পাপুয়া নিউগিনির কোরোয়া সম্প্রদায়, ভারতের অঘোরী, কঙ্গোর বুতি পিগমি কিংবা ফরাসি পলিনেশিয়ার নুকু হিবা- এসব সম্প্রদায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকলেও একটি বৈশিষ্ট্য এদেরকে এক সুতায় বাঁধতে সক্ষম হয়েছে। সেটি হলো ক্যানিবালিজম বা স্বজাতিভক্ষণপ্রথা। চোখের সামনে জ্বলজ্যান্ত একজন মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে কিংবা কেটে টুকরো টুকরো করে এরা স্বাভাবিক মাংসের মতো গোগ্রাসে সাবাড় করে দিতে পারে। পৃথিবীর ভ্রমণপিপাসুরা তাই এসব সম্প্রদায়ের বাসস্থানগুলো এড়িয়ে চলে। হিসেবে সামান্য ভুল হয়ে গেলেই এদের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারাতে হবে তাদের।
২০১১ সালের দিকে ফরাসি পলিনেশিয়াতে স্টেফান রামিন নামক এক জার্মান পর্যটক নিখোঁজ হয়ে যান। পরবর্তীতে তদন্তের মাধ্যমে বেড়িয়ে আসলো এক ভয়ংকর তথ্য। ঐতিহ্যবাহী ছাগল শিকার উৎসবে অংশ নিয়ে এই পর্যটক স্থানীয় নুকু হিবা সম্প্রদায়ের বাসস্থানের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। এরপর তার আর কোনো সন্ধান মেলেনি। ধারণা করা হয়, নরখাদক নুকু হিবার কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।
নরখাদক সম্প্রদায়ের এই বৈশিষ্ট্য বেশ প্রাচীনকাল থেকে মানব ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। ক্ষুধা নিবারণের মাধ্যম, যুদ্ধ জয়ের উৎসব বা পূজা-অর্চনার অংশ হিসেবে এরা মানুষ ভক্ষণ করে থাকে। নরখাদকদের এই অসভ্যতার তথ্য জেনে অনেকের ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠবে। মনে মনে অনেকে প্রশ্ন করবেন, “মানুষের মতো এরকম বর্বর আর কোনো প্রাণী আছে কি না?”
তিক্ত হলেও সত্য, মানুষের মতো এরূপ বহু প্রাণীই স্বজাতিভক্ষণ করে থাকে। এমনকি, অনেক প্রজাতির জন্য এই বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে যুগ যুগ ধরে টিকে থাকার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। অর্থাৎ, প্রাণীজগতে এই ক্যানিবালিজম অস্বাভাবিক তো নয়, উল্টো বেঁচে থাকার তাগিদে এটি খুবই স্বাভাবিক এবং দরকারি বৈশিষ্ট্য। আমাদের আজকের আলোচনায় প্রাণীজগতে স্বজাতিভক্ষণ এবং এর কারণ অনুসন্ধানের নেপথ্যে উঠে আসবে বিচিত্র সব তথ্য।
ক্যানিবালিজম কেন স্বাভাবিক?
স্বজাতিভক্ষণের মতো বিদঘুটে কাণ্ডকারখানা নিয়ে মানুষ বহু বছর ধরে জল্পনা-কল্পনা মেতে উঠেছে। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে যে কত লোমহর্ষক থ্রিলার কিংবা এডভেঞ্চার উপন্যাস রচিত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। সাহিত্যের গণ্ডিতে জনপ্রিয় এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণার খাতা খুলেন লরেল ফক্স নামক এক পরিবেশবিদ। ১৯৭০ সালে তিনি ব্যাকসুইমার্স নামক কিছু মিঠা পানির পতঙ্গের উপর এই গবেষণা শুরু করেন। এর পূর্বে ক্যানিবালিজম নিয়ে বেশ কিছু জার্নাল প্রকাশিত হলেও সেগুলোর বিষয়বস্তু ছিল ক্যানিবাল প্রজাতিগুলোর বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ। লরেল ফক্স লক্ষ করলেন, ব্যাকসুইমার্সদের খাদ্যের প্রধান অংশ আসে স্বজাতিভক্ষণের মাধমে। এই পতঙ্গ যদি আরেক পতঙ্গকে ভক্ষণ করতে না পারে, তাহলে এরা শিশু অবস্থা থেকে পূর্ণবয়স্ক কীটে পরিণত হতে পারে না। ১৯৭৫ সালে ফক্স তার একটি জার্নালে দাবি করেন, ক্যানিবালিজম কোনো অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নয়। বরং এটি প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য গুণ।
পূর্বে ধারণা করা হতো, ক্যানিবালিজম শুধু মাংসাশী প্রাণীর মাঝে সীমাবদ্ধ। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এর ব্যাপ্তি মাংসাশী-তৃণভোজী দুই দলের মাঝেই বিস্তৃত। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে, কী কারণে তৃণভোজীরা হুট করে মাংস খাওয়া শুরু করলো? তাও নিজের প্রজাতির মাংস? এর কারণ হিসেবে লরেল ফক্স মনে করেন, জনসংখ্যার ঘনত্ব, স্থানীয় পরিবেশে বড় রকমের পরিবর্তন এদের মাংস মুখে তুলে নিতে বাধ্য করেছে। পরবর্তীতে দেখা গেলো, এই দুই কারণের বাইরেও অনেক কারণ রয়েছে যা ক্যানিবালিজমের আবির্ভাব ঘটাতে পারে।
অতিরিক্ত পুষ্টির সন্ধানে
টাইগার সালাম্যাণ্ডার নামক সরীসৃপের ক্ষেত্রে কিছু কিছু লার্ভা ক্যানিবাল হিসেবে গড়ে উঠে। এদেরকে চোখের দেখায় চিহ্নিত করা যায়। কারণ, অন্যান্য লার্ভার তুলনায় এরা আকারে কয়েকগুণ বড় হয়। এদের মুখের আকার প্রশস্থ। যখন সালাম্যাণ্ডার লার্ভার সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন এসব লার্ভার আবির্ভাব ঘটে। এরা নন-ক্যানিবাল সহোদরের মাংস ভক্ষণের মাধ্যমে জীবনধারণ করে। এর ফলে লার্ভার ঘনত্বও স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরকম বৈশিষ্ট্য বেত ব্যাঙের মাঝেও দেখা যায়। এরা লার্ভার পরিবর্তে ডিম ভক্ষণ করে থাকে।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করতে চাইলেন, এরা কোনো বাছবিচার ছাড়া ডিম খেতে আগ্রহী কি না? এদেরকে দেখতে একইরকম অন্য প্রজাতির ব্যাঙের ডিম আর বেত ব্যাঙের ডিম এনে দেওয়া হলো। দেখা গেলো, এরা অন্য ব্যাঙের ডিম ছুঁয়েও দেখেনি। স্বজাতিভক্ষণের ফলে অতিদ্রুত এরা বেড়ে উঠে। তবে এখানে ঘটনা শেষ নয়। পূর্ণবয়স্ক ব্যাঙের মাঝেও এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। মাঝারি থেকে ক্ষুদ্র আকারের বেত ব্যাঙরা বড়দের আহারে পরিণত হয়। এদের জীবদ্দশায় প্রায় ৬৪% খাদ্য আসে স্বজাতির মাংস থেকে।
শত্রু যখন মা
মায়ের মতো আপনজন এই ত্রিভুবনে আর কেউ নেই। সন্তান আর মায়ের মাঝে যে বন্ধন, তা কেবল মানুষ নয়, সকল প্রাণীর মাঝে ছড়িয়ে আছে। কোনো শিশু বিপদে পড়লে সবার প্রথমে ছুটে আসে মায়ের নিকট। কিন্তু যখন এই মা-ই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন কী উপায়? ঠিক এমনটি ঘটেছে স্লথ ভালুকের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল জু’ চিড়িয়াখানায় এক স্লথ ভালুক তার তিন ছানার মাঝে দুটিকে ভক্ষণ করে ফেলে। পরবর্তীতে চিড়িয়াখানা কর্মীরা তৃতীয় ছানাকে আলাদা করে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়। এই ঘটনায় তাজ্জব বনে যান অনেকে। যদিও এই বৈশিষ্ট্য এর আগেও প্রাণিজগতে দেখা গেছে, কিন্তু সরাসরি চোখের সামনে তা পর্যবেক্ষণ করার মতো ত্রাস বুঝি আর নেই! সন্তান ভক্ষণের মতো ভীতিকর ঘটনা ঘটে যখন মা তার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। দুর্বল সন্তানদের এই প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকায় মা সন্তান ভক্ষণ শুরু করেন। এর ফলে ভক্ষক মা বেশ লাভবান হন। সন্তান ভক্ষক র্যাটল স্নেকের কথাই ধরা যাক। এরা প্রয়োজন মনে করলে সব শাবক খেয়ে ফেলতে পারে। এর ফলে এরা দ্রুত নতুন করে ডিম পাড়তে সক্ষম হয়ে উঠে। কয়েক প্রজাতির সাপ রয়েছে যারা ক্ষুধার তাড়না সহ্য করতে না পেরে নিজের ডিম খাওয়া শুরু করে।
Gammarus duebeni নামক এক প্রকার চিংড়ির ক্ষেত্রেও এই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তবে এদের কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের সন্তান যদি Pleistophora mulleri নামক পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে এরা দ্বিগুণ পরিমাণ খাদ্য আহরণ শুরু করে যা মোটেও সুবিধাজনক নয়। ফলে মা চিংড়ি নিজের সন্তান ভক্ষণ করে নিজের পরিশ্রম লাঘব করে। এছাড়া শূকর, কাঁটাচয়ার মধ্যেও সন্তান ভক্ষণের বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়।
সন্তানই যখন ভক্ষক
কত বিচিত্র এই প্রাণিজগত। এখানে মা যেমন সন্তানকে ভক্ষণ করতে পারে, তেমনি এর বিপরীত ঘটনাও দেখা যায়। কিছু পোকামাকড়, বৃশ্চিক, মাকড়সা এবং নেমাটোড কৃমির ক্ষেত্রে এমন দেখা গেছে। কাঁকড়া মাকড়সা তার শাবককে অনিষিক্ত ডিম খেতে দেয়। কিন্তু ক্ষুধার্ত শাবক ডিম খেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। তখন তারা তাদের মাকে আক্রমণ করে এবং ভাগাভাগি করে কয়েক সপ্তাহ ধরে খেয়ে ফেলে। মায়ের এই আত্মত্যাগের কারণে তাদের সন্তানেরা সমসাময়িক অন্যান্য মাকড়সার চেয়ে বহুগুণ বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠে। এদের গড় আয়ুও অন্যদের চেয়ে বেশি হয়।
তবে অন্যান্য মাতৃভক্ষক প্রজাতির ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন সিসিলিয়ান নামক উভচরের দেখা যায়, এরা এদের মাকে হত্যা না করলে মায়ের মাংস খেয়ে বেড়ে উঠে। এক্ষেত্রে মায়ের দেহে কোনো সমস্যা হয় না। উল্টো টিকটিকির লেজের মতো দিব্যি নতুন মাংস গজিয়ে উঠে।
সঙ্গমরীতির অংশ যখন স্বজাতিভোজন
প্রাণিজগতের বিচিত্রতার একটি বিস্ময় হচ্ছে সঙ্গম সঙ্গীকে খেয়ে ফেলা। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় স্ত্রী প্রাণীটি পুরুষ সঙ্গীকে ভক্ষণ করে ফেলে। এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের জন্য সুপরিচিত হচ্ছে ম্যান্টিস বা দীর্ঘপদী ঘাসফড়িঙ। এরা পুরুষ পতঙ্গের মাথা খেয়ে ফেলে। মাথাবিহীন পুরুষ তারপরেও সঙ্গম চালিয়ে যেতে থাকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত।
অস্ট্রেলিয়ান রেডব্যাক মাকড়সার পুরুষরা আবার একটু স্বেচ্ছাসেবী গোছের। এরা সঙ্গমের সময় নিজে থেকে পুরো দেহ স্ত্রী মাকড়সার মুখের ভেতর ভরে দিয়ে তাকে ভক্ষণ করতে সহায়তা করে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর ফলে স্ত্রী প্রজাতির কী লাভ হচ্ছে? গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রাণীর পুরুষরা সঙ্গমকালে স্ত্রী কর্তৃক ভক্ষণের শিকার হন, তাদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রাণীরা যথেষ্ট শক্তিশালী হিসেবে বেড়ে উঠে।
তৃণভোজীরা যখন স্বজাতিখাদক
যারা ভাবছেন, স্বজাতির মাংস খাওয়া শুধু মাংসাশীদের মাঝে সীমাবদ্ধ রয়েছে, তারা ভুল ভাবছেন। উল্টো তৃণভোজীদের মাঝেও এই বৈশিষ্ট্যের দেখা মিলেছে। তাহলে দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন তৃণভোজীরা স্বজাতিভক্ষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। হ্যামস্টার, প্রেইরী কুকুর, শুঁয়োপোকা, জলহস্তীসহ বেশ কিছু প্রজাতির প্রাণী বিভিন্ন সময়ে স্বজাতির মাংস ভক্ষণ করে জীবনধারণ করে।
যারা প্রেইরী কুকুরের সাথে পরিচিত আছেন, তারা হয়তো চোখ কপালে তুলবেন। দেখতে ভীষণ আদুরে এবং নাদুস-নুদুস চেহারার প্রেইরী কুকুরদের মতো নিষ্পাপ প্রাণী বোধহয় আর একটি নেই। কিন্তু এরাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের (Natural Selection) কারণে সহোদরকে খেয়ে ফেলে। এর ফলে এদের পর্যাপ্ত ঘাস, লতা-পাতা খেয়ে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হ্যামস্টারের ক্ষেত্রে কারণটি একটু অদ্ভুত। এদের যদি টানা শস্যজাতীয় খাদ্য দেওয়া হয়, তাহলে এরা স্বজাতিভক্ষক হয়ে উঠে। তখন মা হ্যামস্টার তার ছানাদের মাংস চিবিয়ে খাওয়া শুরু করে। সেজন্য হ্যামস্টার পালনে আগ্রহীরা ভুলেও এদের শুধু শস্য খাইয়ে বিরক্ত করবেন না! তাহলে পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।
মুদ্রার ওপিঠ
ক্যানিবালিজম প্রকৃতির বেশ স্বাভাবিক একটি বৈশিষ্ট্য। প্রাণীরা নিজেদের টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলার তাগিদে এই ভয়ঙ্কর অস্ত্র নিজেদের মাঝে আয়ত্ত করে নিয়েছে। এর মানে এই নয়, ক্যানিবালিজম শুধুই এই প্রাণীদের উপকার করে। বরং প্রতিটি বিষয়ের মতো এরও কিছু অপকারী দিক রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই ধরা যাক, প্রাণীরা যখন সহোদর, মা বা স্বজাতি কারো মাংস খায়, তখন শিকারের দেহে থাকা বিভিন্ন রোগ-জীবাণু খাদকের দেহে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। এর ফলে খাদক প্রাণীটি সেসব রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে। এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হিসেবে পাপুয়া নিউগিনি অঞ্চলের ফোর উপজাতির কথা বলা যায়। মানব মস্তিষ্ক ভক্ষণের কারণে এই জাতির মাঝে কুরু রোগ ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণঘাতী কুরুর কারণে ফোর জাতির চিহ্ন পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছিলো। মানুষের ন্যায় রোগের কবলে পড়ে বন্যপ্রাণীরাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, একটি প্রজাতির বিবর্তন সার্থকতা বিচার হয় এরা নিজেদের বৈশিষ্ট্যধারী জিন কতটুকু ছড়িয়ে দিতে পারে তার উপর। সেটা প্রাণীর নিজের দেহ থেকে হোক, কিংবা পারিবারিক সদস্যের মাধ্যমে হোক। কিন্তু স্বজাতিভক্ষণের ফলে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধারক জিন প্রকৃতি থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়া দুর্বল জিনধারী প্রজাতির প্রাণীরা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হতে থাকে, যা কোনো প্রাণীর জন্যই সুখকর অভিজ্ঞতা নয়।
বিচিত্র আমাদের এই পৃথিবী। বিচিত্র এর মাঝে বসবাস করা সব প্রাণী। রুক্ষ পৃথিবীতে টিকে থাকার সংগ্রামে বিচিত্র এদের জীবনচিত্র। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় এরা এতটাই বদ্ধ পরিকর যে স্বজাতিভক্ষণের মতো ভয়াবহ পন্থা অবলম্বন করতেও এরা পিছপা হয়নি। অবশ্য ‘ভয়ঙ্কর’ বিশেষণ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমার কিছুটা আপত্তি আছে। আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে হয়তো সেটা ভয়ঙ্কর, কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে এটি স্বাভাবিক। বলতে গেলে, ক্যানিবালিজম প্রাণিজগতের অন্যতম বিস্ময়কর পন্থা। এটি প্রাণীর বিচক্ষণতার পরিচায়ক বটে।