশলের সাথে ঘোড়া নির্বাচন করতে পারলে বাজিমাত করা সম্ভব। তারই পরামর্শে পরের প্রতিযোগীতায় তিয়েনচি এক সহস্র স্বর্ণমুদ্রা বাজি লাগলেন।
প্রতিযোগীতার দিন সানপিনের পরামর্শে তিয়েনচি প্রথম রেসে রাজার সেরা ঘোড়ার বিপরীতে নিজের দুর্বল ঘোড়াটাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পাঠালেন। এবার দ্বিতীয় রেসে রাজার মাঝারি মানের ঘোড়াটার সাথে লড়তে পাঠালেন নিজের সেরাটাকে; আর তৃতীয় রেসে নিজের মাঝারি মানের ঘোড়াটা লড়লো রাজার দুর্বলটার সাথে। ফলাফলে প্রথম রেসে হারলেও বাকি দুটি রেস তিয়েনচি জিতে নিলেন আর সঙ্গে জিতলেন এক সহস্র স্বর্ণমুদ্রা।
এ ঘটনার পর তিয়েনচি সানপিনকে রাজার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন আর রাজা উয়েই তাকে নিজের সামরিক উপদেষ্টা করে নিলেন। পরে যখন চাও রাজ্য অয়েই রাজ্য দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চি রাজ্যের সাহায্য কামনা করল, চি ‘র রাজা উয়েই তখন সানপিনকে সেনাপতি করে সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনা করেন।
একজন প্রাক্তন দাগী আসামি হিসেবে সানপিন সেই প্রস্তাব সসম্মানে প্রত্যাখান করলে রাজা উয়েই তিয়েনচিকে সেনাপতি মনোনীত করে সানপিনকে তার চিফ অফ স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেন। তিয়েনচি চাইছিলেন সেনাদল নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত চাও-এর দিকে এগিয়ে যেতে। কিন্তু সানপিন বললেন,
“অস্ত্র হাতে কখনও বিবাদ মীমাংসা করতে যেতে নেই, এতে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির অবকাশ থাকে। এই অবস্থায় অয়েই সেনাবাহিনীকে আঘাত না করে চাওদের সাহায্য করার কোনো উপায় নেই। আর আঘাত যদি করতেই হয় তবে শত্রুর মূলে অথবা তার অরক্ষিত অংশে আঘাত করতে হয়। এই মুহূর্তে অয়েই সৈন্যরা চাও এর রাজধানী অবরোধ করে আছে, তাই স্বভাবতই অয়েইদের নিজ রাজধানী (তালিয়াং) অপেক্ষাকৃত অরক্ষিত। তাই চাও রণক্ষেত্র নয়, বরং তালিয়াং আক্রমণের এটাই মোক্ষম সুযোগ। কারণ রাজধানী আক্রান্ত হয়েছে জানলে নিজ রাজধানী বাঁচাতে অয়েইরা নিরুপায় হয়েই চাওদের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে তালিয়াং এর দিকে ছুটবে। আর এভাবেই একদিকে চাও অবরোধেরও যেমন নিস্পত্তি হবে, তেমনি ফিরতি পথে বাগে পাওয়া গেলে অয়েই সেনাবাহিনীকেও একহাত দেখে নেয়া সম্ভব হবে।“
তিয়েনচি সানপিনের এই পরামর্শ মতই কাজ করলেন। ফলে বাধ্য হয়ে অয়েই সেনাবাহিনী চাও এর রাজধানী অবরোধ বাদ দিয়ে নিজ রাজধানী রক্ষা করতে ছুটল এবং পথিমধ্যে কুয়েলিঙের কাছে এসে চি সেনাদের কাছে ভীষণভাবে পরাস্ত হল। পনের বছর পর চাওদের সাথে মিত্রতা করে অয়েই রাজ্য এবার হান রাজ্য আক্রমণ করল। বিপন্ন হানরা যখন চি রাজ্যের সহায়তা চাইলে চি’র রাজা যথারীতি সেনাপতি তিয়েনচিকে আগেরবারের মতোই তালিয়াং আক্রমণের নির্দেশ দিলেন। খবর পেয়ে অয়েই সেনাপতি পাংশুয়ান হান আক্রমণ বাদ দিয়ে ফের নিজ রাজধানী বাঁচাতে ছুটলেন। কিন্তু ইতোমধ্যে চি সেনাবাহিনী অয়েই রাজ্যে প্রবেশ করে তালিয়াংয়ের দিকে এগোচ্ছে। এবার সানপিন তিয়েনচিকে বললেন,
“অয়েই সেনারা স্বভাবতই হিংস্র আর সাহসী, কিন্তু তারা চি সেনাদের কাপুরুষ ভেবে অবজ্ঞা করে। বিচক্ষণ সেনাপতিরা যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে শত্রুর এসব দুর্বলতাকে কাজে লাগান। এক্ষেত্রে যেমন অয়েই সেনাদের এই অহংকার বা সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্সই তাদের অন্যতম দুর্বলতা। এই দুর্বলতার কারণেই অয়েই সেনাপতি যত দ্রুত সম্ভব এসে আমাদের আক্রমণ করতে উন্মুখ হয়ে আছেন। অথচ রণকলার শিক্ষানুযায়ী, কোনো সেনাবাহিনী যদি একটানা একশ লি (এক লি সমান ৫০০ মি. প্রায়) অতিক্রম করে এসে সরাসরি আক্রমণ করতে চায়, তবে সেই বাহিনীর ভ্যান গার্ড বা অগ্রভাগের সেনাদল কমান্ডার শত্রুর হাতে ধরা পড়বেন, আর যদি পঞ্চাশ লি দূর হতে যায়, তবে তার অর্ধেক মাত্র সেনা যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারে।“
এরপর পাংশুয়ানকে প্রলুব্ধ আর বিভ্রান্ত করতে সানপিন চি সেনাদের নির্দেশ দিলেন যেন তারা অয়েই রাজ্যে প্রবেশের পর প্রথম রাতে এক লাখ, দ্বিতীয় রাতে পঞ্চাশ হাজার আর তৃতীয় রাতে ত্রিশ হাজার রান্নার চুলা জ্বালায়। পাংশুয়ান টানা তিনদিন তার সেনাবাহিনী নিয়ে এগিয়ে চলছিলেন। পথেই তিনি খবর পেলেন, প্রতিরাতেই শত্রু শিবিরে রান্নার আগুনের সংখ্যা কমে আসছে। তিনি পরমানন্দে ভাবতে লাগলেন, চি সেনারা সত্যই কাপুরুষ। সবে তিনদিন হল তারা আমার দেশে ঢুকেছে, অথচ আমাদের এগিয়ে আসার সংবাদ পেতেই এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি অফিসার আর সৈন্য শিবির ছেড়ে ভেগেছে।
এরপর পাংশুয়ানের আর তর সইছিল না। তাই তিনি তার ভারী পদাতিকবাহিনী আর রসদ পেছনে ফেলে শুধু হালকা বর্মের সেনাদল নিয়ে চি সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করতে দ্রুত এগিয়ে যেতে লাগলেন। সানপিন হিসেব কষে দেখলেন সন্ধ্যে নাগাদ পাংশুয়ান মালিং-এ এসে পৌঁছুবেন। মালিং-এর সরু রাস্তার দু’পাশ খানা-খন্দকে ভরা, আর অ্যাম্বুশের জন্য আদর্শ। সানপিন রাস্তার পাশে চোখে পড়ার মতো বিশাল একটি গাছের বাকল তুলে নিয়ে এর গায়ের উপর লিখলেন, “এই গাছের নিচেই পাংশুয়ান তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন।”
এরপর তিনি রাস্তার দু’পাশে দশ হাজার ঝানু তীরন্দাজ নিয়ে এম্বুশ পাতলেন, আর বলে দিলেন, রাতে তাদের সামনে যেখানটাতেই আগুন জ্বলে উঠতে দেখবে, সবাই যেন সেই আলো লক্ষ্য করে একযোগে তীর ছোড়ে। রাতে চলার পথে বাকল ছাড়া গাছটা পাংশুয়ানের নজর কাড়ল। গাছের গায়ে কিছু একটা লেখা আছে বলে আঁচ করতে পেরে, লেখাটা ভাল করে পড়ার জন্য তিনি মশাল জ্বালাতে আদেশ দিলেন। তিনি লেখাটা পড়ে শেষ করার আগেই একযোগে দশ হাজার তীর ছুটে এল। পাংশুয়ানের বুঝতে দেরী হল না যে তার সেনাদলের জয়ের আর কোনো আশা নেই। তখন তিনি নিজের টুটি চিরে আত্মহত্যা করলেন, আর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগের আগে বললেন, “অবশেষে সেই হতচ্ছাড়াটার খ্যাতি বাড়াতেই আমাকে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে হল।”
সানপিন এই জয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমগ্র অয়েই সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করেন এবং তাদের ভাবী উত্তরসুরী রাজপুত্র সেনকেও বন্দি করেন। এরপর তিনি চি ফিরে যান। এরপর সানপিনের নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে আর তার স্ট্র্যাটেজি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আলোচিত হতে থাকে। সানজুর জীবনীর সাথে লেজুর হয়ে সানপিনের জীবনীটাও চলে আসা কোনো কাকতালীয় ঘটনা না। ধারণা করা হয়, সানজু থেকে আর্ট অব ওয়ারের যে সংকলন শুরু হয়, তা সানপিনে এসে পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়, যা অধুনা বিশ্বে সানজুর ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ নামে টিকে আছে।
এই সিরিজের লেখা আগের লেখা পড়তে দেখুন এখানে, কেন পড়বেন সানজু’র ‘দ্য আর্ট অফ ওয়্যার’?
ফিচার ইমেজ- Youtube