হারিয়ে যাওয়া প্রাণীদের উৎস সন্ধানে

এই পৃথিবী এক রহস্যময়। রহস্য তার চারদিকে থাকা প্রাণীজগৎ নিয়েও। এ পৃথিবীতে থাকা নানা প্রজাতির প্রাণীর অধিকাংশই আমাদের অচেনা। অনেক প্রজাতিই আমাদের আবিষ্কারের আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় আট মিলিয়ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। কিন্তু যে হারে বিভিন্ন প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে, তাতে বিজ্ঞানীদের ধারণা এই যে, প্রায় এক মিলিয়ন প্রজাতির প্রাণী ২০৫০ সালের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

এই আবাসভূমিতে এমন কিছু প্রাণী ছিল, যাদের অস্তিত্ব আজ আর নেই বা কিছু কিছু প্রাণীর অস্তিত্ব থাকলেও তা বিলুপ্তির পথে। আজ থেকে প্রায় তিন-চারশো বছর আগেও সেসব প্রাণী এই পৃথিবীতে অবাধে ঘুরে বেড়াতো, আজ  তাদের অনেকেরই সিনেমা বা গল্পের বইয়ে দেখা মেলে। মনে নিশ্চয়ই আমার মতো আপনাদেরও প্রশ্ন জাগছে, কেমন ছিল সেসব প্রাণী দেখতে? তারা কি খেতো? কোথায় থাকতো আর কিভাবেই তারা হারিয়ে গেলো এই পৃথিবী থেকে? এরকমই কয়েকটি প্রাণীর গল্প নিয়ে সাজানো আজকের এই লেখা।

সি কাউ

বিলুপ্ত প্রাণী সি কাউ

প্রকৃতি বিজ্ঞানী জর্জ স্টেলার ১৭৪১ সালে বেরিং সি-র এমিয়াটিক উপকূলে এই প্রাণী আবিষ্কার করেন। স্টেলার আবিষ্কার করেছিলেন বলে একে ‘স্টেলার্স সি কাউ’-ও বলা হয়। এই প্রাণীটি সবসময় জলেই বাস করতো। তাদেরকে কখনও তীরে আসতো দেখা যেত না। এরা লম্বায় ২৫ ফুট এবং ওজন তিন টনের কাছাকাছি ছিল। গায়ের রঙ ছিল ওক গাছের ছালের মতো কালো। মাথাটা শরীরের তুলনায় ছোট। সামনে দু’টো ছোট পা আর তিমির মতো একটা লেজ।

এদের দেখতে অনেকটা বড় সিলমাছের মতো। এদের মুখগহ্বরে ছিল না কোনো দাঁত, দাঁতের জায়গায় উপর-নীচে দুটো শক্ত সাদা হাড় থাকতো। এরা সমুদ্রের নীচের গাছপালা খেতো। ১৭৬৮ সালের পর থেকে এই প্রাণী আর বিশেষ দেখা যায় না। সেসময় থেকেই এটিকে লুপ্ত প্রাণীর তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে ১৮৩০ সালে পোল্যান্ডের এক প্রকৃতি বিজ্ঞানী সি কাউ দেখেছিলেন। এমনকী ১৯৩২ সালেও রাশিয়ান নাবিকরা এই প্রাণীটি দেখেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। কে জানে আজও হয়তো পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে তারা লুকিয়ে আছে!

নীল তিমি

বিলুপ্ত প্রাণী নীল তিমি

বিশ্বের বৃহত্তম প্রাণী এই নীল তিমি। উনিশ শতকের শুরুতে প্রায় সব মহাসাগর, উপসাগরে বিপুল পরিমাণে দেখা যেত এই নীল তিমি। নীল তিমির সবচেয়ে বেশি দেখা মিলতো এন্টার্কটিকা মহাসাগরে, এরপর প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরে। এক শতাব্দীর ব্যবধানে শিকারীদের উৎপাতে এই প্রাণীটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই সামুদ্রিক প্রাণীটি লম্বায় ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতো, ওজন হতে পারে ১৮০ টন বা এরও বেশি।

১৯০০ সালের দিকে নীল তিমির তৈল  বিভিন্ন ওষধি কাজে ব্যবহারের জন্য ব্যাপকহারে নীল তিমি ধরতে থাকে মানুষ। তেল সংগ্রহে মানুষের আগ্রহের কারণে বিপুল সংখ্যক তিমি নিধন করা হয়। যে কারণে নীল তিমি আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে।

তবে ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগে নীল তিমি শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ২০০২ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী সারা বিশ্বে নীল তিমির সংখ্যা ধরা হয়েছিল ১২০০০, তবে এ সংখ্যা কমতির দিকে। আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা নীল তিমিকে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায় স্থান দিয়েছে।

থাইলাসিন

থাইলাসিন

বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ‘থাইলাসিন’ প্রাণীটি দেখতে অনেকটাই কুকুরের মতো, তবে লেজটা ক্যাঙ্গারুর। এদের গায়ের রঙ হলদেটে-খয়েরি থেকে গাঢ় খয়েরি আর পেটের কাছটা হালকা ক্রিম রঙের। মুখের কাছটা কুকুরের মতো হয় আর শরীরের শেষ প্রান্ত থেকে ক্যাঙারুর মতো সোজা লেজটা বেরোয়। পিঠের অংশ থেকে লেজ পর্যন্ত বাঘের মতো  ডোরাকাটা দাগ থাকে। এই ডোরা কাটা দাগ কম বয়সে অনেক বেশি স্পষ্ট। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা হালকা হয়ে গায়ের রঙের সাথে মিলে যায়। গায়ের লোম বেশ ঘন, নরম আর ১৫ মিলিমিটারের মতো লম্বা।

প্রথম অস্ট্রেলিয়ানরা নানা গুহা চিত্রে ও পাথরের গায়ে এই প্রাণীর ছবি আবিষ্কার করে। পরবর্তীতে গবেষণায় পাওয়া যায়, এদের আদি বাসস্থান ছিল অস্ট্রেলিয়ার নিউগিনিতে। তবে পরে এরা তাসমানিয়ার দিকে চলে আসে। তাই এদের ‘তাসমানিয়ান বাঘ’-ও বলা হয়।

এরা সাধারণত ৪-৬ ফুট লম্বা হয়। সবচেয়ে যে লম্বা থাইলাসিনটি পাওয়া গিয়েছিল, সেটি ৯.৫ ফুঁট লম্বা ছিল। তাসমানিয়ানের এই বাঘকে অনেকেই  হায়ানার সঙ্গে তুলনা করেন। কিছু বিজ্ঞানীর মতে থাইলাসিনের ঘ্রাণশক্তি কুকুরের মতো প্রখর। কিন্ত পরে থাইলাসিনের মস্তিস্ক গবেষণা করে দেখা যায়, এদের ঘ্রাণজ শিরা তেমন উন্নত নয়। এরা বাঘের মতো দ্রুতগতিতে ছুটতেও পারতো না। তাই এরা অধিকাংশ সময়ে তাসমানিয়ান এমু শিকার করে খেতো। কারণ এমুরা উড়তে পারে না। শেষ থাইলাসিনটিকে ১৯৩০ সালে মাওবানায় একজন তাসমানিয়ান কৃষক দেখতে পায়। দেখার সাথে সাথেই নাকি তিনি প্রাণীটিকে মেরে ফেলেন।

রাজ শকুন

বিলুপ্ত পাখি রাজ শকুন

পৃথিবীতে প্রায় ১৮ প্রজাতির শকুন দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার পূর্ব গোলার্ধে ১১ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রায় ৬ প্রজাতির শকুন রয়েছে, এর মধ্যে ৪ প্রজাতি স্থায়ী আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। তবে রাজ শকুন আজ বিলুপ্তির পথে।

এ প্রজাতির শকুন মাঝারী আকৃতির, দৈর্ঘ্য ৭৬ থেকে ৮৬ সে.মি. (৩০ থেকে ৩৪ ইঞ্চি), ওজন ৩.৫–৬.৩ কেজি এবং পাখার দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৯৯–২.৬ মি.। প্রাপ্তবয়স্ক এশীয় রাজ শকুনের ন্যাড়া আকৃতির মাথা সুষ্পষ্টভাবে ঘন লাল থেকে হালকা কমলা রঙ দৃশ্যমান। টাকমাথা, মাথার নীচে মোরগ সাদৃশ্য ঝুলন্ত লাল চামড়া। তবে গলা ও পা সাধারণ শকুনের মতো লম্বা নয়। বুকের অংশ সাদা। দেহের পালক ধূসর রঙের সাথে কাল রঙের সংমিশ্রণ দেখা যায়।  লিঙ্গভেদে এ প্রজাতির শকুনে চোখের রঙে ভিন্নতা লক্ষণীয়। পুরুষজাতীয় এশীয় রাজ শকুনের চোখ সাদাটে এবং স্ত্রী শকুনের ঘন বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। সাধারণ শকুনের মতো ততো কুৎসিত নয়।

প্রধানত  এরা শবভোজী। রাজ শকুন তীক্ষ্ম দৃষ্টির শিকারি পাখি। এদের প্রজনন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তারা কিভাবে হারিয়ে গেলো সে সম্পর্কে খুব একটা জানা না গেলেও খাদ্যাভাব, বাসস্থানের অভাব আর প্রজনন অক্ষমতার কারণে এ প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে বলে প্রাণী বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

ডোডো পাখি

ডোডো পাখি

১৫৯৮ সালে পর্তুগিজ নাবিকরা যখন মারিশাস দ্বীপে পৌঁছায়, তখন এক অজানা প্রজাতির পাখি এসে তাদের স্বাগত জানায় এবং মানুষ দেখে খুব খুশিও হয়। খুব তাড়াতাড়ি তারা মানুষের পোষও মেনে যায়। এরাই হলো ডোডো পাখি। এদের ওজন ছিল ২০-২২ কেজি। এরা লতাপাতা খেয়েই বেঁচে থাকতে পারতো। এদের একটা লম্বা হুকের মতো বাঁকানো ঠোঁট, আর শরীরটা ছিল ছাই রঙের, পিছনের দিকে লেজের কাছে থাকতো একগুচ্ছ সাদা পালক।

পাখি হলেও এদের উড়ার ক্ষমতা ছিল না। কারণ এদের দুর্বল ডানাগুলো শরীরের ভার ধরে রাখতে পারতো না। তাই ডোডো পাখিরা হেঁটে-হেঁটেই একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতো। মাটিতেই ডিম পাড়তো। কিন্তু ডোডো পাখিদের এই দুর্বলতা ও বন্ধুত্বের সুযোগ নিল পর্তুগিজরা। তারা ডোডো শিকার করে খেতে লাগলো, যদিও ডোডোর মাংস খুব শক্ত ছিল। এমনকি পর্তুগিজদের পোষা কুকুরগুলোও ডোডো পাখির ডিম খেতে লাগলো। ফলে এরা ক্রমে নিশ্চিহ্ন হতে লাগলো। ১৬৮১ সালের পর থেকে আর কোনো ডোডো পাখি দেখা যায়নি।

কুয়াগ্গা

কুয়াগ্গা

এই প্রাণীর নামকরণ করা হয় এর গলার ডাক থেকে। এরা ‘কুয়াহা’-‘কুয়াহা’ করে ডাকতো। তখন থেকেই এদের নাম হয়ে যায় ‘কুয়াগ্গা’। ১৮৪০ সাল নাগাদ এই প্রাণীটি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ অঞ্চল ও অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের দক্ষিণ দিকে বেশ পরিচিত ছিল। ভাল চামড়ার জন্য কুয়াগ্গা শিকার বেড়ে যাওয়ায় এরকম একটা নিরীহ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়।

প্রাণীটি দেখতে অর্ধেকটা জেব্রা আর অর্ধেকটা ঘোড়ার মতো। মাথায়, ঘাড়ে ও পিঠে জেব্রার মতো সাদা-কালো দাগ। পেটের দিকটায় হালকা খয়েরি রঙের হয়।

কুয়াগ্গা একমাত্র বিলুপ্ত প্রাণী, যার ডিএনএ স্টাডি করা হয়েছিল। ১৮৭০ সালে এই প্রাণীটির জীবিত অবস্থায় শেষ ছবি তোলা হয়। নমুনা হিসেবে সংরক্ষিত একমাত্র কুয়াগ্গাটি ১৮৮৩ সালে আমস্টারডামের ‘আর্টিস মাজিস্ট্রা’ চিড়িয়াখানায় মারা যায়।

ম্যামথ

ম্যামথ

 বরফযুগের বিলুপ্ত প্রাণী লোমশ হাতি  ম্যামথ। খাওয়ার পানির অভাবে এই প্রাণীর শেষ দলটি বিলুপ্ত হয়ে যায় বলে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সাধারণভাবে দেখতে ম্যামথরা ছিল লম্বা, বাঁকান শুঁড় বিশিষ্ট। তবে উত্তর গোলার্ধের প্রজাতিগুলো ছিল লম্বা চুলবিশিষ্ট। প্রায় ৫ মিলিয়ন থেকে ৪,৫০০ বছর পূর্বে তারা প্লায়োসিন যুগ থেকে হলোসিন যুগের মাঝামাঝি কালে এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকায় বাস করতো। এই প্রাণীটিকে হাতির পূর্বরূপ বলে মনে করা হয়।

লোমশ এই প্রাণীর অধিকাংশেরই আজ থেকে সাড়ে ১০ হাজার বছর আগে মৃত্যু ঘটে। তবে তাদের একটি দল পরবর্তী পাঁচ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে বেরিং সাগরের কাছে সেন্ট পল দ্বীপে টিকে ছিল। উষ্ণ জলবায়ুর কারণে সেখানকার জলাশয়গুলোতে পানি কমে যায় । ফলে তৃষ্ণা নিবারণ করতে না পেরে ম্যামথের এই শেষ দলটির মৃত্যু হয়।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিকার ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে ম্যামথ নিশ্চিহ্ন হওয়ার প্রধান কারণ। তবে আলাস্কার দ্বীপটিতে যে দলটি টিকে গিয়েছিল, তাদের সমস্যা ছিল অন্য রকম। বরফযুগের শেষে পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ  হতে থাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকে। ফলে তাদের আবাসস্থল দ্বীপটির আকারও ছোট হয়ে যেতে থাকে। এতে দ্বীপটিতে থাকা প্রচুর জলাশয় সমুদ্রে হারিয়ে যায়। আর যেগুলো অবশিষ্ট ছিল, তাতে ঢুকে যায় লোনা পানি। দ্বীপটিতে সুপেয় পানির অভাব দেখা দেয়।

এখনকার একটি হাতির মতোই প্রতিদিন ৭০ থেকে ২০০ লিটার পানি দরকার হতো ম্যামথদেরও।  জলাশয় নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ম্যামথেরা পানির সন্ধানে নির্বিচারে বন নষ্ট করতে থাকে। এভাবে তারা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।

শুধু এরাই নয়, আরো অনেক প্রাণী ছিল পৃথিবীতে, যেমন- আইরিশ হরিণ, গুহা সিংহ, সোনালী ব্যাঙ ইত্যাদি যারা আজ বিলুপ্ত। প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে জীবিত প্রাণীর থেকে বিলুপ্ত প্রাণীর সংখ্যা বেশি। আজ থেকে প্রায় ১০-১২ বছর আগে আমাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক চড়ুইপাখি দেখা যেতো। কিন্তু এখন ততো দেখা যায় না। মোবাইল ফোনের ব্যবহারই এর কারণ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

আজকাল বন্যপ্রাণীর সংখ্যা দিনদিন কমছে। একসময় এই উপমহাদেশে ব্যাপক হারে চিতা বাঘ দেখা যেতো, আজ তারা বিপন্নের পথে। প্রতিনিয়ত জঙ্গল কেটে বসতি গড়ে উঠতে থাকায় এ সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। মানুষ সব জায়গা নিজের করে নিচ্ছে, সাথে সাথে নিজের অধিকার হারাচ্ছে প্রাণীরা। আমাদের ভুললে চলবে না,এই পৃথিবীটা যতটা আমাদের, ততোটাই কিন্তু এই প্রাণীদের।

তথ্যসূত্র

১) huffingtonpost.com/2013/10/22/11-extinct-animals_n_4078988.html

২) onekindplanet.org/top-10/extinct/

৩) list25.com/25-extinct-animals-that-scientists-want-to-de-extinct/

৪) mom.me/pets/19184-fascinating-extinct-animals/

Related Articles

Exit mobile version