বলিউডের আনুশকা শর্মা থেকে শুরু করে হলিউডের কাইলি জেনার- সবাই ইদানিং ঝুঁকে পড়ছেন লিপ ফিলারের দিকে। ঠোঁটের স্বাভাবিক আকৃতিকে একটু বদলে দিয়ে পছন্দসইভাবে তৈরি করে নেওয়াটাই লিপ ফিলারের কাজ। অতীতে ঠোঁটের আকার বদলাতে সার্জারি নামক ঝামেলার ভেতর দিয়ে যেতে হত সবাইকে। তবে লিপ ফিলার সেই ঝামেলা কমিয়ে দিয়েছে অনেকাংশে। কোনো রকম অপারেশন ছাড়াই একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে আপনার ঠোঁট চাহিদামাফিক করে নিতে পারেন আপনিও। তবে ভয় কার না হয়?
এই ধরুন বলিউডের বাণী কাপুরের কথা। ঠোঁটের আকার বদলে কী সমালোচনার মুখেই না পড়তে হলো তাকে। কাইলি জেনার তো চ্যালেঞ্জই ছুঁড়ে বসলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সমস্যার শুরুটাই হলো এখানে। লিপ ফিলার ব্যবহার করা খুব সহজ। তবে তার ফলাফল ভালো হবে নাকি খারাপ সেটা শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় না। অনেক সময় খুব ঠিকঠাকভাবে দেওয়া একটা ইনজেকশনের ফল হতে পারে মারাত্মক। তাই বলে কি নিজের ঠোঁটদুটোকে আরেকটু সুন্দর করে তোলার চেষ্টা করবেন না? আরে! তা কেন? অবশ্যই লিপ ফিলারের সাহায্য নেবেন আপনি। সার্জারির চাইতে তুলনামূলকভাবে লিপ ফিলার ব্যবহার করাটা নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর।
আপনি যদি মনে মনে ঠিক করেই ফেলেন লিপ ফিলার ব্যবহার করবেন। তাহলে তার আগে কিছু পড়াশোনা আর বাছাই করা অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ আপনার একটু অলসতা আর অমনোযোগের কারণে পুরো ব্যাপারটাই লেজে-গোবরে হয়ে যেতে পারে। তাই খুব ভেবে-চিন্তে পা ফেলুন। আর ভাবনা-চিন্তার শুরু করুন এই লেখাটি থেকেই।
লিপ ফিলার কী?
সার্জারি ছাড়া কেবল ইনজেকশনের মাধ্যমে ঠোঁটের আকৃতি বদলে দিতে পারে যেটি সেটিকেই লিপ ফিলার বলা হয়। এটি ঠোঁটে ইনজেক্ট করলে ঠোঁটের চারপাশ নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বাজারে নানারকম লিপ ফিলার পাওয়া যায়। তবে সেগুলো নির্ভর করে আপনি কেমন আকৃতি চাইছেন, কতদিন পর্যন্ত চাইছেন- এসবের উপর।
সবার ঠোঁটের আকৃতি আর সহ্যক্ষমতা এক রকম নয়। ফলে লিপ ফিলার ব্যবহারের পদ্ধতিটাও ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলে লিপ ফিলার ব্যবহারের ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই ঠোঁট কাঙ্ক্ষিত আকৃতি ধারণ করে। এমনকি কোনো ব্যথা বা স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে কোনো সমস্যাও বোধ হয়না। লিপ ফিলার সাধারণত দুই ধরণের। যেমন-
১। স্বল্পমেয়াদী লিপ ফিলার (টেম্পোরারি লিপ ফিলার)
২। দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলার (পার্মানেন্ট লিপ ফিলার)
স্বল্পমেয়াদী লিপ ফিলার
লিপ ফিলার বলতে মানুষ সাধারণত স্বল্পমেয়াদী লিপ ফিলারকেই বুঝে এসেছিলো এতদিন। তবে সম্প্রতি লিপ ফিলারের দীর্ঘমেয়াদী বা পার্মানেন্ট ভার্সনটিও বের করা হয়েছে। সেটা নিয়ে একটু পরে কথা বলছি। প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, স্বল্পমেয়াদী লিপ ফিলার কী?
আপনি হয়তো আপনার ঠোঁট দুটোকে একটু অন্যরকম, একটু আকর্ষণীয় করে তুলতে চান। তবে সেইসাথে খানিকটা দ্বিধায় আছেন নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে। আসলেই কাজটা ঠিক হচ্ছে তো? যদি দেখতে ভালো না লাগে? আর এই দ্বিধাকে দূর করতেই ব্যবহার করা হয় টেম্পোরারি লিপ ফিলার। এই ফিলার কখনো ১৫ দিন থাকে, কখনো এক মাস কিংবা ছয় মাস। কোনো কোনো স্বল্পমেয়াদী ফিলার এক বছর অব্দি থেকে যায়। এই লিপ ফিলারে ব্যবহৃত হয় হিয়ালুরোনিডেস অ্যাসিড। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এক বছর থাকলে সেটা আবার স্বল্পমেয়াদী হয় কী করে? হয়। কারণ এ ক্ষেত্রে এক বছর হোক কিংবা এক মাস হোক। আপনার এই লিপ ফিলার দূর হবেই। আর সেটা নির্দিষ্ট কিছুদিন পরেই।
দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলার
দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলারের নাম শুনেই নিশ্চয় বুঝেছেন যে, ব্যাপারটা খুব সহজে চলে যাওয়ার নয়। বারবার ইনজেকশন দিতে যারা বিরক্তবোধ করেন এবং ভয় পান, তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলার। দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলার কখনো কখনো সারা জীবন, কখনো দশ কিংবা বিশ বছর অব্দি থেকে যায়। বর্তমানে এটি অনেকেই পছন্দ করলেও এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এমনিতেও লিপ ফিলার ব্যবহার করাটা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবে দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলারের ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। খুব কম চিকিৎসক আছেন যারা দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলারের ইনজেকশন দিতে চান।
ফ্যাট ট্র্যান্সফার বলে আরেকটি বিষয় আছে, যেটি করলে দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলারের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। এ ক্ষেত্রে শরীরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে চর্বি নিয়ে যাওয়া হয়। শরীরের অন্য অংশ থেকে চর্বি নিয়ে সেটাকে ঠোঁটের ফিলার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
স্বল্পমেয়াদী নাকি দীর্ঘমেয়াদী: কোন লিপ ফিলারটি বেশি ভালো?
উত্তরটা দেওয়া খুব মুশকিল। কারণ লিপ ফিলার- সেটা স্বল্পমেয়াদী হোক কিংবা দীর্ঘমেয়াদী, তার কিছু ইতিবাচক দিক যেমন আছে, তেমনি আছে কিছু নেতিবাচক দিকও।
স্বল্পমেয়াদী লিপ ফিলার ব্যবহারের ১০ থেকে ১৫ মিনিট বাদেই ঠোঁটের সাথে মিশে যাবে। পুরো ব্যাপারটিকে একেবারেই স্বাভাবিক মনে হবে আপনার। খাওয়াদাওয়া বা ঠোঁটের যেকোনো ব্যবহারে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না আপনাকে। আর যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় সেক্ষেত্রে আপনার ঠোঁট লাল হয়ে যাওয়া, খানিকটা রক্ত ঝরার মতো ব্যাপারগুলো ঘটতে পারে।
স্বল্পমেয়াদী লিপ ফিলার বারবার করার একটি ঝামেলায় ফেলে দেয়। ইনজেকশন বারবার নিতে হয়। আবার এর সুবিধা হচ্ছে, আপনার যদি লিপ ফিলার ব্যবহারের পর ভালো না লাগে, তাহলে নির্দিষ্ট একটি সময় পর আপনি না চাইলেও সেটি চলে যাবে। আপনার ঠোঁট আবার আগের আকৃতিতে ফিরে আসবে।
দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলারের ক্ষেত্রে যেহেতু সময়টা একটু বেশি। তাই এতে ঝুঁকির পরিমাণটাও একটু বেশিই। দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলারের সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে, এই লিপ ফিলার ব্যবহারের পর যদি আপনার পছন্দ না হয়, তাহলেও খুব সহজে এর হাত থেকে মুক্তি পাবেন না আপনি। সেইসাথে যদি কোনো রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে যায়, তাহলে সেটা স্থায়ীভাবেই আপনার ঠোঁটে বাসা বাঁধবে।
দীর্ঘস্থায়ী লিপ ফিলারের ক্ষেত্রে খরচের একটা ব্যাপার আছে। তবে সেটা পরে বলছি। খরচের চাইতেও সবচাইতে জরুরী ব্যাপার হলো একজন ভালো সার্জন খুঁজে বের করা। হাতেগোনা খুব কম সার্জন আছেন যাদের দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলারের ইনজেকশন সফলভাবে দেওয়ার সামর্থ্য আছে। সুতরাং খুব দেখে-শুনে সিদ্ধান্ত নিবেন।
খরচ কেমন?
স্বল্পমেয়াদী লিপ ফিলার আর দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলারের আসল খরচ প্রায় একই। ৫০০-২,০০০ ডলারের ভেতরেই স্বল্পমেয়াদী লিপ ফিলারের কাজ সারা সম্ভব। তবে সাথে যোগ হবে ডাক্তারের খরচ।
দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলারের খরচটাও অনেকটা এমনই। তবে সেইসাথে ডাক্তারের একটু বাড়তি খরচ বইতে হবে আপনাকে। পার্মানেন্ট লিপ ফিলার হিসেবে ভালো মানের ফিলার ব্যবহার করাটাই শ্রেয়। আর সেটাও এই খরচে বেশ ভালো ভূমিকা রাখবে। স্পা বা বিউটি পার্লারে গিয়ে লিপ ফিলার না করাই ভালো। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। খেয়াল রাখবেন, দীর্ঘমেয়াদী লিপ ফিলার ব্যবহারের পর অন্য কোনো ফিলার ব্যবহার করতে পারবেন না আপনি।
লিপ ফিলার কতটা ভালো হবে আর কতটা খারাপ সেটা বলে দেওয়াটা সম্ভব নয়। তবে সাহস করে একবার যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেন নিজের ঠোঁটকে ঠিকঠাক করার, তাহলে একটু ভেবেচিন্তে, নিজের ঠোঁটের দিকে খেয়াল রেখে, ভালো সার্জন এবং ভালো ফিলার ব্যবহার করেই সেটা করুন। বাদ বাকিটা? সে নাহয় পরেই দেখা যাবে!
ফিচার ইমেজ- laser-clinique.com