সম্প্রতি ফাঁস হওয়া প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার গোপন ইরানি ডকুমেন্টের উপর সংবাদ মাধ্যম ইন্টারসেপ্ট পাঁচ পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনগুলোতে উঠে এসেছে ইরাকে ইরানের রহস্যময় ভূমিকার অনেক গোপন তথ্য। ইন্টারসেপ্টের এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলোর উপর ভিত্তি করেই আমাদের এই “ইরান ক্যাবল” সিরিজ।
আজ পড়ুন সিরিজের পঞ্চম পর্ব। পূর্ববর্তী পর্বগুলো পড়ুন এখান থেকে: ১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব
২০১৪ সালের গ্রীষ্মকালে এক নৃশংস অভিযানের মধ্য দিয়ে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট নিজেদেরকে মধ্যপ্রাচ্যের ভয়ঙ্করতম সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
জুন মাসের শুরুতে তারা ইরাকের মুসল শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়, যে শহরটি ছিল ১.২ মিলিয়ন মানুষের আবাসভূমি। এর কয়েকদিন পরেই তারা তিক্রিতের কাছাকাছি একটি পরিত্যক্ত মার্কিন ঘাঁটিতে ১,৫০০ এরও বেশি ইরাকি সেনাসদস্যের গণহত্যার দৃশ্য প্রচার করে। মাসের শেষ নাগাদ দলটির নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি নিজেকে স্বঘোষিত “রাষ্ট্রের” তথা “খিলাফতের” প্রধান হিসেবে ঘোষণা করে। আর তার বাহিনী ইরাকের উত্তরাঞ্চলজুড়ে গণহত্যার তাণ্ডবলীলা চালাতে থাকে, সংখ্যালঘু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের সদস্যদেরকে হত্যা এবং দাসদাসীতে রূপান্তরিত করতে থাকে এবং পশ্চিমা নাগরিকদেরকে জিম্মি করতে থাকে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় খুঁজছিল, ততদিনে আইসিস যোদ্ধারা ইরাকি কুর্দিস্তানের রাজধানী এরবিলের কাঁচের দেয়ালের বহুতল ভবনগুলোর নাগালের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিল। এবং এখানেই মাখমুর শহরের প্রান্তে “ব্ল্যাক টাইগার” নামের একটি কুর্দি সামরিক ঘাঁটি থেকে কুর্দি পেশমার্গা যোদ্ধারা সর্বপ্রথম আইসিসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এখানেই পেশমার্গাদের হাতে আইসিস প্রথম পরাজয়ের স্বাদ লাভ করে।
মাখমুরের যুদ্ধ আরেকটি কারণেও আইসিসবিরোধী যুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ এখানেই সর্বপ্রথম দুই বিদেশী পরাশক্তির হস্তক্ষেপ শুরু হয়। একটি ছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন বাহিনী, যারা প্রথমে উপর থেকে এয়ার সাপোর্ট এবং পরবর্তীতে ভারি অস্ত্রশস্ত্র দিয়েছিল। আর অন্যটি ছিল ইরান, যারা এই যুদ্ধে সর্বাত্মক সাহায্য করেছিল গোলাবারুদ, প্রশিক্ষণ এবং গোয়েন্দাতথ্য দিয়ে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমেরিকা এবং ইরান নতুন করে কূটনৈতিক সংকটে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আইসিসবিরোধী যুদ্ধের সেই প্রথম দিনগুলোতে বারাক ওবামার আমলে দুই দেশের মধ্যে চলা দীর্ঘ শত্রুতা সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে পড়েছিল। উভয়েই তখন মনোনিবেশ করেছিল সাধারণ একটা লক্ষ্যে – আইসিসের অগ্রযাত্রা রোধ করা এবং তাদের তথাকথিত খিলাফতকে ধ্বংস করা।
আইসিসবিরোধী যুদ্ধে ইরান এবং আমেরিকার এই সহযোগিতার কথা অবশ্য অনেক আগে থেকেই জানা। কিন্তু এই যুদ্ধে আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ইরানের গোপন গোয়েন্দা তৎপরতার কথা এর আগে জানা ছিল না। এই তথ্যগুলো প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে গত মাসে ফাঁস হওয়া ইরান ক্যাবলে। নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ইন্টারসেপ্ট কর্তৃক প্রকাশিত এই বার্তাগুলোতে আছে ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি তথা MOIS-এর প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার গোপন নথি।
গণমাধ্যমে আইসিসবিরোধী যুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর ভূমিকা বেশি আলোচিত হলেও ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলো থেকে দেখা যায়, একই সময় ইরানের MOIS-ও আইসিসের বিরুদ্ধে গোপন অপারেশন পরিচালনা করছিল। তারা আইসিস সদস্যদের উপর গোয়েন্দাগিরি করছিল, তাদের শত্রুদেরকে গোপনে সাহায্য করছিল এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে আইসিসের মৈত্রী ভাঙ্গার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল।
অনেক দিক থেকেই আইসিসের বিরুদ্ধে নেওয়া ইরানের গোয়েন্দাসংস্থার পদক্ষেপগুলো ছিল ইরাকে আমেরিকানদের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মতোই। আইসিসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ এবং ইরাকি সেনাবাহিনী ও শিয়া মিলিশিয়াদেরকে সরাসরি সাহায্য করা ছাড়াও ইরানিরা সুন্নি এবং কুর্দিদের মধ্য থেকে তাদের বিবেচনায় মধ্যপন্থী অনেককেও নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করছিল। শুরু থেকেই MOIS-এর দৃষ্টি ছিল যুদ্ধ যেদিন শেষ হবে, যেদিন ইরাককে পুনর্গঠিত করার জন্য স্থানীয় সবগুলো গোষ্ঠীর সাহায্য প্রয়োজন হবে, সেদিনের প্রতি।
একদিক থেকে বলতে গেলে, প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ডস কোরের তুলনায় MOIS-এর ভূমিকা ছিল ভালো পুলিশ, খারাপ পুলিশ গেমের ভালো পুলিশের মতো। MOIS ছিল বাস্তববাদী এবং দূরদর্শী। তারা সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু এর বিপরীতে রেভোল্যুশনারি গার্ডদের বিরুদ্ধে তাদের ইরাকি প্রক্সিদের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সাম্প্রদায়িক নির্মূলীকরণ অভিযান চালানোর অভিযোগ উঠছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল সম্পূর্ণ সুন্নি সম্প্রদায়কে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করার এবং তাদেরকে ধর্মীয় উগ্রপন্থা ও শত্রুভাবাপন্ন ইরাকি সরকারের মধ্যে যেকোনো একটাকে বেছে নিতে বাধ্য করার।
ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলো অনুযায়ী, আইসিসবিরোধী যুদ্ধে আমেরিকানরা ইরানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ না করায় ইরানিদের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। প্রকাশ্যে যা-ই বলুক না কেন, ডকুমেন্টগুলো অনুযায়ী পেছনে ইরানিরা আইসিসকে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে মার্কিন বিমান হামলাগুলোর কার্যকারিতা স্বীকার করে নিয়েছিল। এবং তারা চাইছিল আমেরিকানদের সাথে একত্রে কাজ করতে।
শেষপর্যন্ত যদিও ইরানিদের ভূমিকা আমেরিকানদের তুলনায় অনেক সীমিত ছিল, কিন্তু শুরুর দিকে আইসিসের বিরুদ্ধে কুর্দিদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে ইরান ক্ষিপ্রতার সাথে পদক্ষেপ নিয়েছিল। ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক কুর্দি বিশ্লেষকের মতে, “ইরানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়িত করতে পারে। সেই তুলনায় আমেরিকানদের আমলাতন্ত্র অনেক জটিল।” তিনি জানান, আইসিস যখন মাখমুর আক্রমণ করে, তখন ইরানিরাই সর্বপ্রথম কুর্দিদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেও আমেরিকানদের সাহায্য আসতে আরো দুই-এক দিন সময় লেগে গিয়েছিল।
মাখমুরে কুর্দি পেশমার্গাদের জয়ের পেছনে আমেরিকানদের বিমান হামলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে এই পেশমার্গাদের অনেকেই ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স, MOIS-এর উপদেষ্টাদের কাছ থেকে সাহায্য এবং পরামর্শ পেয়ে আসছিল। ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলো থেকে দেখা যায়, একেবারে শুরু থেকেই ইরানি এবং কুর্দি গুপ্তচররা আইসিসের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল।
ফাঁস হওয়া একটি ডকুমেন্ট থেকে ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরের একটি মিটিংয়ের কথা জানা যায়। সেদিন MOIS-এর এক কেস অফিসার তার ঘাঁটি থেকে বের হন ইরাকের কুর্দিস্তানের রাজধানী এরবিলে অবস্থিত তার এক অ্যাসেটের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। আইসিস তখনও তাদের ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে, এরবিল তখনও গিজগিজ করছিল দেশী-বিদেশী সামরিক এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দ্বারা। তাদের চোখ এড়ানোর জন্য MOIS-এর ঐ কর্মকর্তা প্রথমে ঘাঁটি থেকে বের হন পায়ে হেঁটে। প্রায় ২০ মিনিট হাঁটার পর তিনি পর্যায়ক্রমে দুটি ট্যাক্সি পরিবর্তন করে, শহরের অলিগলি ঘুরে অবশেষে মিটিংয়ে উপস্থিত হন।
সেদিন তার মিটিংয়ের উদ্দেশ্যে ছিল দুটি। প্রথমত, আইসিস সম্পর্কে ইরাকের সুন্নি নেতাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করা। এবং দ্বিতীয়ত, আইসিস নেতা আবুবকর আল-বাগদাদির সাবেক সহপাঠী এবং সহবন্দীদের সাথে কথা বলে তার সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করা।
আইসিসের উপর ইরানিদের গোয়েন্দাগিরির প্রচেষ্টার এটাই একমাত্র উদাহরণ ছিল না। ডকুমেন্টগুলো অনুযায়ী একই বছরের ডিসেম্বর মাসে MOIS-এর আরেকজন অফিসার কুর্দি শহর সুলায়মানিয়ায় তার এক সোর্সের সাথে সাক্ষাৎ করেন। কাছাকাছি সময়ে অন্য একজন অফিসারের হাতে তার এক সোর্স একটি ফ্ল্যাশ ড্রাইভে করে আইসিস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে দেয়। ঐ অফিসার তাকে আইসিসের দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পর্কে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স শুধুমাত্র বাইরে থেকেই আইসিসের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করেনি। ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলো থেকে দেখা যায়, তারা সংগঠনটির নেতৃত্বের ভেতরেও নিজেদের গুপ্তচরদেরকে অনুপ্রবেশ করাতে সক্ষম হয়েছিল। মসুলে অবস্থিত একজন এজেন্টের পক্ষ থেকে MOIS-এর কাছে পাঠানো একটা রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, সে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আইসিসের খিলাফতের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের একটা মিটিংয়ে যোগ দিয়েছিল, যে মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেছিল স্বয়ং বাগদাদি! ঐ মিটিংয়ে আইসিস নেতারা ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিল যে, আমেরিকা এবং ইরানের সহযোগিতায় ইরাকি সেনাবাহিনী, শিয়া মিলিশিয়ারা এবং কুর্দি পেশমার্গারা শীঘ্রই ইরাকের নিনাওয়া প্রদেশে তাদের উপর আক্রমণ শুরু করতে যাচ্ছে।
রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, একইসাথে বহুমুখী শত্রুর মুখোমুখি হয়ে আইসিস নেতারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে এই ভয়ও কাজ করছিল, যেসব আইসিস নেতার অতীতে সাদ্দাম হুসেনের সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিল, তারা হয়তো তাদের শত্রুদেরকে গোপনে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে, কিংবা পদত্যাগ করে বসতে পারে। রিপোর্টে দাবি করা হয়, আইসিসের কেন্দ্রীয় নেতারা সন্দেহ করছিল, বাথ পার্টি থেকে আসা কিছু আইসিস নেতা ইরাকি সেনাবাহিনী কিংবা শিয়া মিলিশিয়াদের হাতে পড়ার ভয়ে কুর্দিশ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে এই উদ্দেশ্যে, যেন বিপদে পড়লে কুর্দি এলাকায় পালিয়ে যেতে পারে।
আইসিস নেতাদের আশঙ্কা পুরোপুরি অমূলক ছিল না। ডকুমেন্টগুলো থেকে জানা যায়, মসুল শহরের উত্তরের দুইটা জেলার বেশ কিছু আইসিস কমান্ডার সত্যি সত্যিই আমেরিকান এবং কুর্দিদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের হাতে আইসিসের ঘাঁটিগুলোর জিপিএস কোর্ডিনেট তুলে দিয়েছিল এবং সংগঠনটির পরবর্তী আক্রমণের পরিকল্পনাগুলো ফাঁস করে দিয়েছিল। প্রতিক্রিয়ায় আইসিস ঐসব এলাকায় সব ধরনের টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
MOIS-এর ডকুমেন্টে পাওয়া এই এলাকাগুলোর একটা ছিল জুমার। রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ঐ সময়ে সত্যি সত্যিই জুমার এলাকায় পেশমার্গাদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন তীব্র বিমান হামলা পরিচালনা করেছিল।
মূল প্রতিবেদক: মুর্তজা হুসাইন
প্রকাশের তারিখ: ১৮ নভেম্বর, ২০১৯
আগামী পর্বে থাকছে আমেরিকার মতোই ইরাকে ইরানের আমেরিকাপন্থী নীতির কথা।
সবগুলো পর্ব: ১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব | ৬ষ্ঠ পর্ব
বিশ্বের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/