ক্রিং ক্রিং!… ক্রিং ক্রিং! মোবাইলের অ্যালার্ম বেজেই চলেছে। ঘড়িতে কেবল ভোর সাড়ে পাঁচটা। গতকাল রাতে বিয়ের দাওয়াত খেয়ে আসতে আসতেই ঘড়ির কাঁটায় ১টার ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল। খুব কাছের বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত বলে কথা! বন্ধুর বাড়িতে থেকে গেলেই পারতো, কিন্তু…
অফিস ৯টায়। ঢাকার রাস্তায় এতই ট্রাফিক জ্যাম যে অমিতকে (ছদ্মনাম) ৮.১৫ বাজতেই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে হয়। উফ্! একে তো গত রাতের ভারী খাওয়া-দাওয়া, তার উপর ঘুম যেন আজ জেঁকে বসেছে একেবারেই। কিন্তু আর কিছুক্ষণ দেরীতে উঠলেই তো লাইন পড়ে যাবে! তার উপর রাস্তা তো একেবারেই জ্যাম হয়ে আছে, কিছুতেই যেন এ জ্যাম ছুটে যাবার নয়। কী ভাবছেন বন্ধুরা? আড়মোড়া ভাঙতে না ভাঙতেই কীসের লাইন? কীসের জ্যামের কথা ভাবছে অমিত, তাই তো?
এই জ্যাম সেই রাস্তার ট্র্যাফিক জ্যাম নয়, এ জ্যাম হলো কন্সটিপিশান, কোষ্ঠকাঠিন্য! আর অমিত যে লাইনের কথা ভাবছে, তা হলো টয়লেটে যাবার লাইন। কিছু পরিচিত বন্ধুর সাথে বড় একটা ফ্ল্যাট এ ব্যচেলর রুম ভাড়া নিয়ে থাকে তারা ক’জন। অফিস যাওয়ার আগে সবারই ওয়াশরুম যাওয়ার প্রয়োজন হয়। যদিও ওয়াশরুম দুটো, কিন্তু তার একারই বুকিং কমসে কম এক ঘণ্টা!
তাই এত ভোরেই মোবাইলে অ্যালার্ম দেওয়া। এ নিয়ে বন্ধুদের মাঝে ঠাট্টা-তামাশার কমতি নেই। আড়ালে সকলেই চোখে-চোখে একজন আরেকজনকে টিপ্পনী কাটে। কিছুই অগোচরে রয় না অমিতের, বলতে গেলে সে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়েই গেছে এসবে। কতইবা আর বেতন পায় যে আলাদা ফ্ল্যাট নিয়ে একা থাকার দুঃসাহস দেখাবে এই চড়া মূল্যের উন্নত জীবন যাত্রার ইট-পাথুরে ঢাকা শহরে?
বেচারা অমিত! বিগত ৩/৪ বছর যাবত কন্সটিপিশানের কথা ভাবতে ভাবতে বিয়ের চিন্তা মাথাতেই আনতে পারছে না। নিজের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে আর সে কেবল বন্ধুদের বিয়ের দাওয়াত খেয়েই চলেছে। কিছুতেই সাহস করতে পারছে না কীভাবে সে অজানা-অচেনা একটা মেয়েকে বউ করে নিয়ে আসবে। পাছে যদি তার সমস্যার কথা জানার পর বউ তাকে ছেড়ে চলে যায়! এসব আকাশকুসুম কল্পনা করে করেই প্রেম-ট্রেমও কপালে জুটলো না। এখন ভাবছে, এইভাবেই কি তার প্রতিটি বসন্ত পার করতে হবে কোকিলের ডাক শুনতে শুনতেই? এ তো দুধের সাধ যেন ঘোলে মেটানো। হতাশ লাগে অমিতের।
অমিতের মতো আপনারও কি এমন হয় কখনো-সখনো? যারা কন্সটিপিশান বা কোষ্ঠকাঠিন্যের যন্ত্রণায় জীবনকে অতিষ্ঠ ভাবতে বসেছেন তাদেরকেই বলছি, বলিউড মুভি ‘পিকু’র অমিতাভ বচ্চনের চরিত্রটির মতো সারাটি জীবন আপনাকে কষ্ট সয়ে যেতে হবে না। বিশ্বাস করুন! আপনাদের জন্যেই স্বর্গরাজ্যের দূত হয়ে এসেছেন ডাক্তার গাশ নামের একজন অ্যাকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ। স্বর্গরাজ্যের দূত কেন বলছি তা নিশ্চয় বুঝে গেছেন এতক্ষণে? জানেনই তো, ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ!
সে যাই হোক। আসল কথা হলো, ডাক্তার মাইকেল রিড গাশ জানিয়েছেন যে , যদি পেটের এক বিশেষ অ্যাকুপ্রেশার পয়েন্টে হালকা ম্যাসাজ করা যায় তাহলেই ঘটবে এই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি!
কি? বিশ্বাস হচ্ছে না তো? ভাবছেন এতো সহজেই সমাধান হবে এতদিনের সমস্যার? তাহলে বিশদ জেনে নিন কীভাবে পাবেন তিন মিনিটেই স্বস্তিময় মুক্তি।
প্রথমেই সেই বাটনটি নিশ্চিত করুন। উহু! এই বাটন কিন্তু আপনার স্মার্ট ফোনের কোনো অ্যাপলিকেশনের বাটন নয়! সরিয়ে রাখুন আপনার প্রিয় স্মার্ট ফোনটি। এই বাটন আপনার পেটেই। নাভির ঠিক নিচে ডানদিকে আপনার হাতের তিনটি আঙুল রাখুন। সেই আঙুল তিনটির নিচেই রয়েছে আপনার এতদিনের দুঃস্বপ্ন প্রতিকারের প্রেশার পয়েন্ট।
এখন আপনি তৈরি তো আপনার প্রেশার পয়েন্টটি কাজে লাগাতে? তবে অবশ্যই নিশ্চিত করুন যে আপনি ওয়াশরুমের খুব কাছাকাছি আছেন। কারণ সে যখন আসে, তখন নো কম্প্রোমাইজ, কারো সাথেই নয়।
যাই হোক, হাতের তিনটি আঙুল ব্যবহার করে সেই প্রেসার পয়েন্টে চাপ দিন এবং সাথে সাথে গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করুন। তারপর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে চাপ তুলে নিন। আবার শ্বাস গ্রহণ করুন এবং চাপ দিন। প্রথমে মৃদু ও ধীরে চাপ প্রয়োগ করতে থাকুন তারপর আস্তে আস্তে চাপের মাত্রা বাড়ান ও ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আঙুলের মাথা উপর-নিচ আর সামনে-পেছনে সরিয়ে ম্যাসাজ করুন। শুরুর দিকে শুয়ে শুয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরবর্তীতে সমতলের সাথে সমান্তরালভাবে বসে ম্যাসাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এইভাবে ১০ সেকেন্ড থেকে মিনিট তিনেক ম্যাসাজ করার পরেই টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করবেন।
ডাক্তার গাশের মতে, নাভির তিন আঙুল নিচেই ডান দিকে রয়েছে ‘সি অফ এনার্জি’ তথা প্রেশার পয়েন্ট। এই জায়গায় চাপ পড়লেই পৌষ্টিক নালীর গভীর অংশে চাপ অনুভূত হয়। তখন পৌষ্টিক নালীর বর্জ্য পদার্থ সামনের দিকে এগোতে শুরু করে এবং ব্যক্তির শরীরে টয়লেটে যাওয়ার জন্য তাড়া সৃষ্টি হয়। পরিণামে শরীর বর্জ্য মুক্ত হয় খুব তাড়াতাড়ি, ঘটে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি।
তবে সুফল পেতে প্রতিদিন ২০ মিনিট করে ম্যাসাজ করুন। বিশ্বাস করুন বা না-ই করুন, সত্যি সত্যিই কিন্তু আগামী দু’ সপ্তাহের মধ্যে আপনি পেতে যাচ্ছেন এর মারাত্মক সুফল। সাথে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, খাদ্যাভ্যাসের কথা ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না মোটেও।
গবেষকদের মতে, খাদ্যাভ্যাসে এই নিয়মগুলো মেনে চলার কার্যকারিতা অনেক-
১) আপনাকে দৈনিক প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হাল্কা গরম পানি পান করা বিশেষ উপকারী বটে।
২) প্রচুর সবুজ শাক সবজি আর তাজা ফলমূল খাদ্য তালিকায় রাখতেই হবে।
৩) সকালে নাস্তা গ্রহণের ঠিক ৫ মিনিট পর টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে আপনার পরিপাকতন্ত্র একটা নির্দিষ্ট সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।
৪) আঁশ জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।
৫) গুড় আপনার জন্যে খুবই উপকারী। সম্ভব হলে তিন ভাগের এক কাপ গুড় রাখুন খাদ্য তালিকায় ।
৬) লেবু খুব উপকারী এমন সমস্যার সমাধানে। ৪-৫ গ্রাম ভিটামিন সি অবশ্যই যাতে খাবারে অন্তর্ভুক্ত থাকে মাথায় রাখুন।
৭) দৈনিক হাঁটা, সাইক্লিং আর ইয়োগা ইত্যাদি ব্যায়ামকে অভ্যাসে রপ্ত করুন।
৮) অনেক সময় শুকনো খেজুরও খুব উপকারে আসে। সুতরাং যারা খেজুর খেতে ভালবাসেন তারা তা রোজ খাবারে রাখতে পারেন।
তাছাড়া, আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, টয়লেট ব্যবহারের ধরন।
ছবি দেখেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কোনটি করবেন আর কোনটি করতে মানা। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁটুর ভাঁজে ৯০ ডিগ্রী কোণ অপেক্ষা ৩৫ ডিগ্রী কোণ তৈরি হয় এভাবে বসে হাই কমোড ব্যবহার করা অধিকতর শ্রেয়।
সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন। জীবন বহমান নদীর মত। চলছে, চলবেই।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ অমিত চরিত্রটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।