বর্তমান যুগের বিমানের অভূতপূর্ব উন্নতির আগে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনের জন্য আকার-আকৃতি এবং বিলাসবহুলতায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিল জার্মানির জেপলিন এয়ারশিপ কোম্পানির বায়ুতরী। এই এয়ারশিপ বা বায়ুতরী আকারে অনেকটা চুরুটের মতো হতো। সামনে ও পেছনের দিকে চাপা আর মাঝের অংশ নলাকার। মজবুত ধাতব কাঠামোর উপরে বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মিত আচ্ছাদন দিয়ে বেলুনের মতো সেই অংশটি ঢেকে দেয়া হত। অতিকায় সেই চুরুট আকৃতির বেলুনের নিচের অংশে থাকতো নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আর যাত্রীদের বসার জায়গা।
হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করে বায়ুতরী নির্মাণের কাজ শুরু হয় আঠারো শতক থেকেই। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা যাত্রী পরিবহনের কাজে নির্ভরযোগ্য আকাশযান নির্মাণ করতে এর নির্মাতাদের সময় লেগে যায় আরও এক শতাব্দীর মতো। ১৯০০ সালে গ্রাফ ভন জেপলিন নামের এক জার্মান নির্মাতা তার প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত প্রথম বায়ুতরী জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। সেই আকাশযানে কিছু ত্রুটি থেকে যাবার কারণে সকলের মাঝে বিশেষ ধরনের এই আকাশযান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্র
থম বিশ্বযুদ্ধের সময় কেবল যুদ্ধের কাজে ব্যবহার হয় জেপলিন কোম্পানির নির্মিত এই বিশেষায়িত বেলুন। ধীরে ধীরে প্রস্তুতকারকের নাম অনুযায়ী জেপলিন নামে পরিচিতি পায় এই ধরনের বায়ুতরী। সে সময়ের যেকোনো সমুদ্রগামী জলযান থেকে প্রায় অর্ধেক সময়ে লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিতে পারায় অল্প দিনেই যাত্রী পরিবহনের কাজেও এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। নানা সময় বিভিন্ন দেশ জেপলিন নির্মাণ এবং ব্যবহার করলেও ইতিহাসের পাতায় হিন্ডেনবার্গ বায়ুতরীর নামটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। এর সাথে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনাই হয়তো একে অন্য সকল জেপলিন থেকে আলাদা করে তুলেছে। হিন্ডেনবার্গ আকাশযানকে তাই অনেক ইতিহাসবিদ আকাশপথের টাইটানিকও বলে থাকেন।
হিন্ডেনবার্গ ছিল জেপলিন কোম্পানির নির্মিত বিশেষায়িত শ্রেণীর প্রথম বায়ুতরী। ‘হিন্ডেনবার্গ’ নামটি দেয়া হয় জার্মানির প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল পল ভন হিন্ডেনবার্গের নামানুসারে। যদিও এর কারগরি নাম ছিল এল. জেড ১২৯। ১৯৩১ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৩৬ সালে। দৈর্ঘের দিক দিয়ে নির্দ্বিধায় সেটি ছিল বিশালাকারের। ৮০৩ ফুট দৈর্ঘ্যের হিন্ডেনবার্গ জেপলিনটি আকারে বোয়িং ৭৮৭ বিমান থেকে প্রায় ৪ গুণ বড় ছিল। অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্কর ধাতু ডুরালুমিন ব্যবহার করে হিন্ডেনবার্গের কাঠামো তৈরি করা হয়। হিন্ডেনবার্গের উপরের দিকে থাকা বিশাল গ্যাস চেম্বারগুলো সব মিলিয়ে ৭ মিলিয়ন ঘন ফুট হাইড্রোজেন গ্যাস ধারণ করতে পারত।
যাত্রী পরিবহনের কাজ শুরু করবার আগে জার্মানিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে হিন্ডেনবার্গকে ব্যবহার করা হয়। এর বিশালাকৃতি আর বিলাসবহুল অভ্যন্তরীণ সাজশয্যা সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সে সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনী তাদের প্রতীক ‘স্বস্তিকা’ চিহ্ন এঁকে দেয় জেপলিনটির পেছনের অংশে। হিন্ডেনবার্গের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে নিজেদের নাম প্রচার করার এই সুযোগ নাৎসি বাহিনী হাতছাড়া করেনি। ১৯৩৬ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক উপলক্ষে এতে অলিম্পিকের রিং এঁকে দেয়া হয়। বার্লিনে হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে জেপলিনটি। সে বছরই মে মাসে ৫০ জন আরোহী নিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু করে হিন্ডেনবার্গ। যাত্রা শুরুর পর থেকে দুর্ঘটনা ঘটার আগপর্যন্ত হিন্ডেনবার্গ যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির মাঝে দশবার এবং সেই সাথে জার্মানি এবং ব্রাজিলের মধ্যে সাতবার রাউন্ড ট্রিপ সম্পন্ন করে।
শুধু আকারের দিক থেকেই নয়, ভেতর থেকেও একে বিলাসবহুল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল জার্মান প্রতিষ্ঠানটি। চুরুট আকারের বেলুনটির নিচে মানুষ ধারণ করবার অংশটি ছিল দুই তলায় বিভক্ত। উপরের তলায় ছিল ভোজনকক্ষ, লাউঞ্জ, লেখালেখির ঘর আর বিশ্রামাগার। হিন্ডেনবার্গের ভোজনকক্ষটি ছিল লম্বায় ৪৩ ফুট আর চওড়ায় ১৯ ফুট। এই কক্ষের দেয়ালগুলোতে ছবির মাধ্যমে হিন্ডেনবার্গের পূর্বসূরি গ্রাফ জেপলিনের কীর্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।
খাবার ঘরের চেয়ারগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল অ্যালুমিনিয়ামের পাত ব্যবহার করে, যাতে ওজন কম হয়। এরপর ছিল হিন্ডেনবার্গের লাউঞ্জ। বাদামী রঙের গদিতে মোড়ানো অ্যালুমিনিয়ামের আসবাবে সাজানো ছিল এই কক্ষটি। অন্যান্য আসবাবের সাথে এই কক্ষে যুক্ত করা হয়েছিল বিশেষ উপায়ে নির্মিত একটি অ্যালুমিনিয়ামের পিয়ানোও। যদিও পরবর্তীতে পিয়ানোটি জেপলিনটি থেকে অপসারণ করে নেয়া হয়। আলাপ আলোচনা করে সময় কাটাবার পাশাপাশি বাইরের দৃশ্য দেখবার জন্যে লাউঞ্জে বেশ কয়েকটি জানালা রাখা হয়েছিল। লাউঞ্জের পাশে ছিল লেখালেখি করার জন্য কামরা, যেখানে নিরালায় বসে সময় কাটাতে পারতেন যাত্রীরা। ভোজনকক্ষ আর লাউঞ্জের মাঝে ছিল যাত্রীদের বিশ্রামের জন্যে ২৫টি কেবিন। প্রতিটি কেবিনে একটি করে দোতলা খাট আর কিছু আসবাবের ব্যবস্থা ছিল।
নিজের তালায় ছিল জেপলিনটির নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সেই সাথে ছিল ধূমপান কক্ষ আর পানশালা। যদিও ৭ মিলিয়ন ঘন ফুট দাহ্য হাইড্রোজেন গ্যাসে পূর্ণ হিন্ডেনবার্গে কেন ধূমপান কক্ষ রাখা হয়েছিল এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। আসলে বিলাসবহুল এই জেপলিনটি নির্মাণ করা হয়েছিল বিশেষ শ্রেণীর যাত্রীদের কথা চিন্তা করে। যেখানে গণ্যমান্য ব্যক্তি, ধনী ব্যবসায়ী থেকে বড় রাজনীতিবিদরা নিজেদের সকল আরাম আয়েশের মধ্য দিয়েই আকাশ পথে যাত্রা করতে পারবেন। সেজন্যই ধূমপান করার কক্ষের ব্যবস্থা করে জেপলিন কোম্পানি। যদিও এই কক্ষের নির্মাণে বিশেষ ব্যবস্থা নেয় তারা। বায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই কক্ষকে এমনভাবে নকশা করা হয়েছিল যাতে সেখানে হাইড্রোজেন গ্যাস কোনোভাবেই প্রবেশ করতে না পারে। সেই সাথে কোনোপ্রকার খোলা আগুনের ব্যবহার সেখানে নিষিদ্ধ ছিল। কেবলমাত্র বৈদ্যুতিক লাইটার ব্যবহার করে ধূমপান করার অনুমতি ছিল সেখানে।
সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল। বিপত্তি ঘটল ১৯৩৭ সালের মে মাসের ৬ তারিখে। যাত্রাটি এমনিতেই ছিল গোলযোগপূর্ণ। সাধারণত হিন্ডেনবার্গের জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছুতে দুদিনের কিছু বেশি সময় লাগলেও বৈরি আবহাওয়া আর বজ্রপাতের কবলে পড়ে হিন্ডেনবার্গের সেই যাত্রায় সময় লেগে যায় তিনদিন। উত্তর আটলান্টিকে সামুদ্রিক ঝড়ো বাতাসের মুখে কয়েক ঘন্টা যাত্রাবিরতি দিতে বাধ্য হয় তারা। বরাবরের মতোই সে যাত্রায় জেপলিনে ছিলেন ধনী এবং গণ্যমান্য যাত্রীরা। যারা এই বিলম্বের কারণে অসহিষ্ণু হয়ে পড়েন। চালকরাও এই ভেবে চিন্তিত ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রে দেরি করে পৌঁছলে তাদের জার্মানির ফিরতি ফ্লাইটও বিলম্বিত হবে।
ভাগ্য সেদিন সবদিক থেকেই যেন বিপরীতে ছিল হিন্ডেনবার্গের। অবতরণের জন্যে লেকহার্স্ট ভেনাল এয়ার স্টেশনে নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় বারো ঘন্টা পরে পৌঁছায় আকাশযানটি। বাজে আবহাওয়ার তোয়াক্কা না করে আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময়কর বায়ুতরী হিন্ডেনবার্গের অবতরণ দেখতে সাধারণ মানুষের সাথে সেখানে জমা হয় সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনের সংবাদকর্মীরা। অবতরণের বিখ্যাত সেই মুহূর্তকে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্যে ভিডিও ক্যামেরা প্রস্তুত করে রাখা হয়। সেই সাথে সরাসরি ধারাভাষ্য দেবার জন্যে রেডিও উপস্থাপকও ছিলেন একেবারে প্রস্তুত।
হিন্ডেনবার্গ অবতরণ করানোর প্রক্রিয়া ছিল মূলত দুই ধরনের। হাই-ল্যান্ডিং আর লো-ল্যান্ডিং। হাই-ল্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মীরা আকাশযান থেকে ফেলা রশি টেনে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে আসত এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নোঙর করার ব্যবস্থা করত। এই পদ্ধতিতে অবতরণ করতে জেপলিনের কম সময় লাগলেও বিপদের সম্ভাবনা বেশি থাকতো। লো-ল্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে আকাশযানটি নিজেকে বাতাসে সমান্তরাল রেখে ধীরে ধীরে ভূমি স্পর্শ করত এবং এরপর কর্মীরা একে নোঙর করানোর ব্যবস্থা করত। এই নিয়মে অবতরণ করতে সময় প্রয়োজন হত বেশি।
হিন্ডেনবার্গের চালনাকক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় হাই-ল্যান্ডিং করার ব্যাপারে। তাই মাটি থেকে প্রায় ২০০ ফুট উপরে স্থির করে দাঁড়া করানো হয় জেপলিনটিকে। এরপর সেখান থেকে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মীদের দিকে রশি ছুড়ে দেয়া হয়। ভিডিওতে সবই সরাসরি চিত্রিত হতে থাকে। কর্মীরা রশি টেনে হিন্ডেনবার্গকে যখনই মাটির কাছাকাছি নামিয়ে আনে তখনই এর পেছনের অংশে আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়। মুহূর্তে পুরো কাঠামটিই রুপ নেয় জ্বলন্ত এক অগ্নিকুণ্ডে। মাত্র ৩৪ সেকেন্ড সময়ে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে ফেলে পুরো হিন্ডেনবার্গকে। মোট ৯৭ জন আরোহীর মধ্যে ৬২ জন অলৌকিক উপায়েই বেঁচে গেলেও ২২ জন কর্মী, ১৩ জন যাত্রী আর নিচে অবতরণের কাজে থাকা একজন কর্মীসহ মোট ৩৬ জন এই দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। সব কিছু এত দ্রুত ঘটে যায় যে, আগুন নেভার আগপর্যন্ত ভেতরে আটকা পড়া মানুষদের কী অবস্থা হয়েছে তা জানবার কোনো উপায় পর্যন্ত ছিল না।
দুর্ঘটনা ঘটার সাথে সাথে চারিদিকে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির মধ্যে তখন সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। বিভিন্ন যায়গায় কানাঘুষা শুরু হয় এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি পূর্বপরিকল্পিত কোনো চক্রান্ত সে ব্যাপারে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট টেলিগ্রাম করে হিটলারের কাছে এই ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেন। বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় ঠিক কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা খুঁজে বের করার জন্য।
তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ থেকে সৃষ্ট আগুন হাইড্রোজেনের সংস্পর্শে আসার কারণে এই দুর্ঘটনার সূত্রপাত। তদন্ত কমিটি এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হিন্ডেনবার্গের মোট ১৬টি গ্যাস চেম্বারের মধ্যে পেছনদিকের কোনো একটি গ্যাস চেম্বারে ছিদ্র সৃষ্টি হয়। সেই পথে বের হয়ে আসা হাইড্রোজেন গ্যাস বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের আগুনের সংস্পর্শে এসে ঘটায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। যদিও কীভাবে এবং কেন গ্যাস চেম্বারে ছিদ্র তৈরি হবে সেই প্রশ্নের উত্তর বিগত আশি বছরের বেশি সময় ধরে অস্পষ্টই রয়ে গেছে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় নির্মিত তুলোর কাপড় আর রাবার জাতীয় দ্রবের মিশ্রণে তৈরি করা গ্যাস চেম্বারের দেয়ালগুলো এমনি যথেষ্ট দৃঢ় ছিল। তারপরও অ্যালুমিনিয়াম কাঠামোর কোনো ভাঙা ধাতব অংশের ঘষা লেগে ছিদ্র সৃষ্টি হওয়া হয়তো অসম্ভব বিষয় নয়।
দুর্ঘটনার কারণ এই স্ফুলিঙ্গের আগুনকে ধরা হলেও বিগত আশি বছরে আরও অনেক অনুমান ভিত্তিক কারণ দেখিয়েছেন অনেকে। কারও মতে বজ্রপাতের কারণে, কারও মতে হঠাৎ ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাবার কারণে, আবার অন্যদের মতে বোমা বিস্ফোরণের কারণেও ধ্বংস হয়ে থাকতে পারে আকাশযানটি। এর কোনোটিই শেষ পর্যন্ত যুক্তিতে টেকেনি।
দুর্ঘটনার বিষয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন নেভি লেকহার্স্ট হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির এক ইতিহাসবিদ রিক জিটারোসা। তার মতে, অবতরণের জন্যে জেপলিনটি খুব বেশি তাড়াহুড়ো করছিল। একটি আকাশযান নিরাপদে অবতরণ করানোর জন্য যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তার অনেকগুলোই জেপলিনটির নিয়ন্ত্রকরা সংক্ষেপে করবার চেষ্টা করছিল। সেদিনের ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা একজন যাত্রী নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন এভাবে- আকাশযানটি মাটিতে অবতরণের ফলেই বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়, আর সেখান থেকেই মুহূর্তের মধ্যে আগুন জ্বলে ওঠে হাইড্রোজেনে ঠাসা গ্যাস চেম্বারগুলোতে। একইসাথে প্রচণ্ড উত্তাপে কাঠামোটি ভেঙে পড়তে শুরু করে। সেদিন হিন্ডেনবার্গের লো-ল্যান্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে হয়তো আরো বেশি মানুষ সেখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারত। সেই সাথে আগুনের ছড়িয়ে পড়াও হয়তো সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হত।
হিন্ডেনবার্গের পূর্বে নানা সময় আরো অনেক বায়ুতরী দুর্ঘটনা ঘটে থাকলেও বিশেষ এই দুর্ঘটনাটির পর থেকে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে জেপলিনের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে শুরু করে। এছাড়া যাত্রীবাহী বিমানের সাথে সময় কিংবা নিরাপত্তার প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হতে না পারাও ছিল আরো একটি উল্ল্যেখযোগ্য কারণ। জেপলিন কোম্পানি আজও রয়েছে, কিন্তু তাদের বায়ুতরীর যাত্রাপথ এখন সীমিত। একসময় নিয়মিত সমুদ্র পারাপার করার এই বিশেষ ধরনের আকাশযান এখন কেবল পুরনো যুগের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবেই টিকে রয়েছে।
ইতিহাসের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/