আমরা কর্মক্ষম হওয়া মাত্রই আমরা সবার আগে শহরমুখী হবার চিন্তা করি। শহরে না গেলে কাজের সন্ধান মিলবে না। নিজের এবং পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে নাড়ির টান ছেড়ে সবাই ছোটে শহরে। কিন্তু তাই বলে পৃথিবী কি আর স্থলভাগ বড় করছে? ধীরে ধীরে গ্রামের জায়গা কমে শহরের জায়গা বাড়ছে? না, তা নয়। তাহলে এই শহরে মানুষ বাড়ার সাথে সাথে থাকার জায়গাও কি বাড়ছে? আসলে জায়গা বাড়ছে না। আস্তে আস্তে অ্যাপার্টমেন্টের আকৃতিগুলো ছোট হয়ে আসছে। কিছু কিছু অ্যাপার্টমেন্ট তো এতটাই ছোট যে কোন মতে মাথা গুজে রাতটা পার করা যায়। তবুও মাঝে মাঝে দম আটকে আসতে চায়। বুক ভারী হয়ে আসে একটু খোলা বাতাসের আশায়। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক কীভাবে এই মানুষগুলো অসম্ভবকে সম্ভব করে ঠাঁই নিয়েছে এই ক্ষুদ্রাকার অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে।
১
৯০ বছর বয়সী ওয়াং চুনচুন তার ৬০ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে মাথা গুঁজেছেন চায়নার সাংহাইতে। এই কক্ষের ক্ষেত্রফল মাত্র ১০৭ বর্গফুট!
২
গুয়াংঝো শহরের চীনের বৃহত্তর ডেভেলপার চায়না ভাংকে এই ক্ষুদ্রাকার অ্যাপার্টমেন্টটি পার্ল রিভার ডেলটা রিয়েল স্টেট আয়োজিত মেলায় প্রদর্শন করে।
৩
চীনে যখন এতটাই স্থান সংকট তখন ছোট কক্ষই সেখানে নতুন ফ্যাশন।
৪
এত ছোট রুমে যথেষ্ট জায়গা করতে চাওয়া নিছক স্বপ্নই বটে!
৫
লস এঞ্জেলসের বার্গার পরিবার ২০০৯ সালে তাদের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে পথে নেমে যান। তারপর মিসেস এলিজাবেথ বার্গারের মা তাদেরকে একটি গ্যারেজে জায়গা করে দেন। এখানেই তারা গুছিয়ে নিয়েছেন তাদের সংসার। খোলা আকাশের নিচে থাকার চেয়ে এখানেই তারা নিরাপদে আছেন।
৬
ভারতের মুম্বাইয়ের একটি এলাকার নাম ধার্বি। এটি এশিয়ার বৃহত্তম ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা। প্রায় ১০ লক্ষেরও অধিক মানুষ বাস করে এখানে।
৭
১০০ বর্গ ফুটের এক একটি কক্ষ। কিন্তু প্রতি বর্গফুটে যখন ০.০৪ ডলার থেকে ০.০৬ ডলার অর্থাৎ ১০০ বর্গফুটে ৪-৬ ডলার করে পড়ে, তখন এটুকু জায়গাই যথেষ্ট।
৮
৭০ বর্গ ফুট জায়গায় কয়জন মানুষ থাকতে পারে? হংকংয়ে একজন মা মাত্র ৭০ বর্গফুটের একটি কক্ষে প্রতি মাসে ৪৮৭ ডলার খরচ করে থাকছেন। নিঃশ্বাস নিতে চাইলেও তাদের গুণতে হবে প্রায় দ্বিগুণ টাকা। ফুসফুসের সাথে তারা “নো-অক্সিজেন” চুক্তি করেই ফেলেছেন হয়ত।
৯
তুলনামূলকভাবে জন-ক্রিশ্চিয়ান স্টাবলফিল্ডকে ভাগ্যবানই বলা চলে। তিনি ২০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা একটি স্টুডিওতে বাস করছেন। ওয়াশিংটনের মতো শহরে এটাই বা কম কিসে!
১০
কয়েক মাইল দূরে থাকা শিয়ং ইউ তার ২০০ বর্গ ফুটের কক্ষেই ভালো আছেন। তিনি বলেন। এখানেই তার বেশ ভালোভাবেই চলে যাচ্ছে।
১১
চীনের হিফি শহরে স্থানীয় হাসপাতালে যেসব রোগীরা বেড ভাড়া করে থাকতে পারেন না, তাদেরকে বাধ্য হয়েই নিকটবর্তী ৮৬ ফুটের এমন কক্ষে জায়গা করে নিতে হয়।
১২
হংকং এ জায়গার দাম এত বেশি যে মাত্র ৩৫ বর্গফুটেও মানুষ বাস করছেন। খেয়ে-পড়ে বাঁচতে হলে তারা বাসস্থানের জন্য সর্বোচ্চ এটুকুই করতে পারেন। বড় জায়গা খুঁজতে হলে তাদের বাকি খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়।
১৩
গত বছরেই ম্যানহাটানের নিকটে কিপস বে-তে মাইক্রো অ্যাপার্টমেন্ট চালু করা হয়। প্রতিটি কক্ষের পরিমাপ ৩০০ বর্গফুট করে।
১৪
ছোট রুমেই স্বাচ্ছন্দে জায়গা করে নেয়ার জন্য বানানো হচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবপত্র। তার মধ্যে আছে দেয়াল বিছানা, মর্ফি টেবিল ইত্যাদি। এগুলো ব্যবহার শেষে ভাজ করে রেখে দেয়া যায়। এতে করে খুব সহজেই পাওয়া যায় অনেকখানি জায়গা। এই ধরণের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া প্রতি মাসে ২,৫০০-২,৯০০ ডলার।
১৫
পোল্যান্ডের ওয়ার্সে অবস্থিত ‘কেরেট হাউজ’ ৩০০ বর্গফুট কামরা বিশিষ্ট একটি মানানসই দালান, যার কিছু কিছু স্থানে প্রস্থ মাত্র ৩৬ বর্গফুট!
১৬
এই অ্যাপার্টমেন্টটি এতটাই ছোট যে এটিকে কেবলই শিল্পস্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই অ্যাপার্টমেন্টের স্থপতি জ্যাকব জেস্নি এবং কেরেট এই জায়গাটুকু শুধুমাত্র স্বল্প সময়ের জন্য থাকতে আসা লেখক কিংবা শিল্পীদের জন্য উন্মুক্ত রাখেন।
১৭
দরজা খুললে যতটুকু অংশ দেখা যায় এর বাইরে আর কোনো জায়গা নেই। একজনের থাকার মতো একটি খাট ছাড়া আর কিছুই রাখা যায় না এখানে!
১৮
৭৩ বছর বয়সী কং কিউং মাত্র ২১ বর্গফুটের একটি কক্ষে বাস করেন। অবশ্য এর মাঝে টয়লেট এবং কিচেন নেই। তার জন্য আলাদা জায়গা আছে।
তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় সিউলে গ্যাংনাম উপবনের পাশে বাস করেন। তার টয়লেট এবং রান্নাঘরের দূরত্বটা পাঠকরা বুঝতে পারছেন তো?
১৯
এবারের চিত্রটি হংকংয়ের একটি ৬০০ বর্গ ফুট অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের। পাঠকরা কী ভাবছেন? এটা কেন ক্ষুদ্রাকার অ্যাপার্টমেন্টের তালিকায় এলো? কারণ এই কমপ্লেক্সের ভিতরে ১৯টি ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটের পরিমাপ ২৫ বর্গফুট থেকেও কম। এই ইউনিটগুলোকে ‘শয়নকক্ষ’ হিসেবে সবাই চেনে। অথবা কেউ কেউ বলে ‘কফিন হোম’।
২০
১৫০ ডলার প্রতি মাসে গুণতে হয় এই ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টটিতে থাকার জন্য। শুধুমাত্র দুই-চারটি কাঠের তক্তা জুড়ে দিয়ে বানানো হয়েছে জায়গাটি। শপিং এবং ফিন্যান্সিয়াল কমপ্লেক্স থেকে কাছে বলে এর কদর অনেক বেশি।
২১
৬১ বছর বয়সী সাইমন অংয়ের জন্য কিছু শার্ট-প্যান্ট ঝোলানোর আর একটু শোবার জায়গাই যথেষ্ট। হোক না সেটা ২২৬ ডলারের কক্ষ! আমেরিকার শহরগুলোতে একটু থাকার জায়গাই তার জন্য অনেক।
২২
বৃদ্ধ বয়সে যারা বেকার হয়ে পড়েছেন তাদের জন্য একরম ছোট ছোট অ্যাপার্টমেন্টই ভরসা। ৬৩ এবং ৬০ বছর বয়সী লাম এবং কিট্টি এউ এই বয়সেও আলাদা দুটি ইউনিটে থাকছেন।
২৩
ছবিতে ঝুলতে থাকা ১০০ ডলারটি যদি প্রতিদিন প্রাণ ফিরে পেত তাহলে হয়ত তাদেরকে এই ৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২ ফুট প্রস্থের তারের বাক্সে থাকতে হত না!
২৪
কং সিউ কউয়ের মতো এমন শত শত বৃদ্ধ লোক হংকংয়ে এমনিভাবে বাস করছেন
২৫
পচা গন্ধ এবং ছারপোকা এদের নিত্যসঙ্গী।
২৬
হংকং সরকারের কানে এই খবরগুলো পৌঁছে দিতে কয়েকজন শুধু প্রতিবাদই করতে পেরেছেন। এতে করে অনেকদিন ধরে খালি পড়ে ছিল বেশ কিছু খাঁচার মতো জায়গা।
এই ছিল সারা বিশ্বে বেশ কিছু ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর থাকার জায়গার তালিকা। হয়তো নাম না জানা অনেক স্থান রয়েছে যেগুলোর কথা আমরা আজও জানি না। যারা এসব জায়গায় জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থেকে গেছেন কিংবা আজও আছেন তাদের কথা ভেবে যদি চোখ দুটো ঝাপসা হয়েই আসে, তাহলে কি খুব অবাক হবেন?