Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শুভ মঙ্গল সাবধান: পুরুষের যৌন সমস্যা ও একটি প্রেমকাহিনীর উপাখ্যান

গত ১ সেপ্টেম্বর আয়ুশমান খুরানা ও ভূমি পেডনেকার অভিনীত ব্যতিক্রমধর্মী গল্প নিয়ে মুক্তি পেয়েছে বলিউডি সিনেমা শুভ মঙ্গল সাবধান। এর আগে এই জুটিকে দাম লাগাকে হাইসা সিনেমায় দেখা গিয়েছিল। সিনেমাপ্রেমীদের জন্য সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত বক্স অফিস হিট কমেডি, রোমান্স ঘরানার এ সিনেমাটির একটি রিভিউ দেয়া হলো।

কাহিনী

নায়ক-নায়িকা অর্থাৎ মুদিত ও সুগন্ধার প্রথম সাক্ষাৎ হয় এটিএম বুথের সামনে থাকা অপেক্ষমান লাইনে। সাক্ষাৎ বলতে চোখাচোখি আর কী। এরপর মুদিত যখন সুগন্ধার সাথে প্রথমবার কথা বলতে যায়, তখন রাস্তায় খেলা দেখাতে থাকা এক ভাল্লুকের খপ্পরে পড়ে! কথা আর বলা হয় না। বাসায় ফিরে ওর মা সব শুনে মেয়ের পরিবারের কাছে অনলাইনে প্রস্তাব পাঠাতে বলেন। দুই পরিবার ভিডিও কলের মাধ্যমে অনলাইনে প্রাথমিক দেখা-সাক্ষাৎ সেরে নেয় এবং পছন্দ হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে অ্যাংগেজমেন্টও হয় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

অনলাইন ভিডিও কলের মাধ্যমে পাত্র-পাত্রীর পরিবার প্রাথমিক দেখা-সাক্ষাৎ করছে; source: Eros

কিন্তু সুগন্ধার খুব ইচ্ছে, বিয়ের আগে কিছুদিন লুকোচুরি প্রেম করবে। রোমান্স ও অ্যাডভেঞ্চার করবে হবু বরের সাথে, তারপর বিয়ে। মোদিতেরও আপত্তি নেই এতে। শুরু হয় তাদের প্রেমপর্ব। এখানে-সেখানে ঘোরাঘুরি, হাসি-ঠাট্টা, খুনসুটি সব চলে।
একদিন সুগন্ধার পরিবার বিয়ের শপিং করতে বেরিয়ে যায় সারাদিনের জন্য। সন্ধ্যায় মুদিত বাইকে করে সুগন্ধাকে তার বাসায় নামিয়ে দিতে আসে। সুগন্ধা বাসায় চলে যাওয়ার একটু পর দরজায় নক্ করে মুদিত। সুগন্ধা অবাক হয়। মুদিত জানায় তার বাইক স্টার্ট নিচ্ছে না। ইঞ্জিন গরম হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। বাসায় মুদিত ও সুগন্ধা একা হওয়ার সুবাদে দু’জন কাছাকাছি হয় এবং একপর্যায়ে উত্তেজিত মুদিত চলে যায় বাথরুমে। সেখান থেকে বেরিয়ে সে জানায়, আজ তার সমস্যা হচ্ছে, জেন্টস প্রবলেম। রোমান্সপর্বের অনাকাঙ্খিতভাবে ইতি ঘটে।
এরপর মুদিতকে চা-বিস্কুট খেতে দিয়ে সুগন্ধা তার সমস্যা জানতে চেয়ে চাপ দেয়। মুদিত জানাতে চায় না। অবশেষে সুগন্ধার প্রশ্নের জবাব দিতে চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে ধরে রাখে মুদিত। ভেজা বিস্কুটের অর্ধেক ভেঙ্গে পড়ে যায় কাপের ভেতরে। এভাবে মুদিত ইঙ্গিতে সুগন্ধাকে নিজের সমস্যাটা জানিয়ে দেয়।

বিস্কুট ও চায়ের মাধ্যমে বুদ্ধিদীপ্ত মেটাফোরের ব্যবহার; source: Eros

সিনেমা নতুন মোড় নিতে শুরু হয় এখান থেকে। এরপর দেখা যায় মুদিত ডাক্তারি থেকে শুরু করে কবিরাজি পর্যন্ত সবধরনের পন্থা অবলম্বন করে নিজের সমস্যা দূর করার জন্য। অন্যদিকে সুগন্ধা মুদিতকে ভরসা দেয় এই বলে যে, শারীরিক সম্পর্কই সব নয়। সেটা ছাড়াও বাঁচা সম্ভব। ওরা জীবনটাকে অন্যভাবে উপভোগ করবে। বিভিন্ন জায়গা ঘুরবে, ফিরবে। মুদিতের যৌন অক্ষমতা ওর জন্য কোনো সমস্যা নয়। সুগন্ধার বিয়েতে আপত্তি নেই।
কিন্তু টিপিক্যাল ভারতীয় পুরুষ মুদিতের পুরুষত্বে আঘাত লাগে। সে নিজের ইগোর কাছে হেরে যায়। সুগন্ধার ভালবাসাকে তুচ্ছ করে বিয়ে করবে না বলে জানায়। তারপর? বাকিটা দর্শককে দেখে নিতে হবে।

রিভিউ

পুরুষের যৌন সমস্যা নিঃসন্দেহে একটি স্পর্শকাতর ইস্যু, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে তো বটেই। এ ধরনের একটি ট্যাবুকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সেজন্য পরিচালককে বাহবা দিতে হয়।
মূল প্লটটি বেশ ভালো এবং মজার। এমন একটি সমস্যা নিয়ে সিনেমাটা এগিয়েছে, যেখানে পাত্র-পাত্রী দু’জনই চাচ্ছে সমস্যাটির কথা তৃতীয় কেউ না জানুক। অন্যদিকে বিপদ হলো, তৃতীয় কেউ না জানলে সমস্যার সমাধানও সম্ভব হচ্ছে না। চিত্রনাট্যকার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সুগন্ধার চরিত্রটি নির্মাণের ক্ষেত্রে। শক্ত মনোবলের অধিকারী এক ভারতীয় নারী সুগন্ধা। যার কাছে ভালোবাসাটাই মুখ্য, যৌন চাহিদা নয়। মুদিতকে সবসময় সাপোর্ট দিলেও, সে যখনই ভুল বকেছে তখনই প্রতিবাদ করেছে সুগন্ধা; এর মাধ্যমে একজন সচেতন আদর্শ নারীর রূপ প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে মুদিত একজন টিপিক্যাল ভারতীয় পুরুষ। তার মধ্যে তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই। ভূমি পেডনেকার দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সুগন্ধার চরিত্রটি। আয়ুশমান খুরানাও তাল মিলিয়েছেন যথাসাধ্য।

রোমান্টিক খুনসুটিতে দর্শক মাতিয়েছে আয়ুশ-ভূমির জুটি; source: Eros

সিনেমার প্রথমার্ধ হাসি-ঠাট্টা, রোমান্স ও মেটাফোরের মাধ্যমে সুন্দরভাবে কেটে গেলেও, তালগোল পাকিয়ে যায় শেষার্ধে, দোষটা চিত্রনাট্যে। প্রথমার্ধে হাসি-ঠাট্টার জন্য অনেক সময় ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু সিনেমাটি যে সমস্যাটিকে কেন্দ্র করে নির্মিত, সেখানে যথাযথভাবে নজর দেয়া হয়নি। এ ধরনের স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে রচিত চিত্রনাট্যে আরও অনেক কনটেন্ট প্রয়োজন ছিল। সেই সাথে প্রথমার্ধে গল্পের যথাযথ বিকাশ না হওয়ার প্রভাবটা শেষার্ধে খুব বাজেভাবে এসে পড়েছে। বিক্ষিপ্ত দৃশ্য, সস্তা কৌতুকে ম্লান হয়ে গেছে প্রথমার্ধের বুদ্ধিদীপ্ত মেটাফোরগুলো।
ক্লাইম্যাক্সে তো লেজে-গোবরে অবস্থা। মুদিতের সাবেক প্রেমিকাকে নিয়ে অতিরঞ্জিত বেড সিন, টিপিক্যাল ড্রামা, মুদিতের সাথে দুই পরিবারের কর্তার দ্বন্দ্ব, মাত্রাতিরিক্ত ড্রামাটিক সংলাপ, জোরপূর্বক ঢোকানো একটি অতিথি চরিত্র ইত্যাদি দোষে দুষ্ট ক্লাইম্যাক্সের কারণে প্রথমার্ধের মুগ্ধতা দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে।
প্লট ভালো হওয়া সত্ত্বেও চিত্রনাট্যের দুর্বলতা কারণে বাজে প্রভাব পড়েছে অভিনয়েও। চিত্রনাট্যকার শুধু সুগন্ধা ও মুদিতের রসায়নের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় মূল সমস্যা কেন্দ্রিক কাজ করতে পারেননি। সুগন্ধা ও মুদিত চরিত্র দুটো নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেও, পার্শ্ব-চরিত্রগুলো ঘোলাটে ছিল। অদ্ভুত কার্যকলাপ ও সংলাপে তাদের কারও বৈশিষ্ট্য পরিষ্কার হয়নি পুরো সিনেমা শেষ হওয়ার পরও। ফলে দর্শকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেনি তারা।

পুরো সিনেমা জুড়ে নিজের অভিনয় নৈপুণ্য দেখিয়েছেন ভূমি পেডনেকার; source: Eros

সব মিলিয়ে, শুভ মঙ্গল সাবধান একটি সুস্থধারার কাহিনি নির্ভর সিনেমা। যেখানে আইটেম গান কিংবা অবাস্তব মারপিট দেখানোর বদলে একটি গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে। ভালোবাসা ঠিক থাকলে শারীরিক সম্পর্ক/যৌনতা কোনো সমস্যা নয়- এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে দর্শকদের মাঝে; যেটি খুবই ইতিবাচক। চিত্রনাট্যে ত্রুটি ও পরিচালনায় কিছুটা অদক্ষতার ছাপ চোখে পড়লেও, এটি একটি দেখার মতো বিনোদনধর্মী রুচিশীল চলচ্চিত্র। ত্রুটি কম হলে কিংবা মূল সমস্যা নিয়ে আরও গভীরে কাজ করলে হয়তো সিনেমাটি সামাজিক সচেতনার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হতে পারতো। তবে ভূমি পেডনেকারের অভিনয় ও আয়ুশমান খুরানার সাথে তার রসায়ন দর্শক উপভোগ করবেন, সেটা নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায়।

মুভি প্রোফাইল

নাম: শুভ মঙ্গল সাবধান

ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট

অ্যালবামে মোট গান সংখ্যা: ৫টি

বাজেট: ১০ কোটি রূপি

বক্স অফিস কালেকশন: ৪৯.২২ কোটি রূপি

পরিচালনা: আর.এস প্রসন্ন

প্রযোজনা: আনন্দ এল রাই, কৃষিকা লুল্লা

চিত্রনাট্য: হৃতেশ কেওয়ালা

গল্প: আর. এস প্রসন্ন

মূল ভূমিকায়: আয়ুশমান খুরানা, ভূমি পেডনেকার

সঙ্গীত: তানিস্ক-ভায়উ

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান: কালার ইয়োলো প্রডাকশন, ইরস ইন্টারন্যাশনাল, ওয়াই নট স্টুডিওজ

মুক্তির তারিখ: ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

দেশ: ভারত

যে সিনেমা থেকে রিমেক করা হয়েছে: কাল্যায়ানা সাম্যায়াল সাদহাম (২০১৩) (তামিল)

শুভ মঙ্গল সাবধান-এর অফিসিয়াল ট্রেইলার

ফিচার ইমেজ- movizark.files.wordpress.com

Related Articles