Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিখ্যাত সাহিত্যিকদের অদ্ভুত যত ভাবনা

বিভিন্ন ভাষায় লেখা পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখকদের আমরা চিনি তাদের মননশীল সাহিত্য কর্মের মাধ্যমে। যারা সাহিত্য ভালোবাসেন তারা শিবরাম, বিভুতিভূষণ বা শরদিন্দু কিংবা আগাথা ক্রিস্টি, এডগার এলান পোর লেখা পড়েননি তা হতেই পারে না। বিশ্ব সাহিত্যে গ্রাহাম গ্রিন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সেক্সপিয়র, জেন অস্টেন এর মত লেখকদের অবদান কতখানি তা সাহিত্য প্রেমিকরাই বুঝতে পারবেন।

কিন্তু কারো লেখা পড়ে বোঝার উপায় নেই যে, নিজেরা কত রকম উদ্ভট খেয়ালের অধিকারী ছিলেন। আপনি কোনো দিন শুনেছেন কোনো কোনো লেখক মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে স্বপ্ন লিখে রাখতেন?

গ্রাহাম গ্রিন

গ্রাহাম গ্রিন

প্রখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচকগ্রাহাম গ্রিন এমনই এক অদ্ভুত কাজ করতেন। তিনি তার বিছানার পাশে একটি ছোট নোট খাতা রাখতেন। যখনই ঘুমের মধ্যে কোন স্বপ্ন দেখতেন তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে তিনি তার স্বপ্নটা লিখে রাখতেন, যাতে পরে ভুলে না যান। সারা জীবনে ‘ড্রিম ডায়েরি’ নামে  একটি লেখার খাতা তিনি  সংরক্ষণ করতেন যাতে স্বপ্নগুলো পর পর লিপিবদ্ধ রাখতেন। ড্রিম ডায়েরিতে স্বপ্নগুলো তুলে রাখতে গিয়ে তার প্রতিনিয়ত মনে হতো, এগুলো নাটকের সিরিয়ালের মতো, খণ্ড খণ্ড এপিসোড যা প্রতি রাতে দেখা যায়, একটা সময়ে গিয়ে তা শেষ হয়।

সুইডিশ লেখক অগাস্ট স্ট্রিন্ডবার্গ  ছিলেন একাধারে নাট্যকার, ঔপন্যাসিক এবং ছোট গল্পের জাদুকর।  তার জন্ম ১৮৪৯ সালে। সেই বছরেই আরেক বিখ্যাত লেখক এডগার অ্যালান পো মারা যান। অগাস্ট সবসময় ধারণা করতেন, অ্যালান পোর আত্মাই তার উপর ভর করে আছেন। পো তাকে দিয়ে সব ধরণের লেখা লিখিয়ে নিচ্ছেন।

এডগার অ্যালান পো

এডগার অ্যালান পো

লেখক হিসেবে এডগার অ্যালান পো-ই বা কেমন অদ্ভুত খেয়ালের অধিকারী ছিলেন তা জানতে ইচ্ছে করছে নিশ্চয়! অ্যালান পো তার গল্পের চরিত্রগুলো কেমন হবে, কার  কী ধরণের ডায়ালগ থাকবে, সেটা পর্যন্ত হুবুহু না ভেবে লেখার কাজে হাত দিতেন না। চরিত্রগুলো যাতে তাড়াতাড়ি তার মাথায় চলে আসে, সেজন্য ঘরের মধ্যে তিনি দ্রুত পায়চারি করতেন। পো-র আরেকটি অদ্ভুত আচরণের মধ্যে ছিলো তার প্রিয় পোষা বিড়াল ‘ক্যাটরিনা’র প্রতি ভালোবাসা। ক্যাটরিনা-কে তিনি এতোই ভালবাসতেন যে, কখনো দূরে বা বাইরে কোথাও বেড়াতে বা কাজে গেলে তাকে চিঠি লিখতেন। কি অদ্ভুত খেয়াল ভাবুন তো!

হ্যানস ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসন

হ্যানস ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসন

রপকথার গল্পের কিংবদন্তী গল্পকার হ্যানস ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসন লেখক হিসেবে যেমন প্রসিদ্ধ ছিলেন তেমনি নানারকম অদ্ভুত খেয়ালের ব্যাপারেও তার জুড়ি মেলা ভার। হ্যানস পুড়ে মারা যাওয়ার ভয়ে বেশ ভীত ছিলেন। তিনি এতটাই ভীত ছিলেন যে, তিনি যেখানেই যেতেন, একটা লম্বা দড়ি সঙ্গে রাখতেন। যদি কোনো কারণে আগুন লাগে আর তিনি উপরতলার কোনো ঘরে সেই সময় ঘুমোন, তাহলে যেন দড়ি বেয়ে নিরাপদে নিচে নেমে আসতে পারেন-এই আশায়। আরও একটা ভয় তার মধ্যে কাজ করত, যেন জীবন্ত অবস্থায় তিনি কবরে চলে না যান। সেই জন্য তিনি চারপাশের সবাইকে বলে রেখেছিলেন, ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করার পর, কফিনে ঢোকানোর আগে যেন তার মৃতদেহের কোনো একটি শিরা কেটে দেয়া হয়।

জেন অস্টেন

জেন অস্টেন

জেন অস্টেন ছিলেন একজন ইংরেজ ঔপন্যাসিক। ইংল্যান্ডের ভদ্রসমাজের পটভূমিকায় রচিত তার রোম্যান্টিক কথাসাহিত্য তাকে ইংরেজি সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা বহুলপঠিত লেখকদের সারিতে স্থান দিয়েছে। অদ্ভুত আচরণের দিক দিয়ে তিনিও কম যান না। তিনি সবসময় চাইতেন, তার কোনো লেখা মুদ্রিত হয়ে আসা না পর্যন্ত যেন গোপন থাকে। গোপনীয়তা নিয়ে তিনি এত বেশি বাতিকগ্রস্ত ছিলেন যে, তিনি তার সব লেখা ছোট ছোট  কাগজে লিখতে শুরু করেন। যাতে তার লেখার সময় হঠাৎ কেউ ঘরে ঢুকে কিছু দেখে ফেলার আগেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেটি কোথাও লুকিয়ে ফেলতে পারেন।

পোষা বিড়াল ‘ফস’কে ভীষণ ভালবাসতেন লেখক এডওয়ার্ড লিয়রও। কোনো নতুন জায়গায় গেলেই ফস-এর থাকার জায়গাটি তিনি এমনভাবে সাজিয়ে দিতেন, যাতে নতুন জায়গায় থাকার অস্বস্তি তাকে গ্রাস না করে। ফস-এর যেন মনে হয়, সে তার পুরনো বাড়ির পুরনো ঘরেই আছে।

আগাথা ক্রিস্টি

আগাথা ক্রিস্টি

আগাথা ক্রিস্টি ছিলেন একজন ইংরেজ অপরাধ কল্পকাহিনী লেখক। তাকে রহস্য উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্ভাবনী লেখকদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি তার আট আটটি বাড়িকে এমন করে সাজিয়ে রাখতেন, যাতে নিজের রহস্য উপন্যাসে ওই বড়িগুলোর বর্ণনাই রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

ঔপন্যাসিক নাথানিয়েল হাওথর্নের  কিশোর বয়সের একটা প্রিয় খেলা ছিল নিজেকে কোনো অন্ধকার ঘরের মধ্যে আটকে রেখে কল্পনা করা যে, ঘরটার চাবি হারিয়ে গেছে।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঙালি লেখকদের মধ্যেও কেউ কেউ ছিলেন ভীষণ খেয়ালি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যের এক প্রাতঃস্মরণীয় নাম। তিনি তার সাহিত্যের ভাষা নিয়ে বেশ খুঁতখুঁতে ছিলেন। একটিমাত্র উপযুক্ত শব্দের অভাব দেখা দিলেও তিনি কিছুতেই লেখা শুরু করতেন না। তারাশঙ্করের মামলা-মকোদ্দমা করার এক উদ্ভট খেয়াল ছিল। সুযোগ পেলেই তিনি কারো বিরুদ্ধে মামলা ঠুঁকে দিতেন নিঃসঙ্কোচে।

Bibhutibhushan_Bandopadhyay

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকৃতি প্রেমিক হিসেবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বনের মধ্যে ঘণ্টর পর ঘণ্টা শুয়ে থাকতেন। সময়জ্ঞানের কোন বালাই ছিল না তার। আধ্যাত্মিকতা, পরলোক চর্চায়ও খুবই আগ্রহ ছিল বিভূতিভূষণের। পুনর্জন্মে খুব বিশ্বাস করতেন। এ প্রসঙ্গে একবার তিনি শিবরামকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি তো আর বিয়ে থা করলে না। তোমার ছেলে মেয়ে নেই। আর সেই জন্যই তোমার পূর্বপুরুষরাও পুনর্জন্ম নিতে পারছেন না। আর তাদের পুনর্জন্ম না হলে তোমারও নতুন জন্ম নেওয়ার সুযোগ নেই। সবাই পর পর লাইনে আছেন কিনা। তাই তুমি বে থা না করলে তোমার নিজের তো বটেই, তোমার আগের সাতপুরুষও বায়ুভূত হয়ে ঘুরবে। আমি বিয়ে করব এবার। ফিরতি বার্থ রিজার্ভেশন করে রাখা চাই বুঝলে ভায়া।’’ বিভূতিভূষণের সেই পারলৌকিক বিশ্বাস যে এতটাই তীব্র ছিল যে, মৃত্যুর কিছু দিন আগে এক শ্মশানে নিজের মৃতদেহকে নাকি নিজের চোখে দেখতে পেয়েছিলেন তিনি।

শিবরাম চক্রবর্তী

শিবরাম চক্রবর্তী

বাঙালি লেখকদের মধ্যে সকলকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন প্রখ্যাত রম্যলেখক শিবরাম চক্রবর্তী, তিনি বলতেন বা লিখতেন শিব্রাম চক্কোত্তি। নিজের নাম বা জীবন নিয়ে প্রতিনিয়ত খেলা করে গেছেন। জমিদার বংশের ছেলে হয়েও সারা জীবন মেসেই কাটিয়েছেন। তার এক অদ্ভুত খেয়ালের মধ্যে ছিল কোনো ব্যক্তির তথ্য, ফোন নাম্বার খাতায় সংগ্রহ করে রাখতেন। তার মেসের দেয়ালটাই ছিলো বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সেতুবন্ধন। তার মেস বাড়ির ঘরের পুরনো দেয়ালে এতটুকুও খালি জায়গা ছিল না, বিভিন্ন লোকের  নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বারে তা পরিপূর্ণ ছিল।

লেখকদের এসব অদ্ভুত খেয়ালখুশির কথা লিখে শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু এটা সত্যি যে, লেখকদের এসব অন্য ধরণের ভাবনা-চিন্তাগুলোই প্রমাণ করে, তারা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের চেয়ে আলদা। তাই হয়তবা হতে পেরেছেন ‘প্রতিভাধর’। আর সেজন্যই এসব বিখ্যাত গুণী লেখক হতে পেরেছেন কালজয়ী সৃষ্টির স্রষ্টা।

This article is in Bangla language. It's about strange habits of famous authors.

References:

1. http://www.clickhole.com/article/7-strange-habits-great-writers-2140

2. http://www.lifehack.org/articles/productivity/9-weird-habits-that-famous-writers-formed-write-better.html

3. http://www.lifehack.org/articles/productivity/9-weird-habits-that-famous-writers-formed-write-better.html

4. https://www.bustle.com/articles/156344-10-strange-writing-habits-and-superstitions-of-bestselling-authors

Featured Image: writerunboxed.com

Related Articles