Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ডিওডোরেন্ট নিয়ে যত জানা-অজানা

স্মার্টনেস বজায় রাখতে আজকাল শুধু পোশাকের ধরনে-বাহারে বা চুলের ছাটেই হয় না, একটি ভালো মানের সুগন্ধির ব্যবহারও খুব জরুরি। এককালে সুগন্ধি হিসেবে আতরের ব্যবহার ছিল সুপরিচিত। তবে এখন সেই স্থান দখল করে নিয়েছে বাজারের নামীদামী ব্র্যান্ডের ডিওডোরেন্ট। এই ডিওডোরেন্ট শুধু সুগন্ধই ছড়ায় তা নয়, পাশাপাশি শরীরে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়াও ধ্বংস করে। কিছু কিছু ডিওডোরেন্ট আবার শরীরের ঘামও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

ডিওডোরেন্টের কিছু অজানা কথা

ডিওডোরেন্টের প্রচলন সাম্প্রতিক মনে হলেও আসলে কিন্তু এতটা সাম্প্রতিকও নয়। শুনতে বিস্ময়কর হলেও প্রথম বাণিজ্যিক ডিওডোরেন্ট এসেছে ১৮৮৮ সালে। সেই ডিওডোরেন্টের নাম ছিলো ‘মাম’, যা যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং বিক্রি করা হতো পেনিসিলভানিয়া, ফিলাডেলফিয়া এসব জায়গায়।

এই ছোট কোম্পানিটি ১৯৩১ সালে ব্রিস্টল-মায়ার্স কিনে নেয় এবং ১৯৪০ সালের শেষের দিকে হেলেন বার্লেন বগলে ব্যবহারযোগ্য একধরনের রোল-অন তৈরি করেন, যা অনেকটা ‘রেক্সোনা আন্ডার আর্মস রোল-অন’ এর মতোই। এটি তৈরিতে হেলেন গুরুত্ব দিয়েছিলেন সেই সময়কার আবিষ্কৃত বল-পয়েন্ট পেনকে। ১৯৫২ সালে এই রোল-অনকে বাজারজাত করা হয় ‘ব্যান রোল-অন’ নামে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হঠাৎ করে তুলে নেওয়া হয়েছিল এই রোল-অনকে, তবে তা আবার ব্যান কোম্পানির নামে বাজারে সহজলভ্য হয়ে ওঠে। যুক্তরাজ্যে এটি ‘মাম সলিড’ এবং ‘মাম পাম্প স্প্রে’ নামে বিক্রি হতো সেই সময়ে।

১৮৮৮ সালের 'মাম' ডিওডোরেন্ট
মাম ডিওডোরেন্ট; source: gracesguide.co.uk

প্রথম বাণিজ্যিক অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট বা ঘাম নিরোধক ডিওডোরেন্ট ‘এভারড্রাই’ আসে ১৯০৩ সালে। তবে আধুনিক অ্যান্টিপার্সপিরেন্টের শুভসূচনা ঘটে ১৯৪১ সালের ২৮ জানুয়ারিতে। শারীরিক অস্বস্তি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম এই স্প্রে ডিওডোরেন্ট প্রথম ‘স্টোপেট’ নামে পাওয়া যায়, যা টাইম ম্যাগাজিনের ঘোষণা মতে ১৯৫০ সালের সর্বাধিক বিক্রিত ডিওডোরেন্ট।

ব্যান রোল-অন
ব্যান রোল-অন; source: americanhistory.si.edu

প্রথমদিকে এই ডিওডোরেন্টগুলো বাজারজাত করা হতো মহিলাদের ব্যবহারের জন্য। তবে ১৯৫৭ সাল থেকে পুরুষদের জন্যও ভিন্ন ভিন্ন ডিওডোরেন্ট আসতে থাকে। এরপর থেকে নানা কোম্পানি নানা ধরনের ডিওডোরেন্ট বাজারজাত করে আসছে।

মাম সলিড; source: smithsonianmag.com

ডিওডোরেন্ট প্রস্তুত প্রক্রিয়া

কোন ডিওডোরেন্ট কীভাবে বানানো হবে আর কী কী উপকরণ দেওয়া হবে এসব কিছু নির্ভর করে কোন ধরনের ডিওডোরেন্ট তৈরি হচ্ছে তার উপর। সাধারণত স্প্রে, রোল-অন, জেল বা স্টিক ইত্যাদির কোনটি বানানো হচ্ছে তার উপর প্রস্তুত প্রণালী নির্ভর করে। তবে তারপরেও মৌলিক কিছু ব্যাপার রয়েছে যেগুলো সব ধরনের ডিওডোরেন্ট প্রস্তুতির ক্ষেত্রে একই। যেমন-

তৈলাক্ত পর্ব

ডিওডোরেন্টের বোতলে দ্রাবক হিসেবে অ্যালকোহল, প্রোপিলিন গ্লাইসল, গ্লিসারিন ইত্যাদি অথবা সিলিকন দেওয়া হয়।

পাউডার পর্ব

গুঁড়া জাতীয় উপাদানগুলো, যেমন- সিটাইল অ্যালকোহল এবার তৈলাক্ত পর্বের উপর দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

বিক্ষেপণ পর্ব

এই পর্বটি আলাদাভাবে করা হয়। স্টিক ডিওডোরেন্টের ক্ষেত্রে তেলজাতীয় পদার্থ আর অন্যান্য ডিওডোরেন্টে পানি জাতীয় পদার্থ যোগ করা হয়। সক্রিয় উপাদানগুলোও এই পর্বেই যোগ করা হয়। সব মিলিয়ে এই ধাপে একধরনের নির্যাস প্রস্তুত করা হয়। তবে সক্রিয় উপাদান যোগের এই ধাপটি অনেক সময় একেবারে শেষে করা হয়।

এই বিক্ষেপণ ধাপের শেষে স্টিক ডিওডোরেন্টে জেল সৃষ্টিকারী বা জমাট বাধানোর উপাদান যোগ করা হয়। এছাড়া সব ধরনের ডিওডোরেন্টে বিভিন্ন সুবাস এবং রঙ ব্যবহার করা হয়। সবশেষে সেটিকে ঠান্ডা করে নির্দিষ্ট বোতলে বা ছাঁচে রাখা হয়।

যেহেতু বারবার স্টিক বা রোল-অন ডিওডোরেন্টের কথা আলাদাভাবে আসছে, সেহেতু একটু আলাদাভাবেই ব্যাখ্যা করা যাক এর প্রস্তুত প্রণালি। এই স্টিক ডিওডোরেন্ট প্রস্তুত করা হয় প্রধান তিনটি ধাপে– একত্রিকরণ, পূরণ এবং সমাপ্তকরণ। ধাপগুলোর নামই যেন প্রণালী বলে দেয়। তারপরেও একটু বিস্তারিত দেখা যাক।

১) একত্রীকরণ

এ ধাপে সকল উপাদান একটি আবদ্ধ স্টেইনলেস স্টিলের কেতলিতে ঢালা হয়। এরপর উপাদানগুলোকে গলিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরির জন্য গরম বাষ্প ব্যবহার করা হয়। এই সময় তাপমাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি, কেননা মোমজাতীয় উপাদানগুলোকে এই ধাপে গলিয়ে ফেলা যাবে না। সকল উপাদান যোগ করে তাপে যতক্ষণ না একটি সুষম মিশ্রণ তৈরি হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ ধাপ অব্যাহত থাকবে।

মিশ্রণ তৈরি করা হচ্ছে; source: silverstone.com

২) পূরণ

ফাঁপা উপর-নিচে নড়নক্ষম টিউবে স্টিক ডিওডোরেন্ট প্যাকেজ করা হয়। পরিষ্কার খালি টিউবগুলো পরিবাহক বেল্টের মাধ্যমে আগাতে থাকে এবং আগের তৈরি ঐ মিশ্রণটি সরু নলের মাধ্যমে টিউবগুলোতে ঢেলে দেওয়া হয়। অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এ পূরণ ধাপ চলতে থাকে। এক্ষেত্রেও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ খুব জরুরি। বেশি ঠান্ডা মিশ্রণ ঢাললে ভিতরে বাতাস থেকে যাবে, আবার বেশি গরম মিশ্রণ ঢাললে উপচে পড়বে।

৩) সমাপ্তকরণ ধাপ

একটি স্টিকের সৌন্দর্য নির্ভর করে এর উপরিভাগের মসৃণতার উপর। তাই শেষ ধাপে এসে স্টিকের উপরিভাগ হালকা গরম করে নেওয়া হয়। এরপর আরও কয়েকটি ছোটখাট কাজ শেষে স্টিকগুলোকে ঠান্ডা করা হয় সত্যিকার স্টিকের রূপ নেওয়ার জন্য। সবশেষে মুখ আটকে পরিষ্কার করে নেওয়া হয়।

কিছু সমস্যা

  • মিশ্রণ তৈরির সময় কিছু কিছু উপাদান পিন্ড সৃষ্টি করে ফেলতে পারে;
  • কিছু কিছু উপাদানকে আবার কাটার প্রয়োজন হতে পারে;
  • বায়ু প্রবেশ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে;
  • কিছু জেল সৃষ্টিকারী পদার্থ উচ্চ তাপমাত্রায় ক্ষয় হয়ে যেতে পারে।

এসকল সমস্যা সমাধানে অনেক আধুনিক পদ্ধতির উদ্ভাবন হয়েছে এবং হচ্ছে, যেখানে মিশ্রণ তৈরি করা হয় খুব দ্রুত ঘুটে, ফলে পিন্ড বাঁধতে পারে না। আবার ভিন্ন যন্ত্রে কঠিক পদার্থগুলো কেটে গুঁড়ো করে তারপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিশ্রণে ঢালা হয়। এভাবে সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে।

প্রস্তুত ডিওডোরেন্ট বোতলে ভরা হচ্ছে; source: youtube

ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

ডিওডোরেন্ট ব্যবহারের পর সাময়িক কিছু প্রভাব দেখা দিতে পারে। যেমন-

  • জিরকোনিয়াম যুক্ত ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে ত্বকে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে
  • প্রোপিলিন গ্লাইকলযুক্ত ডিওডোরেন্ট সরাসরি বগলে প্র্য়োগ করলে অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে
  • প্রতিনিয়ত ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে রক্তের স্বাভাবিক ঘনত্বে পরিবর্তন আসতে পারে

ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কিডনি বিকল হবার মতো ঝুঁকির কথা বলা হয়ে থাকে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের সাথে ডিওডোরেন্টের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। এ ধারণাটি আসে ১৯৯৯ সালের একটি স্প্যাম ইমেইল থেকে। তবে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার থাকায় অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট  ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে কিডনির সমস্যা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তাই কিডনির সমস্যায় থাকা ব্যক্তিদের ডিওডোরেন্ট ব্যবহারে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলা হয়।   

ফিচার ইমেজ- corenow.org

Related Articles