উজ্জ্বল রঙ করা, আপাতদৃষ্টিতে দেখতে বেশ সম্ভ্রান্ত একটি ছোট বাড়িতে বাস করে মেয়েটি। অস্ট্রিয়ান গণমাধ্যমের কাছে অবশ্য তা বিভীষিকাময় আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করা একটি জায়গা বৈ আর কিছু নয়। নিজেদের মধ্যে কথা বলতে গেলেও তারা গ্রামের নামটি ঠিকমতো উচ্চারণ না করে ‘ভিলেজ এক্স’ বলে চালিয়ে দেয়। দোতলা বাড়িটিকে রাখা হয়েছে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও সিসিটিভির আওতায় নজরদারির মধ্যে। বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করতে থাকা যেকোনো আগন্তুক মিনিটখানির মধ্যে পুলিশের কব্জায় বন্দী হবে- তাতে আর অবাক হওয়ার কিছু নেই। এত আগ্রহ, নিরাপত্তা আর রহস্যের জাল একজন মাত্র ব্যক্তিকে ঘিরে, নাম তার এলিজাবেথ ফ্রিটজেল। অবশ্য এই নামে এখন আর কেউ তাকে চেনে না।
নির্মমভাবে ঘটনার তদন্ত করতে আগ্রহী গণমাধ্যমসহ অনাকাঙ্ক্ষিত উৎসুক জনতার ভিড় ঠেকাতে নিরাপত্তা কর্মীদের পাশাপাশি গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ড্যাড’স আর্মি’। এলাকার বয়স্ক পুরুষরা সাংবাদিক আর অনাহূত ব্যক্তিদের গ্রাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য অহর্নিশ কাজ করে চলেছেন। “এমনিতেও গ্রামে লোক খুব কম, যে ক’জন আছেন তারাও প্রায় সবাই পুলিশের সাথে সংশ্লিষ্ট,” ‘ভিলেজ এক্সে’ কাজ করতে আসা এক আলোকচিত্রী নিজের দুঃখের কথা এভাবেই তুলে ধরলেন। “গ্রামে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই একদল লোক আমাকে ঘিরে ধরে বলল, ‘ওরা আপনার সাথে দেখা করবে না, কোনো কথাও বলবে না। তার চেয়ে বরং এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়াটাই আপনার জন্য ভালো হবে’,” বলেন তিনি। এই গ্রামের এক পারিবারিক দুর্গে জীবনের ২৪টি বসন্ত কাটিয়েছে এলিজাবেথ ফ্রিটজেল, ‘ভিলেজ এক্সের’ কোনো বাবা-মা ভুলেও তাদের বাচ্চাদের সামনে এই নামটি উচ্চারণ করে না। তাকে এখন আর কেউ ফ্রিটজেল নামে ডাকেও না।
নতুন পরিচয়ে যেন নতুন করে জন্ম দিয়েছে সে। বয়স তার এখন ৫২, কিন্তু তার শেষ ছবিটি তোলা হয়েছিল মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ‘হাউস অফ হরর’ বা ‘আতঙ্কের বাড়ি’ নামে পরিচিত ভিলেজ এক্সের বাড়িটি অস্ট্রিয়ার প্রধান শহর আমস্টেটেন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আতঙ্কের বাড়ির পাতালঘরে ২৪ বছর ধরে চিড়িয়াখানায় বন্দী প্রাণীদের চেয়েও মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয় এলিজাবেথ ফ্রিটজেল। দুই যুগ ধরে নিজের বাবার কাছেই প্রায় ৩,০০০ বার ধর্ষণের শিকার হওয়া এলিজাবেথের ভাষ্যমতে তার বাবারূপী জানোয়ারটি কেবলই একজন ‘ইনসেস্ট মনস্টার’। নিজের মেয়ের জীবন নরকে পরিণত করা সেই দানবটির নাম জোসেফ ফ্রিটজেল।
১৯৮৪ সালের ২৮ আগস্টের কথা। বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ করে যেন বেমালুম গায়েব হয়ে গেল ১৮ বছর বয়সী এলিজাবেথ ফ্রিটজেল। তার মা রোজমেরি ফ্রিটজেল তাড়াহুড়ো করে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি জারি করে পুলিশের কাছে সাধারণ ডায়েরি করেন। সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলে যায়, মেয়ের কোনো খবর পায় না বাবা-মা। মেয়ের বিপদের আশঙ্কায় কেঁদে-কেটেই দিন চলা যাচ্ছিল তাদের। এভাবে প্রায় মাসখানিক কেটে যাওয়ার পর হুট করে একটি চিঠি আসে এলিজাবেথের কাছ থেকে। চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী থাকতে থাকতে একঘেঁয়ে জীবনের উপর বিরক্ত হয়ে স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে সে- এমন একটি বক্তব্যই লেখা ছিল সেখানে। এই উড়োচিঠি পেয়ে রোজমেরি যেন আকাশ থেকে পড়লেন।
তদন্ত করতে বাড়িতে পুলিশ কর্মকর্তারা এলে বাবা জোসেফ তাদের জানান, মেয়ে কোথায় গেছে তা তারা জানেন না। তবে খুব সম্ভবত সে নতুন কোনো ধর্মগ্রহণ করেছে, আগেও কয়েকবার বাবার সাথে নাকি এ নিয়ে তার বচসা হয়েছিল। রোজমেরি ঘাবড়ে যাবেন বা দুশ্চিন্তা করবেন ভেবে জোসেফ তাকে কিছুই জানায়নি। খুব চমৎকার একটি গল্প ফেঁদে সে যাত্রা পুলিশ, স্ত্রীসহ অন্যান্য সন্তানদেরও পটিয়ে ফেলে জোসেফ। কিন্তু বাস্তব জীবনের গল্পটি একেবারেই ভিন্ন। জোসেফ ফ্রিটজেল খুব ভালো করেই জানত তার মেয়ে কোথায় আছে। ঠিক করে বলতে গেলে, যেখানে দাঁড়িয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা তার চিঠি নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তার ঠিক ২০ ফুট নিচে ছিল এলিজাবেথ ফ্রিটজেলের অবস্থান!
১৯৮৪ সালের ২৮ আগস্ট, জোসেফ তার বড় মেয়ে এলিজাবেথকে বাড়ির বেসমেন্টে একবার আসতে বলে। নতুন করে বানানো সেলারটির দরজা বদলানোর জন্য মেয়ের সাহায্য চায় সে। এলিজাবেথ দরজা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল আর তার বাবা পেরেক ঠুকে দরজাটা লাগিয়ে দিচ্ছিল। ঠিকমতো দরজা স্থাপন করে মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে অন্ধকার সে পাতাল সেলের ভেতরে পাঠিয়ে দেয় জোসেফ। ইথার ভেজানো তোয়ালে মুখে চেপে ধরে অজ্ঞান করে ফেলে এলিজাবেথকে। পরের ২৪ বছর পাতালঘরের নোংরা দেয়াল, অন্ধকার জীবন আর ধর্ষক বাবার নিপীড়ন ছাড়া ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি বেচারির। ধর্ম পরিবর্তনের নেশায় উন্মত্ত এলিজাবেথের সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলে পুলিশ আর স্ত্রীকে সামাল দেয় জোসেফ। এরপর অল্প কিছুদিন খোঁজাখুঁজি করে পুলিশও আস্তে আস্তে হাল ছেড়ে দেয়। অবাধ্য মেয়েকে খুঁজে বের করার তাগিদ বাবা-মায়ের না থাকলে পুলিশেরই বা কী দায় পড়েছে? কাজেই নিখোঁজ পাতা থেকে ধীরে ধীরে বিস্মরণের পাতায় নাম লেখাল এলিজাবেথ ফ্রিটজেল।
এটাই তো চেয়েছিল জোসেফ ফ্রিটজেল। সবাই এলিজাবেথকে ভুলে গেলেও সে যেন তার বাবাকে ভুলতে না পারে, পরবর্তী ২৪ বছরের প্রতিটি সেকেন্ড তা নিশ্চিত করেছে জোসেফ। মানসিক বিকারগ্রস্ত জোসেফ মেয়ের বয়স ১১ হলেই তার উপর যৌন নিপীড়ন শুরু করে। তাকে নিয়ে আলাদা করে সংসার পাতার চিন্তা থেকে পাতালঘর একেবারে ঢেলে সাজায় সে। বেডরুম, বাথরুম সবই ছিল সেখানে। নিজের মতো করে কাজ করতে পছন্দ করা জোসেফকে ঘাঁটাত না পরিবারের কেউ। সেই সুযোগে সে বেসমেন্টকে একেবারে জেলখানায় পরিণত করে। পাতালঘরের উপরে বসবাস করা বাড়ির লোকজন জানত প্রতিদিন সকাল ঠিক ৯টায় একবার বেসমেন্টে যেত সে। ব্যবসায়ী মানুষ, প্রতিদিন কয়টি করে মেশিন বিক্রি হচ্ছে, আর কতগুলো বিক্রি বাড়াতে পারলে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত হবে এসব কাজেই মগ্ন থাকত জোসেফ। অন্তত বাড়ির লোকজন তা-ই জানত। মাঝে মাঝে বেসমেন্টেই রাত কাটিয়ে দিত সে। স্ত্রী রোজমেরি তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হতো না। কঠোর পরিশ্রমী স্বামী তার, এটুকু সময় একান্তে কাটিয়ে ক্যারিয়ারে যদি কিছু অর্জন করতে পারে সে তাতে আর আপত্তি কীসের?
পাতালঘরের দুঃখী রাজকন্যা এলিজাবেথ ফ্রিটজেলের কাছে বাবা জোসেফ ছিল শুধুই এক দানব। বাড়ির লোকজন যদি বেসমেন্টে আসা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতো অথবা নিজেরা সেখানে আসতে চাইত, তাহলে বেসমেন্টে আসা কমিয়ে দিত জোসেফ। তবুও সপ্তাহে অন্তত তিনবার এলিজাবেথের কাছে আসাটা তার রুটিনে পরিণত হয়। দিনে কম করে হলেও একবার সে নিচের ঘরে আসেনি, এমনটা খুব কমই ঘটেছে। খাবার, পানি, জামা-কাপড়সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করতে কার্পণ্য করেনি সে। প্রথম দুই বছর কোনো কারণ ছাড়াই একাকী এলিজাবেথকে বন্দী করে ফেলে রাখে জোসেফ। আস্তে আস্তে তার পৈশাচিক রূপটি বেরিয়ে আসতে থাকলে শুরু হয় ধর্ষণ পর্ব। ১১ বছর বয়স থেকেই বাবার কাছে কিছুটা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া এলিজাবেথ নির্যাতনের চরম রূপ প্রত্যক্ষ করে প্রথমবারের মতো। পাতালঘরে রাত কাটানো শুরু করা জোসেফের কল্যাণে দু’বছরের মাথায় গর্ভবতী হয়ে পড়ে এলিজাবেথ।
প্রথমবারের গর্ভধারণের পর কোনো রকম মেডিকেল সাহায্য ভাগ্যে জোটেনি এলিজাবেথের। ২০ বছর বয়সী মেয়েটির গর্ভধারণের ১০ সপ্তাহের মাথায় গর্ভপাত ঘটে। একাকী জীবনে সে-ই শোক সে কীভাবে কাটিয়েছিল, সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। এর ঠিক দু’বছর পর আবারও গর্ভবতী হয় এলিজাবেথ। ১৯৮৮ সালের আগস্ট মাসে পাতালঘরের নোংরা পরিবেশে জন্ম নেয় একটি মেয়ে, কার্স্টিন। আরও দু’বছর পর পাতালঘরের চেহারা দেখে স্টেফান নামের একটি ছেলে। মায়ের সাথে এই বাচ্চা দুটিও আজীবন কয়েদখানায় থেকে যায়। সপ্তাহান্তে তাদের খাবার-পানির যোগান দিত জোসেফ। নিজের যতটুকু শিক্ষার জ্ঞান ছিল, বাচ্চাদের কাছে সেটুকু পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করত এলিজাবেথ। নিজের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি উপেক্ষা করে বাচ্চাদের সাধারণ পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করতো সে। তাদেরকে বোঝাত বিশেষ একটি কাজে তাদের বাবা পাতালঘরের বাইরে থাকে, বাবার কাজ শেষ হলেই তারা সবাই বাইরের পৃথিবীতে একসাথে ভালো থাকবে।
পরবর্তী বছরগুলোতে আরও পাঁচটি সন্তানের জন্ম দেয় এলিজাবেথ। আরও একটি বাচ্চা তার সাথে পাতালঘরে থাকার অনুমতি পায়, একটি শিশু জন্মের পরপরই মারা যায় আর বাকি তিনজনকে রোজমেরির কাছে নিয়ে যায় জোসেফ। হারানো মেয়ের শোক ভুলতে বাচ্চা তিনটিকে আপন করে নেয় বেচারি রোজমেরি। ঘুণাক্ষরেও যদি সে টের পেত বাচ্চাগুলো আসলে কীভাবে এখানে এসেছে, তাহলে হয়তো এলিজাবেথের কয়েদজীবন আরও একটু সংক্ষিপ্ত হতো। জোসেফ শুধু বাচ্চাগুলোকে উপরে নিয়ে আসলেও একটা কথা ছিল, রোজমেরির কাছে বাচ্চাদের সে এলিজাবেথেরই সন্তান হিসেবে পরিচয় দেয়। প্রায়শ চিঠি আসত এলিজাবেথের কাছ থেকে যেখানে লেখা থাকত বাচ্চাদের দায়িত্ব সে আর নিতে পারছে না, নানা-নানীর কাছে তারা ভালো থাকবে বলে তাদের এখানে পাঠানো হয়েছে।
আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, সমাজসেবক কোনো সংঘ কখনো এই শিশুদের উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। ফ্রিটজেলের বাড়িতে অসংখ্যবার তাদের পদধূলি পড়লেও ফ্রিটজেলদের নাতি-পুতি ভেবে তাদের নিয়ে মাথা ঘামায়নি কেউ। এভাবে আরও কতদিন কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছে ছিল জোসেফের, তা জানার কোনো উপায় নেই। ২৪ বছর তো পেরিয়েই গিয়েছিল, ২০০৮ সালে পাতালঘরে একটি শিশু মারাত্মক অসুস্থ হয়ে না পড়লে আরামসে হয়তো আরও ২৪ বছর ধরা না পড়েই কাটিয়ে দিতে পারতো সে। ১৯ বছর বয়সী মেয়ে কার্স্টিন প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে এলিজাবেথের অনেক অনুনয়-বিনয়ের পরে তাদের দুজনকে ডাক্তারের কাছে নিতে সম্মত হয় জোসেফ। অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সেলার থেকে কার্স্টিনকে বের করে সে। রোজমেরিকে জানায়, এলিজাবেথ একটি চিঠিসহ অসুস্থ মেয়েকে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেই সূত্রে মাকে গোপন করে দীর্ঘ দুই যুগ পর ২০০৮ সালের ২৬ এপ্রিল পৃথিবীর আলো দেখে এলিজাবেথ ও তার বড় মেয়ে।
এক সপ্তাহ পর কার্স্টিন একটু সুস্থ হলে তার অস্বাভাবিক আচরণ প্রশ্নের জন্ম দেয় পুলিশের মনে। বাইরের দুনিয়ায় প্রথমবারের মতো পা রাখা কার্স্টিনের পাশে তখন মা এলিজাবেথ ছাড়া আর কেউ ছিল না। তাদের পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। শুরুতে মুখ খুলতে রাজি হয় না এলিজাবেথ। কী বলবে সে? নিজের বাবার এই অপকর্মের কথা মুখে আনতেও ঘৃণাবোধ করছিল সে। সব কথা পুলিশকে জানালে জীবনে আর কখনো বাবার মুখ দেখতে হবে না- সেই শর্তে জীবনের দুর্বিষহ ২৪ বছরের কথা পুলিশকে জানায় এলিজাবেথ। সে রাতে পুলিশের কাস্টাডিতে থাকে এলিজাবেথ, কয়েদখানায় কাটিয়ে দেয়া জীবনের গল্প শুনিয়ে কিছুটা হালকা করে নিজেকে। নিজের আর সাত সন্তানের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবকিছু এলোমেলো করে দেয়া নরপিশাচ জোসেফের মুখোশ উন্মোচন করে সে। রাতের বেলা তার ঘরে এসে পর্নোগ্রাফিক সিনেমা দেখে তাকে ধর্ষণ করতো জোসেফ। সব শুনে সে রাতেই ৭৩ বছর বয়সী জোসেফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জোসেফকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পাতালঘর থেকে স্টেফান আর ফেলিক্স নামে জোসেফ-এলিজাবেথের আরও দুই সন্তানকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের কাছে সব কথা শুনে রোজমেরি ফ্রিটজেল তৎক্ষণাৎ বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তিনি কিংবা তার ঘরে বড় হতে থাকা অপর তিন শিশু ভাবতেও পারেনি তাদের নাকের নিচে দিয়ে কী কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে জোসেফ! গোপন পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা বেসমেন্টের দরজা খোলা তাদের পক্ষে সম্ভবও ছিল না, সে চেষ্টা তারা করেওনি। একের পর এক ভুয়া চিঠি পেয়ে সব ভুলে বসেছিল তারা। জোসেফের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে আদালত।
মানসিক এই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বেশ কিছুদিনের জন্য মানসিক কোমায় চলে গিয়েছিল এলিজাবেথ ফ্রিটজেল। কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পর নতুন পরিচয়ে নতুন করে জীবন শুরু করে সে। ‘ভিলেজ এক্সের’ গোপন কোনো একটি ঘরে থাকছে সে ও তার সন্তানেরা। সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার দ্বারা তাদের তত্ত্বাবধায়ন করে হচ্ছে। স্থানীয় বা বাইরের কেউ যেন তাদের সাক্ষাৎকার নিতে এসে বিরক্ত না করে, সে ব্যাপারে সদা সচেষ্ট ভূমিকা পালন করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ৫২ বছর বয়সী এলিজাবেথের সাম্প্রতিক কোনো ছবি না থাকায় ঘর থেকে বের হলেও কেউ তাকে চিনতে পারছে না। ২৪ বছরের বন্দীদশা কাটিয়ে এবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে এলিজাবেথ, তার সন্তানেরাও বড় হবে আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো, এমনটাই প্রত্যাশা পুলিশের।
ফিচার ইমেজ- tnp.com