কখনো কি এতটা রাগ অনুভব করেছেন যে মনে হয়েছে, হাতের মোবাইলটা বা চায়ের কাপটা আছড়ে ভেঙে ফেলি, সামনে থাকা মানুষটাকে যাচ্ছেতাই কথা শুনিয়ে দিই, কিংবা নিজেই নিজের জীবনটা কেড়ে নিই?
মিথ্যে বলবেন না, প্লিজ। আপনি যেহেতু একজন মানুষ, সুতরাং আপনারও একটি মন আছে। এবং সেই মন কখনো কখনো উত্তেজিত হয়ে পড়া একদমই অস্বাভাবিক নয়। বরং আপনি যে একজন খুবই স্বাভাবিক মানুষ, এই ঘটনাগুলো তারই সাক্ষ্য বহন করে।
তো যা বলছিলাম, জীবনে চলার পথে এমন অনেক মুহূর্ত আসতেই পারে। এবং এ কথাও সত্য যে, প্রতিটি মুহূর্তই জীবনের অবিচ্ছেদ্য ও অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু জীবন মানে তো স্রেফ একটি মুহূর্ত নয়। জীবন হলো অসংখ্য মুহূর্তের সমষ্টি। তাই এক মুহূর্তের রাগের বশে এমন কিছু কখনোই করে বসা উচিৎ নয়, যে কারণে জীবনের বাকি প্রতিটি মুহূর্তই পস্তাতে হয়, আক্ষেপ করে বেড়াতে হয়।
প্রথমে একটা বস্তুবাদী উদাহরণই না হয় দেয়া যাক। যে মোবাইলটিতে আপনি এ মুহূর্তে লেখাটি পড়ছেন, নিশ্চয়ই সেটির দাম নেহাত কম নয়। এখন আপনি যদি কোনো কারণে রাগ হয়ে সেটি ভেঙে ফেলেন, তাহলে কি ব্যাপারটা খুব খারাপ হয়ে যাবে না? আপনার কাছে হয়তো এখন অত টাকা নেই যে শীঘ্রই আরেকটি অমন মোবাইল কিনে ফেলবেন। তাহলে আপনাকে বেশ কয়েকদিন মোবাইল ছাড়াই কাটাতে হবে, কিংবা কারো কাছে হাত পেতে টাকা ধার নিয়ে, লম্বা একটা সময় ঋণের বোঝা ঘাড়ে বয়ে বেড়াতে হবে।
কিংবা আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু চিন্তা করুন। আপনি হয়তো এ মুহূর্তে আপনার প্রিয় মানুষটির সামনে বসে আছেন। তার কোনো কথায় বা কাজে খুব রাগ হয়েছে আপনার। তাই আপনি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে, মাথায় যা এলো তা-ই বলতে লাগলেন তাকে। বলতে বলতে সীমা ছাড়িয়ে গেলেন। ফলে যা হবার তা-ই হলো। নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে হারিয়ে বসলেন আপনি। এমন একটি মানুষকে হারালেন, যার বিকল্প আর কেউই হতে পারে না আপনার জীবনে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কোনো কোনো সময় রাগ কতটা সর্বগ্রাসী হতে পারে। রাগের কারণেই আপনার, আমার, আমাদের যে কারো জীবন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে পারে। তাই রাগ দমন বা নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি একটি বিষয়। সঠিক সময় নিজের রাগকে বশে আনতে না পারলে, তার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
কিন্তু চাইলেই কি আর নিজের রাগকে বশে আনা সম্ভব! মনের উপর কি আর কারো হাত আছে! আমাদের মাথায় তো আর এমন কোনো সুইচ নেই যে সেটি টিপেই রাগ অন-অফ করে ফেলতে পারব! তাই কীভাবে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলাপের প্রয়োজন আছে।
এখন আপনার সামনে তুলে ধরব এমনই কিছু কার্যকরী উপায়, যার মাধ্যমে পুরোপুরি যদি না-ও হয়, কিছুটা হলেও রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতেই পারে। আর সেই “কিছুটা” রাগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও, নিজের জীবনকে বড় কোনো ট্র্যাজেডি থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
নিঃশ্বাস নিন
রাগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নিঃশ্বাসের চেয়ে বড় কোনো ওষুধ আর হতেই পারে না। তাই খুব যখন রাগ হবে, গভীর নিঃশ্বাসের অনুশীলন করুন। একটি চেয়ারে টান টান হয়ে বসুন। তারপর নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিতে থাকুন। ১ থেকে ৬ পর্যন্ত গুনুন, এবং সেই পুরো সময়টা প্রাণ ভরে অক্সিজেন নিয়ে নিন নিজের ভেতরে। এবং শ্বাস ছাড়ার সময়ও কাজটি করুন খুবই ধীরে ধীরে। সম্ভব হলে ৮ বা ৯ পর্যন্ত গুনুন। এভাবে থেমে থেমে ১০ বার কাজটি করুন। এবং এ কাজটি করার সময় সুখকর কিছু চিন্তা করুন, যেটির সাথে আপনার বর্তমান রাগ বা সমস্যার কোনো সম্পর্কই নেই।
স্বীকার করুন আপনি রাগান্বিত
রেগে যাওয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, যে মানুষটি রেগে গেছে সে প্রথম কিছুক্ষণ বিষয়টি বুঝতেই পারে না। ওই যে একটু আগে বলেছি না, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, ঠিক তেমনটিই হয়। তাই সে তখন রাগের মাথায় যা খুশি করতে বা বলতে থাকে, এবং সেটিকেই স্বাভাবিক বলে মনে করে। কিন্তু আপনি যদি রাগান্বিত অবস্থায় নিজেকে এ সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারেন যে, হ্যাঁ, আপনি আসলেই রেগে গেছেন, তাহলে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসবে। কারণ তখন আপনি এটাও অনুধাবন করতে পারবেন যে, আপনি যা করছেন তা স্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতিতে আপনি করতেন না।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করুন
কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষই লম্বা সময় ধরে রেগে থাকতে পারে না। শুরুর কিছু মুহূর্ত, হতে পারে তা পাঁচ, দশ, পনেরো মিনিট বা আধা ঘণ্টা; এটুকু সময়ের মাঝেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে সে এমন অনেক কিছু করে বসে, যে কারণে তাকে পরে মাথা চাপড়াতে হয়। হয়তো ওই সময় সে নিজেকে বা সামনের অন্য কাউকে আঘাত করে ফেলে, কোনো মূল্যবান জিনিসের ক্ষতিসাধন করে ফেলে, কিংবা এমন কিছু একটা বলে বসে যা কখনোই তার বলা উচিৎ নয়। এ কাজগুলোর ফলাফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে। তাই আপনি যদি অবগত হন যে আপনার রাগ অনেক বেশি এবং তাৎক্ষণিকভাবে আপনি ভয়ঙ্কর কিছু করে বসতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার আগে থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বারবার নিজের মনকে বোঝাতে হবে যেন এ ধরনের কিছু আপনি করে না বসেন। এবং আপনার কাছের মানুষদেরও উচিৎ হবে ওই সময় আপনাকে আরো রাগিয়ে না দেয়া, বরং এমন কিছু একটা করা যাতে আপনার রাগ প্রশমিত হয়।
ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ আবেগতাড়িত হয়ে, ঝোঁকের মাথায় রেগে যায়। তখন সে কোনো বিষয়ে পূর্বাপর চিন্তা করে না। নিজের মস্তিষ্ককে নয়, মনকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যাটি হলো, মানুষের মন এতটাই সংবেদনশীল যে যেকোনো সময়ে সে তার দিক পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। তাই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মনের কথা শোনার চেয়েও বেশি জরুরি ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করা। একটি কথা মাথায় রাখতে হবে যে, হুট করে রেগে গিয়ে, উত্তেজিত হয়ে বা মাথা গরম করে কোনো সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব নয়, বরং তাতে পূর্বের সমস্যার সাথে নতুন করে আরো অনেক সমস্যা যুক্ত হয়। তাই এমন কিছু না করে, ঠাণ্ডা মাথায় আপনাকে চিন্তা করতে হবে, আপনি যে কারণে রেগে যাচ্ছেন, তা আসলেই যুক্তিযুক্ত কি না। হতে পারে আপনি মিছেই এমন কারো উপর রেগে যাচ্ছেন, যার আদতে কোনো দোষই ছিল না। আবার এমনও হতে পারে যে গোটা ব্যাপারটার দায়ই আসলে সময়, পরিস্থিতি ও বাস্তবতার, যেখানে অন্য কারোই কিছু করার নেই। এই বিষয়গুলো ভেবে নিজে একবার নিজের মনকে প্রবোধ দিতে পারলে, রাগ অনায়াসে কমিয়ে আনা সম্ভব।
তাজা বাতাসে হেঁটে আসুন
হতে পারে আপনি দীর্ঘ সময় কোনো বদ্ধ ঘরে বসে আছেন, যেখানে আবহাওয়া খুবই গুমোট, তাপমাত্রা অনেক বেশি এবং বাতাস চলাচল নেই বললেই চলে। এমন পরিবেশে থাকার কারণেও খুব সহজেই আপনি রেগে যেতে পারেন, এমনকি আপনার প্যানিক অ্যাটাক হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এরকমই যদি কিছু হয়ে থাকে, তাহলে রেগে গিয়ে অন্য কারো দিকে আঙুল তোলা বা নিজের ক্ষতি করার আগে, একবার চেষ্টা করুন নিজের পরিবেশের পরিবর্তন ঘটানোর। ঘর থেকে বাইরে বের হোন, তাজা বাতাসে নিঃশ্বাস নিন, হাঁটাচলা করুন। খুব সামান্য সময়ের জন্যও যদি আপনি মুক্ত আকাশের নিচে গিয়ে দাঁড়ান, গায়ে বাতাসের গন্ধ মাখেন, অন্য সবকিছু ভুলে গিয়ে প্রকৃতির রূপসুধা উপভোগ করেন, সেটিও কিন্তু জাদুর মতো কাজ করতে পারে। আপনি খুব বেশি রোমান্টিক কিংবা প্রকৃতিপ্রেমী না হওয়া সত্ত্বেও, আপনার কাছে মনে হতেই পারে যে, বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে বাদ দিলেও, জীবনে বেঁচে থাকার অনেক কারণই রয়েছে।
পেছন থেকে সংখ্যা গুনুন
বাইরে কোথাও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না? অফিসে বা ক্লাসরুমে ডেস্কের সামনে বসেই নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে? বিষয়টি খুবই কঠিন। কারণ এমন বদ্ধ পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা মাথায় কিছু চিন্তা করা বা নিজের মনোযোগ অন্য দিকে ঘোরানো সহজ ব্যাপার নয়। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে পেছন থেকে সংখ্যা গণনার কৌশলটি। খুব যখন রেগে যাবেন, তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে ১০০ থেকে ১ পর্যন্ত উল্টোভাবে গুনুন। ভাবছেন এটি খুবই ছেলেমানুষি কোনো ব্যাপার? মোটেই না। উল্টোভাবে সংখ্যা গণনা করতে গিয়ে আপনার মস্তিষ্ককে সে কাজে কিছুটা হলেও মনোযোগ ব্যয় করতে হবে, ফলে কিছু সময়ের জন্য আপনি আপনার রাগের বিষয়টিকে ভুলে যেতে পারবেন। আর এভাবেই মনোযোগ অন্য কোনোদিকে স্থানান্তর করার মাধ্যমে রাগ কমিয়ে আনা সম্ভব।
গান শুনুন
হ্যাঁ, গান শোনাও হতে পারে খুবই ভালো একটি উপায়। পছন্দের কোনো সুর বা বাজনাও যথেষ্ট হতে পারে মানুষের মন ভালো করে দিতে। আর তাই যখনই উদ্বেগ অনুভব করবেন, উত্তেজিত হয়ে যাবেন, তাড়াতাড়ি ইয়ারফোনটা কানে দিয়ে, কিংবা যদি নিজের ঘরে থাকেন তো লাউড স্পিকারেও, পছন্দের গানটি শুনতে পারেন। তবে পছন্দের গানটি অবশ্যই মন ভালো করা কিছু হতে হবে। এমন কোনো গান নির্বাচন করা উচিৎ হবে না, যা বিষণ্নতা আরো বাড়িয়ে দেয়, দুঃখবোধকে উসকে দেয়। যদি পছন্দের কোনো গান না থাকে, তাহলে অনলাইনে খোঁজ করে বিভিন্ন রিল্যাক্সিং মিউজিক শুনতে পারেন। বিশেষত ক্লাসিক্যাল ও জ্যাজ মিউজিক শ্রোতার মনকে হালকা করতে বিশেষ সহায়ক। হয়তো আপনার ক্ষেত্রেও এটি কাজ করবে। একবার চেষ্টা করে দেখতেই পারেন।
মনের কথা লিখে ফেলুন
যখন প্রচণ্ড রাগ হয়, তখন মনের ভেতর একগাদা চিন্তা এসে জড়ো হয়। চিৎকার করে সেগুলো বলতে ইচ্ছা করে। সামনে থাকা মানুষটিকেও ইচ্ছা মতো সেগুলো শুনিয়ে দেয়ার বাসনা জাগে মনে। কিংবা অনেকে তো আজকাল মেসেঞ্জারেও ইয়া বড় বড় মেসেজ পাঠায় কাছের মানুষদেরকে। কিন্তু এই কথা বা মেসেজগুলো পরবর্তীতে বুমেরাং হয়ে আপনাকেই আক্রমণ করতে পারে।
আপনি হয়তো রাগের মাথায় এমন কিছু বলেছেন বা লিখেছেন, যা আপনার প্রকৃত মনের কথা নয়। কিন্তু বিপরীত দিকের মানুষটি যদি আপনার এ দাবি বিশ্বাস না করে? তাহলে যে সমস্যা ক্রমশ আরো বাড়বে। তাই আপনি যে কাজটি করতে পারেন তা হলো, নিজের ডায়েরি, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলের কোনো একটি রাইটিং অ্যাপে নিজের মনের কথাগুলো সব টুকে রাখতে পারেন। দাঁড়ি-কমা, ব্যাকরণ এসব কিছু নিয়ে ভাববার কোনো দরকার নেই। মনের মধ্যে থাকা বিক্ষিপ্ত কথাগুলোকে সেভাবেই লিপিবদ্ধ করে ফেলুন। দেখবেন, মনটা অনেক হালকা লাগছে। এই লেখাগুলোকে ফেসবুকে “অনলি মি” প্রাইভেসি দিয়ে পোস্টও করতে পারেন। পরবর্তীতে মাথা ঠাণ্ডা হলে লেখাগুলো পড়বেন। দেখবেন আত্মমূল্যায়ন বা নিজেকে চেনার বেশ ভালো একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যের দ্বারা মূল্যায়িত হওয়ার বদলে এটিই কি বরং ভালো নয়?
ইতিবাচক চিন্তার বাতি জ্বালিয়ে দিন
মানুষের একটি চিরন্তন স্বভাব হলো, যখন সে কোনো কারণে উত্তেজিত বা রাগান্বিত হয়, তখন সে তার দুরবস্থাকে ‘জাস্টিফাই” করার লক্ষ্যে কেবল নিজের সাথে হওয়া খারাপ বিষয়গুলোই চিন্তা করতে থাকে। এভাবে নিজের রাগকে ন্যায্যতা প্রদান করা যায় বটে, কিন্তু তাতে করে রাগ কিন্তু এতটুকুও কমে না, বরং আরো বেড়ে যায়। এবং আরো বড় সমস্যা হলো, রাগের মাথায় সে যখন কাউকে কথা শুনাতে থাকে, তখনো কেবল ওই ব্যক্তির খারাপগুলো নিয়েই কথা বলতে থাকে। ওই ব্যক্তির যে অজস্র ভালো দিক রয়েছে, সেগুলো সে এড়িয়ে যায়। এভাবে একটি সম্পর্ক ভাঙনের দিকে এগিয়ে যায়। তাই রাগের মাথায় নেতিবাচক চিন্তা করা বাদ দিয়ে, বেশি বেশি ইতিবাচক বিষয় নিয়ে ভাবুন।
এখন যার উপর রাগ করেছেন, সে যে আপনার কত উপকারও করেছে, কত বিপদে-আপদে আপনার পাশে সহায় হয়ে থেকেছে, সেগুলো স্মরণ করুন। দেখবেন তার উপর থেকে রাগ অনেকটাই কমে গেছে। তাছাড়া যেকোনো ঘটনার কেবল নেতিবাচক দিকগুলো না দেখে, সেগুলো থেকে কোনো শাপে বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা-ও খতিয়ে দেখুন। সর্বোপরি নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। বারবার নিজের মনকে বলুন, “অস্থির হয়ো না। তুমি আগেও এমন অনেক পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছ, আবারো পারবে। তুমি আগেও কখনো হেরে যাওনি, এবারো হেরে যাবে না। শেষ পর্যন্ত জয় তোমার হবেই।”
সমাধানের পথ খুঁজুন
ছোটবেলা থেকেই তো গণিত বইয়ে কত রকমের জটিল জটিল সব সমস্যা দেখেছেন, তাই না? কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, সেগুলো কোনোটিই কিন্তু আর সমস্যা থাকেনি, যখন আপনি সেগুলো সমাধানের পদ্ধতি শিখে ফেলেছেন। ঠিক তেমনই, জীবনের যেকোনো দুর্যোগকে অঙ্ক বইয়ের সমস্যা হিসেবে ভাবতে শুরু করুন। প্রথম দর্শনে সেগুলো যত কঠিনই মনে হোক, দিন শেষে অবশ্যই তা সমাধানযোগ্য। যত তাড়াতাড়ি আপনি সমাধানের চেষ্টা শুরু করবেন, ফলও তত তাড়াতাড়িই পাবেন। কিন্তু আপনি যদি সমাধানের চেষ্টা না করে কেবল রাগ করেই বসে থাকেন, এবং অতি-চিন্তা করতে থাকেন, তাহলে কিন্তু আপাত সহজ একটি সমস্যার সমাধানও অসাধ্য হয়ে উঠতে পারে।
শেষ কথা
তাৎক্ষণিকভাবে নিজে নিজেই রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য এ সকল পদ্ধতি আপনি অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়া রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আরো বেশ কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে। প্রথমত পছন্দের কোনো কাজ করা। যদি আপনি বই পড়তে বা সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন, তা শুরু করে দিন। চাইলে রান্না করুন, কিংবা নিজের ঘরটিকে নিজের মতো করে সাজিয়ে তুলুন। তাছাড়া যার সাথে কথা বললে আপনার মন ভালো হয়, অর্থাৎ যে মানুষটি আপনাকে ভালোভাবে জানে ও বোঝে, তার সাথে কথা বলতে এবং নিজের মনের কথা শেয়ার করতেও পারেন। কিন্তু এগুলোর কোনোটিতেই যদি আপনার রাগ নিয়ন্ত্রিত না হয়, সেক্ষেত্রে আপনাকে কোনো বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। আপনি কোনো থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলরের কাছে যেতে পারেন। আবার প্রয়োজনে অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট বা মেডিটেশনের কোর্সও করে নিতে পারেন।
লাইফস্টাইলের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/