জায়নিজমের উত্থান, বেলফোর ঘোষণা, হলোকাস্ট, ইসরায়েল রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন এবং অনেকগুলো আরব-ইসরায়েলী যুদ্ধ ইত্যাদি ঘটনার প্রেক্ষিতে বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ইহুদি এবং ইহুদি-বিদ্বেষ। ইহুদি প্রসঙ্গে তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রের একটি হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং দেশটির নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের অবস্থান কী ছিল তাও স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার বিষয়।
ইহুদি প্রশ্নে স্ট্যালিনের অবস্থান প্রকৃতপক্ষে কী ছিল তা স্পষ্ট নয়। ইহুদি প্রসঙ্গে স্ট্যালিনের অবস্থান নিয়ে ইতিহাসবিদরা বিভক্ত। অনেক ইতিহাসবিদ স্ট্যালিনকে ইহুদি-বিদ্বেষী বলে বিবেচনা করেন, আবার একটি অংশ তাকে ইহুদি-বিদ্বেষী হিসেবে মানতে চান না। স্ট্যালিনের অনেক কর্মকাণ্ড যেমন ইহুদিদের বিরুদ্ধে গিয়েছে, আবার অনেক কাজে ইহুদিরা অত্যন্ত উপকৃত হয়েছে। ঠিক কী কারণে অনেকে স্ট্যালিন ইহুদিদের প্রতি সদয় ছিলেন বলে মনে করেন, আবার কেনই বা অনেকে তাকে ইহুদি-বিদ্বেষী হিসেবে বিবেচনা করেন?
ইসরায়েল গঠনে স্ট্যালিনের অবদান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের সব প্রেক্ষাপটই হাজির হয়ে যায়। ইউরোপের সরকারগুলোর মধ্যে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থন তখন তুঙ্গে। ইহুদিদের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল দিতে স্ট্যালিনের একটি নিজস্ব পরিকল্পনাও ছিল। স্ট্যালিন ইহুদি বসতি স্থাপনের জন্য সাইবেরিয়ায় ‘জুইশ অটোনমাস অবলাস্ট’ নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বের অধিকাংশ ইহুদি ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। এমতাবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত প্রভাব বৃদ্ধিতে একটি বিরাট সুযোগ দেখতে পান স্ট্যালিন। তিনি চেয়েছিলেন ইহুদিদের সেই রাষ্ট্র হবে সোভিয়েত ইউনিয়নের আজ্ঞাবহ। সেই সঙ্গে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রভাব কমাতে চেয়েছিলেন।
১৯৪৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে ইহুদি রাষ্ট্র গঠন করতে জাতিসংঘের পরিকল্পনাকে সমর্থন করবে বলে ঘোষণা দেয়। শুধু কূটনৈতিক সমর্থন দিয়েই থেমে থাকেনি, সোভিয়েত ইউনিয়ন জায়নিস্ট মিলিশিয়া গ্রুপগুলোকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়েও সহায়তাও করে। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণার তিনদিন পর (১৭ মে) বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। প্রথম আরব-ইসরায়েলী যুদ্ধেও সোভিয়েত ইউনিয়ন ইসরায়েলকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা দেয়। ইসরায়েল গঠনে তার এই অবদানের জন্য অনেকে মনে করেন স্ট্যালিন ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
কিন্তু ইসরায়েলের সাথে স্ট্যালিনের সম্পর্ক একসময় বৈরী হতে শুরু করে। স্ট্যালিন ইহুদিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সমর্থন করলেও, সোভিয়েত ইহুদিদের সেই রাষ্ট্রে স্থানান্তর করতে নারাজ ছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলের প্রশাসকরা সোভিয়েত ইহুদিদের সেখানে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সোভিয়েত ইহুদিদের স্থানান্তর নিয়ে একপর্যায়ে ইসরায়েলের সাথে স্ট্যালিনের উত্তেজনা তৈরি হয়। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ফলে স্ট্যালিন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন আরবদের সহযোগিতা দিতে শুরু করে। অনেক ইতিহাসবিদের মতে ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনার ফলেই স্ট্যালিন ‘জুইশ এন্টি-ফ্যাসিস্ট কমিটি’ ভেঙে দিয়ে এর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ইহুদি ডাক্তারদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালান।
ইহুদি বংশোদ্ভূত প্রতিদ্বন্দ্বী
লেনিনের মৃত্যুর পর কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে যারা স্ট্যালিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হন, তাদের অধিকাংশই ছিল ইহুদি বংশোদ্ভূত। লিয়ন ট্রটস্কি, গ্রিগরি জিনোভিয়েভ, লেভ কামেনেভসহ আরো অনেক স্ট্যালিন বিরোধী নেতৃবৃন্দ ইহুদি বংশোদ্ভূত ছিলেন। স্ট্যালিন এদেরকে প্রতিবিপ্লবী, দলে ভাঙন সৃষ্টিকারী, গুপ্তচর, দেশদ্রোহী ইত্যাদি নামে অভিহিত করে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন।
পরবর্তীতে ১৯৩৬-৩৮ সালের মধ্যে পরিচালিত গ্রেট পার্জের সময় মস্কো ট্রায়ালসের মাধ্যমে যেসব নেতাদের বিচার করা হয় সেখানে অভিযুক্তদের অনেকে ইহুদি বংশোদ্ভূত ছিলেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, প্রচুর পরিমাণে ইহুদির কাছ থেকে এমন বিরোধিতার মুখোমুখি হয়ে স্ট্যালিনের মধ্যে ইহুদিদের প্রতি একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয় এবং তিনি ইহুদিদের প্রতিবিপ্লবী জাতি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেন। অনেকের মতে ইহুদিদের বিষয়ে স্ট্যালিন একবার তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের কাছে গোপনে বলেছিলেন, “প্রত্যেকটা ইহুদি একেকজন সম্ভাব্য গুপ্তচর।” অনেক ইতিহাসবিদের মতে স্ট্যালিন জায়নিজমকে কমিউনিজমের বিরোধিতা হিসেবে বিবেচনা করতেন।
তাছাড়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে স্ট্যালিন যখন জার্মানির সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন তিনি নাৎসিদের পথ অনুসরণ করেন। হিটলারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ১৯৩৯ সালের ৩ মে স্ট্যালিন তার ইহুদি বংশোদ্ভূত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম লিটভিনভকে সরিয়ে দেন।
নাইট অফ মার্ডার্ড পোয়েটস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তেজনা বাড়তে থাকে এবং স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয় তখন ইহুদিদের প্রতি স্ট্যালিনের সন্দেহ বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্ট্যালিন বিশ্বাস করতেন ইউরোপীয় ইহুদিদের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আকৃষ্ট ও অনুগত, তাই তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের ইহুদিদের সম্ভাব্য গুপ্তচরবৃত্তির জন্য সন্দেহ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে স্ট্যালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইহুদি বংশোদ্ভূত বুদ্ধিজীবীদের উপর অভিযান শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্ট্যালিন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য কমিউনিস্ট বিরোধী, দেশদ্রোহী ও গুপ্তচরদের ধরতে ব্যাপক আকারে শুদ্ধি অভিযান চালান। এই শুদ্ধি অভিযানে ধরা পড়া উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বড় একটা অংশ ছিল ইহুদি।
নাৎসিরা যখন সোভিয়েত ভূখণ্ড আক্রমণ করে তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইহুদি বুদ্ধিজীবীরা ‘জুইশ এন্টি-ফেসিস্ট কমিটি’ (JAC) গঠন করে। লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ, সেনা কর্মকর্তা, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদসহ নানা পেশার ইহুদিরা এই সংগঠনটির সাথে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জার্মানির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধের পক্ষে এই সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালায়। সংগঠনের অনেক নেতা ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করে সেখান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য অর্থনৈতিক সাহায্য আনেন।
এই সংগঠনটি ইউরোপে ইহুদি সংস্কৃতি ও প্রভাব টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ড শুরু করে। বিশ্বযুদ্ধের পর এই সংগঠনের কার্যক্রমে বেশ পরিবর্তন আসে, সেই সঙ্গে পরিধিও বৃদ্ধি পায়। একপর্যায়ে জেএসি এমন কিছু বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে থাকে যেখানে তাদের হস্তক্ষেপ করার কথা নয়। এছাড়া সংগঠনটির জায়নিজমকে ব্যাপক সমর্থন, ইজরায়েলের প্রতি আকর্ষণ, ইদ্দিশ ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকার ফলে স্ট্যালিনের মধ্যে সন্দেহ আরো বৃদ্ধি পায় এবং তিনি এই সংগঠনের সাথে জড়িতদের উপর নজরদারি শুরু করেন।
১৯৪৮ সালে বেলারুশের মিনস্কে সংগঠনটির চেয়ারম্যান সলোমন মিখোয়েলস একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি ছিলেন একজন অভিনেতা এবং মস্কো স্টেইট ইহুদি থিয়েটারের পরিচালক। অনেকের মতে, এটি ছিল স্বয়ং স্ট্যালিনের নির্দেশে একটি হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডটি ছিল জেএসির বিরুদ্ধে স্ট্যালিনের প্রথম আঘাত।
১৯৪৮ ও ১৯৪৯ সালের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর শুরু হয় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও বিচারকার্য। এই বিচারকার্যে ১৫ জন আসামিকে দেশদ্রোহিতা, গুপ্তচরবৃত্তি এবং আরো বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার হওয়ার আগে এবং স্বীকারোক্তি আদায় করার আগ পর্যন্ত তাদেরকে তিন বছর মারধর, অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়। ১৫ জন আসামির মধ্যে ১৩ জনকে ১৯৫২ সালের ১২ আগস্ট মস্কোর লুবায়াঙ্কা কারাগারে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়।
আসামিদের মধ্যে দুইজনকে হত্যার পরিবর্তে জেলে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে একজন ছিলেন সলোমন বার্গম্যান। বার্গম্যান ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক দপ্তরের ডেপুটি কমিশনার। বিচার চলাকালীন অত্যাচারের ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং একপর্যায়ে কোমায় চলে যান। কয়েকমাস পর তিনি মারা যান। আরেকজন ছিলেন লিনা স্টার্ন। তিনি ছিলেন একজন বায়োকেমিস্ট। জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী প্রফেসর এবং সোভিয়েত বিজ্ঞান একাডেমির প্রথম নারী সদস্য। ধারণা করা হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞান গবেষণায় তার অবদানের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে কয়েক বছরের জেল দেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর তিনি জেল থেকে মুক্ত হন।
ইহুদি বুদ্ধিজীবীদের উপর স্ট্যালিনের এই অভিযানের ফলশ্রুতিতে অনেকে তাকে ইহুদি বিদ্বেষী হিসেবে বিবেচনা করেন।
ডক্টরস প্লট
১৯৪৫ সালে আলেকজান্ডার শেরবাকভ এবং ১৯৪৮ সালে আন্দ্রে ঝদানভ, স্ট্যালিনের দুইজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী নিহত হন। পরবর্তীতে তাদেরকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয় ক্রেমলিনের কয়েকজন ডাক্তারের উপর। ১৯৫৩ সালের শুরুতে মস্কোর ৯ জন বিখ্যাত ডাক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আনা হয়, তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকে সোভিয়েত বিরোধী চক্রান্তে সহযোগিতা করছে এবং মার্কিন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা বাহিনীর হয়ে কাজ করছে। অভিযুক্ত ৯ জন ডাক্তারের মধ্যে ৬ জনই ছিলেন ইহুদি। এ সময় স্ট্যালিনের নির্দেশে সোভিয়েত প্রচার মাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে ইহুদি-বিদ্বেষ ছড়ানো হয়।
অভিযুক্তরা জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সব দোষ স্বীকার করে নেয়। তবে এই স্বীকারোক্তি ব্যাপক অত্যাচার, মারধর ও হুমকির মাধ্যমে আদায় করা হয়েছিল। ব্যাপক নির্যাতনের প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদ কালেই দুইজন অভিযুক্ত নিহত হন। অভিযুক্তদের বিচারকার্য শেষ হওয়ার আগেই সোভিয়েত নেতা স্ট্যালিন মারা যান, (৫ মার্চ ১৯৫৩) ফলে বিচারকার্য স্থগিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ডাক্তারদের উপর থেকে অভিযোগ তুলে নেওয়া হয় এবং একে একটি মিথ্যা ও প্রমাণহীন মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে স্ট্যালিনের এই অভিযানটি ইতিহাসে ডক্টরস প্লট নামে পরিচিত। অভিযুক্ত ডাক্তারদের অধিকাংশই ইহুদি বংশোদ্ভূত হওয়ায় একে একটি ইহুদি-বিদ্বেষী কাজ বলে মনে করেন অনেকে।
পরিশেষ
স্ট্যালিনকে একজন সম্পূর্ণভাবে ইহুদি-বিদ্বেষী বলা সমীচীন হবে না। তার যেসব কর্মকাণ্ড ইহুদিদের বিরুদ্ধে গিয়েছে তার অধিকাংশই ছিল রাজনৈতিক। রাজনীতিতে স্ট্যালিন ধর্ম বা জাতি দেখে কাউকে বিবেচনা করেননি। নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে, সে যে জাতি বা ধর্মেরই হোক না কেন তাকে স্ট্যালিন নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। স্ট্যালিনের অত্যাচারের শিকার শুধু ইহুদিরাই নয় রুশ, ইউক্রেনীয়, ফিনিস, বেলারুশীয়, মধ্য এশীয়, পোলিশ এমনকি তার নিজ জাতি জর্জিয়ানরাও হয়েছে। তার মানে কি তাকে সকল জাতির বিরোধী বলা ঠিক হবে? স্ট্যালিন নিজের বিরোধীকে, জাতি বা ধর্ম না দেখে শুধুমাত্র বিরোধী হিসেবেই দেখেছেন।
ইহুদি বুদ্ধিজীবী ও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে স্ট্যালিনের কঠোর অবস্থান একেবারে অমূলক ছিল না। এ সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিস্ট বিরোধীদের তৎপরতা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তিনি কমিউনিস্ট বিরোধীদের চক্রান্তকে নস্যাৎ করতেই কঠোর হয়েছিলেন। সন্দেহভাজনরা ইহুদি না হয়ে অন্য কোনো জাতির হলেও একই ব্যবস্থা নিতেন। এছাড়া স্ট্যালিনের অনেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন ইহুদি বংশোদ্ভূত। এমনকি স্ট্যালিনের যেসব কর্মকাণ্ডকে ইহুদি-বিদ্বেষী বলা হয় সেখানেও তার সহযোগীদের অনেকে ইহুদি ছিল। ইহুদি প্রশ্নে স্ট্যালিনের এমন অস্পষ্ট অবস্থানের ফলে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা অসম্ভব। তাই স্ট্যালিনকে ইহুদি-বিদ্বেষী যেমন বলা যায় না, তেমনি তাকে ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবেও বিবেচনা করা যায় না।