আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে বর্তমানে মনে করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। আর হবেই না কেন? শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, পারমাণবিক অস্ত্র আর বিশ্ব অর্থনীতির চাকা তো তার হাতেই। আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের হাতে এখনকার মতো ক্ষমতা সব সময়ই ছিল তা নয়, কিন্তু আমেরিকা পরাশক্তি হবার আগেও উত্তর আমেরিকায় বেশ দাপটের সাথেই শাসন করেছেন তারা। হোয়াইট হাউজে যাবার লড়াইটা চার বছর পর পর বেশ ভালোভাবেই জমে উঠে আমেরিকায়। তবে মজার ব্যাপার, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত হবার কথা থাকলেও নয়জন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন প্রেসিডেন্টের জন্য নির্বাচনে অংশ না নিয়েই! তৃতীয় বিশ্বের মতো দাঙ্গা বা বিদ্রোহ করে নয়, বরং আগের প্রেসিডেন্ট মারা যাওয়ায় কিংবা পদত্যাগ করায় ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে সাংবিধানিকভাবেই তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে। ফলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত না হয়েই প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তারা। আজকের আয়োজন সেই নয়জন আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের নিয়েই।
১. জন টেইলর
১৮৪০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত উইলিয়াম হ্যারিসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন জন টেইলর। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৩২ দিনের মাথায় হ্যারিসন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে প্রথমবারের মতো কোনো ভাইস প্রেসিডেন্ট উত্তীর্ণ হন প্রেসিডেন্ট হিসেবে। আমেরিকার ১০ম প্রেসিডেন্ট জন টেইলর চার বছর শাসন করলেও কখনোই জনপ্রিয়তা পাননি। উল্টো তার রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কিছু কাজ করায় বহিষ্কৃত হন তার দল হুইগ পার্টি থেকে। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম এরকম ঘটনা ঘটায় জনগণ থেকে শুরু করে কর্মকর্তারাও পুরোপুরি প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট হবার পরেও অনেকে তাকে ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট’ কিংবা ‘ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে ডাকত। ১৮৪৪ সালের নির্বাচনে তিনি দাঁড়াননি। ফলে আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম অনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের শাসনকাল শেষ হয় অনির্বাচিত থেকেই।
২. মিলার্ড ফিলমোর
জ্যাকারি টেইলরের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত ফিলমোর ছিলেন আমেরিকার ১৩তম প্রেসিডেন্ট। ১৮৫০ সালে জ্যাকারি টেইলর মারা গেলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিলমোর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণ করেন। টেইলরের পুরো মন্ত্রীসভা তার মৃত্যুর পর পদত্যাগ করলে ফিলমোরকে নতুন করে প্রশাসনিক দায়িত্ব বন্টন করতে হয়। সেসময় তিনি ডেমোক্রেটিক সিনেটর স্টিফেন ডগলাসের সাথে জোট বেঁধে কাজ শুরু করেন।
তার শাসনামলের শুরুতেই বিতর্কিত ‘কম্প্রোমাইজ অব ১৮৫০’ স্বাক্ষরিত হয়। এ বিল অনুসারে ক্যালিফোর্নিয়া দাসবিহীন রাজ্য হিসেবে যুক্ত হয়। অন্যদিকে উত্তরের রাজ্যগুলো ও দক্ষিণের রাজ্যগুলোর মধ্যে দাস প্রথা নিয়ে বিরোধ প্রকোট হয়ে উঠতে থাকে। ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়াতে নিষিদ্ধ হয় দাস কেনাবেচা করা। ফিলমোর ব্যক্তিগতভাবে দাস প্রথার বিরোধী হলেও দেশের ঐক্য ধরে রাখার জন্য খুব এর বিরুদ্ধে বেশি কিছু করেননি। পালিয়ে যাওয়া দাসদের আবারো দাস হিসেবে ধরে আনার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ব্যবহারও বাড়িয়ে দেন তিনি।
দাস প্রথাসহ বিভিন্ন কারণে তিনি তার দলের কাছেই জনপ্রিয়তা হারান, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোয়ন পর্যন্ত পাননি। ফলে জন টেইলরের মতোই নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ভাগ্য আর হয়ে উঠেনি ফিলমোরের।
৩. অ্যান্ড্রু জনসন
১৮৬৫ সালে আব্রাহাম লিংকনের মৃত্যুর পর সেসময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন ক্ষমতায় আসেন ১৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ শেষ হলেও তার রেশ না কাটতেই ক্ষমতায় বসতে হয় জনসনকে। ফলে শুরু থেকেই তার শাসনামল ছিল বেশ কঠিন। যুদ্ধের সময় দক্ষিণের রাজ্যগুলোকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় ক্ষমা করে রাজ্যগুলোকে তাদের সরকার নির্বাচনের সুযোগ করে দেন। আর এ সুযোগে গৃহযুদ্ধের সময়কার বিদ্রোহীদের অনেকেই পুনরায় ক্ষমতায় চলে আসে।
অতিরিক্ত উদারতার কারণে কংগ্রেসের সাথে প্রেসিডেন্ট জনসনের টানাপোড়েন বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ১১টি অভিযোগে জনসনকে অভিশংসনের প্রস্তাব পাশ করে ১৮৬৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ১১টি অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল যুদ্ধ সচিব এডুইন স্ট্যানটনকে বরখাস্ত করা। স্ট্যানটন শুরু থেকেই জনসনের ছাড় দেয়ার বিরুদ্ধে বলায় তাকে বরখাস্ত করা হয় বলে দাবী করা হয়। আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে কংগ্রেসে অভিসংশনের মুখোমুখি হন জনসন। তবে শেষ পর্যন্ত মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে বেঁচে যান তিনি। স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবার সুযোগ পাননি। ফলে অনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবেই থাকতে হয় তাকে।
৪. চেস্টার আর্থার
আমেরিকার ২১তম প্রেসিডেন্ট চেস্টার আর্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট হন আগের প্রেসিডেন্ট জেমস গারফিল্ড আততায়ীর হাতে মারা যাবার পর। ১৮৮১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করেন আর্থার। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত না হলেও তিনি তার নেতৃত্বগুণের প্রমাণ দিয়ে গেছেন তার কাজের মাধ্যমে। তার হাত দিয়ে গঠিত হয় দ্বিদলীয় সিভিল সার্ভিস কমিশন, যা আমেরিকার সিভিল সার্ভিসকে সুসংগঠিত করে। আমেরিকার নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপও তিনিই নিয়েছিলেন।
ব্যক্তিগতভাবে শৌখিন এ প্রেসিডেন্ট সুন্দর আসবাবপত্র সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ১৮৮২ সালে কিডনির সমস্যা ধরা পড়লেও জনসম্মুখে সে ব্যাপারে কিছু বলেননি। তবে স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকার কারণে পরের নির্বাচনে দলের মনোয়নের নির্বাচনেই সুবিধে করে উঠতে পারেননি। ফলে আগের তিনজনের মতোই প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনির্বাচিত থেকেই শেষ হয় তার শাসনামল।
৫. থিওডোর রুজভেল্ট
আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের শাসন শুরু হয়েছিল আগের চারজনের মতোই, ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তীর্ণ হবার মাধ্যমে। ১৯০১ সালে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককেনলি মারা গেলে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ২১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন রুজভেল্ট। মাত্র ৪২ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট হওয়া রুজভেল্ট সেসময়ে ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট। আমেরিকাকে বিশ্বের বুকে পরাশক্তি হিসেবে প্রমাণের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন রুজভেল্টই। তিনি দেশের ভেতরের বিভিন্ন সংস্কারে হাত দেন। একই সময়ে তিনি শক্তিশালী করতে থাকেন নৌবাহিনীকে, পাঠাতে থাকেন বিভিন্ন অভিযানে। পানামা খাল খনন করার ব্যাপারে আমেরিকার সক্রিয় ভূমিকা রাখায় তার অবদান ছিল অনেক।
রুজভেল্টের অন্যতম সাফল্য ছিল রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করায়। আর তার এ সাফল্যের কারণে ১৯০৬ সালে প্রথম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে নোবেল শান্তি পুরষ্কার পান। তবে তার সবচেয়ে বড় পুরষ্কার ছিল পরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া। তার আগে যে চারজন ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তারা পরবর্তীতে আর নির্বাচিত হবার সুযোগ পাননি। কিন্তু রুজভেল্ট ছিলেন তাদের থেকে আলাদা। দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রমাণ করেন নিজের সামর্থ্য।
৬. কেলভিন কুলিজ
ওয়ারেন হার্ডিংয়ের মৃত্যুর পর ১৯২৩ সালে আমেরিকার ৩০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কেলভিন কুলিজ। হার্ডিং যখন মারা যান সেসময় কুলিজ ছিলেন তার গ্রামের বাসায়, যেখানে বিদ্যুৎ বা টেলিফোন কোনোটাই ছিল না। মজার ব্যাপার হলো, কুলিজ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তার বাবার কাছে! সেবছর ডিসেম্বরে কংগ্রেসে দেয়া তার বক্তৃতা রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল। সেটি ছিল প্রথম কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্টের বক্তৃতার সরাসরি সম্প্রচার।
আগের প্রেসিডেন্ট হার্ডিংয়ের নীতিমালাই বাস্তবায়ন করতে থাকেন কুলিজ। দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপের দেশ থেকে অভিবাসীদের আমেরিকায় নিষিদ্ধ করার আইন তিনি চালু করেন সেসময়। এক বছরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়ই ছিলেন কুলিজ। ফলে ১৯২৪ সালের নির্বাচনে সহজেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমেরিকার ব্যবসার প্রসার ঘটান তিনি। আমেরিকান পণ্য রক্ষায় বাইরের পণ্যের উপর উচ্চ কর বসান তিনি। লিগ অব নেশনের সদস্য হতেও অস্বীকৃতি জানান কুলিজ। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংস্কার করে নিজেকে প্রমাণ করে গেছেন তিনি।
৭. হ্যারি এস. ট্রুম্যান
আমেরিকার ৩৩তম প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান যখন ক্ষমতায় বসেন তখন তার উপর ছিল পাহাড়সম চাপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে ১৯৪৫ সালের এপ্রিলে ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট হঠাৎ মারা গেলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা পান তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান। একদিকে বিশ্বযুদ্ধ শেষ করার চাপ, অন্যদিকে অনভিজ্ঞতা, সব মিলিয়ে চাপের মধ্যেই ছিলেন ট্রুম্যান। তার শাসনামলের ছয় মাসের মধ্যে তিনি জার্মানি ও জাপানের সাথে যুদ্ধ শেষের ঘোষণা দেন। তবে তার সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত। জাতিসংঘের শুরুর দিকের অনেক ব্যাপারেই নেতৃত্ব দিতে হয়েছে ট্রুম্যানকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে হঠাৎ করে আমেরিকা নিজেদের আবিষ্কার করে পরাশক্তি হিসেবে। শুরু হয় সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে টানাপোড়েন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু যুদ্ধে শেষে পাশার দান উল্টে যেতে থাকে, শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধের। আর এর জন্য অনেকেই ট্রুম্যানের পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করে থাকেন। ফলে ১৯৪৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ালেও সবাই তার পরাজয়ই দেখছিল। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে যান ট্রুম্যান। আর তার দু’বছর পরেই সম্মুখীন হতে হয় কোরীয় যুদ্ধের।
১৯৫০ সালে শুরু হওয়া কোরিয়া যুদ্ধকে তিনি সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে প্রচারক করেন। দ্রুত এর শেষ না করলে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে বলে দাবী করেন তিনি। তবে তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল জনপ্রিয় জেনারেল ম্যাকআর্থারকে সরিয়ে দেয়া। ফলে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকেন ট্রুম্যান।
৮. লিন্ডন জনসন
১৯৬৩ সালের নভেম্বরে আমেরিকার জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির হত্যাকান্ডের পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন লিন্ডন জনসন। ৩৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদ ছিল এক বছরের। কিন্তু সে সময়ের মধ্যেই তিনি নিজেকে জনপ্রিয় করে তোলেন এবং পরের নির্বাচনে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পপুলার ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।
কেনেডিকে যখন গুলি করা হয় তখন কেনেডির ঠিক দু’টি গাড়ি পেছনে ছিলেন জনসন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে তিনি কেনেডির কাজগুলোকেই মূলত এগিয়ে নেন। সেই সাথে যুক্ত করেন নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তিনি ‘দারিদ্রতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা করেন। একইসাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সমাজতন্ত্রের উত্থানের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করেন তিনি।
আমেরিকান সমাজ থেকে বর্ণবাদ দূর করার ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জনসন। শিক্ষা ও চাকরিতে গায়ের রঙের কারণে ভেদাভেদ নিষিদ্ধ করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে আফ্রিকান-আমেরিকানদের ভোটাধিকার দেয়ার মাধ্যমে যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত নেন। গরীব আমেরিকানদের চিকিৎসা সেবার ব্যাপারেও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন জনসন।
৯. জেরাল্ড ফোর্ড
এর আগে যে আটজন প্রেসিডেন্টের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে চারজন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হননি। বাকি চারজন প্রথমবার নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট হবার পাশাপাশি পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু জেরাল্ড ফোর্ড এই আটজনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা কেননা তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রেসিডেন্ট কোনো পদেই নির্বাচিত হননি কখনোই! তিনিই একমাত্র আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যিনি কোনো পর্যায়েই নির্বাচিত ছিল না।
১৯৭৩ সালের অক্টোবরে আয়কর ফাঁকি ও ঘুষের অভিযোগে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্পিরো এগনিও পদত্যাগ করলে ফোর্ডকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন নিক্সন। এরপর ওয়াটারগেট কেলেংকারির কারণে ১৯৭৪ সালের আগস্টে পদত্যাগ করেন নিক্সন। ফলে সাংবিধানিক নিয়মানুসারেই আমেরিকার ৩৮তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসেন ফোর্ড।
প্রেসিডেন্ট হবার কয়েক মাস পরেই তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিক্সনের সকল অপরাধ মাফ করে দেন। ফোর্ডের এ সিদ্ধান্ত পুরো দেশে বিতর্কের সৃষ্টি করে। কিন্তু ফোর্ডের এই মাফ করে দেয়ার কারণে ওয়াটারগেট কেলেংকারির সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়ে যান নিক্সন। ক্ষমতায় বসার পর থেকেই দু’বছরে তাকে লড়তে হয়েছে দেশের জ্বালানি সংকট, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক মন্দার বিরুদ্ধে।
কংগ্রেসকে রাজি করাতে না পেরে ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামে আমেরিকা পরাজয় বরণ করে নিতে বাধ্য হয়। প্রাচ্যের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য নিক্সনের পদানুসারে ফোর্ড প্রথম আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাপান সফর করেন। ১৯৭৬ সালের নির্বাচনে জিমি কার্টারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও হেরে যেতে হয় ফোর্ডকে। ফলে আমেরিকার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একমাত্র সম্পূর্ণ অনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়ে গেছেন ফোর্ড।
যেকোনো দেশেই ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তি মারা গেলে বা পদত্যাগ করলে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়, ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। সেই বিশৃঙ্খলা দূর করতেই প্রেসিডেন্টের কিছু হলে আমেরিকার সংবিধান সরাসরি ভাইস প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ফলে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ক্ষমতার পালাবদল হয়। আর সেকারণেই নয়জনের ভাগ্যে জুটেছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া। তাদের কেউ ছিলেন সফল, কেউ বা ব্যর্থ। কিন্তু ভাগ্যের দিক দিয়ে যে সবাই ভাগ্যবান ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ফিচার ইমেজ- Unilad