“যদি তুমি শান্তি চাও, তবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।”
বিশ্ব জুড়ে সামরিক বিষয়ের সাথে এই প্রবাদটি বহুল প্রচলিত। এর প্রচলন এত বিস্তৃত যে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই তা মানে। পৃথিবীর দরিদ্র থেকে ধনী সব দেশেই নিজেদের সামরিক খাতকে শক্তিশালী করার জন্য অর্থ ব্যয় করছে। ২০১৯ সালে এসে যা সম্মিলিতভাবে ১৯১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে।
যারা অস্ত্র ক্রয়ের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয়কে মদদ দিচ্ছে তাদের যুক্তি হচ্ছে আগামীতে আমাদের জন্য অসংখ্য বিপদ অপেক্ষা করছে। সেসব বিপদ হতে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে আমরা সামরিক খাতে এই অর্থ ব্যয় করছি। তবে বিষয়টি এত সহজ নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে আরো অনেক জটিল বিষয়।
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে যে কেউ বলতে পারেন যে একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং তার নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য সামরিক শক্তির প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না। কিন্তু বিপুল অঙ্কের অস্ত্র ক্রয়ের মাধ্যমে কী একটি দেশের নিরাপত্তা প্রকৃত অর্থেই বৃদ্ধি পায়? উত্তর হচ্ছে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে তা কোনো দেশের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। যাকে বলা যায় ‘সিকিউরিটি ডিলেমা’ বা ‘নিরাপত্তাজনিত উভয়সঙ্কট’। এর সাথে দুর্নীতির মতো অশুভ কাজ তো আছেই।
এবার জানা প্রয়োজন বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ কত, কোন কোন দেশ সামরিক খাতে সর্বোচ্চ ব্যয় করে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্ব খাতে বিশ্বজুড়ে কত অর্থ ব্যয় করা হয়।
সামরিক খাতে বিশ্বজুড়ে কত অর্থ ব্যয় করা হয়?
২০১৯ সালে বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় ছিল ১৯১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০১৮ সালের থেকে ৩.৬ শতাংশ বেশি এবং ২০১০ সালের চেয়ে ৭.২ শতাংশ। এই তথ্য প্রকাশ করেছে সুইডেন ভিত্তিক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপরি)।
২০১৯ সালে সামরিক খাতে যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তা বৈশ্বিক জিডিপির ২.২ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে মাথাপিছু সামরিক ব্যয়ের পরিমাণও। ২০১৮ সালে সারাবিশ্বে মাথাপিছু সামরিক ব্যয় ছিল ২৪৩ মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ২৪৯ মার্কিন ডলারে। বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ১.১ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির হার।
আগের মতোই গত বছরও সামরিক খাতে ব্যয়ের দিকে সবার প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মোট ব্যয় ছিল ৭৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপরই রয়েছে চীন। তারা ব্যয় করেছে ২৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা পূর্বের চেয়ে ৫.১ শতাংশ বেশি। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। মোদী সরকার গত বছর সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৭১.১ বিলিয়ন ডলার। যা আগের চেয়ে ৬.৮ শতাংশ বেশি। শীর্ষ পাঁচ দেশের বাকি দুই দেশ হলো রাশিয়া এবং সৌদি আরব। এই পাঁচ দেশ মিলে মোট ব্যয় করেছে ১১৯১ বিলিয়ন ডলার।
সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যান যদি দেখা যায় তাহলে সবার প্রথমে রয়েছে ইউরোপ। তাদের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ শতাংশ। এরপর ৪.৮ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চল। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আমেরিকা। তাদের সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৪.৫ শতাংশ। এরপরই রয়েছে আফ্রিকা। মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে সিপরির কাছে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে তাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে সেই হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে সামরিক খাতে ব্যয় ৭.৫ শতাংশ কমে গেছে।
আফ্রিকার দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া যাক। পুরো আফ্রিকা অঞ্চলে সামরিক খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৪১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বৈশ্বিকভাবে মোট ব্যয়ের ২.১ শতাংশ। পাঁচ বছর পর আফ্রিকা অঞ্চলে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে৷ তবে পুরো দশকের হিসেব করলে আগের দশকের চেয়ে ১৭ শতাংশ সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর মধ্যে উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর সামরিক ব্যয় সর্বোচ্চ। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মরক্কো, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, লিবিয়া, মিসর এবং সুদান। এর মধ্যে আলজেরিয়া এককভাবে ২০১৯ সালে সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ১০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা পুরো আফ্রিকা অঞ্চলের ব্যয় করা অর্থের ৪৪ ভাগ।
শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়
ইউনেস্কোর সর্বশেষ গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট বলছে বৈশ্বিকভাবে শিক্ষা খাতে মোট ব্যয় প্রায় ৪.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এটি মূলত সরকারি, পারিবারিক এবং দাতাদের প্রদান করা অর্থের সম্মিলিত রূপ৷ তবে যেসব দেশের মাথাপিছু আয় বেশি সেসব দেশেই মোট ব্যয় হয়েছে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। বিপরীতে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলার। যা মোট ব্যয় করা অর্থের মাত্র ০.৫ শতাংশ। যদিও স্কুলগামী কিংবা স্কুলে পড়ার বয়সী শিশুদের সংখ্যা উচ্চ আয়ের দেশগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করা হয়েছে ৭.৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০১৬ সালে ছিল ৭.৬ ট্রিলিয়ন ডলার। গড়ে মাথাপিছু স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করা হয়েছে ১০৮০ ডলার। তবে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে যেখানে মাথাপিছু ব্যয় করা হয়েছে ২৯৩৭ মার্কিন, সেখানে নিম্ন আয়ের দেশগুলো একই খাতে খরচ করা হয়েছে মাত্র ৪১ মার্কিন ডলার। যা প্রায় ৭০ গুণ কম।
স্বাভাবিকভাবে দেখা যাচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সামরিক খাতের চেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে। যা যথেষ্ট না। কারণ ইউনেস্কোর মতে প্রত্যেক দেশের জিডিপির ৪-৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করা উচিত। কিন্তু এই শর্ত পূরণ করেছে এমন দেশের সংখ্যা খুবই। এ বিষয়ে সবাই একমত হবেন যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তার অঙ্ক বিশাল হলেও তা এখনো প্রয়োজনের চেয়ে কম। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে।
সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করলে?
স্নায়ুযুদ্ধের সময় ন্যাটো এবং ওয়ারশ প্যাক্ট উভয়েই সামরিক খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। প্রায় ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। এর মধ্যে কনভেনশনাল বা প্রচলিত এবং নিউক্লিয়ার উভয় ধরনের অস্ত্রই ছিল।
উভয় পক্ষই অপর পক্ষের মনোভাব নিয়ে আতঙ্কিত ছিল এবং দুই পক্ষই পারমাণবিক যুদ্ধের তত্ত্ব অনুসন্ধানে ব্যস্ত ছিল। সর্বোপরি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়ের সক্ষমতা অর্জনই ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মূল লক্ষ্য। এর ফলে তাদের নিজেদের তো বটেই, সাথে অন্য দেশগুলোও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে গিয়েছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে যখন স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটলো তখন পশ্চিমা বিশ্বের সাধারণ মানুষ দেখতে পেলেন সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে ন্যাটো পুরোপুরি অন্ধকারে ছিল। তাদের নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। তবে ন্যাটো যা করেছে তা ছিল অতিরঞ্জিত। ফলে তারা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করেছিল। যা এক অর্থে অপচয় ছাড়া আর কিছুই না।
স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পশ্চিমা বিশ্বের সাধারণ মানুষ আশা করছিলেন এবার সরকার সামরিক খাতের ব্যয়গুলো সামাজিক উন্নয়নের পেছনে ব্যয় করবে। প্রাথমিক লক্ষণও ভালো ছিল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সামরিক খাতে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সিংহভাগ অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু ১৯৯৮ সালের পর থেকে সামরিক খাতে ব্যয় আবারো বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর নাইন-ইলেভেনের ঘটনা তাতে ঘি ঢালে। তখন থেকে সামরিক খাতে ব্যয়ের লাগাম আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলেই সেই ব্যয় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এই ব্যয় কোনো দেশের নিরাপত্তার জন্য কতটুকু যৌক্তিক কিংবা কতটুকুই কার্যকরী?
সিকিউরিটি ডিলেমা
সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে কোনো দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরির বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব অনুসারে বলা হয় ‘সিকিউরিটি ডিলেমা’ কিংবা ‘স্পাইরাল অব ইনসিকিউরিটি’। সিকিউরিটি ডিলেমা তখন সৃষ্টি হয় যখন কোনো দেশের চারপাশে শত্রু ভাবাপন্ন দেশ না থাকা সত্ত্বেও এবং কোনো দেশকে হুমকি প্রদান করার প্রয়োজনীয়তা না থাকা সত্ত্বেও সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়।
সাধারণত যখন কোনো দেশ শুধুমাত্র নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াতে থাকে তা প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। তখন তারা মনে করছে বিশেষ দেশটি তাদের শত্রু ভেবে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করছে। কারণ সামরিক খাতে নিজেদের সক্ষমতা অর্জনের অর্থ অপরের জন্য হুমকি।
ফলে তখন তারাও ঘুরে দাঁড়ায়। তখন সেই সব দেশও নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর জোর দেয়। আর এতে করে একটি অঞ্চলে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যা দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। আর তা কখনো কখনো যুদ্ধের সূচনা করে। যা ঘটেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়।
বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে হঠাৎ করেই জার্মান নেতাদের মনে হলো তাদের দেশ রাশিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মতো শত্রু রাষ্ট্র দিয়ে ঘেরা। তাদের মোকাবেলা করার জন্য তাদের সামরিক খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেই ভাবনা থেকে জার্মানি তাদেন সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করতে শুরু করে।
জার্মানির এসব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই অন্য প্রতিবেশীদের নজর এড়ায়নি। তারা জার্মানদের এই কার্যক্রমের পেছনে খারাপ উদ্দেশ্য থাকার গন্ধ পেলেন। তখন ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়াও নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার উপর জোর দেয়। এতে করে সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অস্ত্রের তুমুল এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
এরপর যখন আর্চডিউক ফার্ডিন্যান্ডকে হত্যা করার পর কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসান ঘটে তখন শুরু হয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। তখনকার অস্ত্র প্রতিযোগিতা বিশ্বযুদ্ধের জন্য পুরোপুরি দায়ী কিনা তা বলা মুশকিল। কিন্তু ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স এবং রাশিয়ার মধ্যে যে একটি স্নায়ু চাপ তৈরি করেছিল তা সত্য।
সিকিউরিটি ডিলেমা নিয়ে আরো একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। চীনের সামরিক খাতে ব্যাপক ব্যয় ও সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি প্রতিবেশী দেশগুলোর আতঙ্ককে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করছে। বিশেষ করে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইন এখন চীনা আগ্রাসনের ভয়ে তটস্থ। এর জন্য তারা প্রত্যেকেই নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। ভিয়েতনাম অনেক আগেই করছে, বাকি দেশগুলো বিগত বছর গুলোতে জোর দিয়েছে।
চীনের প্রতিবেশী দেশগুলো শুধু সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করেই বসে নেই। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক রাখছে। যাতে বিপদের সময় পেন্টাগন তাদের সহায়তা করে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেও চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির বিপরীতে একটি জোট গঠন করার চেষ্টা করছে।
চীন চেষ্টা করছে তার অঞ্চলে শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করার। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছে একই অঞ্চলে আরো নৌশক্তি বৃদ্ধি করার৷ এবং চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিজেদের অস্ত্রের মজুদ বড় করার। কিন্তু সামরিক খাতে চীন শুধু লাগামহীন ব্যয় করেই সন্তুষ্ট নয়। তারা চেষ্টা করছে অ্যান্টি-স্যাটেলাইট অস্ত্র তৈরির এবং সাইবার যুদ্ধে শক্তিশালী বাহিনী গঠনের। এর ফলে পুরো অঞ্চলে যে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে। নিরাপত্তা ঝুঁকি তো রয়েছেই।
অর্থের অপচয় এবং দুর্নীতির মাধ্যমে কী নিরাপত্তা অর্জন সম্ভব?
সামরিক খাতে যে অর্থ ব্যয় করা হয় তার বড় একটি অংশ অপচয় হয় অথবা দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষের পকেটে চলে যায়। অধিকাংশ সামরিক চুক্তি প্রশ্নবিদ্ধ এবং কৌশলে তার আকারকে অনেক বড় করা হয়। এর কারণ হচ্ছে এ ধরনের চুক্তিতে অর্থের লেনদেন অনেকের সাথে হয়ে থাকে। যাকে বলে কমিশন গ্রহণ। সামরিক খাতে যে অর্থ অপচয় করা হয় তা যদি স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অবকাঠামোতে ব্যয় করা হয় তাহলে যেকোনো দেশের উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে।
কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে যেহেতু সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, সেহেতু তা স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে রাষ্ট্রের কোন অস্ত্রের প্রয়োজন আছে, আর কোনটির নেই। কিন্তু দুর্নীতির কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের প্রয়োজনকে পাশ কাটিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এতে করে কী প্রকৃতভাবে নিরাপত্তা অর্জন করা সম্ভব?
সামরিক খাতে অর্থের অপচয় এবং দুর্নীতির দুটি উদাহরণ তুলে ধরছি পর্যায়ক্রমে। বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালীন লিটোরাল কমব্যাট শিপ (এলসিএস) নামে একধরনের যুদ্ধজাহাজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র। এই জাহাজের মাধ্যমে অন্য জাহাজে হামলা করা থেকে শুরু করে মাইন খুঁজে বের করা এবং উপকূল অঞ্চলগুলোতে বিশেষ বাহিনীর সাথে অভিযান পরিচালনা করার মতো সু্বিধা থাকবে বলা হয়েছিল।
এলসিএসের দুই ধরনের সংস্করণ ছিল। একটি ছিল লকহিড মার্টিনের তৈরি আর অন্যটি অস্ট্রালের। প্রতিটি জাহাজ তৈরিতে ৭৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি খরচ হয়েছিল। যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু জাহাজগুলোর পারফরম্যান্সে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এই জাহাজগুলোকে সমুদ্রে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার আগেই কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে ওবামা প্রশাসন ৫২টি এলসিএস তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে ৩২টিতে নামিয়ে আনে। বাকি ২০টি নতুন ডিজাইনে তৈরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা শেষ পর্যন্ত এলসিএসের পরিবর্তে ফ্রিগেটে পরিণত হয়। অথচ এই প্রকল্পের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট না হয় অনেক বড়। কিন্তু এমন অপচয় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য কী বড় ক্ষতি নয়? এভাবে অপচয়ের মাধ্যমে কী নিরাপত্তা অর্জিত হবে?
২০০২ সালে ফরাসি কোম্পানি ডিসিএনএস এবং তাদের অংশীদার নাভানটিয়ার কাছে থেকে দুইটি স্করপেন সাবমেরিন কেনার জন্য এক বিলিয়ন ইউরোর চুক্তি করে মালয়েশিয়া। কিন্তু এই চুক্তির ঘোষণা দেওয়ার পরপরই একে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে শুরু করে খুনের ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। আলতানতুয়া শারিবু নামের একজন মডেল এবং অনুবাদকের লাশ মালয়েশিয়ার জঙ্গলে খুঁজে পাওয়া পায়। যিনি দেশটির তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কথিত প্রেমিকা ছিলেন এবং তিনি ডিসিএনএসের কাছে থেকে কমিশন নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
পরবর্তীতে তাকে খুনের অপরাধে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু তারা বলেন উপরমহলের নির্দেশেই কাজটি করেছেন। পরবর্তীতে অভিযোগ উঠেছিল যে ডিসিএনএস পেরিমেকার নামে মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কোম্পানিকে এবং মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন দলকে ১১৪ মিলিয়ন ইউরো প্রদান করেছিল চুক্তিটি বাগিয়ে নেওয়ার জন্য।
বিষয়টি আরো খারাপ পর্যায়ে চলে যায় যখন মালয়েশিয়াকে সরবরাহ করা সাবমেরিনে বড় ধরনের সমস্যা ধরা পড়ে। যার ফলে প্রথম সাবমেরিনটি চালনার জন্য অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়৷ পরবর্তীতে অবশ্য ডিসিএনএসকে সাবমেরিনটির দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমের মেরামত করতে হয়েছিল। এর মাধ্যমে আসলে বোঝা যায় যে সামরিক খাতে এভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে মানহীন অস্ত্র সরবরাহ করা হয়, যা দিয়ে সত্যিকার অর্থে কোনো দেশের নিরাপত্তা অর্জন করা সম্ভব নয়৷
যুদ্ধ মানেই দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি
সামরিক খাতে যে ব্যয় করা হয় তার প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে ভবিষ্যত কোনো যুদ্ধের আগাম প্রস্তুতি। একটি বিষয় মেনে নিতে হবে যে যুদ্ধ করার মানসিকতা না থাকলেও যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কিন্তু সেই প্রস্তুতি যদি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে হয়ে যায় তাহলে তা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এবং তা কোনো দেশ কিংবা অঞ্চলকে দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। যার প্রমাণ ইরাক ও আফগান যুদ্ধ।
একবিংশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দুইটি যুদ্ধের কোনোটি থেকে ভালো কিছু অর্জন হয়নি। সাদ্দাম হোসেনের কাছে বিধ্বংসী কোনো অস্ত্র থাকার অভিযোগ তুলে বুশ প্রশাসন ইরাক আক্রমণ করে। তার যুক্তি ছিল সাদ্দাম হোসেনের হাত থেকে মানুষ রক্ষা করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেও এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ইরাক যুদ্ধে শুধুমাত্র কয়েক লাখ মানুষই জীবন হারাননি। সেই সাথে পুরো অঞ্চল এখন অস্থিতিশীল।
আফগানিস্তানের বিষয়টিও ঠিক তেমন। যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের দীর্ঘ যুদ্ধে কোনো অর্জন ছাড়াই তালেবানের সাথে শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে। অথচ তারা যাদের বিপক্ষে লড়াই করেছে তারাই একসময় তাদের বন্ধু ছিল। এর অর্থ হচ্ছে আজ আপনি যাকে বন্ধু ভেবে অস্ত্র দিচ্ছেন কাল সে আপনার বন্ধু নাও থাকতে পারে। তখন সেই অস্ত্রই হবে গলার কাঁটা।
বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে যে সামরিক ব্যয় করা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত তা কারো জন্যই শান্তি বয়ে আনতে পারে না। এর অর্থ হচ্ছে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি মানেই নিরাপত্তা বৃদ্ধি তা নয়। তবে এরপরও সামরিক খাতে ব্যয় করা থেমে থাকবে না। কারণ এটি এমন এক চক্র যেখানে এককভাবে থামার সুযোগ নেই। তবে যদি উভয় পক্ষ থেমে যায় তবেই সম্ভব।
সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি সব সময় দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে নয়
সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি মানেই তা সবসময় দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই। বরং অনেক সময় তা দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হয়। বিশেষ অগণতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী সরকার শাসিত দেশগুলোতে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান উদ্দেশ্য থাকে দেশের প্রতিবাদী জনগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপকে প্রতিরোধ করা৷
এ কারণে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করে কেনা অস্ত্র সবসময় দেশের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেয় না। বরং অভিজাতদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যও তা ব্যবহার করা হয়। আর এতে সাধারণ মানুষ বাকস্বাধীনতা থেকে সকল প্রকার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে যায়। এমন শুধু স্বৈরাচারী কোনো রাষ্ট্রে ঘটে তা নয়। যেসব দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র কিংবা আংশিক গণতন্ত্র রয়েছে সেখানেও এমন হয়ে থাকে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কথা যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে সেখানে যে অস্ত্র ক্রয় করা হয় তা যে শুধু শত্রু দেশকে মোকাবেলা করার জন্য তেমন নয়। বরং সেখানে ক্ষমতায় থাকা পরিবারগুলো নিজেদের রাজত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বিপুল অঙ্কের অস্ত্র প্রতি বছর ক্রয় করে থাকে।
নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো সমাধানে সামরিক বাহিনীর ব্যবহার উত্তম পন্থা নয়
সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির দরুণ নিরাপত্তা হ্রাসের আরেকটি দিক হচ্ছে যেকোনো বিষয় সমাধানে অস্ত্রের ব্যবহার করার প্রবণতা সৃষ্টি। এমন কিছু বিষয় থাকে যা কূটনৈতিকভাবে সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু যখন নিজের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী তখন যেকোনো সমস্যা সমাধানে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা মাথায় ঘুরপাক খায়। কিন্তু এতে সমস্যা সমাধানের চেয়ে আরো বেশি জটিল আকার ধারণ করে।
উদাহরণ হিসেবে কলম্বিয়ার মাদক ব্যবসা নির্মূল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক বিলিয়ন ডলারের ‘প্লান কলম্বিয়া’ এর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্লান কলম্বিয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে। কিন্তু একসময় সেই অস্ত্র দিয়ে কলম্বিয়ার সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাদক ব্যবসা নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। বরং তা কলম্বিয়া থেকে মধ্য আমেরিকার দেশ হন্ডুরাস এবং মেক্সিকোর দিকে চলে গেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের নিকটবর্তী প্রতিবেশী।
যখন কোনো একটি সমস্যা সমাধানে কূটনীতির চেয়ে সামরিক দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় তখন আলোচনার পথ শুরুতেই বন্ধ হয়ে যায়। সামরিক শক্তি দিয়ে কোনো সমস্যাকে চিরতরে বন্ধ করা সম্ভব হয় না। তবে আলোচনার মাধ্যমে তা সম্ভব হয়। আর যখন কোনো একটি সমস্যা সমাধানে সামরিক শক্তির প্রয়োগ করা হয়, তখন সেখানে অনেকগুলো পক্ষের সৃষ্টি হয়। আর পক্ষ যত বেশি সেখানে সমাধানে আসা তত কঠিন। যেমন বর্তমান সিরিয়া। সেখানে কে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তা বুঝতে পারাই দুষ্কর। ফলে সেখানে শান্তি কায়েম করা একেবারে দুরূহ হয়ে পড়েছে।
নিরাপত্তা নিয়ে পুনরায় ভাবতে হবে
সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে যদি কোনো দেশ কিংবা সেই দেশের মানুষের নিরাপত্তা বৃদ্ধি না পেয়ে উল্টো কমে যায়, তাহলে এর সমাধান কী? এর জন্য সবার আগে ‘মানুষের নিরাপত্তা’ এই কথাটির সংজ্ঞা বুঝতে হবে। অনেকের কাছে দেশের নিরাপত্তা মানে বাইরের কোনো দেশের আগ্রাসন কিংবা ভেতরের কোনো শক্তির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া। কিন্তু প্রকৃত অর্থে নিরাপত্তার বিষয়টিকে আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে।
জাতিসংঘের মতে ‘মানুষের নিরাপত্তা’ বা ‘হিউম্যান সিকিউরিটি’ এর সংজ্ঞা হচ্ছে সকল মানুষের স্বাধীনভাবে ও সম্মানের সাথে বাস করা এবং ক্ষুধা ও হতাশা থেকে মুক্ত থাকার অধিকার। এর অর্থ হচ্ছে নিরাপত্তা মানে প্রত্যেক মানুষের ভয় ও ক্ষুধা মুক্ত জীবন এবং সমাজের প্রত্যেক স্তরে সমান অধিকার ভোগ করার সুযোগ।
কিন্তু সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে কী সঠিক নিরাপত্তা অর্জন সম্ভব? বরং সঠিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন মৌলিক অধিকারের বাস্তবায়ন। এর জন্য আমাদের প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো খাতগুলো ব্যয় বৃদ্ধি করা।
তবে এই চেতনার বাস্তবায়ন একক কোনো অঞ্চলে করে সমাধান হবে না। কারণ আগেই বলা হয়েছে সামরিক খাতে ব্যয় হচ্ছে একটি চক্র। এই চক্রকে বন্ধ করতে সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। সকলের সঠিক সিদ্ধান্ত পৃথিবীতে ভারসাম্য আনতে সক্ষম। একটি দেশ অস্ত্র ক্রয় করা বন্ধ করলেই শান্তি আসবে না। বরং তার বিপক্ষের দেশকেও একই কাজ করতে হবে।
এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে সাধারণ মানুষকেই। কারণ সবশেষে সকল আয়োজন আপনার কিংবা আমার জন্য। দেশের অস্ত্র ক্রয়ের খবরে উৎফুল্ল না হয়ে শিক্ষাখাতে ব্যয় কত বেড়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। যখন প্রতিটি দেশের মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে অস্ত্রের ক্রয়ের বিপরীতে দাঁড়াবে তখনই প্রকৃত নিরাপত্তা অর্জন সম্ভব। সবশেষে মনে রাখবেন অস্ত্র কখনো মানুষকে হত্যা করে না, মানুষই মানুষকে হত্যা করে। তাই অস্ত্র তৈরির চেয়ে মানুষ তৈরি করা বেশি জরুরী।