বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ বৃদ্ধির সাথে সাথে দুর্বল হচ্ছে সামাজিক কাঠামো, মানুষের কার্যক্রমের নৈতিক বৈধতার জন্য সামাজিক কাঠামোর কার্যক্রমেরও সংকোচন হচ্ছে। পারিবারিক কাঠামোতে রক্ষণশীল মূল্যবোধগুলোর প্রভাব কমছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যক্তির পছন্দ ও প্রয়োজনানুযায়ী জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত। মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি বেড়েছে, বেড়েছে ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বন্দ্ব। অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এই দ্বন্দ্বগুলো অনেক সময় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হচ্ছে, আবার কখনো রূপ নিচ্ছে সহিংস সংঘাতে।
এই সংঘাতগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ জড়াচ্ছে, বিভিন্ন বর্ণের মানুষের সম্পৃক্ততা থাকছে, যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এই দ্বন্দ্বের প্রকাশ কখনো হয় প্রকাশ্য, কখনো বা অপ্রকাশ্য। আবার, অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিজের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে অনেকেই জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ধরনের ফৌজধারী অপরাধে। সাধারণত, অন্য নাগরিকের মৌলিক এবং রাজনৈতিক অধিকার হরণকারী এসব ফৌজধারী অপরাধ অধিকাংশ ক্ষেত্রে করে থাকে ২০-৫০ বছরের মানুষেরা। এই বয়সসীমার মধ্যে আবার ২৫-৩৫ বছর বয়স্ক মানুষদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
তবে, গত কয়েক দশকে অপরাধীদের বয়সের কাঠামোতে নতুন একটি চিত্র উঠে আসছে। বিভিন্ন ফৌজধারী অপরাধে জড়াচ্ছে ১৮ বছরের নিচের মানুষেরা, সাধারণ বয়সকাঠামোতে যারা তখন কৈশোর পার করছে। এই বয়সের কিশোররা একক অপরাধের পাশাপাশি জড়াচ্ছে সংঘবদ্ধ অপরাধে, বদলে দিচ্ছে সামাজিক কাঠামোর কার্যক্রমকে, প্রভাবিত করছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে।
পশ্চিম ইউরোপ থেকে শুরু করে লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কিশোরদের এই সংঘবদ্ধ অপরাধের ঘটনাগুলো সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করেছে, নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কার্যক্রমকে। আশির দশকের শুরু থেকে নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্যন্ত লাতিন আমেরিকাতে কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধের ঘটনা অর্ধেকের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দেড়গুণ হয়েছে, একই ধরনের অপরাধ পশ্চিম ইউরোপ আর মধ্য এশিয়াতে বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। কলম্বিয়া, রাশিয়া আর দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে এই ধরনের অপরাধের বৃদ্ধি ঘটেছে তিনগুণেরও বেশি।
অর্থাৎ, কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধের বৃদ্ধি পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তেই ঘটছে, নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে সব জায়গাতেই। এর ফলে, কিশোর অপরাধ নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে যেমন প্রচুর কাজ হচ্ছে, একইভাবে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারণী জায়গাগুলোতেও কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণের প্রেক্ষাপট গুরুত্বের সাথে আলোচিত হচ্ছে। গত কয়েক দশকের বুদ্ধিবৃত্তিক ও নীতিনির্ধারণী পরিসরে আলোচনার ফলে কিশোর অপরাধের প্রকৃতি ব্যাখ্যা সহজতর হয়েছে, কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধের পেছনের ক্রিয়াশীল প্রভাবকগুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধ একটি বৈশ্বিক ঘটনা এবং অঞ্চলভেদে এসব সংঘবদ্ধ কাঠামোর প্রকৃতি ও কাজ ভিন্ন। ফলে, কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধের প্রকৃতি মূল্যায়নে বিশাল তথ্যভাণ্ডার নিয়ে কাজ করার চ্যালেঞ্জ আছে, আছে সীমাবদ্ধতাও। এই আর্টিকেলে, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নীতিনির্ধারণী কাঠামোর মধ্যে আলোচিত কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধ বৃদ্ধির কিছু প্রভাবক নিয়ে আলোচনা করা হবে।
কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধ
সিনেমাতে আমরা বিভিন্ন সময়ে বিশাল আকারের অপরাধী সংঘের উপস্থিতি দেখে থাকি। অপরাধী সংঘের বাস্তবিক উপস্থিতি পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তেই রয়েছে। মায়ানমারে সামন্তশ্রেণির যুদ্ধনেতারা নিজেদের সেনাবাহিনী তৈরি করে নিরাপত্তা আর জমির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য, উত্তর আমেরিকা আর লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে গড়ে ওঠে ‘গডফাদার’ এর মতো চরিত্র, যারা সরকারের বিকল্প হয়ে ওঠে, বিকল্প হয়ে ওঠে রাষ্ট্রেরও। একই ধরনের গডফাদারদের উপস্থিতি আফ্রিকার দেশগুলোতে রয়েছে, রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও।
সিনেমা আর বাস্তবের এই পরিণত-বয়স্ক অপরাধীদের কাঠামোর বাইরে আমরা নতুন একটি অপরাধীদের কাঠামোর বাস্তবিক উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছি। সাধারণত, ১৫-১৮ বছর বয়সের কিশোরদের নিয়ে গড়ে উঠছে এই অপরাধী চক্রগুলো, যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে যুক্ত থাকে অপহরণ, ডাকাতি, খুনের মতো অপরাধগুলোতেও। এই সংঘবদ্ধ কাঠামোগুলো বিভিন্ন এলাকাতে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য কাজ করে, কাজ করে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরিতেও। অনেক সময়ই এই সংঘগুলোতে যুক্ত হয় ১২-১৫ বছরের কিশোররাও, যারা সদ্য তাদের বয়ঃসন্ধিকালে পা দিয়েছে। এদের সমবয়সীরা হয়তো স্কুলে ষষ্ঠ-অষ্টম বা এর কিছু উপরের শ্রেণিতে পড়ে।
অনেকগুলো কারণেই কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধের বিস্তৃত ঘটছে, সামাজিক কাঠামোর স্থিতিশীলতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে, রাজনৈতিক বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করছে, নেতিবাচক প্রভাব রাখছে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়, বিঘ্নিত করছে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলোকে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি
হবসিয়ান প্রকৃতির রাজ্যে যে নৈরাজ্য তৈরি হয়েছিল, তাকে মাৎস্যন্যায়ের পরিস্থিতির সাথে তুলনা করা যায়, যেখানে বড় মাছ নির্বিচারে ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে, সবল বিঘ্নিত করে দুর্বলের নিরাপত্তা আর মানুষ হিসেবে পাওয়া জন্মগত অধিকারগুলো। সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে মানুষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে এই অধিকারগুলোর নিশ্চয়তার জন্য, অধিকারগুলোর নিশ্চয়তার জন্য সবলকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৈরি হয়েছে বিচার বিভাগ।
ফলে, বিচার বিভাগের অকার্যকর অবস্থা মানুষকে রাষ্ট্র তৈরির আগের অবস্থায় নিয়ে যায়, যেখানে পুকুরের শক্তিশালী মাছটি ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে, সবল মানুষও একইভাবে দুর্বলের নিরাপত্তা আর নাগরিক অধিকারগুলো হরণ করে। বিচার বিভাগের রাজনীতিরকরণ, ঘুষ আদান-প্রদানের সংস্কৃতি, অর্থের মাধ্যমে বিচারকের রায় কিনে নেওয়ার সুযোগ, অর্থের মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করার সুযোগ বিচার ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দেয়।
লাতিন আমেরিকা আর ক্যারিবিয়ান অঞ্চলগুলোর মধ্যে কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে হন্ডুরাসে, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভেনিজুয়েলা। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে আছে এল সালভাদর, কলম্বিয়া ও ব্রাজিল। এই দেশগুলোর মধ্যে ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে বিচারহীনতার সংস্কৃতির দায় খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ তৈরি হওয়ার পর থেকেই ভেনিজুয়েলা এক দীর্ঘ সময় একনায়কতন্ত্রের অধীনে ছিল, সামরিক অভ্যুত্থান ছিল এই দেশে নিয়মিত ঘটনা। ফলে, রাষ্ট্র হিসেবে ভেনিজুয়েলা হয়ে উঠেছে কঠোর আমলাতান্ত্রিক, ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে একক কাঠামোর মধ্যে। রাজনৈতিক বিকাশ ঘটেনি, বিচারব্যবস্থাতে বিস্তার লাভ করেছে ঘুষের প্রথা, বিচার বিভাগের রাজনীতিকরণ হয়েছে বিভিন্ন শাসককে নৈতিক বৈধতা দিতে।
বর্তমানে ভেনিজুয়েলাতে প্রায় গৃহযুদ্ধের অবস্থা চলছে, রাস্তাঘাটে সশস্ত্র কিশোররা ঘুরে বেড়ায় ট্রাকে করে। প্রায় নিয়মিতভাবে এই সংঘবদ্ধ কাঠামোগুলো ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভেনিজুয়েলার রাজধানীকে বলা হয় ‘খুনের রাজধানী’। শক্তিশালী বিচারিক কাঠামো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারত, কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধগুলোও নিয়ন্ত্রণে আনার কাঠামো তৈরি করতে পারত।
তবে, বিচার প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, অপরাধের গুরু শাস্তি (Capital Punishment) আসলে অপরাধ কমাতে পারে কিনা। বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের মানুষেরা এই প্রশ্নে বরাবরই বিভাজিত থেকেছেন। এরলিচের ১৯৭৩ সালের একটি গবেষণা দেখাচ্ছে, অপরাধের কঠোর শাস্তি অপরাধ কমাতে সাহায্য করে। আবার আর্চার এবং গার্টনারের (১৯৮৪) মতে, কঠোর শাস্তি অপরাধের সংখ্যা কমানো বা বাড়ানোতে কোনো ভূমিকা রাখে না।
মাদক অর্থনীতি
কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধে যারা জড়িত থাকে, এসব কিশোরের একটা বড় অংশই উঠে আসে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে। পরিবার থেকে অধিকাংশ সময়ই তারা অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো পায় না। ফলে, এদের সবসময়ই একটি অর্থনৈতিক চাহিদা থাকে, পরিণত মানুষদের মতো। এর বাইরে, এই কিশোরদের একটি বড় অংশই বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে যায়। মাদকের চাহিদা পূরণ এবং ব্যক্তিগত অন্যান্য অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের জন্য কিশোররা অর্থনৈতিক কাজ হিসেবে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে যায়। সাধারণত, একজন পৃষ্ঠপোষকের অধীনে চলে মাদকের ব্যবসা, যিনি সাধারণভাবে কিশোরদের মাধ্যমে মাদক গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেন, মাদক আনা-নেওয়ার কাজে কিশোরদের ব্যবহার করেন।
অনেক সময় আবার প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের সংঘের অধীনেও কিশোররা কাজ করে। নিরাপদ বাহনের মাধ্যম হিসেবে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজর এড়াতে কিশোরদের ব্যবহার করা হয়। এই কিশোররা পথশিশু হতে পারে, স্কুলগামী কিশোর হতে পারে, হতে পারে শিশুশ্রমিকও। সবমিলিয়ে, মাদক অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায় কিশোর অপরাধীরা, জড়ায় নিজেদের অর্থনৈতিক প্রয়োজনে, নিজেদের মাদকের চাহিদা পূরণ করতে। মাদকের অর্থের জন্য এই কিশোররাই আবার ছিনতাই, ডাকাতি, খুনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।
জনমিতির প্রভাব
একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনমিতির অন্তর্ভুক্ত থাকে বসবাসকারীদের বয়স, তাদের লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, অর্থনৈতিক আয়, পরিবারের আকার, শিক্ষাগত যোগ্যতার মতো বিষয়গুলো। এর পাশপাশি, বসবাসকারীদের পেশা, ইন্টারনেটে অভ্যস্থতাও জনমিতির অংশ। জনমিতি একটি নির্দিষ্ট পলিটির রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করে, সামাজিক কাঠামোর স্থিতিশীলতা নির্ধারণ করে, নাগরিকদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ নির্ধারণ করে। পরোক্ষভাবে, জনমিতি পলিটির রাজনৈতিক চরিত্র নির্ধারণ করে, নির্ধারণ করে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্রও।
কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধের বিকাশের ক্ষেত্রেও জনমিতির প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। সাধারণত, যেসব অঞ্চলে শিক্ষার হার কম, অর্থনৈতিক কাঠামোতে অনিয়ম বেশি হয়, রাজনৈতিক সংস্কৃতি দুর্বল, সামাজিক কাঠামো অস্থিতিশীল, রাষ্ট্রের সামাজিক সুরক্ষা বলয় অত্যন্ত দুর্বল, সেসব দেশের কিশোরদের মধ্যে সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আবার, যেসব দেশে রাষ্ট্র নাগরিকদের মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারে না, নাগরিকদের মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণের জন্য সামন্ত বা গডফাদারদের উপর নির্ভর করতে হয়, সেসব অঞ্চলেও কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধ বেশি দেখা যায়।
১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি এক লাখ শ্বেতাঙ্গ মানুষের মধ্যে কিশোর অপরাধের সাথে যুক্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ২০১, হিস্পানিকদের মধ্যে প্রতি এক লাখে কিশোর অপরাধের ঘটনায় জড়িয়েছে ৪৬৮, কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের মধ্যে প্রতি এক লাখে এই ধরনের অপরাধে জড়িয়েছে ৯৬৮ জন। পরবর্তী দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কিশোর অপরাধের সংখ্যা কমেছে, গড়ে প্রতি এক লাখ আমেরিকানে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা ১৯৯৭ সালে যেখানে ছিল ৩৫৬ জন, ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ১৫২ জনে। কিন্তু, কিশোর অপরাধের সাথে যুক্ত কিশোরদের পরিচয়ের অনুপাত প্রায় একই রকম আছে। এখনও সবচেয়ে বেশি কিশোর অপরাধে যুক্ত হয় আফ্রিকান-আমেরিকান কিশোররা, সবচেয়ে কম জড়িত হয় শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা। প্রথাগতভাবে, শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি, নাগরিক সুবিধাগুলো তাদের কাছে বেশি সহজলভ্য, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে এরা যুক্ত হয় বেশি, রাজনৈতিক সংস্কৃতিও তুলনামূলকভাবে আফ্রিকান-আমেরিকানদের চেয়ে বেশি সংহত।
একটি রাষ্ট্রের মধ্যে অভ্যন্তরীণ এই বিভাজনকে বাদ দিলেও, অঞ্চলভিত্তিক বিভাজন কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধ বৃদ্ধির পিছনে জনমিতির প্রভাবকে ব্যাখ্যা করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ কিশোর অপরাধের ঘটনা ঘটে, আফ্রিকার সংঘাতপ্রবণ দেশগুলোতে কিশোরদের সংঘবদ্ধ অপরাধের ঘটনা ঘটে অনেক বেশি, অপরাধের ধরনও হয় তুলনামূলকভাবে সহিংস।
অপরাধ অর্থনীতি
বেকারের (১৯৬৮) গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, মানুষ অধিকাংশ সময়ই সুচিন্তিতভাবে অপরাধ করে। অপরাধ করার আগে মানুষ এর অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো বিবেচনা করে, তৈরি করে লাভ-খরচের বিশ্লেষণ। একই ধরনের সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিচ্ছবি কিশোর অপরাধীদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিশোর অপরাধীরা নিজেদের বিবেচনাতেই অপরাধে জড়াচ্ছে, অপরাধে জড়াচ্ছে লাভ-খরচের হিসাবের পরেই। লাভ-খরচের হিসাব সাধারণত হয় যেকোনো অপরাধ থেকে সম্ভাব্য আয় ও সুযোগ ব্যয়ের সমষ্টির সাথে অপরাধ করার পর আইনি কাঠামোগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সম্ভাব্য ব্যয়ের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণের ফলে।
যেসব দেশে কিশোররা অধিক হারে সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়াচ্ছে, অধিকাংশ স্থানেই রয়েছে ‘গডফাদার’ সংস্কৃতি। স্থানীয় কাঠামোতে এই গডফাদাররাই নাগরিক সুবিধাগুলো সরবরাহ করেন, চাকরির ব্যবস্থা করেন, নিয়ন্ত্রণ করেন অর্থনীতি। ফলে, কিশোররা অল্প বয়সেই অপরাধ অর্থনীতির সাথে জড়িয়ে যায়, জড়িয়ে যায় সংঘবদ্ধ অপরাধে।