মায়ের একধার দুধের দাম
কাটিয়া গায়ের চাম
পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না
এমন দরদী ভবে কেউ হবে না আমার মা…
সত্যিই তা-ই। মায়ের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করলেও মায়ের ঋণ কোনোদিন শোধ হবার নয়। দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধরে মা যে কী কষ্টে সন্তানকে নিজের ভেতর বড় করে তোলেন, তা শুধু মা’ই জানেন। শুধু সন্তান ধারণ আর লালন-পালনই নয়, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মা তার সন্তানের জন্য নীরবে কাজ করে যান। সন্তান যে দুধে-ভাতে থাকে, তার জন্য মা যে কত দিন-রাত না খেয়ে কাটান, তার হিসেব রাখে ক’জন? সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগের কথা একশো বছর ধরে লিখলেও বুঝি শেষ হবার নয়।
শুধু কি আমাদের মনুষ্য-মায়েরাই সন্তানের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেন? না। প্রাণিজগতের সকল মায়েরাই তার সন্তানের জন্য অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করে। বন্যতা কেন যেন এদের মাতৃত্বের কোমলতাকে আড়াল করতে পারেনি। নিজে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়েও এসব না-মানুষ মায়েরা সন্তানকে বড় করে তোলে পরম যত্নে। এমনকি প্রাণিকুলের মধ্যে সবচেয়ে হিংস্রও যাদের মানা হয়, দেখা যায় সেসব প্রাণীর মায়েরাও মা হিসেবে সর্বংসহা, মমতাময়ী ‘আদর্শ মা’-ই! এদের মধ্যেও কিছু মায়ের ত্যাগ আলাদা করে নজর কাড়ে। সেই আলাদাকৃত তালিকা প্রণয়নে আবার ভূমিকা রেখেছে কিছু প্রাণ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম। সেই বিশেষ মায়েদের নিয়েই আজকের এ লেখা।
হাতি
পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় এবং বেশি ওজনের বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে হাতি। হাতির একটি বাচ্চার ওজন দু’শো থেকে আড়াইশো পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। শুধু তা-ই নয়, আমাদের (মানুষ) মা যেখানে দশমাস গর্ভধারণ করেন, সেখানে হাতির গর্ভধারণ ২২ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। হাতির বাচ্চা শুরুতে অন্ধ হয়ে জন্ম নেয়। ফলে চলাচল এবং পরিবেশ বুঝে উঠতে নিজের শরীর আর মায়ের ওপরই ভরসা করতে হয়। কিন্তু হাতির বাচ্চাগুলো বেড়ে ওঠে মাতৃতান্ত্রিক সমাজে। ফলে কোনো হাতি বাচ্চা জন্ম দিলে অন্য স্ত্রী হাতিগুলো, বিশেষ করে সম্পর্কে নানি, দাদি, চাচিরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ছোট বাচ্চাকে লালন-পালনে সবধরনের সহযোগিতা করে থাকে তারা।
এতে মা হাতি তার সন্তানের জন্য দুধের যোগান দিতেই বেশি মনোযোগ দিতে পারে। একটি বাচ্চা হাতি দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে থাকে। বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া, বিনোদন ও প্রশিক্ষণ প্রদানও করে থাকে মা হাতিই। বিপদের হাত থেকে সন্তানকে রক্ষার জন্য প্রাণপণে লড়ে যায় মা-ই। বাবা হাতি যেখানে সন্তান লালন-পালনে গা ছাড়া, সেখানে মা হাতি সন্তানকে কখনো ভোলেই না। একবার মে-বাই নামক এক বাচ্চা হাতিকে একটি এজেন্সির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় বাচ্চাটি আবার তার মায়ের সাথে থাকার সুযোগ পায়। বিস্ময়কর হলেও সত্য, মা হাতি তার সন্তানকে ঠিকই চিনে নিয়েছিলো!
কোয়ালা
কোয়ালা একধরনের মারসুপিয়াল প্রাণী, অর্থাৎ এদের পেটে ক্যাঙ্গারুর মতো আলাদা থলি থাকে। সেই থলিতে তারা বাচ্চা বহন করে। কোয়ালা লম্বায় ৩ ফুটের মতো হয়ে থাকে। এদের গড় ওজন ২০ থেকে ৩০ পাউন্ড। ১৫ থেকে ২০ বছর এদের গড় আয়ুষ্কাল। এরা খুবই অলস প্রাণী। প্রায় ১৮ ঘণ্টা এরা ঘুমিয়েই কাটায়। পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় এদের দেখা মেলে। কোয়ালার বাচ্চাকে ‘জোয়ি’ নামে ডাকা হয়। বাচ্চা কোয়ালার ওজন হয়ে থাকে মাত্র ০.০৪ আউন্স এবং দৈর্ঘ্যে ১ ইঞ্চিরও কম। বাচ্চা কোয়ালা অন্ধ ও বধির হয়ে জন্ম নেয়। শরীরে কোনো লোম অবধি থাকে না।
জন্মের পর থেকে অন্তত ছ’মাস অবধি মা তার বাচ্চাকে নিজের থলিতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কোনো কোনো বাচ্চা প্রয়োজনের অধিক সময় মায়ের থলিতে থাকতে চায়। কিন্তু আকারে বড় হয়ে যাওয়ায় মায়ের থলি ছাড়তে হয় তাদের। বছরান্তে এরা মায়ের থলি ছেড়ে পিঠে চড়ে বেড়ায়। একটি কোয়ালা একবারে একটিই বাচ্চার জন্ম দেয়। পুরো জীবদ্দশায় জন্ম দেয় মোট ছয়টির মতো বাচ্চা। এক বছর ধরে বাচ্চা কোয়ালাকে দুধ পান করায় মা।
কোয়ালার একমাত্র খাবার ইউক্যালিপ্টাস পাতা। এ পাতা অনেক বিষাক্ত। কিন্তু কোয়ালার পেটে একধরনের বিশেষ ব্যাকটেরিয়া থাকে, যেটি বিষাক্ত পাতা হজম এবং বিষ অপসারণে সাহায্য করে। কিন্তু বাচ্চা কোয়ালার পেট সেসব বিষাক্ত পাতা হজম করার উপযোগী থাকে না। এজন্য মা সেই পাতাকে নিজের মুখে চিবিয়ে দিয়ে বাচ্চা জোয়িকে খাওয়ায়। পরবর্তী বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত তারা মায়ের সাথেই থাকে।
একবার অস্ট্রেলিয়ার রাস্তায় এক মা কোয়ালা দুর্ঘটনার শিকার হয়। দুর্ঘটনায় তার মুখের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ফুসফুস ছিদ্র হয়ে যায়। কোয়ালাটিকে উদ্ধার করে অস্ট্রেলিয়া জ্যু ওয়াইল্ডলাইফ হাসপাতালে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের সময় দেখা যায় ছয়মাস বয়সী বাচ্চা ফ্যান্টম তার মাকে কোনোভাবেই ছাড়ছে না। অপারেশনের সময় মাকে জড়িয়ে ধরেই ছিলো ফ্যান্টম!
অ্যালিগেটর
অ্যালিগেটর হচ্ছে কুমিরের একটি বৃহদাকার প্রজাতি। সাধারণ কুমির (Crocodile) -এর সাথে এর পার্থক্য হলো মাথা-চোয়ালের গড়নে। সাধারণ কুমিরের সম্মুখভাগ ইংরেজি ‘ভি’-শেপের আদলে হলেও অ্যালিগেটরের সম্মুখভাগ ‘ইউ’-শেপের। যা-ই হোক, অ্যালিগেটর খুবই মনোযোগী এবং যত্নশীল মা হয়ে থাকে। অ্যালিগেটর ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ডিমে তা দেয় না। এর পরিবর্তে মা অ্যালিগেটর শুকনো ডালপালা দিয়ে বাসা তৈরি করে, যাতে ডিম ফোটার জন্য প্রয়োজনীয় তাপ উৎপন্ন হয়। জুন থেকে জুলাই মাসে শুকনো জায়গায় বাসা বাঁধতে শুরু করে এরা। ত্রিশ থেকে চল্লিশটির মতো ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর মা সবসময় বাসার কাছেই থেকে যেন কোনো শত্রু ক্ষতি করতে না পারে।
ডিম ফুটে গেলে মা বাচ্চা অ্যালিগেটরদেরকে মুখের ভেতর নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। যতদিন পর্যন্ত না বাচ্চা বড় হয় এবং আত্মরক্ষার কৌশল আয়ত্ত করতে পারে, ততদিন পর্যন্ত বাচ্চাকে এভাবে মুখের ভেতর নিয়ে থাকে মা। এভাবে প্রায় এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত মা তার বাচ্চার সাথেই থাকে এবং শিকার ধরার নানা কৌশল শেখায়। কোনো বাচ্চা বিপদে পড়লে সাথে সাথেই মা ছুটে আসে।
পোলার বিয়ার (মেরু ভালুক)
সন্তান ধারণের জন্য মা মেরু ভালুককে বেশ কিছু বিষয় মেনে নিতে করতে হয়। প্রথমত তাকে প্রায় চারশো পাউন্ডের অধিক ওজন অর্জন করতে হয়। তারপর তাকে প্রায় কয়েকমাস না খেয়ে থাকতে হয়। এর সবই করতে হয় শুধুমাত্র সুস্থ-সবল বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য। মা ভালুকটি গর্ভধারণকালে গর্ত খোঁড়ে শীতযাপন করে। জন্মের সময় বাচ্চার ওজন হয়ে থাকে মাত্র এক পাউন্ডের মতো। একটি ভালুক সাধারণত একসাথে দু’টি বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে। নভেম্বর ও জানুয়ারিতে বাচ্চা জন্ম দেয় এরা।
এসময়ের মাইনাস চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে মা ভালুক তার শরীরের তাপমাত্রায় সন্তানকে উষ্ণ রাখে। তীব্র শীতে গর্তে থাকা অবস্থায় মা ভালুক না খেয়েই দিন কাটায়। মা নিজে উপোস থেকেও সন্তানকে নিজের দুধ খাইয়ে সুস্থ রাখে। বলে রাখা ভালো, বাবা ভালুক কিন্তু মিলনের পরপরই স্ত্রীকে ত্যাগ করে চলে যায়! তখন মা ভালুক একাই তার সন্তানের দেখভাল করে। যতদিন পর্যন্ত না বাচ্চারা গর্তের বাইরে গিয়ে টিকে থাকার উপযুক্ত হয়, ততদিন পর্যন্ত মা তার বাচ্চার যত্ন নেয়। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় টিকে থাকার কৌশল শেখাতে মা তার বাচ্চাদেরকে প্রায় দুই বছর ধরে কাছে রাখে।
চিতা বাঘ
চিতা বাঘের একসাথে চার থেকে ছয়টির মতো বাচ্চা হয়। মা চিতাকে একাই সব বাচ্চার দেখভাল করতে হয়। বাঘ হিংস্র প্রাণী হলেও এদের বাচ্চারা টিকে থাকার জন্য কোনো ধরনের কৌশলই জানে না। অন্য শিকারি প্রাণী, যেমন- সিংহ, হায়নার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মা চিতা প্রতি চারদিন পরপর বাচ্চাদের নতুন নতুন জায়গায় স্থানান্তর করে, যেন শিকারিরা বাচ্চাদের গায়ের গন্ধ আন্দাজ করতে না পারে।
বাচ্চা স্থানান্তরের এই কাজটি সন্তানের প্রতি মায়ের তীব্র ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। বাচ্চারা একটু বড় হয়ে গেলে শিকার ধরার কৌশল শেখাতে শুরু করে মা। শিকার ধরার কৌশল শেখাতে মা চিতার প্রায় দুই বছর লেগে যায়। চিতা বাঘ অন্য মাতৃহীন বাচ্চাও লালন পালন করে থাকে। স্মিথসোনিয়ানস কনজারভেশন বায়োলজি ইনস্টিটিউট একবার এক মা হারা চিতার বাচ্চাকে অন্য এক মা চিতার কাছে দিয়েছিলো। মা চিতা সেই বাচ্চাকে সাদরে গ্রহণ করে লালন-পালনও করেছিলো!
ওরাংওটাং
মা ও তার সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধনগুলোর একটির প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে ওরাংওটাং। প্রতি আট বছর অন্তর ওরাংওটাং বাচ্চা দিয়ে থাকে। জন্মের প্রথম দুই বছর খাদ্য এবং চলাচলের জন্য বাচ্চা ওরাংওটাং পুরোপুরি তার মায়ের উপর নির্ভর করে। ছয় থেকে সাত বছর পর্যন্ত মা তার সন্তানের দেখভালই শুধু করে না; বরং কীভাবে খাবার খুঁজতে হয়, কী এবং কীভাবে খেতে হয়, কীভাবে ঘুমানো জন্য আবাস তৈরি করতে হয়- এসবের প্রশিক্ষণও দেয়। মা তার জীবদ্দশায় অর্ধেকটা সময় গাছের উপরই কাটিয়ে দেয়।
মা ওরাংওটাং তার সন্তানের জন্য প্রতি রাতেই ঘুমানোর আবাস তৈরি করে দেয়। এভাবে একজন মাকে তার জীবদ্দশায় প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো আবাস তৈরি করতে হয়। মা তার সন্তানকে প্রায় সবসময়ই নিজের শরীরের সাথে যুক্ত করে রাখে। প্রায় পাঁচ বছর পর্যন্ত মা তার সন্তানকে নিজে বহন করে এবং আট বছর পর্যন্ত বুকের দুধ পান করায়। আট বছরের দিকে সন্তান তার মাকে ছেড়ে যায়। তবে মেয়ে সন্তানরা প্রায়ই মায়ের সাথে দেখা করতে চলে আসে! এভাবে ১৫ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত মা এবং মেয়ে সন্তানের সাক্ষাৎ চলে।
অক্টোপাস
স্ত্রী অক্টোপাস একসাথে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে প্রায় চল্লিশ দিনের মতো সময় লাগে। এ সময়টাতে মা সবসময়ই ডিমের কাছাকাছি থাকে। শত্রুর হাত থেকে ডিম রক্ষা করতে পাহারা দেয় এবং অক্সিজেন পর্যবেক্ষণ করে। ডিম ছেড়ে না দিয়ে মা বরং না খেয়েই সেখানে থাকে। দীর্ঘ দিন ডিম পাহারা দিতে গিয়ে না খেয়ে মরতে বসা অক্টোপাস শেষ অবধি বেঁচে থাকে নিজের শরীরের অংশ খেয়েই! তবুও মা তার ডিমের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হতে দেয় না।
মিরক্যাট
মিরক্যাট বিশ বা তার অধিক সংখ্যক একত্রে বসবাস করে। এরা গর্ত খুঁড়তে বেশ ওস্তাদ, কিন্তু অন্য প্রাণীর খোঁড়া গর্তই বেশি ব্যবহার করে। এদের গর্তে প্রায় ১৫টির মতো প্রবেশ এবং প্রস্থান পথ থাকে। এরা যোগাযোগের জন্য প্রায় ১০ রকমের শব্দ করতে পারে। স্ত্রী মিরক্যাট তাদের দলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। দলের মধ্য থেকে প্রভাবশালী যুগল সন্তান জন্ম দেয়। মিরক্যাট এক সাথে এক থেকে আটটি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ সময়ই তিন থেকে চারটি বাচ্চাই হয়। মিরক্যাট বাচ্চা জন্ম দেয় গর্তের ভেতর, যেন শিকারিরা আক্রমণ করতে না পারে। একটি বাচ্চার ওজন হয়ে থাকে ২৫ থেকে ৩৬ গ্রাম।
জন্মের সময় মিরক্যাট অন্ধ, বধির হয় এবং শরীরে একদমই লোম থাকে না। দলের সব সদস্যরাই বাচ্চা মিরক্যাটের দেখভাল এবং লালন-পালন করে থাকে। দেখভালের দায়িত্ব বেশি পালন করে থাকে অন্য স্ত্রী সদস্যরা। তারা বাচ্চাদের বিরূপ পরিবেশে টিকে থাকার নানা কৌশল শেখায়। প্রায় নয় সপ্তাহ পর্যন্ত মা তার বাচ্চাকে দুধ খাইয়ে থাকে। এক বছরের মধ্যে বাচ্চা মিরক্যাট পরিণত হয়ে যায় এবং বাচ্চা উৎপাদনের সামর্থ্য লাভ করে। যদি বাসা পরিবর্তনের দরকার পড়ে, তাহলে মিরক্যাট তার সন্তানকে কাঁধে তুলে নেয়। বাচ্চা মিরক্যাট পাখিদের খুব ভয় পায়। এমনকি উড়োজাহাজ দেখলেও তারা লুকিয়ে পড়ে। এজন্য মা মিরক্যাট সবসময় সতর্কতার তুঙ্গে রাখে! এই মিরক্যাটরা এক হাজার ফুট দূর থেকেও শিকারি ইগলের উপস্থিতি টের পায়।
হার্প সিল
হার্প সিল বরফের মতো কঠিন আবহাওয়ায় তার সন্তান জন্ম দেয় এবং লালন-পালন করে। তার মধ্যে আবার ভালুকের ভয় তো রয়েছেই। একটি নবজাতক সিলের ওজন ২৪ পাউন্ড হয়ে থাকে এবং দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে ৩১-৩৩ ইঞ্চি। মা তার বাচ্চার গায়ের গন্ধ শুঁকেই বাচ্চাকে চিনে নিতে পারে। হার্প সিল তার বাচ্চাকে টানা ১২ দিন দুধ পান করায়। এসময় মা কোনো কিছুই খায় না। ফলে মায়ের ওজন প্রতিদিন প্রায় সাত পাউন্ড করে কমতে থাকে। অন্যদিকে বাচ্চার ওজন প্রতিদিন পাঁচ পাউন্ড করে বাড়তে থাকে। টানা ১২ দিন নিজে না খেয়ে নিজের দেহ থেকে দুধ খাওয়ানোর মতো কাজ হার্প সিলই করে থাকে। এটা কি হার্প সিলের বিশেষত্ব, নাকি মাতৃত্বের সার্বজনীনত্ব?
জিরাফ
একটি জিরাফ সর্বোচ্চ বিশ ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে। এদের ঘাড় প্রায় ছয় ফুট। একটি স্ত্রী জিরাফ সাধারণত ৪-৫ বছর পর গর্ভধারণের উপযুক্ত হয়। সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য জিরাফের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। গর্ভধারণের পর বছরের যেকোনো সময়ই সন্তান হতে পারে। সন্তান জন্ম দেয়ার সম্ভাব্য সময়ের আগেই এরা নিজেদের লুকিয়ে ফেলে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- এরা প্রায় ৪৬৫ দিনের মতো সন্তান গর্ভে ধারণ করে। সদ্য জন্ম নেয়া জিরাফের উচ্চতা হয়ে থাকে ৬.৬ ফুট এবং ওজন হয়ে থাকে ১০০-১৫০ পাউন্ডের মতো। জন্ম নেয়ার পরপরই বাচ্চারা হাঁটতে পারে। কিন্তু তারপরও মা তার সন্তানকে এক সপ্তাহের মতো লুকিয়ে রাখে, যেন কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয়। বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর মা জিরাফ ঘুমায় না বললেই চলে। সবসময় সন্তানকে পাহারায় রাখে এবং পাহারার ফাঁকে ফাঁকে কয়েক মিনিটের জন্য ঘুমায়।