বাজারে যেসব ডিটারজেন্ট পাওয়া যায়, সেগুলোর সবার স্লোগান মোটামুটি একই। ‘কাপড়কে করে আরও উজ্জ্বল’ কিংবা ‘কাপড়ের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে বহুদিন’। আসলেই কী তা-ই? বাস্তবে এর কোনোটাই আমরা দেখি না। বরং রঙিন কাপড় কিনে আনার পর কয়েকবার পরিষ্কার করলেই কাপড় তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারাতে শুরু করে। তথাকথিত ডিটারজেন্ট কোনো কাজেই আসে না, উল্টো যেন কাপড়ের উজ্জ্বলতা হারানোর প্রতিযোগিতায় নামে সবাই!
এমন পরিস্থিতিতে কপালে ভাঁজ পড়াটাই স্বাভাবিক। কিছুদিন পর পর যদি আপনাকে নতুন জামা কিনতে হয়, সেটা একদিকে যেমন বিরক্তিকর, তেমনি টাকা-পয়সারও অপচয় হয় প্রচুর। তখন এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে আমরা নানাজনের নানা পরামর্শ নিয়ে থাকি, যারা একটু বুদ্ধিমান তারা ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখেন। আজকে তাই এমন কিছু টিপস নিয়ে কথা বলব, যেগুলো ব্যবহার করে আপনার জামাকেও রাখতে পারেন নতুনের মতো উজ্জ্বল!
রঙিন কাপড়ের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে টিপস
১. ভেতরের দিক বাইরে রাখুন
আমরা প্রায় সবাই কাপড় পরিষ্কারের সময় কাপড়ের ভেতরের দিক থেকে উল্টো করে পরিষ্কার না করে, বরং যেভাবে আছে সেভাবেই পরিষ্কার করি। ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারে বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। কিছু গবেষণা দেখিয়েছে, কাপড়ের বাইরের দিক থেকে পরিষ্কার করতে করতে একটা সময় কাপড়ের তন্তুগুলো রঙ ছেড়ে দিতে থাকে। দুর্ভাগ্যবশত এটা সবচেয়ে বেশি হয় ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কার করার সময়।
তাই যতদিন কাপড়টি ব্যবহার করবেন বলে ভাবছেন, এর বহু আগেই সে উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে। ফলে সেটা আর পরিধান করার উপযোগী থাকে না। এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে কাপড়ের রঙের দীর্ঘস্থায়িত্ব বজায় রাখতে পরিষ্কার করার সময় কাপড়ের ভেতরের দিক বাইরে এনে পরিষ্কার করুন। তাতে করে কাপড় তার রঙ আগে যে হারে হারাতো, এখন অন্তত কিছু সময় বেশি ব্যবহার করতে পারবেন।
তাছাড়া রোদে শুকাতে গেলেও আমরা একই ভুল করি। সরাসরি সূর্যরশ্মি কাপড়ের উজ্জ্বল অংশে পড়ার কারণে কাপড় তার উজ্জ্বলতা তাড়াতাড়ি হারায়। শুধুমাত্র ভেতরের অংশ বাইরের দিকে দিয়ে শুকানোর কারণে আপনার কাপড়ের উজ্জ্বলতা টিকে থাকে বেশিদিন।
২. আদ্র কাপড় লবণ পানিতে পরিষ্কার করুন
যেসব কাপড় সহজেই পানি শুষে নেয়, সেগুলো পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে লবণ দারুণ একটি উপাদান। লবণ দামে সস্তা, হাতের কাছেই পাওয়া যায় এবং সহজেই পানিতে মিশে যায়। তাই পরেরবার যখন রঙিন কাপড় পরিষ্কার করবেন বলে ভাববেন, তখন প্রথমে শীতল পানিতে কাপড় ভিজিয়ে নেবেন। তারপর পরিমাণ অনুযায়ী লবণ পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, লবণের পরিমাণ যাতে খুব বেশি না হয়ে যায়। সাধারণত এক বালতি পানিতে আধা কাপ পরিমাণ লবণ যথেষ্ট। তবে কাপড়ের সংখ্যা কম হলে লবণও কম দিতে হবে।
সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন ডিটারজেন্ট মিশিয়ে কাপড় ধুয়ে ফেলতে হবে। সাধারণত বেশ কয়েক ঘন্টা লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলেই যথেষ্ট। লবণ জামার উপর আলাদা একটা স্তর তৈরি করে, যা ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করলে চলে যায়। কিন্তু ডিটারজেন্ট সরাসরি কাপড়ের রঙের খুব একটা ক্ষতি করতে পারে না।
৩. অপ্রয়োজনে পরিষ্কার নয়
উজ্জ্বল কাপড়ের রঙ বেশিদিন ধরে রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ঘন ঘন কাপড় না ধোয়া। একবার পরিষ্কার করার পর থেকে পরেরবার ধোয়ার মধ্যবর্তী সময়টা যাতে একটু বেশি হয়। আপনি হয়তো অফিসে কাজ করেন, যার জন্য নিয়মিত পরিষ্কার জামা-কাপড় পরতে হয়। তাছাড়া শরীর ঘামার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশ হতে জামায় দাগ চলে আসতে পারে। এরকম হলে ভেজা সামান্য কাপড় দিয়ে দাগ পড়ে যাওয়া অংশ একটু মুছে নিতে হবে। তাতেই আপনার কাপড়টি দু-একদিন বেশি পরতে পারবেন।
যদি আপনার পরার মতো জামার সংখ্যা কম থাকে, তবে জামার সংখ্যা একটু বাড়িয়ে হলেও ধোয়ার পরিমাণ কমান। নতুন জামা কেনাটা খরুচে মনে হলেও, বাস্তবে এটা যথেষ্ট সাশ্রয়ী।
৪. ঠান্ডা পানিতে পরিষ্কার করা
আমরা অনেক সময় ভাবি, গরম পানিতে কাপড় পরিষ্কার করলে সেটা বেশি ময়লা দূর করে। বাস্তবে এমনটা হতে পারে। তবে বেশি ময়লা পরিষ্কার করলেও মূলত অতিরিক্ত গরম পানি আপনার কাপড়ের রঙের স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়।
তাই গরম পানির বদলে ঠান্ডা পানির ব্যবহার একদিকে যেমন সাশ্রয়ী, তেমনি কাপড়ের উজ্জ্বলতাও ধরে রাখতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র পানির তাপমাত্রার বদল ঘটিয়ে কাপড়ের রঙকে বহুদিন টিকে থাকার উপযোগী রাখা যায়। চাইলে এমন ডিটারজেন্টও খুঁজে নিতে পারেন যেগুলো কম তাপমাত্রার পানিতেও দারুণ ফেনা তৈরি করতে পারে।
৫. ভিনেগার ও বেকিং সোডার ব্যবহার
কাপড় ধোয়ার সময়, বিশেষ করে প্রথমবার নতুন জামা পরিষ্কারের সময় পানিতে দুই-এক টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার যুক্ত করে নিতে পারেন। এই ফর্মূলা সবচেয়ে বেশি কাজে দেয় সাঁতারের পোশাক কিংবা কোনো নতুন সুইটের ক্ষেত্রে। কালো জিন্স প্রথমবার ধোয়ার আগে পানিতে ভিনগার মিশিয়ে নিলে জিন্সের রঙের স্থায়িত্ব অনেকাংশ বেড়ে যায়। জিন্সের জন্য পানি এবং ভিনেগারের অনুপাত হবে সমান। ভিনেগার কাপড়কে নরম রাখে, যার কারণে জামা পরে আরাম পাওয়া যায়।
কাপড়ের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য বেকিং সোডারও জুড়ি নেই। আধা কাপ বেকিং সোডা (পরিমাণ অনুযায়ী) পানিতে মিশিয়ে কাপড় পরিষ্কার করতে হবে। ময়লা দূর করতেও বেকিং সোডা সমান কাজ করে।
৬. কাপড় বেশি ড্রাই না করা
কাপড় শুকাতে যদি ড্রায়ার ব্যবহার করে থাকেন, তবে কাপড়কে বেশিক্ষণ ধরে না শুকানোই ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় একই টাইপের কাপড় একসাথে শুকালে। এতে করে সবগুলো কাপড় শুকাতে একই সময় লাগবে। কাপড়কে বেশি মচমচে করতে গেলে সুতোর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আপনার ড্রায়ারে যদি ময়েশ্চার সেন্সর সিস্টেম থাকে তবে তা ব্যবহার করুন। রোদে শুকানোর সময়ও একই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
কাপড় ধোয়ার সময়ও যদি একই ধরনের কাপড় একসাথে রেখে পরিষ্কার করেন, তবে সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার হওয়ার সুযোগ থাকে। বিভিন্ন টাইপের তন্তুর বৈশিষ্ট্য যেহেতু আলাদা, সেগুলো পরিষ্কার করতেও সময়ের হেরফের হয়।
৭. জামার লেবেলের নির্দেশনা দেখুন
আমরা খুব কমই জামার কলারের পেছনের দিকের সংযুক্ত নির্দেশনাটি পড়ে দেখি না। এখানে কাপড়ের টাইপ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া থাকে, যেগুলো কাপড়ের ব্যবহারকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সহায়তা করে। কিন্তু আমাদের কাছে লেবেল অংশটি কেবল বিরক্তিরই কারণ, সময়ে-অসময়ে খোঁচা দিতে এই লেবেল ওস্তাদ!
বিরক্তি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে লেবেল অংশটি এক নজর দেখে নিন, আপনার জামা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানতে পারবেন।
৮. নীলের ব্যবহার
সাদা কাপড়কে উজ্জ্বল রাখতে নীল রঙের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। এটা মূলত কালারিং এজেন্ট, যার ছোট ছোট কণিকাগুলো কাপড়ের সাথে লেগে থেকে সাদা কাপড়কে উজ্জ্বল করে। যদিও কাপড়ের দাগ দূর করতে এর কোনো কার্যকরী ব্যবহার নেই। নীল সংযুক্ত করতে হয় একেবারে কাপড় ধোয়ার শেষ অংশে, তাহলেই কণিকাগুলো ভালোভাবে মেশার সুযোগ পাবে।
তবে সাদা কাপড় না হয়ে যদি কালো রঙের কাপড় হয়, সেক্ষেত্রে পরিষ্কার করার সময় পানিতে সামান্য পরিমাণ চা-কফি ঢেলে নিতে পারেন। এতে কালো কাপড়ের উজ্জ্বল ভাব টিকে থাকবে অনেকদিন। মনে রাখতে হবে, চা-কফি যুক্ত করার সময় অবশ্যই দুধ ও চিনি পরিহার করতে হবে! নাহলে যা ঘটার তা-ই ঘটবে!