কিছু কিছু তথ্যমতে, আমাদের স্মৃতিশক্তি তিন ধরনের, কেউ বলেন চার ধরনের। এগুলো হলো কাজের জন্য প্রয়োজনীয় স্মৃতিশক্তি, সংবেদনশীল স্মৃতিশক্তি, এবং ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি। আজ আমরা ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি নিয়ে কথা বলব, আর কীভাবে এটি উন্নত করা যায় সেটা নিয়েও জানব।
ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি
ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি হলো এমন একটি অবস্থা যেটা কম-বেশি মাত্র ৩০ সেকেন্ডের জন্য আমাদের মস্তিষ্কে থাকে। আমরা মোটে ৭টি বিষয় একসাথে ক্ষণস্থায়ী মস্তিষ্কে ধরে রাখতে পারি। কখনও কখনও আমাদের এই শর্ট টার্ম বা ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি কিছুটা স্থায়ী করবার দরকার পড়ে। যেমন- কারো নাম মনে রাখা, আমাদের চশমা কিংবা কলম কোথায় রেখেছি, রান্না ঘরে কী কাজে ঢুকেছি এসব। মনে মনে আওড়ালে হয়তো কাজটা মনে থাকবে, তবে শুধু শুনে রাখলেই তা মনে থাকবে না।
ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করবেন যেভাবে
অবশ্যই এই ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণ করা সম্ভব, মানে কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব। এজন্য দরকার মানসিক শক্তি আর বুদ্ধির গোড়ায় শান দেয়া।
১) অনেকের মতে, চা বা কফি পানে নানা ধরনের অসুবিধা দেখা দেয়। কিন্তু জন্স হপকিংসয়ের প্রতিবেদন মতে, সকালটা যদি চা বা কফি অর্থাৎ ক্যাফেইন দিয়ে শুরু হয়, তবে এটা আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ ৩০ সেকেন্ড থেকে প্রায় ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী করতে চা বা কফির তুলনা নেই। এছাড়াও, মস্তিষ্কের চালিকাশক্তি হিসেবে গ্রীন টির ভূমিকাও বেশ কার্যকর।
২) পানি পান করুন। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারলে সেটা শর্ট টার্ম মেমোরি, সচেতনতা, সতর্কতাসহ সব কিছুতেই কাজ করে। যাদের শর্ট টাইম মেমোরি লস হয়, তাদের অধিকাংশই ক্রনিকালি ডিহাইড্রেটেড। কারণ অপর্যাপ্ত পানি পানের কারণে মস্তিষ্কের ক্রমশ ক্ষয় হয়। আর এর ফলে নানা ধরনের সমস্যা হয়, যার মধ্যে ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি অন্যতম।
৩) সাদা চিনি পরিহার করুন। সাদা চিনিকে সাদা বিষ বলা হয়। ব্লাড গ্লুকোজ বাড়ানোর সাথে সাথে এটা আমাদের মানসিক অবস্থা, মুড সুইংসহ নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো স্মৃতিশক্তির স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়।
৪) নানা ধরনের সুডোকু, ক্রসওয়ার্ডস, পাজল গেম খেলতে পারেন। এটা মস্তিষ্কের ব্যায়াম হিসেবে কাজ দেয়। গেম, বইপড়া, আর্ট-ক্রাফটের কাজ করা- এগুলো করলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। টানা চার মাস যদি মস্তিষ্কের খেলাগুলো খেলতে পারেন নিয়মিত, তাহলে দেখবেন আপনার শর্ট টাইম মেমোরি সংরক্ষণের সময়সীমা বৃদ্ধি পাবে।
৫) পর্যাপ্ত ঘুমান। অল্প ঘুমের কারণে একদিকে যেমন শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটে, তেমনি মনোযোগ কমে যায় কাজে, লং বা শর্ট টার্ম মেমোরি লস ঘটে; বিষণ্নতা ও উদ্বিগ্নতা ঘিরে ধরে। এছাড়াও আরো দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা সৃষ্টি করে শরীরের এবং মনে। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন ঘুমের জন্য। ধীরে ধীরে দেখবেন, আপনার মাথা এবং শরীরের উন্নতি ঘটবে।
কেবলমাত্র যে ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বাড়াতেই এই নিয়ম মেনে চলবেন তা কিন্তু না, দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও এই পদ্ধতি কাজে দেবে। যেহেতু আমরা প্রাকৃতিক উপায়ে বুদ্ধি কিংবা স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য চাইছি, তাই এটা মানসিক এবং শারীরিক অন্যান্য সমস্যা সমাধানেও কাজ করবে দারুণভাবে। তাই মাথা চুলকে কী মনে করতে হবে বা চশমা কিংবা ঘড়ি কোথায় রেখেছেন সেটা মনে রাখার জন্য উপরের নিয়মগুলো মাসখানেকের জন্য মেনে চলতে পারেন।