Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাটাক অন টাইটানস: অদ্ভুত এক সময়ের গল্প

কল্পনা করুন এমন এক সময়ের কথা, যখন পৃথিবীর বুকে মানবসভ্যতা প্রায় বিলীন হতে চলেছে কাঠামোগতভাবে মানুষের মতো দেখতে অতিকায় নতুন এক প্রজাতির আক্রমণে। ‘টাইটান’ নামে পরিচিত নতুন এই প্রজাতিকে একদিকে যেমন হত্যা করা প্রায় অসম্ভব, অন্যদিকে তাদের পছন্দের কাজ হচ্ছে মানুষ খাওয়া! টাইটানের আক্রমণে যখন পৃথিবীর জনসংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে যেতে শুরু করে, তখন মানুষ বাধ্য হয় বড় বড় দেয়ালের আড়ালে নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে যেতে। টাইটানদের আটকানোর জন্য তৈরি করা তিনটি দেয়ালের সবচেয়ে বাইরেরটি ওয়াল মারিয়া, যেখানে বাস করে সাধারণ জনগণ। মাঝে ওয়াল রোজ। সবচেয়ে ভেতরের সর্বাধিক নিরাপদ ওয়াল সিনার ভিতর থাকেন সমাজের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা।

অ্যাটাক অন টাইটান সিরিজের একটি দৃশ্য; Image Source: IMDb

টাইটানদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আছে মিলিটারি ফোর্স। মিলিটারি ফোর্সের সার্ভে রেজিমেন্ট ছাড়া আর কারো দেয়ালের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। এমনি এক ভয়ংকর সময়ের গল্প জনপ্রিয় অ্যানিমে ‘শিনগেকি নো কিয়োজিন’ বা ‘অ্যাটাক অন টাইটান’। অ্যানিমেপ্রেমী যে কারো কাছে তার দেখা সেরা অ্যানিমের তালিকা জানতে চাইলে এই নামটি উঠে আসতে বাধ্য। প্রথম সিজনের মাত্র পঁচিশটি পর্বেই দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে অ্যানিমে সিরিজ।

অ্যানিমের কাহিনী শুরু হয় যখন প্রায় একশত বছর নিরাপদে দেয়ালের ভিতর বসবাস করার পর পঞ্চাশ মিটার উঁচু দেয়ালের একাংশ ভেঙে ফেলে দানবাকৃতির এক কলোসাল টাইটান। ভাঙা দেয়াল দিয়ে দলে দলে জনবসতিতে ঢুকে পড়ে তারা, শুরু করে তাণ্ডবলীলা। সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইরেন আর মিকাসার চোখের সামনে ইরেনের মাকে খেয়ে ফেলে এক টাইটান। সৌভাগ্যক্রমে ইরেন আর মিকাসা পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হয়। মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরেন প্রতিজ্ঞা করে টাইটানদের ধ্বংস করার। টাইটানের আক্রমণের কারণে ওয়াল মারিয়ার বাসিন্দারা ওয়াল রোজের ভিতর আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। শুরু হয় ইরেন, মিকাসা আর তাদের বন্ধু আরমিনের শরণার্থী জীবন।  

টাইটান; Image Source: IMDb

এই সিরিজের চরিত্র চিত্রায়ণ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। মিলিটারি ফোর্সের বিভিন্ন সদস্য বিভিন্ন কারণে জীবন বাজি রেখে মানবতার জন্য লড়াই করে যায়। আছে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, পরিবার, আনুগত্য। একইসাথে আছে বিশ্বাসঘাতকতা, কষ্ট আর প্রতিশোধস্পৃহা। কিছু কিছু চরিত্র উত্তেজনার মুহূর্তে কমিক রিলিফ দেয়, যেমন- পটেটো গার্ল সাশা। আবার কিছু চরিত্রের মাঝে সবাই নিজেকে খুঁজে পাবেন, যেমন- আরমিন, যে কিনা নিজের বন্ধুদের সাহায্য করতে চায়, মানবতার জন্য কাজ করতে চায়, কিন্তু ভয়ের কারণে কিছুই করে উঠতে পারে না। ভয় এমন এক জিনিস, যা আমাদের তাড়া করে বেড়ায়, আমাদের এগিয়ে যেতে দেয় না। সিরিজের এমনি আরেক বাস্তব চরিত্র অ্যানি, যে একইসাথে মানবতার পক্ষে ও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যায়। কেন? কারণ তার ক্ষত। অতীতের ক্ষতগুলো আমাদের বার বার মনে করিয়ে দেয় যে অতীত মিথ্যা ছিল না, কল্পনা ছিল না, ছিল বাস্তব সত্য।

সিরিজের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র লেভাই, কেননা সে শক্তিশালী, বুদ্ধিমান আর ক্ষমতাশালী এবং তার শুচিবায়ুগ্রস্ততার জন্য কমিক রিলিফও বটে! সিরিজের দ্বিতীয় জনপ্রিয় চরিত্র মিকাসা শক্তিশালী, প্রতিভাময়ী আর সামান্য রহস্যময়। কেন্দ্রীয় চরিত্র ইরেনের চরিত্রের উন্নয়ন নিঃসন্দেহে সিরিজের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। যে ছেলেটি টাইটানদের পরাস্ত করতে চায়, কিন্তু এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি তার।

সিরিজটির গ্রাফিক আর্ট প্রসংসার দাবি রাখে; Image Source: IMDb
সিরিজটির গ্রাফিক আর্ট প্রশংসার দাবি রাখে; Image Source: IMDb

উইট স্টুডিওতে তৈরি করা এই অ্যানিমের আর্ট, ডিজাইন আর অ্যানিমেশন দর্শকদের দেবে অন্যরকম মুগ্ধতা। ক্যারেক্টার/টাইটান ড্রয়িং থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক সবকিছুই খুব যত্নের যাথে করা। কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে চরিত্রগুলোর ফুটে ওঠা অথবা চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশে অ্যাকশন, সবকিছুই প্রশংসার দাবীদার।

চরিত্রগুলোর অতীতদৃশ্য চিত্রায়নের প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো দর্শকদের ভাবতে বাধ্য করবে আমরা প্রকৃতিকে কতটা অবহেলা করি। যুদ্ধকাজে ব্যবহৃত থ্রিডি ম্যানুভার গিয়ার দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এই গিয়ারের সাহায্য চরিত্রগুলো কোনো উঁচু স্থাপনা বা গাছ থেকে লাফিয়ে উড়ে যেতে পারে এবং নিজেদের গতির পরিবর্তন করে অন্য কোথাও থামতে পারে। এই গিয়ার অ্যাকশন দৃশ্যগুলোতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা দর্শকদের চুম্বকের মতো ডিসপ্লের সাথে আটকে রাখবে। 

থ্রিডি ম্যানুভার গিয়ারের সাহায্যে দ্রুত চলাচল; Image Source: IMDb

হিরোয়ুকি সাওয়ানোর করা এই সিরিজের হেভি অর্কেস্ট্রেটেড ইলেকট্রনিকা আর হার্ড রক ঘরানার সাউন্ডট্র্যাক সেরা অ্যানিমে সাউন্ডট্র্যাকগুলোর একটি। ‘ই.এম.এ.’ এর বোম্বাস্টিক এক্সপ্লোশান কিংবা ‘অ্যাটাক অন টাইটান’ থেকে শুরু করে ‘দ্য রিলাকটেন্ট হিরোস’ আর ‘ডোয়া’ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ট্র্যাক সবদিক থেকেই অসাধারণ। আর সূচনা সঙ্গীতের ব্যপারে তো আলাদা করে বলার কিছুই নেই।

প্রথম সিজনের দুটি ওপেনিং ট্র্যাক ‘গুরেন নো ইয়ুমিয়া’ আর ‘জিয়ু নো সুবাসা’ লিংকড হরাইজনের গাওয়া, যাতে হার্ডরকের সাথে ব্রাস ও ভোকালের কাজ শ্রোতাদের অন্য জগতে নিয়ে যাবে। এন্ডিং ট্র্যাকগুলোতেও ভালোলাগার রেশ থেকেই যায়। ইয়োকো হিকাসার গাওয়া প্রথম এন্ডিং থিম ‘উতসুকুশিকি জানকোকু না শেকাই’ এর রোলিং ব্যালাড কিংবা সিনেমা স্টাফের করা ‘গ্রেট এস্কেপ’ এর হার্ড রক দর্শকদের আবিষ্ট করে রাখবে। দ্বিতীয় সিজনের ট্র্যাকগুলো প্রথম সিরিজের মতো অসাধারণ না হলেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সিরিজের প্রত্যেকটি ট্র্যাক বার বার শুনলেও এর আবেদন শেষ হবে না।

দেয়ালের উপর মিকাসা, আরমিন, এনি, কনি, এরউইন এবং অন্যান্য সার্ভে টিমের সদস্যরা; Image Source: IMDb

হাজিমে ইসায়ামার একই নামের মাঙ্গা থেকে অনুপ্রাণিত তেতসুরো আরাকির পরিচালনায় এই অ্যানিমে সিরিজের প্রথম সিজন মুক্তি পায় ৭ এপ্রিল, ২০১৩ সালে। প্রথম সিজনেই ওতাকুদের মন জয় করে নেয়া এই সিরিজটি জাপানে ২০১৩ সালের বেস্টসেলিং অ্যানিমেগুলোর ভিতর প্রথম স্থানে ছিল। এখনো এই দশকের সেরা অ্যানিমের তালিকায় এটি ৮ম স্থান অধিকার করে রেখেছে। থার্ড ‘নিউটাইপ অ্যাওয়ার্ডস’ এ এটি জিতে নেয় বেস্ট ডিরেক্টর, বেস্ট সাউন্ডট্র্যাক, বেস্ট স্ক্রিপ্ট, বেস্ট থিমসং, টপ ফিমেল ক্যারেক্টার আর টাইটেল অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড। ২০১৩ সালে ‘অ্যানিমেশন কোবে অ্যাওয়ার্ডস’ এ বেস্ট টিভি অ্যানিমে অ্যাওয়ার্ডটিও সেবার শিনগেকি নো কিয়োজিনের ঝুলিতেই যায়। ২০১৪ সালের ‘টোকিও অ্যানিমে অ্যাওয়ার্ড’ এ বেস্ট ডিরেক্টর, বেস্ট স্ক্রিনপ্লে, বেস্ট মিউজিক সহ জিতে নেয় অ্যানিম্যাশন অফ দ্য ইয়ার পুরষ্কার। এছাড়াও ‘১৯ তম বার্ষিক অ্যাসোসিয়েশন অফ মিডিয়া ইন ডিজিটাল অ্যাওয়ার্ডস’ এ সিরিজটি ২০১৩ ডিজিটাল কন্টেন্ট অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।

অ্যাটাক অন টাইটান সিরিজের একটি দৃশ্য; Image Source: IMDb

এই সিরিজটি কেবল জাপানই নয়, বরং সারা বিশ্ব জুড়ে শক্তিশালী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে সিরিজটি বেশ সমালোচিতও হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ‘ইলেকট্রনিক টাইমস’ পত্রিকাটি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিঞ্জো আবের রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতিবাদে সিরিজটিকে একটি সামরিক প্রতিবাদমূলক বার্তা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে। আবার হংকং এর তরুণেরা মূলভূমি চীনের রূপক হিসেবে টাইটানদের তুলনা করেছে। হংকং এর মিডিয়া ভাষ্যকার ওয়াং ইয়াং তাত সিরিজ চিত্রায়ণে ইসায়ামার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সিরিজটিকে দর্শকেরা নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দুটি প্রকাশিত এবং একটি প্রকাশিতব্য অ্যানিমেটেড সিরিজ ছাড়াও শিনগেকি নো কিয়োজিনের রয়েছে অ্যানিমেটেড মুভি, লাইভ অ্যাকশন ফিল্ম এবং ভিডিও গেমস। ৩ নভেম্বর, ২০১৪ তে আমেরিকান লেখক সি. বি. সিফলস্কি জানান, অ্যাটাক অন টাইটান আর মার্ভেল কমিক্সের একটি ক্রসওভারের কাজ চলছে। ওয়ান শট ক্রসওভারটিতে স্পাইডারম্যান, দ্য এভেঞ্জার্স আর গার্ডিয়ানস অফ দ্য গ্যালাক্সিকে নিউ ইয়র্কে টাইটানদের মুখোমুখি হতে দেখা যাবে।

এককথায়, অ্যাকশনপ্রেমী অ্যানিমে-মাঙ্গা ফ্যানদের শিনগেকি নো কিয়োজিন বা অ্যাটাক অন টাইটান দেখতেই হবে। যারা ডার্ক, ফ্যান্টাসি অ্যাকশন পছন্দ করেন, তাদের জন্যও সিরিজটি দেখার সুপারিশ থাকবে।

Related Articles