প্রাচীন মিশর মানেই মরুর তপ্ত বালুর বুকে ফেরাউন, পিরামিড, মমি, এবং হাজারো লুকানো রহস্যের হাতছানি। তৎকালীন মিশরীয় শাসকদের ফেরাউন বলে অভিহিত করা হতো। সাধারণভাবেই শাসক ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা মিশরের রাজা হিসেবেই বিবেচিত হতো। বংশপরম্পরা ও উত্তরাধিকারসূত্রে রাজমুকুট অভিভাবকের মৃত্যুর পর সন্তানের নিকট হস্তান্তর করা হতো। অগণিত ফেরাউনের শাসনের মধ্য দিয়ে স্রোতঃস্বিনী নদীর মতো বয়ে চলা মিশর ইতিহাসে পাতায় স্থান করে নিয়েছে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাচীন সভ্যতা হিসেবে।
নারমার
নারমারকে বলা হয় মিশরের প্রথম ফেরাউন। কিন্তু কারও কারও মতে, মিশরের প্রথম ফেরাউন হবার কৃতিত্ব বাগিয়ে নিয়েছেন মেনেস। কিন্তু সেটা স্রেফ লোককাহিনীতেই বিদ্যমান। ‘মেনেস প্রথম ফেরাউন’ এমন কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক সত্যতা গবেষকরা খুঁজে পাননি। বরং প্রত্নতত্ত্বভিত্তিক সকল সাক্ষ্য-প্রমাণের পাল্লা নারমারের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে।
প্রাক-রাজবংশীয় রাজা কা-র উত্তরসূরি নারমার মিশরের সিংহাসনে বসেন খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ অব্দের দিকে। তিনি ছিলেন প্রাচীন মিশরের প্রথম রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা, যিনি মিশরের উচ্চ এবং নিম্নভূমিকে এক করেন। আবার অনেকের দাবি, দুই ভূমিকে এক করার কৃতিত্ব পুরোপুরি নারমারের নয়। কেননা ৩১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আগে থেকেই দুই ভূমিকে এক করবার আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নারমার এই কাজ সম্পূর্ণ করেন।
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ কুইবেল অ্যান্ড গ্রিন, দেবতা হোরাসের মন্দির থেকে নারমার প্যালেট নামে এক শিলালিপি উদ্ধার করেন। সেখান থেকেই সর্বপ্রথম নারমারের পরিচয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
হাতশেপসুত
প্রায় ৩,০০০ হাজার বছর প্রাচীন মিশরের রাজসিংহাসনে রাজ্য শাসন করা ১৭০ জন ফেরাউনের মাঝে নারীর সংখ্যা মাত্র ৭। তবে এটা ইতিহাসবিদদের ধারণামাত্র। কারণ, ইতিহাসের পাতা থেকে নারী শাসনের অক্ষর প্রায় সময়ই মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এই আলোচনায় হাতশেপসুতের নামই সবার আগে উঠে আসবে অবধারিতভাবে। তাকে অভিহিত করা হতো ‘মহৎ নারীদের প্রধান’ হিসেবে। মিশরের ১৮ তম রাজবংশের পঞ্চম শাসক হিসেবে হাতশেপসুত রাজ্য শাসন করেন খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৭৮ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৫৮ অব্দ পর্যন্ত। শরীরে রাজরক্ত বাহিত হওয়ায় তিনি রাজশাসনের সকল গুণই পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ফেরাউন প্রথম থুতমোস এবং তার প্রধান স্ত্রী রানী আহমোসের কন্যা।
বিশ্বাস করা হয়, প্রথম থুতমোস চেয়েছিলেন তার কন্যা সিংহাসনে বসুক। নিজ স্বামীর মৃত্যুর পর সিংহাসনে অভিষেক ঘটে হাতশেপসুতের। টানা ২১ বছর রাজ্যের দেখভাল করেছেন তিনি। তার ক্ষমতাকালীন সময়ে রাজ্যের যে উন্নতিসাধন হয়েছিল, তা বহু পুরুষ ফেরাউন পর্যন্ত করে দেখাতে ব্যর্থ ছিল। বৈদেশিক যোগাযোগ, রপ্তানি, বিভিন্ন নির্মাণকার্য সম্পাদনার পাশাপাশি তার শাসনামলে জনগণ সুখে-শান্তিতে বসবাস করত।
প্রাচীন মিশরের ইতিহাস থেকে হাতশেপসুতের নাম মুছে না যাওয়ার কারণ হচ্ছে তার অসম্ভব দূরদর্শিতা। নিজের নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হবে এই ভেবে তিনি অসংখ্য রাজকীয় স্থাপত্য, সমাধি, মন্দির তৈরি করে গেছেন। প্রাচীন মিশরের বিখ্যাত কার্নাক মন্দির এবং মা’আত মন্দির তার নির্দেশেই নির্মিত হয়। সেজন্য নারী শাসক হয়েও ইতিহাসের পাতায় অক্ষয় হয়ে আছে হাতশেপসুতের নাম।
তৃতীয় থুতমোস
হাতশেপসুত এবং ফেরাউন দ্বিতীয় থুতমোসের সন্তান তৃতীয় থুতমোস ছিলেন ১৮ তম রাজবংশের একজন ফেরাউন। দ্বিতীয় থুতমোস যখন পরলোকগমন করেন, তখন তৃতীয় থুতমোস সবেমাত্র ২ বছরে পা রেখেছেন। একমাত্র সন্তান হিসেবে তার সিংহাসনে বসার কথা থাকলেও বয়স বিবেচনায় গদিতে আরোহণ করেন তার মা হাতশেপসুত। হাতশেপসুতের মৃত্যুর পর খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৮১ অব্দে শাসনের দায়ভার যায় তৃতীয় থুতমোসের কাঁধে। দীর্ঘ ৫৪ বছরের রাজত্বকালে তিনি মিশরীয় সভ্যতাকে অনেক কিছুই দিয়েছেন। রাজ্যবিস্তৃতি এবং যুদ্ধজয়, উভয় ক্ষেত্রেই তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। জীবদ্দশায় বহু যুদ্ধে সুনিপুণ সমরকৌশল দেখিয়ে তিনি মিশরকে জয় এনে দিয়েছেন। দোর্দণ্ডপ্রতাপে বহিঃশত্রুদের করেছেন পরাস্ত। মায়ের মতো তিনিও বহু রাজনৈতিক স্থাপনা, মন্দির ও কাঠামো নির্মাণ করেছেন। তার নির্মাণকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফেস্টিভ্যাল হল, কারনাকের সপ্ত-তোরণ, এবং দেইর-এল-বাহরির মন্দিরসমূহ।
দ্বিতীয় র্যামেসিস
১৯ তম রাজবংশের তৃতীয় ফেরাউন, এবং নতুন সাম্রাজ্যের শাসক দ্বিতীয় র্যামেসিসকে মিশরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফেরাউন হিসেবে ধরা হয়। মিশরীয়রা তাকে ‘দ্য গ্রেট অ্যানচেস্টর’ বলতেও ভালোবাসে। যুদ্ধজয়ের বর্ণাঢ্য জীবন, বহু সফল সামরিক অভিযান এবং দুর্ধর্ষ হিট্টি, সিরীয় এবং নুবিয়ান জাতির বিরুদ্ধে আগ্রাসন তাকে বানিয়েছে অনন্য। ধারণা করা হয়, স্থাপত্যশিল্পে তাকে টেক্কা দেওয়ার মতো অন্য কোনো ফেরাউন নেই। তার আমলে নির্মিত স্থাপত্যের প্রাচুর্য এখনও দাঁড়িয়ে আছে, যা বর্তমান মিশরের প্রাচীন ঐতিহ্যের অংশ। ৯০ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর তাকে রাজাদের উপত্যকায় সমাহিত করা হয়।
মজার ব্যাপার হলো, র্যামেসিস সেই হাজার বছর পূর্বে মারা গেলেও তার অফিসিয়াল পাসপোর্ট রয়েছে। তার মমি গবেষণার জন্য ফ্রান্সে পাঠানোর দরকার পড়েছিল। সেজন্য মিশরীয় পুরাতত্ত্ব কর্তৃপক্ষ ফেরাউন দ্বিতীয় র্যামেসিসের বিমান ভ্রমণের জন্য একটি পাসপোর্ট তৈরি করে। সেখানে তার নাম-পরিচয় সব হুবহু রাখা হয়েছে, এবং পেশা দেওয়া হয়েছে ‘রাজা’। বিমানবন্দরে তাকে পূর্ণ সামরিক সম্মাননা জানানো হয়।
তৃতীয় আমেনহোতেপ
তৃতীয় আমেনহোতেপের শাসনামল ইতিহাসে যশ ও উন্নতি খচিত এক অধ্যায়। তিনি ছিলেন ১৮ তম রাজবংশের নবম ফেরাউন, যার রাজত্বকাল খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৯১ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৫৩ অব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। তার আমলে মিশরের অর্থনীতি ব্যাপক সমৃদ্ধি লাভ করে। তিনি বিশেষভাবে নজর দেন ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে। তার নির্মিত বহু মূর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ, মিনার এখনও টিকে আছে। শান্তিপ্রিয় এই ফেরাউন শিল্প-সংস্কৃতির কদর করতেন। ৩৭ বছরের রাজত্বকালে তিনি আশেপাশের রাজ্যের অনেক রাজকুমারীকে বিয়ে করেন শুধুমাত্র যুদ্ধ-বিগ্রহ এড়িয়ে শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে। তার স্থাপত্যশিল্পের সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন থেবেসের লুক্সর মন্দির। মিশরে এই মন্দিরের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। আমেনহোতেপ নিজের প্রায় শ’খানেক মূর্তি নির্মাণ করেন। মিশরের ইতিহাসে আর কোনো ফেরাউন নিজের এত সংখ্যক মূর্তি নির্মাণ করেননি।
আখেনাতেন
ফেরাউন আখেনাতেন চতুর্থ আমেনহোতেপ নামেও পরিচিত। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৫৩ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৩৬ অব্দ পর্যন্ত শাসন করা ১৮ তম রাজবংশের এই ফেরাউন চিরাচরিত ধারার খোলস ভেঙে প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের অনেক পরিবর্তন সাধন করেন। প্রাগৈতিহাসিককালেই মিশরে বহু ঈশ্বরবাদের ধারণা প্রচলিত ছিল। আখেনাতেনের পূর্ববর্তী ফেরাউনরা ঠিক একই পথ অনুসরণ করে আসছিলেন। কিন্তু আখেনাতেন হাঁটলেন স্রোতের বিপরীতে।
আখেনাতেনের মতে, ঈশ্বর শুধু একজনই, তিনি হলেন আতেন বা সূর্য-দেবতা। তার এই মতবাদকে তিনি পুরো মিশরে ছড়িয়ে দিলেন। বহু ঈশ্বরের পূজা বাদ দিয়ে একেশ্বরবাদের ধারণা অন্তরে ধারণ করতে বললেন সকলকে। সেই সাথে সূর্যদেব আতেনের উপাসনা করার নির্দেশ দিলেন। স্থানীয় জনগণ এবং পুরোহিতদের বিরুদ্ধে গিয়ে পুরনো প্রথা ভাঙার এই প্রক্রিয়া মোটেও সহজ ছিল না। তবুও তিনি অটল ছিলেন তার এই নয়া আদর্শে। ফেরাউন চতুর্থ আমেনহোতেপ নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখলেন আখেনাতেন। আখেনাতেন শব্দের অর্থ হচ্ছে সূর্য-দেবতার সন্তান। তবে তার মৃত্যুর সাথে সাথে সকলেই তাদের প্রাচীন ধর্মে ফিরে আখেনাতেনের সকল মূর্তি ভেঙে দেয়। ক্রোধ এবং ঘৃণায় তাকে রাজাদের তালিকা থেকেও বাদ দেওয়া হয়।
তুতেনখামেন
প্রাচীন মিশরের প্রসঙ্গে পিরামিডের পর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ছবি বোধহয় তুতেনখামেনের স্বর্ণের মুখোশ। তবে বীরযোদ্ধা বা শাসক হিসেবে নয়, তুতেনখামেন মিশরীয় ইতিহাসে জনপ্রিয় হয়ে আছেন তার বিখ্যাত অভিশাপের ঘটনার কারণে। ফেরাউন তুতেনখামেন ছিলেন মিশরীয় ফেরাউনদের ১৮ তম বংশের একজন রাজা। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৪১ অব্দের কাছাকাছি সময়ে পিতা আখেনাতেনের ঘরে জন্ম নেন তিনি। পিতার মৃত্যুর পর মাত্র আট বছর বয়সেই দেশ পরিচালনার দায়ভার কাঁধে দিয়ে সিংহাসনে বসানো হয় তাকে। তবে তার রাজত্বকাল ছিল খুবই অল্প (১৩৩৩ খ্রি. পূ. – ১৩২৩ খ্রি. পূ.)। বছরের হিসেবে মাত্র দশ বছর। আঠারো বছর বয়সেই মৃত্যু হয় তার। এত অল্প বয়সে রাজা হওয়ায় তিনি ‘কিশোর রাজা’ নামেও পরিচিতি পান। ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, রাজার শরীরের রক্তে লোহিত রক্তকণিকার ঘাটতি ছিল। ২০১৪ সালে তুতের ভার্চুয়াল অটোপ্সি করে দেখা হয়, তার বাম পায়ে একটি হাড়ের রোগ ছিল।
তার মমি নিয়ে কম জল-ঘোলা হয়নি। ১৯২০ এর দশকে পুরো বিশ্বে চাউর হয়েছিল, তুতেনখামেনের মমি নাকি অভিশপ্ত। যারা তারা মমি উদ্ধারের জড়িত ছিল, তারা সকলেই এর কিছুদিনের মধ্যে কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল। সত্যিই কি তাই?
জানতে পড়ে ফেলুন: ফেরাউন তুতেনখামেনের অভিশপ্ত মমি: সত্য না মিথ্যা?
জোসের
প্রাচীন মিশরের আকাশে তখনও তৃতীয় রাজবংশের সূর্য উদিত হয়নি। তখনও কোনো ভবন, অট্টালিকা, সমাধি নির্মাণের প্রধান কাঁচামাল ছিল মাটির তৈরি ইট, কাঠ বা নলখাগড়া। চলতি ধারার সেই শিকল ভেঙে দেন তৃতীয় রাজবংশের প্রথম ফেরাউন জোসের। প্রাচীন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত নবম বংশের এই ফেরাউন খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৩০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬১১ অব্দ পর্যন্ত মিশরে রাজত্ব করেছেন।
তার আমলে সাক্কারাতে নির্মিত স্টেপ-পিরামিড দুনিয়ার প্রথম ভবন, যা সম্পূর্ণভাবে পাথরের তৈরি বলে দাবি করা হয়। এর পূর্বে প্রাচীন মিশরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পাথরের ব্যবহার থাকলেও তা শুধু দরজা বা মূল কবরকক্ষ তৈরিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। আজ থেকে প্রায় ৪,৭০০ বছর পূর্বে এই স্টেপ-পিরামিডের নকশা করেন প্রাচীন মিশরের স্থাপত্য প্রকৌশলী ইমহোতেপ।
স্টেপ-পিরামিড এবং এর কমপ্লেক্সের চমৎকার নির্মাণশৈলী খুবই আকৃষ্ট ও সন্তুষ্ট করে জোসেরকে। তিনি এই পিরামিড নিয়ে খুবই গর্বিত ছিলেন। সেজন্য এর স্থপতি ইমহোতেপকেও তিনি অনন্য সম্মান দেন। প্রাচীন পৃথিবীতে তৈরি হওয়া স্টেপ-পিরামিড আজও স্থাপত্যবিদদের কাছে এক রহস্যের নাম, যা অনুসরণ করে পরবর্তীকালে মিশরীয় স্থপতিরা বহু স্থাপত্য নির্মাণ করেন।
খুফু
প্রাচীন সাম্রাজ্যের চতুর্থ রাজবংশের দ্বিতীয় ফেরাউন ‘খুফু‘ রাজত্ব করেন খ্রিষ্টপূর্ব ২৫৮৯ অব্দ থেকে ২৫৬৬ অব্দ পর্যন্ত। খুফু তার শাসনমালে তেমন উল্লেখযোগ্য জিনিস মিশরকে উপহার দিয়ে যেতে না পারলেও তিনি ইতিহাস-বিখ্যাত হয়ে আছেন গিজার গ্রেট পিরামিড নির্মাণের জন্য। জনশ্রুতি অনুসারে, এই পিরামিডের অভ্যন্তরে কোথাও লুকিয়ে রয়েছে প্রায় ৪৫৫ ফুটের এক বিশাল গুপ্ত কক্ষ। এবং সেই কক্ষ মূল্যবান রত্নে ঠাসা। মিশরের সবগুলো পিরামিডের মধ্যে ফেরাউন খুফু বা গিজার গ্রেট পিরামিডটিই হলো সবচেয়ে উঁচু এবং বৃহৎ। তৎকালীন স্থাপত্যশিল্পীরা তাদের হাতের পরিপূর্ণ জাদু ব্যবহারে গ্রেট পিরামিড নির্মাণ করে দেখান, প্রাচীন যুগেও তারা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে কতটা অগ্রসর ছিলেন।
সপ্তম ক্লিওপেট্রা
পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে আজ অবধি যত লাবণ্যময়ী নারী শাসকের কথা উঠে এসেছে, তার মধ্যে মিশরের সৌন্দর্যের রানী ক্লিওপেট্রার নাম একদম উপরের দিকেই থাকবে। শুধু সৌন্দর্য নয়, বুদ্ধিমত্তারও দৌড়েও তিনি ছিলেন বেশ এগিয়ে।
সপ্তম ক্লিওপেট্রা বা ক্লিওপেট্রা ফিলোপাটোর ছিলেন প্রাচীন মিশরের সর্বশেষ ফেরাউন। তার জন্মের আগেও ছয়জন ক্লিওপেট্রা ছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে কেউই তার মতো ইতিহাস-বিখ্যাত হতে পারেনি। তার পিতা, দ্বাদশ টলেমি মৃত্যুবরণ করার আগে, তার সন্তান ত্রয়োদশ টলেমি এবং সপ্তম ক্লিওপেট্রার মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে দেন। যেহেতু আপন ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে প্রাচীন মিশরীয় রাজবংশের রীতি ছিল, তাই ক্লিওপেট্রা এবং ত্রয়োদশ টলেমি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একসাথে মিশর শাসন করতে থাকেন।
রানী ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্য এবং বুদ্ধিমত্তায় আকৃষ্ট হয়ে সম্রাট জুলিয়াস সিজার তার প্রেমে পড়েন। সেই সময়ে ক্লিওপেট্রা তার প্রেমিক জুলিয়াস সিজারের এক ছেলের জন্ম দেন, যদিও সিজার প্রকাশ্যে কখনোই তাকে ছেলে হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। খ্রিষ্টপূর্ব ৫১ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ অব্দ পর্যন্ত মিশর শাসন করার মাধ্যমে নিজেকে এক যোগ্য শাসক হিসেবে প্রমাণ করেন তিনি। অর্থনৈতিকভাবে মিশরকে বেশ এগিয়ে নেন ক্লিওপেট্রা। ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক, দু’দিকেই বহির্বিশ্বের সাথে তার সুসম্পর্ক বজায় ছিল। রপ্তানি ব্যবস্থারও দারুণ উন্নতি সাধন হয় সেসময়।
শেক্সপিয়ারের সাহিত্য থেকে শুরু করে নানা মুভি, সিরিজ, নাটকে এখনও তাকে নিয়ে কাহিনি রচনা করা হয়। কিন্তু রূপবতী এবং বুদ্ধিমতী এই রানী শেষ জীবনে বন্দিদশা গ্রহণ করে দাসীতে পরিণত হন। ধারণা করা হয়, সেসময় তিনি আত্মহত্যা করেন। সপ্তম ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর মাধ্যমেই চিরতরে অস্ত যায় মিশরীয় ফেরাউনদের রাজশাসনের সূর্য।