১৯৬৮ সালের ২১ জানুয়ারি; উত্তর কোরিয়ার ওনসান শহরের পূর্ব উপকূলে এক উত্তর কোরীয় সাবমেরিন চেজার পুয়েবলো নামে অস্ত্রসজ্জিত আমেরিকান নেভির এক ছোট স্পাই শিপকে শনাক্ত করে। আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা সুসজ্জিত জাহাজটি থেকে উত্তর কোরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা বাহিনীর অবস্থান ও রাডারের ফ্রিকোয়েন্সির ওপর নজরদারি করা হচ্ছিল।
কোরীয় যুদ্ধের মতো উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে যদি আর কোনো যুদ্ধে জড়াতে হয়, তাহলে এই তথ্যগুলোর মাধ্যমে আমেরিকানরা উত্তর কোরিয়ার রাডারগুলোকে ফাঁকি দিতে কিংবা অকেজো করে দিতে সক্ষম হবে। ওয়াশিংটনে থাকা কোড ব্রেকারদের জন্য জাহাজটি থেকে সাংকেতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও নজরদারি করা হচ্ছিল। কোডেড না থাকা যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলোও শোনার চেষ্টা করা হচ্ছিল, যেন উত্তর কোরিয়ার সেনাদের অস্ত্রশস্ত্র ও মনোবল সম্পর্কে ধারণা করা যায়। জাহাজের বোর্ডে থাকা সমুদ্রবিজ্ঞানীরা উত্তর কোরিয়ার সীমানায় থাকা জলরাশি নিয়ে পরীক্ষা করছিলেন।
কিন্তু তারা জানতেন না, ওই সময়ই উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর ৩১ জন সদস্য দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাসদস্যদের ছদ্মবেশে কোরিয়া সীমান্তের বেসামরিকীকৃত অঞ্চল (ডিমিলিটারাইজড জোন) দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করে, দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং হিকে হত্যা করার জন্য। রাজধানী সিউলে প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছানোর আগেই দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়। তাদের বেশিরভাগকেই হত্যা করা হয়। কেবল অল্প কয়েকজনই পালাতে সক্ষম হয়। এটা নিয়ে তখন কোরিয়া সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। কিন্তু ওই জাহাজে থাকা ক্যাপ্টেন লয়েড এম বুচার ওই ব্যর্থ অভিযান সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকায় তিনি তার মিশন চলমান রাখেন।
বুচার নিশ্চিতভাবেই ধরে নিয়েছিলেন যে তার জাহাজ আন্তর্জাতিক জলসীমাতেই আছে, এবং এর কারণে তাদের কোনো বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ২৩ জানুয়ারি উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধজাহাজগুলো থেকে পুয়েবলোর ওপর হামলা করা হয়। অস্ত্রের দিক দিয়ে উত্তর কোরিয়ার চেয়ে অনেক সক্ষমতা থাকলেও বুচার এখানে সংঘর্ষ এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার ক্রুরা সংবেদনশীল যন্ত্রপাতি আর তথ্যসমূহ ধ্বংস করে দিতে লাগল। তার রেডিওম্যান আমেরিকার বিমান বাহিনীকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন, এবং তাদেরকে তখন উদ্ধার করার জন্য বাহিনী আসার কথা ছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোনো উদ্ধারকারী বাহিনীকেই পাঠানো হয়নি। প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন এই সংকটের প্রথম দিন টাইম ম্যাগাজিনের এক সাংবাদিককে এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন,
আমরা যদি তথ্য সংগ্রহ করা প্রত্যেককে রক্ষার জন্য যুদ্ধজাহাজ পাঠানো শুরু করি, তাহলে আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেটে প্রতি বছর ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ রাখতে হবে। এরকম হয়রানির শিকার হওয়াটা (শত্রুপক্ষের কাছে ধরা পড়া) কাজেরই একটা অংশ।
ক্যাপ্টেন বুচারসহ তার অধীনস্থ আরও তিনজন আহত হন, তাদের একজনের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। বুচার তখন তার জাহাজসহ আত্মসমর্পণ করেন। এটা ছিল ১৮০৭ সালের ইউএসএস চিজপিক এর পর প্রথম কোনো আমেরিকান নেভি জাহাজ, যা শান্তিকালীন আত্মসমর্পণ করে। উত্তর কোরীয়রা জাহাজকে তখন বন্দরে নিয়ে যায়, এবং আমেরিকানদের উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় এসে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য অভিযুক্ত করে। ক্রু সদস্যদের চোখ বেঁধে জাহাজ থেকে নামিয়ে অপেক্ষমান একটি বাসে তোলা হয়। বাস দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে থাকা উত্তর কোরিয়ার বেসামরিক নাগরিকরা আমেরিকান বন্দীদের চিৎকার করে দুয়োধ্বনি দিতে থাকে।
কোরিয়া সীমান্তে পানমুনজম গ্রামে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার সময় প্রথমে সিউলে প্রেসিডেন্ট হত্যা চেষ্টা নিয়ে প্রতিবাদ করে, এরপর পুয়েবলোর বাজেয়াপ্ত প্রসঙ্গ তোলে। অবিলম্বে যুদ্ধজাহাজ ও ক্রুদের ফেরত দেওয়ার দাবি জানানো হয়। তখন উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি মেজর জেনারেল পাক চুং কুক যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি রিয়ার অ্যাডমিরাল জন ভিক্টর স্মিথকে জবাব দেন,
আমাদের একটা প্রবাদ আছে, “পাগলা কুকুর চাঁদ উঠতে দেখলে সেদিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করে”। আপনাকে নিয়ে করুণা হয়, এত বয়স হওয়া আর অর্জন থাকার পরও গুণ্ডার মতো আচরণ করছেন যুদ্ধবাজ জনসনের উদ্দেশ্য পূরণ করতে, যেন মাস শেষে আপনার পেট চালাতে পারেন। আপনি হয়তো পেট চালানোর জন্য কেনেডির হয়েও কাজ করেছেন, যে ইতোমধ্যে নরকে গিয়েছে। আপনি যদি কেনেডির পরিণতি ভোগ করতে না চান, তাহলে এরকম মরিয়াভাবে আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখানো পরিহার করুন।
স্মিথ পরবর্তীতে এক শুনানিতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলেছিলেন, উত্তর কোরীয়দের আচরণ “জানোয়ারের চেয়ে কেবল এক ধাপ উপরে”। পাকের সাথে সাক্ষাতের সময় তিনি অবশ্য নিজেকে সংযত রেখে প্রতিপক্ষের মুখের ওপর সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়েই সীমাবদ্ধ থাকেন। স্মিথ মনে করতেন, সিউলে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা আর এর পরপরই পুয়েবলো জব্দ করা ইঙ্গিত দেয় উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম ইল সাং আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে আগ্রহী ছিলেন।
জাহাজ জব্দ করা প্রতিরোধ করতে না পারা, ৮২ জন ক্রু সদস্যকে মুক্ত করে আনতে কোনো পরিকল্পনা বের করতে না পারা, এবং একইসাথে পিয়ংইয়ং এর ধৃষ্টতার জন্য শাস্তি দিতে না পারার জন্য উচ্চপদস্থ আমেরিকান কর্মকর্তারা হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদরা তখন যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। ১৯৬৮ সালে কোরিয়ায় নিরাপত্তা প্রসঙ্গে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করা আমেরিকার নীতি নির্ধারণে যথেষ্ট প্রাধান্য পেয়ে আসছিল। উত্তর কোরিয়ার আক্রমণের মুখে থাকা পুয়েবলোকে রক্ষা করার জন্য আমেরিকান কোনো বিমান না যাওয়ার একটা কারণ বলা হয়েছিল, দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা সাতটি এফ-৪ বিমানেই পারমাণবিক বোমা থাকা। কিন্তু কয়েকজন আমেরিকান কংগ্রেস সদস্য পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন। এমনকি আটক পড়া পুয়েবলোর ক্রু সদস্যরাও পরবর্তীতে জানিয়েছিলেন, তারা আশা করছিলেন আমেরিকা উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। দক্ষিণ কোরিয়ার পত্রিকাগুলো, এমনকি তাদের কর্মকর্তারাও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন করছিলেন তাদের প্রেসিডেন্ট হত্যা চেষ্টার প্রতিশোধ নিতে সাহায্য করার জন্য, এবং এর মাধ্যমে হয়তো তাদের দুই কোরিয়া একত্রীকরণের লক্ষ্যও পূরণ হবে।
প্রেসিডেন্ট জনসন সামরিক বাহিনী প্রস্তুত রাখলেও শেষ পর্যন্ত সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর রাস্তা থেকে সরে আসেন। উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগে তো আগ্রহী ছিলেনই না, এমনকি প্রচলিত বিকল্পগুলোও এড়িয়ে যেতে যাচ্ছিলেন। সামরিক প্রতিক্রিয়ায় পুয়েবলোর ক্রুদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা ছিল কম; বরং এতে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা চীনের হস্তক্ষেপ চলে আসতে পারে, যা আরেক বিশ্বযুদ্ধে গড়াতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া তখন তাদের নিজস্ব বিমানবাহিনী দিয়ে আক্রমণ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার তুলনায় দুর্বল ছিল। তখন তারাও আক্রমণাত্মক অবস্থান থেকে সরে আসে আমেরিকা থেকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়ার পর, যা তারা উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ আক্রমণ থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরিতে ব্যয় করবে।
এদিকে গ্রেপ্তারের ৩৬ ঘণ্টা পর অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ক্যাপ্টেন বুচার উত্তর কোরীয়দের দ্বারা ইংরেজিতে লেখা এক ‘স্বীকারোক্তি’তে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু বন্দীকারীরা এতেও সন্তুষ্ট ছিল না। তারা পরবর্তী ১১ মাস ধরে আমেরিকানদের কাছ থেকে জবরদস্তিমূলক বিভিন্ন স্বীকারোক্তি ও বক্তব্য আদায় করে নিচ্ছিল। আমেরিকানরা কখনো কখনো স্বীকারোক্তি দিত, তবে এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন কৌতুকের আশ্রয় নিত, যা উত্তর কোরীয়রা ধরতে পারত না; কিন্তু যেন দেশবাসীরা বুঝতে পারে, তারা স্বীকারোক্তিগুলো নিজে থেকে দিচ্ছেন না, বরং উত্তর কোরীয়রা জোর করে আদায় করছে। যেমন- উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে তাদের কাছ থেকে গুপ্তচরবৃত্তিতে অন্যান্য সঙ্গী ও পরামর্শদাতাদের নাম জানতে চাওয়া হতো। তারা বাজ সয়্যারের মতো কমিক চরিত্র, কিংবা টেলিভিশন শোয়ের চরিত্র ম্যাক্সওয়েল স্মার্টের নাম দিয়ে দিতেন।
বন্দী আমেরিকানরা একবার হাতের মধ্যমা প্রদর্শন করে বলেছিলেন, এটা হাওয়াইয়ান সংস্কৃতির সৌভাগ্য কামনা করার প্রতীক। কিন্তু পরবর্তীতে উত্তর কোরীয়রা এর প্রকৃত অর্থ টের পেয়ে যায়। এরপরের সপ্তাহে আমেরিকানদের ওপর তীব্র নির্যাতন চালানো হয়।
শেষপর্যন্ত পুয়েবলোর ক্রুরা ১৯৬৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি পান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তর কোরিয়ার এক অদ্ভুত সমঝোতার সাপেক্ষে। পানমুনজম গ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি মেজর জেনারেল গিলবার্ট এইচ উডওয়ার্ড এক নথিতে স্বাক্ষর করেন, যেখানে লেখা ছিল, তারা উত্তর কোরিয়ার সমুদ্রসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন; পুয়েবলোর কার্যক্রমের জন্য তারা ক্ষমা চাইছেন, এবং পিয়ংইয়ংকে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো জাহাজ এরকম অনুপ্রবেশ করবে না। কিন্তু স্বাক্ষর করার আগে আমেরিকান জেনারেল ঘোষণা দেন,
পুয়েবলো প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, জাহাজটি কোনোপ্রকার অবৈধ কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল না, এবং উত্তর কোরীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী তাদের সমুদ্রসীমায় জাহাজটির অনুপ্রবেশের কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আমরা এমন কোনো কার্যক্রমের জন্য ক্ষমা চাইতে পারি না, যা আদতে ঘটেইনি। আমি যে নথিতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি, তা উত্তর কোরীয়দের বানানো, এবং এখানে যা লেখা আছে, তার সাথে প্রকৃত ঘটনার মাঝে ভিন্নতা আছে। আমার স্বাক্ষর সত্য বদলাতে পারে না, এবং পারবেও না। আমি নথিতে স্বাক্ষর করব কেবলমাত্র ক্রুদের মুক্ত করে আনার জন্যই।
অন্যভাবে বলা যায়, জেনারেল উডওয়ার্ড বিশ্ববাসীকে জানাচ্ছিলেন, তিনি যে দলিলে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন, তার তথ্যগুলো আগাগোড়াই মিথ্যা। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার এগুলো নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। তারা কেবল চাইছিল নথির স্বাক্ষর। তারা কাগজের স্বীকারোক্তি পেয়েই খুশি ছিল। তারা মৌখিক প্রত্যাখ্যানকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। কারণ আমেরিকানদের এসব মৌখিক বক্তব্য উত্তর কোরিয়ার সাধারণ নাগরিকদের জানার সুযোগ ছিল না। আমেরিকানদের এই স্বাক্ষর উত্তর কোরিয়ার প্রোপাগান্ডায় ব্যবহার করতে সাহায্য করেছে।
পিয়ংইয়ং কী উদ্দেশ্যে পুয়েবলো জব্দ করেছিল, তা এক রহস্য। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রকাশ করা ওই সময়ের গোপন নথি থেকেও উত্তর কোরিয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তারা কি দক্ষিণ কোরিয়ায় অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিশোধ নিয়ে ভীত ছিল, নাকি আমেরিকার শক্তি পরীক্ষা করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছিল?
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসবিদরা কেবল ধারণা দেন, কিছু গোয়েন্দা অনুমান থেকে জানা যায়, পিয়ংইয়ং ওই সময়ের ভিয়েতনাম যুদ্ধকে দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানানোর একটা সুযোগ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র তখন এমনিতেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে সামরিক বাহিনী বেশি ব্যবহার করে ফেলছিল, তাই তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ কম ছিল। উত্তর কোরিয়া হয়তো চাইছিল ওয়াশিংটন আর সিউলের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরাতে; অথবা এমন কিছু ধারাবাহিক কার্যক্রম করতে, যার ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার পতন হয়।
সম্ভবত উত্তর কোরীয়দের জিজ্ঞেস করাই ভালো হবে, তারা এই ঘটনা থেকে কী অর্জন করতে পেরেছে। তারা এতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হত্যাচেষ্টার ঘটনা থেকে মনোযোগ সরিয়ে আনতে পেরেছিল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে স্বীকৃতি না দেওয়া সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের সাথে পানমুনজামে এসে আলোচনা করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার উপস্থিতি ছাড়াই। উত্তর কোরীয়দের কাছে এটাই হয়তো নৈতিক বিজয় ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে বুচার ও তার ক্রুরা বীরের মর্যাদাই পেয়েছেন। তবে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাই বুচারের ওপর নাখোশ ছিলেন তিনি উত্তর কোরীয়দের ওপর পাল্টা কোনো গুলিবর্ষণ না করায়। তারা মনে করেন, একটা পাল্টা জবাব দিলেই হয়তো উত্তর কোরীয়রা ঠাণ্ডা হয়ে যেত।
বর্তমানে বিদেশি পর্যটকরা যখন চীন হয়ে ট্যুর গ্রুপের সাথে উত্তর কোরিয়ায় ভ্রমণে যান, তখন তাদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরানোর সময় ইউএসএস পুয়েবলোও দেখানো হয়। এটা আজও উত্তর কোরিয়ায় রাখা আছে পর্যটকদের প্রদর্শনের জন্য। তারা দাবি করে, এই জাহাজ সাম্রাজ্যবাদী শত্রু বা ইম্পেরিয়াল এনিমিদের পরাজিত করার একটা ‘ট্রফি’। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পুয়েবলোর ঘটনাকে তাদের অন্যতম গোয়েন্দা ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হয়।