প্রকৃতির রাজ্যের নৈরাজ্য থেকে বাঁচতে মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করে। মানবসভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সাথে রাষ্ট্রের প্রকৃতি পরিবর্তন হয়েছে, রাষ্ট্রের কার্যাবলির ধরন পরিবর্তিত হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের প্রত্যাশারও। আটলান্টিক রেভ্যলুশন-পরবর্তী সময়ে জাতিরাষ্ট্রের উত্থানের সাথে সাথে বিস্তৃত হয়েছে মানুষের রাজনৈতিক কার্যক্রম, উত্থান ঘটেছে বিভিন্ন ধরনের মতাদর্শের। গণতন্ত্র, মার্ক্সবাদ, নৈরাজ্যবাদ, লিবারেলিজমের মতোই একটি মতবাদ হিসেবে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে উত্থান ঘটে ফ্যাসিবাদের। মতাদর্শের দিক থেকে ফ্যাসিবাদ প্রথাগত বামপন্থা বা ডানপন্থার বাইরে গিয়ে একটি কট্টর ডানপন্থী ধারার চর্চা করে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে অবাধ ক্ষমতাচর্চার সুযোগ দিয়ে রাজনৈতিক অবতারবাদের চর্চা শুরু করে, বিরোধী দলের উপর নির্যাতন চালিয়ে একদলীয় শক্তিশালী কাঠামোগত শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে। এর মধ্যে ইতালিতে ক্ষমতায় আসেন ফ্যাসিস্ট নেতা বেনিতো মুসোলিনি, জার্মানিতে ক্ষমতায় আসেন আরেক ফ্যাসিস্ট নেতা অ্যাডলফ হিটলার। দুই নেতাই রাজনীতিতে অসক্রিয় অংশের উপর ভর করে ক্ষমতায় আসেন, কট্টর ডানপন্থী অংশের সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর উপর ভরসা করে পুরোপুরি দমন করেন বিরুদ্ধমতকে, জনগণের সামনে সোনালি অতীতের গল্প ফেঁদে দীর্ঘায়িত করেন শাসনকে। প্রভাবশালী রাষ্ট্র কর্তৃক দুর্বল রাষ্ট্রকে ভক্ষণ করার যে মানসিকতা ফ্যাসিবাদী শাসকরা ধারণ করে, তাতেই উৎসাহিত হয়ে অ্যাডলফ হিটলার আর মুসোলিনি একের পর এক ইউরোপীয় রাষ্ট্রকে দখলের নেশায় মেতে ওঠেন, শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক সেভা গুনিস্কায়ের আধুনিক গণতন্ত্রের বিবর্তনের ধারাবাহিক আলোচনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ঘটনাবলি উঠে এসেছে অষ্টম ঢেউ হিসেবে, তার ‘ডেমোক্রেটিক ওয়েভস ইন হিস্ট্রিকাল পার্স্পেক্টিভ’ আর্টিকেলে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তন
মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে, যাতে জড়িয়ে পড়ে ত্রিশের অধিক রাষ্ট্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অপমানজনক চুক্তির প্রতিশোধ নিতে উগ্র জাতীয়তাবাদী হিটলারের নির্দেশে জার্মান সামরিক বাহিনী শুরুতেই দখল করে অস্ট্রিয়া, সেখানে বসবাসরত জার্মান নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে না পারার অজুহাত তুলে। একই অভিযোগে হিটলারের অনুগত সামরিক বাহিনী হামলা চালায় চেকোস্লাভিয়ায়, দখল করে নেয় প্রায় পুরো দেশ। জার্মানদের জন্য বাসযোগ্য জায়গা দখলের চেষ্টায় হিটলারের পরবর্তী শিকার হয় পোল্যান্ড। হিটলারের অস্ট্রিয়া আর চেকোস্লাভিয়া আক্রমণের সময় সামরিক প্রতিক্রিয়া না দেখালেও পোল্যান্ড আক্রমণের পর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ব্রিটেন ও জার্মানি, আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
এরপর জার্মানি একে একে আক্রমণ করে ডেনমার্ক, নরওয়ে আর বেলজিয়ামেও। নেপোলিয়নের সময় থেকে শুরু হওয়া জার্মান আর ফরাসিদের শত্রুতাকে ব্যবহার করে হিটলার দখল করেন ফ্রান্সকেও, সেখানে শাসনকাজে মনোনীত করেন তার অনুগত পুতুল সরকারকে। বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকের বন্ধুত্বের পরেও রুশ কমিউনিজম জার্মানে হিটলার শাসনের জন্য আদর্শিকভাবে হুমকি হতে পারে, এই বিবেচনায় জার্মান বাহিনী আক্রমণ করে রাশিয়াকেও। শেষের দিকে জার্মানি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইতালির বিরুদ্ধে। বিশ্বযুদ্ধের বড় একটা সময় জার্মান সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধ করতে হয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো সামরিক পরাশক্তির দেশগুলোর বিরুদ্ধেও। এই সর্বাত্মক যুদ্ধে জার্মানদের পতন হয় ১৯৪৫ সালের মে মাসে, সোভিয়েত লালফৌজের হাতে বার্লিনের পতনের মাধ্যমে। যুদ্ধের সমাপ্তির মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটে জার্মানিতে।
জার্মানির সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত দেশের নাম ইতালি। মুসোলিনির নেতৃত্বে থাকা ইতালি দখলের চেষ্টা করে মিসরকে, আক্রমণ চালায় আফ্রিকার দেশ মাল্টা আর ইরিত্রিয়াতেও। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে আক্রমণের শিকার হয় গ্রিস, জার্মানির সাথে একাত্ম হয়ে ইতালি যুদ্ধ করে মিত্রশক্তির দেশগুলোর বিপক্ষেও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই পক্ষ ত্যাগ করে ইতালি, যোগ দেয় মিত্রশক্তির সাথে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর ইতালির রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে, জাতিরাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দেশটি।
মধ্যযুগের এক বিশাল সময় পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল জাপান, রক্ষা পেয়েছিল ইউরোপীয় দেশগুলোর সাম্রাজ্যবাদ থেকেও। বিংশ শতাব্দীতে জাপান স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে চীনাদের সাথে, সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে দখল করে কোরিয়াও। ১৯৩৮ সালে চীন আক্রমণ করে উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাপানের তেল আমদানির উপর, আরোপ হয় আরো কিছু বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও। পশ্চিমা শক্তিগুলোর সাথে এই বিরোধকে কেন্দ্র করে ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে জাপান, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয় পরের বছর ডিসেম্বরে পার্ল হারবারে হামলার মধ্য দিয়ে। রাজতন্ত্রের অদূরদর্শী পদক্ষেপ আর ইউরোপীয় ব্লকে অক্ষশক্তির ব্যর্থতা আত্মসমর্পণে বাধ্য করে জাপানকে। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাপানে ব্যাপক শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন আসে, নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের বদলে জাপানে প্রতিষ্ঠিত হয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র।
মিত্রশক্তির দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে গেছে ফ্রান্স। জার্মান সামরিক বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে পুরো ফ্রান্সই চলে গিয়েছিল জার্মানির পুতুল সরকারের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তী সময়ে ফরাসিরা প্রতিরোধ শুরু করলেও ফ্রান্সের মতো সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সামরিক বিপর্যয় আধুনিক সামরিক ইতিহাসে বিরল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এর বাইরেও বিভিন্নভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল আরো অনেকগুলো দেশ, যুদ্ধের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বজুড়েই।
শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের এই আলোচনায় সেসব দেশের যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার প্রাসঙ্গিকতা না থাকায় বিস্তারিতভাবে সেসব দেশের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া আর যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা আলোচনা করা হচ্ছে না। মোটাদাগে, নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে যুদ্ধের সবগুলো পক্ষ, বোমায় উড়ে গেছে নগর-জনপদ, সাপ্লাই চেইন নষ্ট হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তৈরি হয় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি, ঘটে ইহুদি জাতিকে সমূলে বিনাশের জন্য হলোকাস্টের মতো ঘটনাও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা বদলে দেয় আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে, বদলে যায় রাষ্ট্রীয় আর নাগরিক মূল্যবোধগুলো, আসে শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন।
আধুনিক গণতন্ত্রের অষ্টম ঢেউ
আটলান্টিক রেভ্যলুশন থেকে শুরু করে আধুনিক গণতন্ত্র ক্রমাগত নিজের পরিধি বাড়িয়েছে, রাজতন্ত্রকে হটিয়ে বিপ্লব আর বিদ্রোহের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শাসনব্যবস্থা হিসেবে জায়গা দখল করেছে গণতন্ত্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই আধুনিক গণতন্ত্রের বিবর্তন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিমন্ডলে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ শুরু হয় এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোর চর্চা হয়ে ওঠে যেকোনো রেজিমের গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তন আধুনিক গণতন্ত্রের বিবর্তনের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনাপ্রবাহ হিসেবে জায়গা করে নিতে পেরেছে।
প্রথমত, লীগ অব ন্যাশনসের ব্যর্থতা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার অভিজ্ঞতায় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সংলাপের মাধ্যমে স্বার্থের সংঘাত সমাধানের ধারণার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই প্রয়োজনকে মাথায় রেখে তৈরি হয় জাতিসংঘের মতো সংস্থা, জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সাথে সভ্যতার অগ্রগতির ধারণায় সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে অর্থনীতিকেন্দ্রিক করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন, ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের মতো সংস্থাগুলো। মোটাদাগে এই সংস্থাগুলো পরবর্তীতে নিরাপত্তার ধারণা, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতার মতো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রেখেছে।
দ্বিতীয়ত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই বৈশ্বিক পরাশক্তির আসনে পরিবর্তন আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক অর্থনৈতিক আর সামরিক ক্ষতির মুখোমুখি হওয়া যুক্তরাজ্যের পরিবর্তে বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে উত্থান ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের, তাদের আদর্শিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয় বার্লিন দেয়ালের পতন ঘটানো সোভিয়েত ইউনিয়ন। যুক্তরাজ্যের সাংবিধানিক রাজতন্ত্র থেকে পরাশক্তি হিসেবে পূর্ণ সাংবিধানিক শাসনতন্ত্রের অধীনে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পরাশক্তি হিসেবে উত্থান গণতন্ত্রের বৈশ্বিক মূল্যবোধ নির্ধারণে ভূমিকা রাখে, ভূমিকা রাখে পরবর্তী কয়েক দশকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাজতন্ত্রকে উৎখাতেও। এই প্রক্রিয়া সংকীর্ণ গণ্ডিতে হলেও এখনও চলমান।
তৃতীয়ত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্রে মোটাদাগে তিনটি শাসনতান্ত্রিক মতাদর্শ ছিল। যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর গণতন্ত্র, সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিজম আর জার্মানির মতো ইউরোপীয় কিছু দেশের ফ্যাসিজম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার, মুসোলিনির মতো ফ্যাসিস্ট নেতাদের পতনের সাথে সাথে মতাদর্শ হিসেবে পতন ঘটন ফ্যাসিবাদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়েও পৃথিবীর অনেক শাসক ক্ষমতায় গিয়ে ফ্যাসিস্ট রূপ ধারণ করেছেন, বিরোধীদলকে নির্মূল করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন তৃতীয় বিশ্বের অনেক নেতা উস্কে দিয়েছেন কট্ট্র ডানপন্থাকে। কিন্তু কখনোই কোনো শাসক মুসোলিনি বা হিটলারের মতো নিজেকে ফ্যাসিস্ট শাসক হিসেবে পরিচয় দেননি কিংবা ফ্যাসিবাদকে গণতন্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী শাসনতান্ত্রিক মতাদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেননি।
চতুর্থত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা লাভ করে ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলো, স্বাধীনতা লাভ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে ইতালির পতন হয়, স্বাধীনতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্য আর আফ্রিকার ইতালীয় উপনিবেশগুলো। ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে ইউরোপীয় উপনিবেশ নেদারল্যান্ডের শাসন থেকে, যুক্তরাষ্ট্রও স্বাধীনতা দেয় তাদের ঔপনিবেশিক শাসনে থাকা ফিলিপাইনকে। পরবর্তী বছরগুলোতে স্বাধীনতা অর্জনের দিকে ধাবিত হয় আফ্রিকার প্রায় অর্ধশতাধিক দেশ। জাতিরাষ্ট্রের ধারণার উপর গড়ে ওঠা এই দেশগুলোর প্রায় সবগুলোই পরবর্তী সময়ে শাসনব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্রকে গ্রহণ করে।
আধুনিক গণতন্ত্রের বিবর্তনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাবলি গুরত্বপূর্ণ আলোচনার খোরাক হয়েছে। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া মূল্যবোধগুলো শতাব্দীজুড়ে গণতন্ত্রকে বিভিন্ন দেশে শাসনব্যবস্থা হিসেবে বিস্তৃত করতে ভূমিকা রেখেছে। ফলে এক দশকের মধ্যেই গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যার তিনগুণ হয়ে যায়। আধুনিক গণতন্ত্র এরপর আফ্রিকার বি-উপনিবেশায়ন, স্নায়ুযুদ্ধ, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মতো ঘটনার মধ্যে দিয়ে গেছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য শাসনব্যবস্থা হিসেবে। এই ঘটনাপ্রবাহগুলোকে নিয়ে আলোচনা হবে পরবর্তী পর্বগুলোতে।