চাণক্যের মতে, মানুষের অপরাপর সকল কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে রাজনীতি। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উপর যে প্রতিষ্ঠানটির নিরঙ্কুশ আধিপত্য রয়েছে, সে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে রাষ্ট্র। মানুষের জীবনযাপন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে নিরাপত্তার ধারণার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে রাষ্ট্রের ভূমিকা, মানুষের যাপিত জীবনের মান উন্নয়নের দায়িত্বও থাকে রাষ্ট্রের উপরই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের এসব দায়িত্ব পালনে কাঠামোগত ভূমিকা পালন করে, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে, নাগরিকদের একটি গ্রহণযোগ্য রাষ্ট্রকাঠামো উপহার দিতে ভূমিকা রাখে।
রাষ্ট্রের এসব দায়িত্ব পালনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাথমিক কাঠামো হলো আমলাতন্ত্র। আদিকাল থেকেই আমলাতন্ত্রের দুইটি অংশ রয়েছে, অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রকাঠামো পরিচালনার জন্য বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সামরিক আমলাতন্ত্র। আমলাতন্ত্রের মধ্যে সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত। অন্তর্ভূক্ত রাষ্ট্রের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর আর বিভিন্ন উপবিভাগে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। সামরিক আমলাতন্ত্রের অংশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর পাশাপাশি আর্মড ফোর্সের অন্যান্য শাখাও।
ম্যালথাসের থিওরি অনুসারে আমরা জানি, মানবসভ্যতার মধ্যে সবসময় সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকে, থাকে সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে তৈরি হওয়া সংঘাত। অর্থাৎ, কোনো দেশের অর্থনীতির আকার হঠাৎ করে বড় হয়ে গেলে কিংবা কোনো সমাজের মানুষের আয় হঠাৎ করে অনেক বেশি বেড়ে গেলেও, সেখানে সম্পদ নিয়ে সংঘাত থেমে যাবে না, থামবে না নূন্যতম চাহিদা পূরণের সংগ্রাম। বরং, সেই অর্থনীতিতে বা সমাজে মানুষের সংখ্যা এমনভাবে বেড়ে যাবে যে, অর্থনৈতিক উন্নতি সত্ত্বেও সেটি মানুষ আর মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা মৌলিক প্রয়োজনগুলোকে বদলে দেবে না।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর শাসনতন্ত্রে দুর্নীতি
মানুষ যখন একসাথে হয়ে রাষ্ট্র তৈরি করলো, তখন রাষ্ট্রের আর সমাজের কাঠামোর মধ্যে ইতিবাচক আর নেতিবাচক কাজের একটি দৃষ্টিভঙ্গিকেও গ্রহণ করে। কোনো একটা কাজ ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক, সেটি হবসের দর্শন অনুসারের নির্ধারিত হয় মানুষের দক্ষতা দ্বারা। মানুষ একত্রিত হয়ে যখন রাষ্ট্র তৈরি করে, তখন সকলের সম্মিলিত একটি ইতিবাচক বা নেতিবাচক দৃষ্টির সম্মিলন ঘটে বিভিন্ন ব্যাপারে। হবসের দর্শন অনুসারে, কোনো কাজের ব্যাপারে মানুষের এই সম্মিলিত ইতিবাচক বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়েই আইন তৈরি হয়, যেটি রাষ্ট্রের মধ্যে কী করা যাবে আর যাবে না, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করে।
যেমন, প্রায় সকল রাষ্ট্রেই মানুষ হত্যা করা একটি অপরাধ, আইনের মাধ্যমে যে অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিয়ের ব্যাপারে মানুষের মতামতে যেমন পার্থক্য রয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় আইনেও রয়েছে ভিন্নতা। রক্ষণশীল রাষ্ট্রগুলো যেমন অন্য ধর্মের মানুষের সাথে বিয়ের ব্যাপারে কঠোর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখায়, উদার সমাজগুলো এই ব্যাপারটিকে ব্যক্তির পছন্দের উপর ছেড়ে দেওয়াই পছন্দ করে।
দুর্নীতি অধিকাংশ সমাজেই একটি অপরাধ, যেটি প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় আইন রয়েছে, রয়েছে সামাজিক অগ্রহণযোগ্যতা। দুর্নীতি হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একজন আমলা রাষ্ট্রীয় অফিসকে ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত স্বার্থের কাজে, নিজের আত্মীয়-স্বজনকে অধিক সুবিধা পাইয়ে দিতে। অর্থাৎ, এই প্রক্রিয়াতে আমলারা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যবহার নাগরিকদের সুবিধার বদলে নিজে সুবিধা নেয়, নিজের পেট্রনের অধীনের থাকা ব্যক্তিদের স্বার্থরক্ষা করে আনুগত্যের বিনিময়ে কিংবা অর্থের বিনিময়ে।
দুর্নীতি প্রায় সকল মানব সমাজেই অপরাধ হলেও, দুর্নীতির প্রকৃতি দেশে দেশে ভিন্ন, দুর্নীতির ঘটনার সংখ্যার মধ্যেও থাকে তারতম্য। ফলে, এক সমাজে হয়তো দুর্নীতির ঘটনা কম ঘটে, আরেক সমাজে হয়তো বেশি ঘটে। আবার, একই রাষ্ট্রের কোনো এক দপ্তরে হয়তো দুর্নীতির ঘটনা বেশি ঘটে, অন্য দপ্তরে হয়তো কম ঘটে। আবার, দুর্নীতির ঘটনা অনেক সময় অতিক্রান্ত সময়ের উপরও নির্ভর করে। যেমন, উনবিংশ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতির ঘটনা বেশি ঘটেছে, আবার অষ্টাদশ শতাব্দীতে আর বিংশ শতাব্দীতে দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে তুলনামূলকভাবে কম।
একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ব্রিটেনের ক্ষেত্রেও। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্রিটেনে যতগুলো দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে, উনবিংশ শতাব্দীতে ঘটেছে তার চেয়ে অনেক বেশি। আবার, ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডে যতো দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে, উপনিবেশ অঞ্চলগুলোতে দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
উনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অধিক হারে দুর্নীতির ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে, বর্তমান সময়ে একই ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। এই দেশগুলো বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে একে একে স্বাধীনতা পেয়েছে, অধিকাংশ দেশই স্বাধীনতা পেয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে। বিভিন্ন কারণেই এসব দেশে ব্যাপকহারে দুর্নীতির বিকাশ ঘটছে। আমলাতন্ত্রের হাত ধরে যেখানে রাষ্ট্রের সর্বত্র পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল কৃষ্ণচূড়ার সাম্যমন্ত্র, সেখানে আমলাতন্ত্রের দুর্নীতির কারণে বাড়ছে রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, সম্পদ আর নাগরিক স্বাধীনতা পুঞ্জীভূত হচ্ছে অল্প কিছু মানুষের কাছে।
কেন বাড়ছে দুর্নীতি?
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিস্তৃত পরিসরে ঘটে দুর্নীতির ঘটনা, সকল ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধার জন্য নাগরিকদের উপরি অর্থ দিয়ে হয় আমলাদের, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সুবিধা পাওয়ার জন্য দিতে হয় বিভিন্ন অংকের অর্থ। আমলারা চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয় নেন, অর্থের বিনিময়ে চাকরিতে নিয়োগ দেন কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের এনে যুক্ত করেন চাকরিতে। রেলের মতো সেবাখাতগুলোতে দুর্নীতির ঘটনা ঘটে রন্ধ্র্যে রন্ধ্র্যে, টিকেট কালোবাজারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ক্রয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নেয় আমলারা। লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা আর এশিয়ার দেশগুলোতে দুর্নীতির ঘটনা বেশি ঘটছে বর্তমানে, দুর্নীতির র্যাংকিংয়েও এগিয়ে থাকছে এই দেশগুলোই।
মূল্যবোধহীন সমাজ
আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা আর এশিয়ার যে দেশগুলোতে দুর্নীতি অনেক বেশি বিস্তৃত রূপ ধারণ করেছে, সেসব দেশে আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হয়েছে বা আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আধুনিকায়নের প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা এসব রাষ্ট্রে আধুনিক সমাজের মূল্যবোধ প্রথমে ছড়ায় সামরিক বাহিনীর মধ্যে, তারপর ছড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে, যারা পড়াশুনার পর্ব শেষ করে আমলাতন্ত্রের অংশ হয়। সামরিক বাহিনী আর বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অংশ হওয়া মানুষেরা প্রাথমিক জীবনে প্রথাগত সামাজিক মূল্যবোধগুলো নিয়ে বেড়ে উঠে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আর চাকরি জীবনে এই মানুষেরা পরিচিত হোন আধুনিক সমাজের মূল্যবোধের সাথে। এই দুই মূল্যবোধের সংঘাতে ভুগে আমলাতন্ত্রের মানুষেরা, একসময় এমন কাজগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে উঠে, যেগুলো কোন মূল্যবোধেই বৈধ নয়।
দুর্নীতি এমনই একটি কাজ। এটি প্রথাগত সামাজিক মূল্যবোধ বা আধুনিক মূল্যবোধ দ্বারা বৈধ না হলেও, আমলাতন্ত্রে নিয়মিত দুর্নীতির ঘটনা দেখা যায়। প্রথাগত সামাজিক মূল্যবোধ অনুসরণ করলেও আমলারা এই কাজে জড়িত হতেন না, আধুনিক সমাজের মূল্যবোধ অনুসরণ করলেও সেটি করতেন না।
নতুন অর্থের উৎস
যেসব রাষ্ট্রে দ্রুত আধুনিকায়ন হচ্ছে, সেসব রাষ্ট্রে সাধারণত অর্থনীতির আকার দ্রুত বড় হচ্ছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে, বাড়ছে সম্পদের উৎস, সম্পদ অর্জনের উৎস। যেমন, দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিভিত্তিক সমাজগুলোতে গত শতাব্দীর অর্ধেক পর্যন্ত যানবাহনের ব্যবহার ছিল অত্যন্ত সীমিত। স্বাধীনতার পরপরই এসব দেশে রাস্তাঘাট নির্মাণ শুরু হয়, নদীর বদলের সড়ক যোগাযোগের মূল ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়, দ্রুত বেড়ে যায় যানবাহনের সংখ্যা। রাস্তা নির্মাণ, যানবাহন আমদানি থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, সৃষ্টি হয় নতুন সম্পদ অর্জনের সুযোগ।
ব্যবসায়ী শ্রেণি আর আমলারা সম্পদ অর্জনের এই সুযোগকে যুগ্মভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে থাকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। আমলারা নিজেরাই ব্যবসা আর ঠিকাদারি শুরু করে, কিংবা অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীকে ঠিকাদারি বা গাড়ি আমদানির লাইসেন্স সরবারহ করে থাকে।
জবাবদিহিতার অভাব
যেসব রাষ্ট্রগুলোতে আধুনিকায়ন হচ্ছে, সেসব দেশ সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এসব দেশে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশ ঘটেনি, বিকাশ ঘটেনি রাজনৈতিক সচেতনতার ধারণাও। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমলারা কর্তৃত্ববাদী আচরণ করেন, নাগরিক অধিকার আর রাজনৈতিক স্বাধীনতা হরণের যে উপনিবেশ আমলের সংস্কৃতি, সেটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। এসব দেশের সরকারও প্রায়ই কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠে, যারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আর বিরোধী দলকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে ঠেলে দিয়ে অনুদার গণতন্ত্রের সূচনা করে।
অনুদার গণতন্ত্র যেসব দেশে আছে, সেসব দেশে সরকারের সাথে জনগণের সরাসরি যোগাযোগ থাকে কম। শাসনকে টিকিয়ে রাখতে এসব কর্তৃত্ববাদী সরকার নির্ভর করে আমলাতন্ত্রের উপর। আমলাতন্ত্র সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার বিনিময়ে কলোনিয়াল সময়ে শাসনের যে লিগ্যাসি, সেটি ধরে রাখে। পাশাপাশি, অর্থনৈতিক অনিয়মের ব্যাপারে সরকারকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়াও আঁটকে দেয় আমলাতন্ত্র।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় উন্নয়নশীল দেশগুলো। আর দুর্নীতি ব্যক্তিগত পরিসর ছাপিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্নীতির দুষ্টচক্রে পড়ে যায়, যেখান থেকে দুর্নীতি নির্মূলের জন্য তৈরি করা সংগঠনগুলো কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। বিচার বিভাগের পক্ষেও দুর্নীতি রোধে কোনো ভূমিকা নেওয়া সম্ভব হয় না সাধারণত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগও দুর্নীতির দুষ্টচক্রে আঁটকে যায়।
দুর্নীতির সূচকে উন্নয়নশীল দেশগুলো
পাবলিক অফিসকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করা, নিজের ইচ্ছামতো পেট্রোনেজ দেওয়া আর স্বজনপ্রীতির ঘটনাগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবছর তৈরি হয় করাপশন পারসেপনশন ইনডেক্স। যেমন, ২০২১ সালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্সে শীর্ষ দেশ ছিল দক্ষিণ সুদান, দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সিরিয়া, তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে ছিলো যথাক্রমে সোমালিয়া ও ভেনিজুয়েলা। পঞ্চম থেকে দশম অবস্থানে যথক্রমে আছে ইয়েমেন, উত্তর কোরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, গুয়েনিয়া নামের দেশগুলো। তালিকার উপরের দিকে আছে বাংলদেশের নামও। এই দেশগুলো ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছর ধরেই দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের তালিকায় শীর্ষে আছে, কিছু দেশ ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে আছে কয়েক দশক ধরে।