হবসিয়ান প্রকৃতির রাজ্যের অনাচার আর সকলের বিরুদ্ধে সকলের যুদ্ধ বন্ধ করতে মানুষ রাষ্ট্র নামের একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে, সকলের সম্মতির ভিত্তিতে। ফলে রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অভ্যন্তরীণ আর বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতে রাষ্ট্র আমলাতন্ত্র তৈরি করে। আমলাতন্ত্র আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয় পরবর্তীতে, সামরিক আমলাতন্ত্র ও সিভিল আমলাতন্ত্র। রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নিয়মিত কাজগুলো সম্পাদন করা, শস্য আর বাণিজ্যের উপর কর আদায়ের কাজ করত সিভিল আমলাতন্ত্র। সামরিক আমলাতন্ত্রের কাজ ছিল বহিঃশত্রুর হাত থেকে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যার একটি অংশ কাজ করত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার হুমকিগুলো মোকাবেলা করতেও।
সময়ের সাথে মানুষ রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গেছে, বদল এসেছে শাসনতন্ত্রে। নগররাষ্ট্রগুলোতে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র চর্চার পর শুরু হয় সাম্রাজ্যবাদের যুগ, যখন প্রায় সব সাম্রাজ্যের শাসনতন্ত্রই ছিল রাজতান্ত্রিক। আটলান্টিক রেভল্যুশন পরবর্তী সময়ে শুরু হয় জাতিরাষ্ট্রের যুগ, দীর্ঘ লড়াই শেষে যেখানে শাসনতান্ত্রিক মতাদর্শ হিসেবে জয়ী হয় গণতন্ত্র। রাষ্ট্রকাঠামোর এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় শাসনতন্ত্রের ধরনে বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন আসলে বহাল থেকে সিভিল আমলাতন্ত্র, রাষ্ট্রের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে এখনও টিকে আছে সামরিক আমলাতন্ত্র বা প্রতিরক্ষা বাহিনী।
সময়ের সাথে সামরিক বাহিনীর নতুন কিছু দায়িত্ব যুক্ত হয়েছে। যুদ্ধের ধরনে পরিবর্তনের সাথে গত কয়েক শতাব্দীতে তড়িৎ গতিতে হয়েছে প্রতিরক্ষার সাথে সম্পর্কিত প্রযুক্তির উন্নয়ন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাস্তবতায় পরাশক্তি তৈরির মূল কারিগর এখনও রয়ে গেছে সামরিক বাহিনী, কিছু দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও রয়েছে সামরিক আমলাতন্ত্রের অপরিসীম প্রভাব।
সাত দশক আগে স্বাধীনতা পাওয়া ভারতকে শুরু থেকেই নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় আকারের সামরিক বাহিনী তৈরি করতে হয়েছে। সময়ের সাথে ভারতের সামরিক সক্ষমতা বেড়েছে, বেড়েছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতাও। প্রতিবেশী পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক শুরু থেকেই উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ভারতের, সম্প্রতি ভারতের নিরাপত্তার ধারণা জটিল করে তুলেছে চীনও। দুই পারমাণবিক শক্তিধারী প্রতিবেশীর সাথে নিরাপত্তাকেন্দ্রিক লড়াই আর নিজেদের পরাশক্তি হওয়ার বাসনায় সামরিক বাহিনীতে কাঠামোগত সংস্কার আনছে ভারত, আসছে সাংগঠনিক সংস্কারও।
অন্য সকল প্রভাবশালী প্রতিরক্ষা বাহিনীর মতো ভারতের সামরিক বাহিনীকেও বর্তমানে ভূমিতে নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলা করতে হচ্ছে, বিস্তৃত ভারত মহাসাগরে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সামর্থ্যের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, নিরাপত্তা নিশ্চিতে যেতে হচ্ছে সাগরের সীমাহীন জলরাশির গভীরেও। ভারত মহাসাগরে ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দ্বীপ রয়েছে ভারতের নিয়ন্ত্রণে, সেগুলোর সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজও করছে ভারতের সামরিক বাহিনী। প্রথাগত এই কাজগুলোর পাশাপাশি ভারতের আকাশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অধিক তৎপরতা দেখাতে হচ্ছে সামরিক বাহিনীকে, মোকাবেলা করতে হচ্ছে সাইবার হামলা, যুক্ত হয়েছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিভ স্পেকট্রামের নিরাপত্তার দায়িত্বও।
বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম সামরিক বাহিনী আছে ভারতের, সামরিক বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয় জিডিপির ১.৮ শতাংশ। সামরিক বাহিনীর বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশই আবার চলে যায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের পেনশন পরিশোধ করতে। ফলে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের সামরিক বাহিনীকে স্বল্প রিসোর্স নিয়ে দক্ষ উপায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের পথ খুঁজতে হচ্ছে, হবে। পরবর্তী সমীকরণগুলোকে সামনে রেখে ভারতের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে সামরিক বাহিনীতে তৈরি হচ্ছে থিয়েটার কমান্ড।
থিয়েটার কমান্ড কী?
সভ্যতার শুরু থেকে রাষ্ট্রকাঠামোর অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে বিরাজ করা আমলাতন্ত্রের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে, রয়েছে সেই ঐতিহ্যকে রক্ষার তাড়নাও। ফলে যেকোনো ধরনের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের প্রথাগত উপাদানগুলো থেকে বাধা আসে, চাপ প্রয়োগ করে পরিবর্তনের চিন্তা থেকে সরে আসতে। রক্ষণশীলতার দিক থেকে সামরিক আমলাতন্ত্র তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকে, নিয়মিত কাঠামোর বাইরে যেকোনো পরিবর্তনেই কম ইতিবাচকতা দেখান তারা। এই বাস্তবতাতেই ভারতে স্বাধীনতার পরপরই একীভূত কমান্ড তৈরির ব্যাপারে জনমত তৈরি হলেও সামরিক বাহিনীতে সেটি প্রয়োগ করা যায়নি এখনও।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কিছু সংঘাতপ্রবণ এলাকা থাকে, কিছু অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব থাকে অন্যান্য অঞ্চলগুলোর চেয়ে বেশি। ফলে এই অঞ্চলগুলোতে অন্যান্য জায়গার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি সৈন্যের সমাবেশ ঘটে, উপস্থিতি থাকে সেনা, বিমান আর ক্ষেত্রবিশেষে নৌবাহিনীরও। সংঘাতপ্রবণ সেই অঞ্চলে কোনো শত্রুর আক্রমণের শিকার হলে সেনাবাহিনী স্থল আক্রমণ প্রতিরোধ করার কথা, বিমান আক্রমণ প্রতিরোধ করার কথা বিমানবাহিনীর, জলসীমাতে ভূমিকা রাখে নৌবাহিনী। শত্রুর আক্রমণ মোকাবেলায় এবং অপারেশনের দক্ষতা বাড়াতে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের অধীনে থাকা সকল বাহিনীর সদস্যদের একটি কমান্ডের অধীনে নিয়ে আসার সাংগঠনিক কাঠামোকে থিয়েটার কমান্ড বলে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনের মতো সামরিক পরাশক্তিগুলোর পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩৫টি দেশে থিয়েটার কমান্ড রয়েছে। যেমন- আফ্রিকাতে যুক্তরাষ্ট্রের সকল অপারেশনের দায়িত্ব পালন করে আফ্রিকান কমান্ড, মধ্যপ্রাচ্যে সকল অপারেশনের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল কমান্ড। ইউরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর আছে ইউরোপীয়ান কমান্ড, আছে ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড, নর্দান কমান্ড ও সাউদার্ন কমান্ড। মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের সকল সম্পদের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্পেস কমান্ডের কাছে। এই সবগুলো কমান্ডের নেতৃত্বে থাকেন একজন করে ফোর স্টার জেনারেল, যার নিয়ন্ত্রণে থাকে তার টেরিটরির মধ্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সকল সদস্য ও যুদ্ধাস্ত্র।
ভারতের কেন থিয়েটার কমান্ড প্রয়োজন?
ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই একীভূত কমান্ড তৈরির ব্যাপারে চেষ্টা শুরু হয়। প্রথমদিকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের একীভূত কমান্ড তৈরিতে আগ্রহ থাকলেও সামরিক বাহিনী তাতে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। বরং স্বতন্ত্র সাংগঠনিক কাঠামো বজায় রেখেছে ভারতের সামরিক বাহিনী, বিংশ শতাব্দীর যুদ্ধগুলোতে অংশ নিয়েছে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেই।
স্বাধীন ভারতের সামরিক বাহিনী প্রথম বড় যুদ্ধে জড়ায় ১৯৬২ সালে, যেটি পরিচিত ইন্দো-চায়না যুদ্ধ নামে। সীমান্ত চীনা সামরিক বাহিনীর কাছে পর্যুদস্ত হলেও সামরিক বাহিনীর তিনটি অংশই বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের যুদ্ধ চালিয়ে যায়, প্রায় একমাসের যুদ্ধে একবারের জন্যও একত্রিত হননি তিন বাহিনীর প্রধানেরা। বিমান বাহিনীর আক্রমণ স্থলের সৈন্যদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করলেও যুদ্ধে একেবারেই সমন্বয় ছিল না বিমান বাহিনী আর স্থলবাহিনীর মধ্যে।
ভারত এরপর যুদ্ধে জড়ায় পাকিস্তানের সাথে। ১৯৬৫ সালের এই যুদ্ধেও সমন্বয় ছিল না তিন বাহিনীর মধ্যে। নৌবাহিনীর সীমিত সামর্থ্যের সাথে ছিল সেনাবাহিনী আর বিমানবাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, যুদ্ধের ফলাফলও চূড়ান্তভাবে সন্তুষ্ট করেনি ভারতকে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ভারতের সামরিক বাহিনী। বাংলাদেশের পক্ষে এই যুদ্ধে তিন বাহিনীর সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও দেখা যায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। মুক্তিবাহিনীকে নিয়ে গড়া যৌথবাহিনী বিভিন্ন ফ্রন্টে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে হারিয়ে সপ্তাহের মধ্যেই হারিয়ে পৌঁছে যায় ঢাকায়।
আশির দশকের শেষ দিকে ভারত যখন শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ সংকটে জড়িয়ে পড়ে, শ্রীলঙ্কায় তখন সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য সামরিক বাহিনীর মধ্যে একীভূত কমান্ড তৈরির চেষ্টা করা হয়, তৈরি করা হয় ওভারঅল ফোর্সেস কমান্ড (ওএফসি); স্থলবাহিনীর অধীনে দেওয়া হয় ইস্টার্ন নেভাল কমান্ড আর সাউদার্ন এয়ার কমান্ডকে। নৌবাহিনী এই অভিযানে সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করলেও বিমান বাহিনী সমন্বয়ের কাঠামো এড়িয়ে যায়, কেবল নিয়োগ দেয় একজন লিয়াজো অফিসারকে। সমন্বয়ের একইরকম ঘাটতি দেখা যায় কারগিল যুদ্ধেও। কারগিল যুদ্ধের পর থিয়েটার কমান্ড তৈরির মতামত দেয় কারগিল রিভিউ কমিটি, একই পরামর্শ দেয় গ্রুপ অব মিনিস্টারসও (জিওপি)। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়, পরামর্শ দেওয়া হয় চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের (সিডিএস) পদ তৈরির।
কারগিল রিভিউ কমিটি আর গ্রুপ অব মিনিস্টারসের জোরালো মতামতের পরেও পরবর্তী দুই দশকে ভারতের সামরিক বাহিনীতে থিয়েটার কমান্ড তৈরি হয়নি। তবে এই শতাব্দীতে আবারো লাইন অব কন্ট্রোলে ভারতের নিরাপত্তা হুমকি বেড়েছে, নিরাপত্তার সংকট তৈরি করেছে সামরিক শক্তি হিসেবে চীনের উত্থানও। গত দশকেই ভারত সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে চীনের সাথে, সার্জিকাল অ্যাটাক চালিয়েছে পাকিস্তানেও।
ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জোরদার হয়েছে কাঠামোগত সংস্কারের দাবি, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চার তারকা জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ হিসেবে, তার অধীনেই চলছে থিয়েটার কমান্ড তৈরির কর্মযজ্ঞ।
সামরিক বাহিনীতে পাঁচ থিয়েটার কমান্ড
থিয়েটার কমান্ড তৈরির চেষ্টা ভারত দীর্ঘদিন ধরে করছে, ছিল রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমর্থনও। তবে গত বছর চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ নিয়োগের পরই থিয়েটার কমান্ড তৈরির ব্যাপারে পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান হতে শুরু করে। তবে কতগুলো থিয়েটার কমান্ড তৈরি করা হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে শুরু থেকেই।
ভারতের অধিকাংশ সেনা ঘাঁটি বিমান বাহিনীর ঘাঁটির পাশেই অবস্থিত। আকাশ প্রতিরক্ষায় এই দুই বাহিনী আলাদাভাবে কাজ করে, আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে প্রায় একই কাজ করে নৌবাহিনীও। ফলে একই কাজ তিন বাহিনী তিনবার করে, অপচয় হয় সময় আর শ্রমের। এই পদ্ধতিগত অপচয় কমাতে তৈরি হবে এয়ার ডিফেন্স কমান্ড, ভারতের আকাশের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে যাদের হাতে, থাকবে সকল এন্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইলের নিয়ন্ত্রণও। বিমান বাহিনীর একজন তিন তারকা জেনারেল এই কমান্ডকে নেতৃত্ব দেবেন।
ভারত মহাসাগরে ভারতের বিরাট ভূরাজনৈতিক স্বার্থ আছে, আছে অর্থনৈতিক স্বার্থও। ভারত মহসাগর জুড়ে সার্বভৌমত্ব আর ভারতের স্বার্থ রক্ষায় তৈরি হবে নেভাল কমান্ড, যার সম্ভাব্য সদরদপ্তর হবে অন্ধ্রপ্রদেশের পোর্ট ব্লেয়ারে। নৌবাহিনীর একজন তিন তারকা জেনারেল এই কমান্ডকে নেতৃত্ব দেবেন।
একটি নেভাল কমান্ড আর একটি এয়ার কমান্ড প্রতিষ্ঠা মোটামুটি নিশ্চিত হলেও ধোঁয়াশা ছিল কতগুলো স্থলকমান্ড তৈরি হবে সেটি নিয়েই। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, স্থলে তিনটি থিয়েটার কমান্ড তৈরি হবে, মোট থিয়েটার কমান্ডের সংখ্যা হবে পাঁচটি।
স্থলের প্রথম থিয়েটার কমান্ডটি তৈরি হবে চীনের সাথে ভারতের সীমান্তরেখা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলকে কেন্দ্র করে। নর্দান কমান্ড নামে পরিচিত হবে এই থিয়েটার কমান্ড, লাদাখের কারাকরান পাস থেকে শুরু করে ৩৪,৪৮৮ কিলোমিটার সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, শেষ হবে অরুণাচল প্রদেশে গিয়ে। লক্ষ্ণৌতে হেড-কোয়ার্টার হওয়ার সম্ভাবনা আছে এই থিয়েটার কমান্ডারের, নেতৃত্ব দেবেন সেনাবাহিনীর একজন তিন তারকা জেনারেল (লেফটেন্যান্ট জেনারেল)।
সিয়াচেন গ্লেসিয়ার থেকে গুজরাটের সীমান্ত নিয়ে তৈরি হবে ওয়েস্টার্ন কমান্ড, আরেকটি থিয়েটার কমান্ড হবে পেনিনস্যুলার কমান্ড নামে। এই দুটি থিয়েটার কমান্ডেও নেতৃত্ব দেবেন একজন করে তিন তারকা জেনারেল, আসবেন সেনাবাহিনী থেকে।
ভারতকে কতটুকু সুবিধা দেবে থিয়েটার কমান্ড?
নিজে পারমাণবিক শক্তিধর হলেও আরো দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের নিরাপত্তা সবসময়ই জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। পাকিস্তানের সাথে চিরশত্রুতার সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে চীনের বৈশ্বিক পরাশক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, রয়েছে সংঘাতপ্রবণ সীমান্ত থাকার ইতিহাস। চীনের অর্থনৈতিক উত্থানের বিপরীতে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভারতের সামরিক বাহিনীতে কাঠামোগত সংস্কার আসলে সীমিত সম্পদকে ব্যবহার করে সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা। থিয়েটার কমান্ড তৈরির মাধ্যমে সাংগঠনিক সুবিধা হয়তো ভারত পাবে। তবে চরম পরিস্থিতিতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে এই কাঠামোগত সুবিধার ফায়দা নির্ভর করবে সৈনিকদের দক্ষতার উপর, কমান্ডারের সৃজনশীল ও কার্যকরী কমান্ডের উপর, এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রজ্ঞার উপর।