আটলান্টিক রেভ্যুলুশনের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের, জবাবদিহিতা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ আর নাগরিক অধিকারের ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রকাঠামো। পরের শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছিল বিচ্ছিন্নতার নীতি, যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দক্রমের শীর্ষে ছিল অর্থনৈতিক উন্নতি। যুক্তরাষ্ট্রের এই বিচ্ছিন্নতার নীতি বজায় ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত, পার্ল হারবারে জাপানের আক্রমণের পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতার নীতির অবসান ঘটে, বিশ্বযুদ্ধের পরে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাজ্যকে সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আবির্ভূত হয় বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে। পরবর্তী অর্ধশতাব্দী জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে, নব্বইয়ের দশকে স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পরে যুক্তরাষ্ট্র পরিণত হয়েছে একক পরাশক্তি হিসেবে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে অর্থনৈতিক প্রাধান্যকে কেন্দ্র করে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের মধ্যে, দুইপক্ষের এই নতুন ঠাণ্ডা লড়াইয়ে ‘পলিসি ফুটবলে’ পরিণত হয়েছে তাইওয়ান।
২৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার দ্বীপ তাইওয়ানের ব্যাপারে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের। চীন তাইওয়ানকে মনে করে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এক প্রদেশ হিসেবে, বর্তমানে যার পুনঃএকত্রীকরণ চীনা জাতীয়তাবাদের অংশ। যুক্তরাষ্ট্র চীনকে একক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে, যেটি বেইজিং থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে। আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি না দিলেও, গত শতাব্দী থেকেই জাতীয় স্বার্থ আর অর্থনৈতিক প্রয়োজনের নিরিখে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখছে।
গত কয়েক বছরে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের মধ্যে বেশ কয়েকবার উত্তেজনা ছড়িয়েছে, উত্তেজনা ছড়িয়েছে তাইওয়ানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের বৈঠককে কেন্দ্র করেও। তাইওয়ান প্রশ্নে বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রায় মুখোমুখি অবস্থানে আছে দুই পরাশক্তি। অনেকগুলো কারণেই এই উত্তেজনা ছড়িয়েছে, এই উত্তেজনায় চীনের যেমন জাতীয় স্বার্থ আছে, একইভাবে জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রেরও। এই নিবন্ধে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থগুলো আলোচনা করা হবে।
তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক সরকার
তাইওয়ানের আইনসভায় পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্যে মারামারি আর হাতাহাতির বেশ দীর্ঘ সংস্কৃতি রয়েছে। তাইওয়ানের আইনসভার সদস্যদের হাতাহাতি আর চুলোচুলি প্রায়শই সহিংস রূপ ধারণ করে, দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি, চড়-থাপ্পড় বিনিময়ের ঘটনা অনেকসময় রূপ নেয় কুস্তিতে। একে অন্যের দিকে প্লাস্টিকের বোতল ছুঁড়ে মারা, পানির গ্লাস ছুঁড়ে মারা তাইওয়ানের আইনসভার নিয়মিত ঘটনাতে পরিণত হয়েছে। সাধারণত, আইনসভাতে সংঘর্ষ ঘটে সরকারি দল ও বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে, গত কয়েক বছর ধরে সরকারি দলে আছে ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি, বিরোধী দলে আছে কুমিটাং পার্টি। তাইওয়ানের আইনসভাতে সাধারণত খুব অল্প সময়ই গ্রহণযোগ্য বিতর্ক হয়।
আইনসভার এই চিত্রের পরেও ১৯৯৬ সাল থেকে তাইওয়ানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা রয়েছে, বেশ কয়েকবার ঘটেছে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ বদল। তাইওয়ানে মুক্তবাজার অর্থনীতি রয়েছে, মাথাপিছু আয় পেরিয়েছে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। তাইওয়ানে প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন, যার বাবা বা স্বামী ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ে ছিলেন না। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তাইওয়ান সর্বপ্রথম সমলিঙ্গের বিয়েকে বৈধতা দিয়েছে। সমলিঙ্গের বিয়ের বৈধতা তাইওয়ানে জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হয়নি, এটি বৈধতা পেয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনসভার সদস্যের ভোটে। জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে তাইওয়ান সরকার সবসময়ই দক্ষতাপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ব্যাপারেও তাইওয়ান সরকারের উদ্যোগ ছিল উদারনৈতিক।
কমিউনিস্ট শাসিত চীনের অর্থনৈতিক উন্নতির বিপরীতে তাইওয়ান গণতান্ত্রিক শাসনের অধীনে দ্রুতগতির অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদাহরণ। কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত চীনে এখনো মাথাপিছু আয় ১০ হাজার ডলারের কাছাকাছি, তাইওয়ানের মাথাপিছু আয় তার পাঁচ গুণ হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নাগরিক সুবিধাতে চীনের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে তাইওয়ান। জবাবদিহিতা আর নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতির মাধ্যমে শাসনতন্ত্র পরিচালনার গণতান্ত্রিক শাসনের যে মূলনীতি, তার সাথে পূর্ব-এশিয়ার অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার অপূর্ব মিশেল বলা যায় তাইওয়ানকে।
মোটাদাগে, চীনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে অর্থনৈতিক সাফল্যের তাইওয়ানের অর্থনৈতিক সাফল্য উদার গণতন্ত্রের পক্ষে একটি যুক্তি।
তাইওয়ানের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রের দশম বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী, বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮৫ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্রের চেয়ে তুলনামূলকভাবে এই পরিমাণ কম, চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ৬৩৫ বিলিয়ন ডলার, কানাডার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলার, মেক্সিকোর সাথেও বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্যিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন থেকেই চীনের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত, চীন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী। তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সাথে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতী হতে পারতো, প্রভাব ফেলতে পারতো দুই দেশের বাণিজ্যে, ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারতো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিল্পগুলো।
যুক্তরাষ্ট্র এরপরও তাইওয়ান ইস্যুতে স্থিতিশীল প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে ইলেকট্রনিকস খাতে তাইওয়ানের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর উপর যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পখাতের নির্ভরশীলতার জন্য। তাইওয়ানের সেমিকনডাক্টর ইন্ডাস্ট্রির জন্য। বর্তমান সময়ে চিপের ব্যবহার রয়েছে আমাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলোতে, ল্যাপটপে, এমনকি নিত্য ব্যবহার্য ওভেন থেকে রেফ্রিজারেটর পর্যন্ত।
বর্তমান সময়ে চিপের ব্যবহারের আরেকটি বড় ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি। গাড়িগুলোতে আগের চেয়ে বেশি মাইক্রোচিপ ব্যবহার করা হচ্ছে, জটিল জটিল প্রোগ্রাম গাড়িতে ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে মাইক্রোচিপের ব্যবহার। অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন আমেরিকান কাজ করছে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধনশীল শিল্পখাতের একটি অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি, প্রতিবছর প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো চাকরি তৈরি হয় এই খাতে। আবার, সেমি-কন্ডাক্টরের ব্যবহার স্মার্টফোনগুলোতেও রয়েছে। অ্যাপলের মতো স্মার্টফোন ব্র্যান্ড চিপের জন্য নির্ভরশীল তাইওয়ানের উপর, একইভাবে নির্ভরশীল মাইক্রোসফট, ইন্টেলের মতো ল্যাপটপ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও।
যুক্তরাষ্ট্রের পলিসিমেকিং সিস্টেম অনেকটা পর্ক-ব্যারেল লেজিসলেচারের মতো, যেখানে আইন প্রণয়নের আগেই আইনপ্রণেতাদের বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী প্রভাবিত করে। আইনপ্রণেতারা নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের খরচ, আদর্শিক অবস্থানকে সহযোগিতা করা, নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জায়গা থেকে পর্ক-ব্যারেল লেজিসলেশনে প্রভাবিত হন। আবার, অনেকসময় প্রতিপক্ষ দলের আইনপ্রণেতাদের সাথেও চুক্তি করেন একে অন্যের বিলে সমর্থনদানের মাধ্যমে আইন তৈরি করার।
মাইক্রোচিপ সরবারহের উপর নির্ভরশীল বড় বড় সব কোম্পানি আছে, আছে করপোরেশন। তাইওয়ান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে এই কোম্পানিগুলো আইনপ্রণেতাদের প্রভাবিত করবেন, নির্বাচনী সমীকরণের পাশাপাশি নির্বাচনী ক্যাম্পেইন ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো জড়িয়ে পড়বে এর সাথে।
দীর্ঘস্থায়ী মিত্রের প্রতি বিশ্বস্ততা
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাইওয়ানের যোগাযোগ কয়েকশো বছরের। রয়েছে কয়েকশো বছরের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ। খ্রিস্টান মিশনারীদের সূত্রে এই যোগাযোগ আমেরিকান সমাজের রক্ষণশীল অংশের সাথেও জুড়ে গেছে, তাইওয়ানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের জনমানসে তৈরি হয়েছে ইতিবাচক ভাবমূর্তি। এর সাথে যুক্ত হয় চীনের ক্ষমতার পিরামিডে খ্রিস্টান ধর্মান্তরিত চিয়াং কাইশেকের উত্থান, চীনের ফার্স্ট লেডি ম্যাডাম কাইশেকও ছিলেন খ্রিস্টান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চিয়াং কাইশেকের বাহিনী আর যুক্তরাষ্ট্র একসাথে যুদ্ধ করে, গড়ে উঠে যুদ্ধকালীন মিত্রতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে চিয়াং কাইশেকের সরকার তাইওয়ানে নির্বাসিত হলেও, এই অংশকেই যুক্তরাষ্ট্র চীনের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রেখেছিল দুই দশকের জন্য।
সত্তরের দশকে এই স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে এলেও, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব ছিল ধারাবাহিক। বাণিজ্যেও তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হয়ে উঠে যুক্তরাষ্ট্র। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে ব্যবহার করেছে পূর্ব-এশিয়াতে কমিউনিজমের বিকাশ আটকানোর জন্য অগ্রবর্তী ফ্রন্ট হিসেবে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে নব্বইয়ের দশকে, স্থায়ীভাবে বদলে যায় আন্তর্জাতিক রাজনীতি। নতুন শতকের স্নায়ুযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চীন, তাইওয়ান ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আবারো চলে এসেছে কথিত নতুন স্নায়ুযুদ্ধের কেন্দ্রীয় অবস্থানে। চীন তার জাতীয়তাবাদীদের সন্তুষ্ট করতে, নিজের ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আর বাণিজ্যের সুবিধা পেতে তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ পেতে চায়। এই সমীকরণকে সামনে রেখে চীন যেকোনো সময় তাইওয়ান আক্রমণ করতে পারে, তৈরি করতে পারে নিরাপত্তা ঝুঁকি। চীনের এ ধরনের সম্ভাব্য আক্রমণ আর রাজনৈতিক চাপের সময় যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তাইওয়ানকে সঙ্গ দিচ্ছে, সহযোগিতা করছে, তার উপর নির্ভর করবে পূর্ব-এশিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কতটা বজায় থাকবে।
পূর্ব-এশিয়াতে তাইওয়ানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মিত্র, যারা এশিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। পূর্ব-এশিয়া হচ্ছে একমাত্র জায়গা, যেখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে ইতিবাচকভাবে সর্বস্তরে মূল্যায়ন করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে নাগরিকেরা প্রায় নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গড়ে তুলেছে নিরবিচ্ছিন্ন বাণিজ্যিক আর সাংস্কৃতিক যোগাযোগ। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা আর চীনের হুমকির বিপরীতে শক্তিসাম্যের একটি টেস্টকেইস হবে তাইওয়ান সংকট মোকাবেলার ধরন।
দীর্ঘ সময়ের মিত্রের প্রতি দায়বদ্ধতার পাশাপাশি মিত্রদের প্রতি বিশ্বস্ততা প্রমাণের জন্য হলেও, তাইওয়ান ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে, নিতে হবে রাজনৈতিক আর সামরিক ঝুঁকি।
যুক্তরাষ্ট্র কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ?
গত সাত দশক ধরে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দাপটের সাথে বিচরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখেই গড়ে উঠেছে মিত্রতা, আবার অনেক রাষ্ট্রের সাথে গড়ে উঠে শত্রুতার সম্পর্ক। মিত্রদের রক্ষায় বেলায়ও যুক্তরাষ্ট্র সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আচরণ করেনি, অনেক সময়ই মিত্রদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে দেরিতে। ভিয়েতনামে নিজেদের মিত্রদের দিক বিবেচনা না করেই হেলিকপ্টারে করে ভিয়েতনাম ছেড়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। নব্বইয়ের দশকে কুয়েত সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগ নিয়েই কুয়েত দখল নেয় জেনারেল সাদ্দামের ইরাক। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তেও। এর সাথে বর্তমানে যুক্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাই এখন আর তাইওয়ানের প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহযোগিতা করবে কিনা, সেটি আর আলোচিত হচ্ছে না। আলোচিত হচ্ছে, তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সহযোগিতা করতে পারবে কিনা, প্রতিরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারবে কিনা, সেই বিষয়টি।