অন্য লোকের বিষয়ে জড়িত হইও না
– নিকোলাস ফ্লু
ত্রয়োদশ শতকের জনপ্রিয় পাদ্রী নিকোলাস ফ্লুর এই উক্তিই হয়তো সুইজারল্যান্ডকে নিরপেক্ষ রাখতে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল। উক্তিটি সুইজারল্যান্ডের মানুষ বেশ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল, কারণ বর্তমান বিশ্বে অনেকগুলো নিরপেক্ষ দেশের মধ্যে সুইজারল্যান্ডে নিরপেক্ষ অবস্থান বেশ প্রশংসিত এবং সম্মানীয়। তাছাড়া তাদের এই নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণের পেছনে রয়েছে গভীর ইতিহাস। অনেক ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা অবলম্বন পক্ষপাতিত্বের চেয়েও বেশি কঠিন বলে বিবেচিত হয়, কারণ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করার জন্য অনেক সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে এই নিরপেক্ষতার মূল্য অনেক অনেক বেশি, তাই আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল মারপ্যাঁচের কারণে এই অঙ্গনে নিরপেক্ষতা অবলম্বনকারী রাষ্ট্রের সংখ্যা খুবই কম। কারণ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করতে গেলে কারো না কারো স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। সে কারণেই সুইজারল্যান্ডকে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছাতে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়েছে। এ জন্য অবশ্য দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান সবচেয়ে বেশি দায়ী। কারণ সুইজারল্যান্ডের চারপাশ ঘিরে রয়েছে ফ্রান্স, ইতালি, অস্ট্রিয়া ও লুক্সেমবার্গের মতো প্রভাবশালী ও শক্তিশালী দেশ।
ভাড়াটে সৈন্যের দেশ
সুইজারল্যান্ড আকারে খুবই ছোট একটি দেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দেশটি বিস্ময়করভাবে পাহাড়-পর্বত দিয়ে ঘেরা। এর সবচেয়ে বিখ্যাত পর্বতমালাগুলোর একটি হচ্ছে আল্পস। পাহাড়-পর্বত দিয়ে ঘেরা এই দেশটি নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আধার হলেও বড় পরিসরে চাষাবাদ করার জন্য সুইজারল্যান্ড ছিল একদম অনুপযুক্ত।
তাই মধ্যযুগের সুইস কনফেডারেসির বেশিরভাগ সদস্যই আয়ের উপায় হিসেবে যুদ্ধবিদ্যাকে বেছে নিত। তারা যখন দেখল আয়ের অন্য পন্থাগুলো যথেষ্ট লাভজনক নয়, তখন তারা যোদ্ধা পেশাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল, এবং এই কাজে যথেষ্ট ভালও ছিল। তাই ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের জন্য ডাক আসত। তাছাড়া কৌশল ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ায় সম্মুখযুদ্ধে তারা খুব সহজেই জয়লাভ করত। এভাবে সমগ্র বিশ্বজুড়ে পেশাদার, ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং তাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে ভালো হতে থাকে। ইউরোপের রেনেসাঁ যুগে তারা খ্যাতির শিখরে পৌঁছায়।
পেশাদার মনোভাব ও জনপ্রিয়তার কারণে তারাই ছিল মধ্যযুগীয় যুদ্ধে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে সবার প্রথম পছন্দ। কিন্তু যুদ্ধে তাদের মূল অস্ত্র ছিল বর্শা, তীর ও কুঠার জাতীয় অস্ত্র। সময়ের সাথে সাথে ইউরোপের অন্যান্য যোদ্ধা দল গোলাবরুদ, বন্দুক, ও কামানের ব্যবহারে অভ্যস্ত হলেও সুইস মার্সেনারিরা এতে অভ্যস্ত হতে পারেনি। ফলস্বরূপ, তারা যুদ্ধে হারতে থাকে এবং ক্রমশ খ্যাতি ও যশ হারাতে থাকে। পঞ্চদশ শতকের শুরুর দিকে তাদের চূড়ান্ত অবনতি হয়। এসব ছাড়া সুইস মার্সেনারিরা বিভিন্ন রাজকীয় বাহিনীতে সৈনিক ও গার্ড হিসেবে কাজ করত। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ফ্রেঞ্চ, ডাচ, স্প্যানিশ ও ব্রিটিশ রাজকীয় সেনাবাহিনী।
নিরপেক্ষ সুইজারল্যান্ডের গোড়াপত্তন
প্যারিস চুক্তির (১৭৮৩) মাধ্যমে বড় বড় আন্তর্জাতিক শক্তি সুইজারল্যান্ডকে নিরপেক্ষ হিসেবে স্বীকার করে নিতে রাজি হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সুইসদের নিরপেক্ষতার যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু এর গোড়াপত্তন হয়েছিল আরো আগে। ১৫১৫ সালে সুইস কনফেডারেসি ম্যারিগন্যানোর (Marignano) যুদ্ধে ফ্রান্সের কাছে পরাজিত হয়। এর ফলে সুইস কনফেডারেসি ভেঙে যায় এবং তারা সম্প্রসারণ নীতি থেকে সরে আসে। ফলে তারা নিজেদের স্বার্থেই নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। নিরপেক্ষ থাকার পরেও ছোটখাট কিছু যুদ্ধে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করলেও সামগ্রিকভাবে তারা নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলে দীর্ঘদিন।
কিন্তু তাদের এই নিরপেক্ষতার ব্যাঘাত ঘটান নেপোলিয়ন। ১৭৯৮ সালে নেপোলিয়ন লোভনীয় ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে সুইজারল্যান্ড দখল করে একে একটি স্যাটেলাইট রাষ্ট্রে পরিণত করেন। দেশটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তার প্রতিবেশীদের উপর যেকোনো সময় যুদ্ধ ঘোষণা করা যেত। পরবর্তীতে রাশিয়া ও অস্ট্রিয়া নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, কিন্তু সুইসরা ফ্রান্সের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। অবশেষে ওয়াটারলুর যুদ্ধে নেপোলিয়ন পরাজিত হলে ১৮১৫ সালে ভিয়েনার আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে সুইজারল্যান্ডকে নিরপেক্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
নিরপেক্ষ হওয়ার ফলে বিভিন্ন সংকটেই সুইজারল্যান্ড বাফার স্টেট হিসেবে কাজ করে এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ও অসুস্থদের চিকিৎসার কাজে মনোনিবেশ করে। তাছাড়া বিপুল পরিমাণ শরণার্থীর জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে তারা বেশ সুনাম অর্জন করে। অবশ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পরেও নানাবিধ আশঙ্কায় সুইসরা তাদের সেনাবাহিনী বহাল রাখে এবং তার আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখে।
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সুইসদের ভূমিকা
আগেই বলা হয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে নিরপেক্ষতার মূল্য পক্ষপাত অপেক্ষা অনেক বেশি ব্যয়বহুল। কারণ, নিরপেক্ষ থাকার প্রথম শর্ত হলো অন্যের চোখে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে হবে, তা না হলে নিরপেক্ষতার চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। তাছাড়া সুইজারল্যান্ডের অবস্থান প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও বিপদজনক ছিল। তাই নিরপেক্ষ দেশ হয়েও সুইসদের ছিল অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী।
তবে সুইসরা নিজেদের স্বার্থেই প্রতিরক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়। তারা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে তাদের ভৌগোলিক পরিবেশের সাথে মিলিয়ে ঢেলে সাজায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা নানা দেশ থেকে আগত শরণার্থীদের আশ্রয় দান করে এবং যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাদের অবস্থান ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কিছু কর্মকাণ্ড ছিল উদ্ভট কিন্তু কার্যকর। কারণ তারা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য দেশের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ জন্য তারা দেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও ব্রিজে বিস্ফোরক লাগিয়ে রাখে, যাতে যেকোনো সময় সেগুলো উড়িয়ে দিয়ে রাস্তা ও ব্রিজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যায়। ফলে শত্রুপক্ষ সুইজারল্যান্ডের অভ্যন্তরে সৈন্যবহর ও সরঞ্জাম নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে না। এমনকি তারা বিস্ফোরকের মাধ্যমে পাহাড়ে কৃত্রিম ধ্বসের ব্যবস্থাও করেছিল।
তাছাড়া সুইজারল্যান্ডের সরকার খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের পাহাড়-পর্বত ও দুর্গম জায়গাগুলোতে শত শত বাংকার স্থাপন করে। এর বেশিরভাগই রাখা হতো ছদ্মবেশে, অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায়। ফলে বহির্বিশ্বের কোনো দেশ সুইজারল্যান্ড আক্রমণ করলেও খুব দ্রুতই গেরিলা আক্রমণের শিকার হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তাদের সেনাপ্রধান জেনারেল গুইসানের নেতৃত্বে আরো নানারকম প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। টাইম ম্যাগাজিনের মতে, যোগ্যতা ও সক্ষমতা বিচারে সুইস সেনাবাহিনীর অবস্থান ইউরোপে দ্বিতীয়। এবং তাদের ভৌগলিক পরিবেশ ও সকল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বিবেচনায় তাদের প্রতিরোধ করতে কোনো দেশের যে পরিমাণ প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হবে, তা তৎকালীন সুইস সেনাবাহিনীর তিনগুণ। তাছাড়া সুইস রক্ষাব্যূহ ভেদ করতে কয়েকমাস সময়ের প্রয়োজন, আর এর মধ্যে সুইস সরকার জনগণকে দ্রুত গোপন ও নিরাপদ বাংকারে সরিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পাবে।
এরপরও হিটলার সুইজারল্যান্ড দখল করার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা করেন। কিন্তু দেশটি দখল করার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হওয়ায় সুইসরা সেযাত্রায় রক্ষা পায়। তবুও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তি উভয় পক্ষই বহুবার সুইস আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। আর সুইসরা তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এই সমস্ত কাজের সমুচিত জবাব দেয়। ইতিহাসবিদদের মতে, জার্মান বোমারু বিমানগুলো ১৯০ বারেরও বেশি আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল। ফলস্বরূপ সুইসরা প্রায় এক ডজন জার্মান বোমারু বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে। তারা আকাশসীমা লঙ্ঘনকরী জার্মান বোমারু বিমানগুলোকে কৌশলে অবতরণ করতে বাধ্য করতো এবং তাদের সৈন্যদের গ্রেফতার করতো। ফলে হিটলার অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে সুইসদের সতর্ক করেন, কিন্তু সুইসরা তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে তাদের আকাশসীমা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
অক্ষশক্তির পাশাপাশি মিত্রবাহিনীও সুইজারল্যান্ডের আকাশসীমা বহুবার লংঘন করে। এই ক্ষেত্রেও অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে তাদের আকাশ সীমালংঘনকারীকে গুলি করে ভূপাতিত করে। ফলস্বরূপ আমেরিকান বোম্বার বিমান ভূপাতিত হয়, মারা যায় ব্রিটিশ ও আমেরিকান সৈন্য। অন্যদিকে মিত্রবাহিনী সুইজারল্যান্ডের একটি শহরে বোমাবর্ষণ করে। এতে ৩০ জন সুইস নাগরিক ও ৫০টি ভবন ধ্বংস হয় এবং সাথে সাথে সুইজারল্যান্ডের কিছু কারখানাও ধ্বংস হয়। সেগুলো আসলে ব্যবসার কারণে জার্মানদের পণ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ছিল। যদিও মিত্রশক্তি একে একটি ভুল হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে, কিন্তু সমালোচকরা বলে থাকেন সুইসদের নিষেধ করা সত্ত্বেও জার্মানদের সাথে বাণিজ্য করার কারণে মিত্রশক্তি তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সুইজারল্যান্ডে আক্রমণ করে।
অভাবনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
সুইজারল্যান্ড প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অত্যন্ত সর্তকতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিল। কারণ তাদের চিন্তা অনুযায়ী বহির্বিশ্বের কোনো আগ্রাসী দেশের সাথে যুদ্ধে জড়িত না হলেও আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবার জন্য হলেও তাদের প্রয়োজন ছিল উৎকৃষ্ট ও অভাবনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সুইজারল্যান্ডের হাজার হাজার গোপন সুরঙ্গ, বাংকার, ধ্বংসযোগ্য ও ব্রীজ রাস্তা এর প্রমাণ। সুইজারল্যান্ডে ১৮-৩৪ বছর বয়সী পুরুষদের মিলিটারি কৌশল জানা বাধ্যতামূলক, পাশাপাশি কেউ যদি মিলিটারি সেবা দান করতে অপরাগ হয় তবে সেক্ষেত্রে তাকে অতিরিক্ত ট্যাক্স প্রদান করতে হয়। সেসময়ে সুইজারল্যান্ডের বেশিরভাগ বাড়ির ছাদ ও দেয়াল অত্যন্ত পুরু করে তৈরি করা হয়েছিল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সুইসরা ট্র্যাক করা যায় না এমন ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রচলন করে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্কিত ব্যক্তিবর্গের সাথে লেনদেন সম্পন্ন হয়, কারণ সেই সমস্ত ব্যাংকের একাউন্টের মালিকের পরিচয় জানা সম্ভব হতো না। দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান ইহুদীরা স্বর্ণের বিনিময়ে সুইস ফ্রাংক কিনে নেয়। ফলে সুইসদের অর্থনৈতিক অবস্থান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক উন্নতি লাভ করে। পরবর্তীতে এই সকল কর্মকাণ্ড প্রকাশিত হলে সুইস কর্তৃপক্ষ অনেক সমালোচনার শিকার হয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবস্থান
যুদ্ধের কিছু কিছু কর্মকাণ্ডের জন্য তারা অনেক সময় অনেকের কাছেই সমালোচিত হয়েছে বটে, বিশেষ করে জার্মানদের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে, কিন্তু বিশ্বজুড়ে তাদের সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতার সাথে তার তুলনা খুব সামান্যই বলা চলে। সুইজারল্যান্ডের মানুষ মূলত চারটি ভাষা ব্যবহার করে- জার্মান, ফ্রান্স, ইতালীয় ও রোমান ভাষা। তাই তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও বেশ বৈচিত্রময়।
তাই তারা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ না থাকত, সেই ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রতি টান অনুভব করার কারণে বিভক্ত হয়ে যেতে পারত। তবুও সেসব সম্ভাবনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা বেছে নিয়েছিল নিরপেক্ষ থাকার সাহসী উদ্যোগ। কিন্তু তাই বলে সুইসদের উদাসীন বা মতামতহীন জাতি বলা যায় না। কারণ আন্তর্জাতিক নানা সমস্যা নিরসনে তারা প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে এবং সেটি সম্ভব হয়েছে তাদের উদ্যম ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানজনক অবস্থান অর্জনের মাধ্যমে।