উমাইয়া বংশের পতনের পরপরই বৈশ্বিক রাজনৈতিক পাদপ্রদীপ থেকে দূরে সরে যায় আরব উপদ্বীপ। সুগঠিত রাষ্ট্রকাঠামোর অনুপস্থিতিতে প্রায় স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন বিভিন্ন গোত্রের প্রধানেরা, বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষে জড়ায় আরব উপদ্বীপের আশেপাশে বসবাস করা গোষ্ঠীগুলো। উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্থানের পরে আরব উপদ্বীপ চলে যায় উসমানীয় সরকারের অধীনে, বেশ কয়েকবার সেখানে এই সাম্রাজ্যকে হটাতে বিদ্রোহ হলেও উসমানীয়দের পতনের আগপর্যন্ত আরব উপদ্বীপ তাদের অধীনেই ছিল।
আরব উপদ্বীপের ক্রমাগত গোষ্ঠীকলহ আর বিচ্ছিন্নতার ইতিহাসকে সঙ্গী করে উত্থান ঘটে সৌদ বংশের। পুরো উনবিংশ শতাব্দীজুড়ে সৌদ বংশ চেষ্টা করে আরব উপদ্বীপে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে। তাদের প্রায় সবগুলো চেষ্টাই ব্যর্থ হয় উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক আর সামরিক নেতৃত্বের কাছে। সৌদ বংশের চেষ্টা সফল হয় উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগে তারা প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র, কিংডম অব সৌদি আরাবিয়া। বেদুইন শেখ, আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহমান বিন ফয়সাল বিন তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ বিন মোহাম্মদ আল সৌদ, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আর নিজের প্রজ্ঞায় বিরাট এক রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হন।
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও পৃথিবীর যে অল্প কিছু দেশ পুরোপুরি রাজতন্ত্রের চর্চা করে, সৌদি আরব সেগুলোর একটি। বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের দুই দশকের শাসনের পর সৌদি আরবের শাসনতন্ত্র চলে যায় দ্বিতীয় প্রজন্মের নিয়ন্ত্রণে। বাদশাহ চতুর্থ সৌদ, বাদশাহ ফয়সাল, বাদশাহ খালিদ, বাদশাহ ফাহাদ, বাদশাহ আব্দুল্লাহ এই দ্বিতীয় প্রজন্মের শাসক, বর্তমান বাদশাহ সালমানও দ্বিতীয় প্রজন্মের শাসকদেরই একজন।
পুরনোকে বিদায় জানানো আর নতুনের জয়গান গাওয়ার মন্ত্রকে সামনে রেখেই দ্বিতীয় প্রজন্মের বিদায়ের প্রক্রিয়া চলছে রাষ্ট্রের মূল শাসনক্ষমতা থেকে। এই প্রক্রিয়ার শুরু হয় বাদশাহ আব্দুল্লাহর সময় থেকেই, রাজনৈতিক উত্থান ঘটে মোহাম্মদ বিন নায়েফের মতো তৃতীয় প্রজন্মের বেশ কয়েকজন প্রিন্সের। তবে তৃতীয় প্রজন্মের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক উত্থান ঘটেছে মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষেত্রে, যিনি পরিচিত এমবিএস নামেও। এই লেখায় আলোচনা করা হবে এই ক্রাউন প্রিন্সের রাজনৈতিক উত্থান নিয়ে।
হাজারো রাজপুত্রের সৌদি রাজপরিবার
বাদশাহ সালমান ইবনে আবদুল আজিজ সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের পঁচিশতম সন্তান, মোহাম্মদ বিন সালমান বাদশাহ সালমানের তেরো সন্তানের মধ্যে ষষ্ঠ। প্রথম স্ত্রীর অসুস্থতার সময়ে বাদশাহ সালমান তৃতীয় বিয়ে করেন ফাহদা আল ইতাহলেনকে, মোহাম্মদ বিন সালমান এই দম্পত্তিরই সন্তান।
রিয়াদের গভর্নর হিসেবে একটা দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করা বাদশাহ সালমান সবসময়ই মনোযোগী ছিলেন তার সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে, বিভিন্ন সময়ে সন্তানদের বিতর্ক শেখাতে সালমানের প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানানো হতো একাডেমিশিয়ানদের। এর ইতিবাচক ফলাফল বাদশাহ সালমান পেয়েছেন। তার সন্তানেরা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েছেন, তেলের খনির বিশেষজ্ঞ হয়েছেন, মিডিয়া কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হয়েছেন, হয়েছেন নভোচারীও। তবে বাদশাহ সালমানের সন্তানদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে উজ্জ্বল বর্তমানে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
ছোটবেলা থেকেই মোহাম্মদ বিন সালমান বেয়াড়া রাজপুত্রের মতো বড় হয়েছেন, তাঁর বিশেষ খ্যাতি ছিলো ‘সমস্যা তৈরিতে’। পুলিশের পোশাক পরে রাস্তায় ঘুরাঘুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন আসল পুলিশের হাতে, রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে বেশ কয়েকবারই পড়েছেন বিপাকে। ফলে, পড়াশোনার ব্যাপারে মোহাম্মদ বিন সালমান কখনোই খুব একটা মনোযোগী ছিলেন না, মায়ের কড়া শাসনও তাকে খুব একটা মনোযোগী করতে পারেনি পড়াশোনার ব্যাপারে।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বিন সালমান
তেল উৎপাদনে পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ দেশ সৌদি আরব, তেল রপ্তানি করেও বিপুল আয় করে এই দেশটি। রাষ্ট্রকাঠামোর পুরো নিয়ন্ত্রণ সৌদি রাজপরিবারের অধীনে থাকায় তেলের রাজস্বের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণও ছিল এই রাজপরিবারের হাতে। এর বাইরে, সৌদি রাজপরিবারে উত্থান ঘটেছে আল-ওয়ালিদ বিন তালালের মতো বেশ কয়েকজন সফল ব্যবসায়ীর, রাষ্ট্রীয় নীতিকে নিজেদের সুবিধামতো পরিবর্তন করে অধিকাংশ রাজপুত্রই হয়েছিলেন বিপুল ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক।
খুব অল্প বয়সেই মোহাম্মদ বিন সালমান বুঝতে পারেন, তার বাবা, রিয়াদের গভর্নর সালমান ইবনে আবদুল আজিজ সৌদি রাজপরিবারের অন্যদের তুলনায় বেশ কম সম্পত্তির মালিক, তার উপর ছিল গভর্নর সালমানের ব্যক্তিগত ঋণ। সব মিলিয়ে মোহাম্মদ বিন সালমান সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের, স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন তার কাজিন আল-ওয়ালিদ বিন তালালের মতো সৌদি আরবের শীর্ষ ধনী হতে। সেই ভাবনা থেকেই গড়পড়তা সৌদি প্রিন্সদের মতো ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েন মোহাম্মদ বিন সালমান।
নিজের পাওয়া বিভিন্ন উপহার বিক্রি করে ব্যবসায়ের জন্য মূলধন সংগ্রহ করেন মোহাম্মদ বিন সালমান, শুরুর দিকেই চেষ্টা করেন স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগের। সময়ের সাথে মোহাম্মদ বিন সালমান মৎস্য ব্যবসার সাথে জড়িয়েছেন, হাসপাতাল ব্যবসার সাথে জড়িয়েছেন, জড়িয়েছেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবসার সাথেও। সময়ের সাথে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সাথেও জড়িয়ে যান এই প্রিন্স, এক জমির মালিককে খামে করে বুলেট পাঠিয়ে পরিচিতি পান ‘বুলেটের পিতা’ হিসেবে।
তবে মোহাম্মদ বিন সালমান তার ব্যবসায়িক জীবনে সবচেয়ে সফল বিনিয়োগ করেছেন অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবসায়। মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট ভ্যারিজনের সাথে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবসা তাকে সুযোগ করে দেয় মিলিয়ন ডলার আয় করার, একই সাথে অর্জন করেন পিতা সালমানের আস্থাও। সেই সময়ে সালমান তার এক অতিথির কাছে প্রশংসা করেছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমানের, জানিয়েছেন প্রিন্সের ব্যবসায়িক সাফল্যে নিজেদের ভালোলাগার কথা।
মোহাম্মদ বিন সালমানের উত্থান
রাজনীতিতে মোহাম্মদ বিন সালমানের উত্থান ঘটে ২০১৫ সালের শুরুতেই। জানুয়ারি মাসে বাদশাহ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর সৌদি আরবের বাদশাহ হন সালমান বিন আবদুল আজিজ। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই বাদশাহ সালমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন মোহাম্মদ বিন সালমানকে, সামরিক কাজের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও। একই বছর এপ্রিলে আরেকদফা রদবদল ঘটে সৌদি আরবের সৌদি আরবের শীর্ষ পদগুলোতে, ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে অধিষ্ঠিত হন মোহাম্মদ বিন নায়েফ, ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে অধিষ্ঠিত হন মোহাম্মদ বিন সালমান।
২০১৫ সালের শুরু থেকেই সৌদি শাসনতন্ত্রে অসীম ক্ষমতা ভোগ করছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান, ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্সের অফিসের পাশাপাশি সামলাচ্ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও। কিন্তু এই প্রিন্স চাচ্ছিলেন নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে নিজের হাতে গড়তে, সৌদি রাজনৈতিক কাঠামোর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছাতে।
মোহাম্মদ বিন সালমানের এই রাজনৈতিক উচ্চাশার সামনে সবচেয়ে বড় বাধা ছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ। একটা দীর্ঘ সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ বিন নায়েফ ট্রেনিং পেয়েছিলেন এফবিআই আর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড থেকে, দায়িত্ব পালন করেছেন সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবেও। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মোহাম্মদ বিন নায়েফ সবসময়ই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)-এর সাথেও। অত্যন্ত দক্ষতাসম্পন্ন এই সৌদি রাজপুত্র ২০১৫ সালে দায়িত্ব পান সৌদি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে, বিপুল জনপ্রিয়তাকে সঙ্গী করে সৌদি আরবের জনগণের কাছে হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় বীর।
ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে মোহাম্মদ বিন নায়েফ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মোহাম্মদ বিন সালমান তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা শুরু করেন। ২০১৫ সালে মার্চে নায়েফকে পাশ কাটিয়ে ইয়েমেন যুদ্ধ শুরু করেন মোহাম্মদ বিন সালমান, পরের বছরই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সাথে নায়েফের মিটিং আটকে দেন মোহাম্মদ বিন সালমান। নায়েফের বিরুদ্ধে এমবিএসের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গী হন সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন যায়েদ।
মোহাম্মদ বিন নায়েফ এই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছিলেন, বুঝতে পারছিলেন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ঝুঁকিও। কিন্তু ২০০৯ সালে আল-কায়েদার বোমা হামলায় আহত হওয়া এই ক্রাউন প্রিন্স ব্যর্থ হচ্ছিলেন রাজনৈতিকভাবে এমবিএসকে মোকাবেলা করতে, বোমা হামলার পর থেকেই ক্রমাগত অবনতি হচ্ছিলো তার স্বাস্থের। ঘুমের জন্য একের পর এক পেইনকিলার খেতে হতো নায়েফকে, ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক কাজকর্মে বাড়ছিল তার অনুপস্থিতি। বারাক ওবামার সাথে এক মিটিংয়ে ঝিমুতে দেখা যায় নায়েফকে, নায়েফের সাথে কমতে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের এস্টাবলিশমেন্টের যোগাযোগও।
ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান
২০ জুন, ২০১৭। মোহাম্মদ বিন নায়েফকে মধ্যরাতে রাজপ্রাসাদ থেকে ডাকা হয় বাদশাহ সালমানের সাথে দেখা করতে। প্রাসাদে প্রবেশের সময়ই মোহাম্মদ বিন নায়েফের দেহরক্ষীদের নিরস্ত্র করা হয়। নায়েফকে বলা হয়, বাদশাহ সালমান তার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করতে চান।
রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করেই মোহাম্মদ বিন নায়েফ বিপদ বুঝতে পারছিলেন। রাজপ্রাসাদের এক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন নায়েফের সামনে পদত্যাগপত্র নিয়ে আসে। পুরো রাত জুড়ে রাজপরিবারের এমবিএসপন্থী সদস্যরা নায়েফকে চাপ দিতে থাকেন পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরের জন্য। মোহাম্মদ বিন নায়েফ রাজি হননি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরের ব্যাপারে, পুরো রাতজুড়ে মোকাবেলা করেনে এই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
কিন্তু, দ্রুতই হার মানতে হয় মোহাম্মদ বিন নায়েফকে, ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না এই রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা করা। সকালে পদত্যাগের ব্যাপারে সম্মত হন মোহাম্মদ বিন নায়েফ। বাদশাহ সালমান মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্সের পদের পাশাপাশি সরিয়ে দেন অন্য সকল রাজনৈতিক পদ থেকে। এলিগিয়েন্স কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট আর বাদশাহ সালমানের ডিক্রিতে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে অধিষ্ঠিত হন মোহাম্মদ বিন সালমান।
রাজনীতিতে এমবিএসের উত্থান
ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মোহাম্মদ বিন সালমানই আবির্ভূত হন সৌদি আরবের ডি-ফেক্টো লিডার হিসেবে। শুরুর দিকে সংস্কারপন্থী কার্যক্রম আর বৈচিত্র্যময় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তাকে সৌদি আরবের অভ্যন্তরে জনপ্রিয়তা এনে দেয়, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও সংস্কারপন্থী ভাবমূর্তি তৈরি হয়ে এমবিএসের। তবে এমবিএসের এই জনপ্রিয়তায় পতন ঘটতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িয়ে বিপুল অর্থনৈতিক খরচের পাশাপাশি ইয়েমেনে মানবিক সংকট তৈরি করেছেন এমবিএস, ইয়েমেনকে ঠেলে দিয়েছেন আরেকটি গৃহযুদ্ধের দিকে।
টুইটারে নিজের সমালোচকদের কঠোর হাতে দমন করেছেন এমবিএস, কঠোরভাবে দমন করেছেন দেশের অভ্যন্তরে কাজ করা মানবাধিকার কর্মীদেরও। এমবিএসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে জামাল খাসোগজির হত্যাকান্ডের নির্দেশ দেওয়ার, সৌদির অভিজাতদের হোটেলে বন্দি করে অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়ার।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রকাঠামোতে হঠাৎ করেই উত্থান ঘটেছে মোহাম্মদ বিন সালমানের, নিজের সংস্কারপন্থী ভাবমূর্তিও তৈরি করতে পেরেছিলেন স্বল্প সময়েই মধ্যেই। কিন্তু, মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের প্রথাগত স্থিতিশীল রাজনীতির ধরন বদলে দিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে বিবাদে জড়িয়েছেন সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী অংশগুলোর সাথে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, তার এই বিপ্লবী রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই। বরং, ম্যাকিয়াভেলির লেখা দ্য প্রিন্সের চতুর্থ অধ্যায়ের উদাহরণগুলো পড়লে আমরা বুঝতে পারবো, এমবিএস সৌদি আরবের স্থিতিশীল রাজনীতির ধরন বদলে দেওয়ার মাধ্যমে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে, ঝুঁকিতে ফেলছেন সৌদি আরবের শতবর্ষ পুরোনো ইবনে সৌদ রাজতন্ত্রকে। এই ঝুঁকি থেকে বের হয়ে আসতে হলে রাজনীতির ধরন পাল্টাতে হবে এমবিএসকে, শাসনতন্ত্রে আনতে হবে স্থিতিশীলতা।