স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী দুই দশক ধরে একমেরু বিশ্বে হেজিমন ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একবিংশ শতকের শুরুর দিকে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এখন ভৌগলিক, সামরিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন কারণে এককভাবে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান বিশ্ব একমেরু বা দ্বিমেরু নয়, বরং বহুমেরু বিশ্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে একক নয়, বরং বহু সুপারপাওয়ারের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এর মধ্যে চীন অন্যতম এক সুপারপাওয়ার। চীন বর্তমানে সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সবদিক থেকে খুব দ্রুত শক্তিশালী হচ্ছে। আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে চীনের সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ, চীনের অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধি- এসব চীনের সম্ভবনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। চীন ইতিমধ্যেই আঞ্চলিকভাবে অনেক শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলেছে। বর্তমানে বড় একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে- চীন কি ভবিষ্যত বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একক নেতৃত্ব বা হেজিমন হতে পারে?
হেজিমন কী?
হেজিমন হচ্ছে এমন একটি রাষ্ট্র যে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নিয়ম বাস্তবায়ন ও সেই ব্যবস্থায় এককভাবে আধিপত্য বিস্তারের ক্ষমতা রাখে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি হচ্ছে শক্তির রাজনীতি, যেখানে প্রত্যেক রাষ্ট্র তাদের নিজস্ব স্বার্থের কথা চিন্তা করে, এবং রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের ক্ষমতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত থাকে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কিছু রাষ্ট্র আছে, যে রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব-প্রতিপত্তি তুলমনামূলক বেশি। ইতালিয়ান দার্শনিক আন্তোনিও গ্রামসির মতে, হেজিমনি হলো কোনো একটি গোষ্ঠীর মিত্র ও সাবঅল্টার্ন গোষ্ঠীর উপর ‘সাংস্কৃতিক, নৈতিক এবং আদর্শিক’ নেতৃত্ব।
জোসেফ নাই (Joseph Nye) বলেন, “হেজিমনি শব্দটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা হয়, যেখানে একটি রাষ্ট্রের অন্যদের তুলনায় যথেষ্ট বেশি ক্ষমতা আছে বলে মনে হয়। প্রায়ই হেজিমনি বিভিন্ন আচরণ এবং নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।“
যখন দুইয়ের অধিক রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রভাবশালী হয়, তখন তাকে মাল্টিপোলার বা বহুমেরু বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলা হয়। কিন্ডলবার্গার তার ‘The World in Depression, 1929-1939‘ বইয়ে বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ববর্তী বিশ্বে একক কোনো নেতৃত্ব ছিল না, বরং বহু নেতৃত্বের অস্তিত্ব ছিল। তিনি হেজিমনের অনুপস্থিতিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ হিসেবে দায়ী করেন। আবার, স্নায়ুযুদ্ধকালীন বিশ্বে গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের নেতা সোভিয়েত ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব ছিল সম-পর্যায়ের, যেটাকে বাইপোলার বা দ্বিমেরু ব্যবস্থা বলা হয়। এ ধরনের ব্যবস্থায় শক্তিসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং কোনো হেজিমন থাকে না। সেজন্য, তখনও বিশ্বে একক কোনো রাষ্ট্র হেজিমন ছিল না । আবার, স্নায়ুযুদ্ধের পরবর্তী দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল পুরো বিশ্বের একক ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র, অর্থাৎ হেজিমন। যখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোনো রাষ্ট্র এককভাবে নেতৃত্ব দেয়, তখনই সেই রাষ্ট্রকে হেজিমন বলা হয়।
একটি রাষ্ট্রকে আমরা তখনই হেজিমন বলব, যখন তার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যেগুলো দ্বারা রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অর্থাৎ, হেজিমন রাষ্ট্র হতে গেলে একটি রাষ্ট্রের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়।
হেজিমন রাষ্ট্র হওয়ার শর্তসমূহ
একটি রাষ্ট্রকে তখনই হেজিমন বলা যায়, যখন রাষ্ট্রটির কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে, যার জন্য রাষ্ট্রটি এতটা প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।
১. আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নিয়মগুলো প্রয়োগ করার ক্ষমতা ও সক্ষমতা: আন্তর্জাতিক রাজনীতি তথা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নিয়ম প্রয়োগ করার মতো ক্ষমতা ও সক্ষমতা হেজিমনের থাকতে হবে। হেজিমনের রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি, এবং সুপিরিয়র ন্যাশনাল পাওয়ার থাকতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক সংগঠন ও নতুন আন্তর্জাতিক নিয়ম তৈরি করতে পারে। হেজিমনকে শুধু আত্মরক্ষার কথা ভেবে সামরিক শক্তি বাড়ানো যাবে না। তার অনুগত রাষ্ট্রের দুর্দিনে যাতে সামরিক সহায়তা পাঠাতে পারে সেটাও ভাবতে হয়। শুধু বিশাল সেনাবাহিনী নয়, হেজিমনকে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ও ভৌগোলিক কারণে যাতে নৌপথে আক্রমণ না আসে সেজন্য শক্তিশালী নৌশক্তিও থাকতে হয়। যেমন- ১৯৪৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো প্রতিষ্ঠা, তার বিপরীতে ১৯৫৫ সালে ওয়ারশ প্যাক্ট গঠন। তাছাড়া আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এগুলো ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে অনেকাংশে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।
২. বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি: একটি রাষ্ট্রকে শুধু সামরিক বা রাজনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী বা সামর্থ্যবান হলে হবে না। তাকে অবশ্যই একটি বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির অধিকারী হতে হবে। কারণ অর্থনীতি আন্তর্জাতিক রাজনীতির বড় একটি নিয়ামত। কার্ল মার্ক্স অর্থনীতিকে সমাজের মৌল কাঠামো বলেছেন। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের অন্যতম কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক দুর্বলতা। হেজিমন রাষ্ট্রকে বিভিন্ন সময় অন্য রাষ্ট্রকে বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা দিতে হয়। তাছাড়া, নিজের দেশের জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। কারণ, জনগণের সমর্থন ছাড়া রাষ্ট্রের ক্ষমতাও স্থায়ী হবে না।
৩. অন্তত একটি নেতৃস্থানীয় অর্থনৈতিক বা প্রযুক্তিগত খাতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী আধিপত্য: বর্তমানে কোনো রাষ্ট্রই এককভাবে স্বাবলম্বী নয়, বরং অন্য রাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে হয়। হেজিমন রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এমন কোনো খাত থাকতে হবে যে খাতে সেই রাষ্ট্র একক আধিপত্য বিস্তারকারী। তাছাড়া, যখন হেজিমনের অর্থনীতির উপর চাপ আসবে, তখন সে যেন সেই খাতের উপর নির্ভর করে তার অর্থনীতিকে স্বচ্ছল রাখতে পারে।
৪. নেতৃত্বের ইচ্ছের সাথে সামর্থ্য: একটি রাষ্ট্রকে হেজিমন হতে হলে অবশ্যই সেই রাষ্ট্রের বিশ্বে নেতৃত্বদানের ইচ্ছা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো দুর্বল রাষ্ট্র ইচ্ছে করলেই হেজিমন হতে পারবে এমন না। রাষ্ট্রের অবশ্যই ইচ্ছার সাথে সামর্থ্যও থাকতে হবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ে গ্রেট ব্রিটেনের ইচ্ছা ছিল নেতৃত্ব দেয়ার, কিন্তু তার সামর্থ্য ছিল না। রাষ্ট্রের অবশ্যই সেই সামর্থ থাকতে হবে যেন রাষ্ট্রটি তার নেতৃত্বের দ্বারা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারে। যেখানে শক্তি সাম্যের বিপরীত অবস্থা বিরাজ করবে। গ্রেট ব্রিটেন এজন্য ব্যর্থ হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ববর্তী পৃথিবীর হেজিমন হতে।
চীনের সম্ভাবনা কতটুকু
বর্তমান বিশ্বে চীন চতুর্থ বৃহত্তর রাষ্ট্র ও একটি বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। চীনকে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চীনের বর্তমান জিডিপির পরিমাণ ২০.৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বর্তমানে দ্বিতীয় বৃহৎ জিডিপি। আমেরিকার জিডিপি পৃথিবীর বৃহৎ জিডিপি হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে চীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। চীনের রয়েছে প্রচুর জনবল, যাদের চিন্তাশক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা অনেক বেশি। কংগ্রেসিয়ান বাজেট অফিস অনুযায়ী, আমেরিকার জাতীয় ঋণ জিডিপির ৭১৭% ছাড়িয়ে যাবে ২০৮০ সালের মধ্যে। চীন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকেও আমেরিকার থেকে শক্তিশালী। ইদানীং চীন তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে। সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- চীন কি ভবিষ্যতে গ্লোবাল হেজিমন হতে পারে?
হেজিমন হতে হলে একটি রাষ্ট্রের কোন ধরনের বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে সেই ব্যাপারে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। চীন বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিলের স্থায়ী সদস্য। চীন তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন করছে। তাদের বর্তমান সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ১৪৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যেখানে আমেরিকা ব্যয় করছে ৭৮২ বিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ৬৫.৯ বিলিয়ন ডলার, এবং ভারত ৭৬.৬ বিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে চীন অন্য রাষ্ট্রগুলোর থেকে এগিয়ে থাকলেও আমেরিকার সমপর্যায়েও যেতে পারেনি।
বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতা অর্জন করতে হলে একটি রাষ্ট্রকে অবশ্যই দেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সমর্থন আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো এগিয়ে আছে। চীনের রাজনৈতিক পদ্ধতি এতটা স্থির নয়। তাছাড়া, জাতীয় শক্তির আধিপত্যে এখনও চীন অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে পিছিয়ে আছে। ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড ভাইনের মতে, ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৮০টি দেশে প্রায় ৭৫০টি সামরিক ঘাঁটি ছিল, যেখানে চীনের সামরিক ঘাঁটি আছে মাত্র কয়েকটি দেশে। চীনের রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ২১ লাখ সৈন্যের সেনাবাহিনী, কিন্তু তারা আমেরিকা, রাশিয়ার মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেই।
চীন ১৯৭০ সালের পর থেকে বিশ্বে তার প্রভাব দেখানো শুরু করেছে। বর্তমানে আমরা যে সুপারপাওয়ার চীনকে দেখতে পাই, তার শুরু তখন থেকেই। বলা হয়, বৃহৎ অর্থনীতি ও বৃহৎ সামরিক বাহিনী থাকলে যেকোনো রাষ্ট্র হেজিমন হতে পারে। চীনের কাছে দুই বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান থাকলেও পৃথিবীর অন্য রাষ্ট্রের তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয়।
চীন অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ চীন পৃথিবীর মোট উৎপাদনের ৩০ ভাগ করবে। চীন তার ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ‘ (BRI) এর মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকার ৭০টির বেশি রাষ্ট্রের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। এর উদ্দেশ্য বেইজিংয়ের সাথে কৌশলগতভাবে দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক একত্রীকরণের নামে তিনটি মহাদেশে নতুন অবকাঠামো প্রকল্প তৈরি করা।
কিন্তু, চীনের বড় একটি দুর্বল দিক হচ্ছে- দেশটির উৎপাদিত পণ্যের বড় অংশ কিনে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সাথে চীনের নির্ভরশীল সম্পর্ক বিদ্যমান। চীন বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো প্রকল্প দ্বারা আঞ্চলিক বাণিজ্যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করছে। কিন্তু তারা একপাক্ষিকভাবে রপ্তানীমুখী দেশ হওয়ায় তার অর্থনীতির অগ্রগতি নানারকম ট্যারিফ, কারেন্সি ম্যানিপুলেশনের শিকার হতে হয়। বর্তমানে চীনের যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার রয়েছে (৯.৫%), পরবর্তী ৩০ বছরে তা তিনগুণ হবে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোতে আমেরিকার মতো চীনের তেমন প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই। সেজন্য আঞ্চলিক কিছু বাণিজ্যিক জোট গঠন করেছে চীন। যেমন- রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি)। তাছাড়া, চীনের রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জনসম্পদ।
চীন তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ উইঘুর ও অন্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্গন, অন্যায্য বাণিজ্য পদ্ধতিসহ নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাতে রয়েছে। তাছাড়া, চীনা ঋণের ফাঁদ দেশটিকে বেশ বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে।
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং বলেছেন, চীন যতই শক্তিশালী হয়ে উঠুক না কেন, কখনোই আধিপত্য কামনা করবে না। তিনি এরকম কথা বললেও চীনের আচরণ দেখে বোঝাই যায় যে তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব ধরে রাখতে চায়। এটা অনস্বীকার্য যে, চীন বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি প্রভাবশালী শক্তি, এবং আঞ্চলিক হেজিমন রাষ্ট্র। কিন্তু চীন অর্থনীতি ও সামরিক কোনোদিক থেকেই আমেরিকার সমপর্যায়ের নয়। যেহেতু আমেরিকার চেয়ে পিছিয়ে, সেক্ষেত্রে চীনের গ্লোবাল হেজিমন হওয়াটা বেশ কঠিন। চীনের আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে আন্তর্জাতিক হেজিমন হতে হলে। যদিও অভ্যন্তরীণ অনেক সমস্যা চীনের জন্য বাধা হয়ে আছে, তবুও তাদের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। আগামী কয়েক দশকে সম্ভব না হলেও অদূর ভবিষ্যতে চীনের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।