Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভবিষ্যতের পৃথিবীতে এক বেঁচে থাকার গল্প: নেটফ্লিক্সের অল্টার্ড কার্বন

প্রচণ্ড ধনী একজনের মৃত্যু রহস্যের কিনারা করতে হবে। আর সে রহস্যের জট খুলবার জন্য শতাব্দীর ঘুম শেষে জাগিয়ে তোলা হলো গল্পের নায়ককে। কে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন এ কেস সমাধান করতে? খুন হওয়া সেই ধনী ব্যক্তি নিজেই! অদ্ভুত লাগছে শুনতে? এমনই এক ভবিষ্যতের পৃথিবীর কাহিনী নিয়ে এসেছে নেটফ্লিক্স, সিরিজটির নাম Altered Carbon; একই নামের ২০০২ সালের উপন্যাস থেকে নির্মিত।

সিরিজের লোগো; Source: Netflix

ঘটনা যে সময়ের (আজ থেকে ৩৫০ বছর পরের) তখন মানুষ ইতিমধ্যে আন্তঃনাক্ষত্রিক ভ্রমণ করা শুরু করে দিয়েছে। যদিও সময় পরিভ্রমণ প্রযুক্তি তখনো উদ্ভাবিত হয়নি। প্রায় সময়ই এক নক্ষত্রের গ্রহের সাথে যুদ্ধ লাগে আরেক নক্ষত্রের। মানুষে মানুষেই যুদ্ধ, কারণ গ্যালাক্সি জুড়ে ছড়িয়ে পরেছে তাদের কলোনি।

স্থায়ী মৃত্যু এখন আর আতংকের কিছু নয়। কারণ সবারই মেরুদণ্ডের ওপরের দিকে ‘স্ট্যাক’ নামক ক্ষুদে এক ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র লাগানো রয়েছে। সেটার কাজ হলো জীবন্ত মানুষটির সব স্মৃতি আর অনুভূতি, তার ভালো লাগা, তার ভালোবাসাগুলো সংরক্ষণ করে রাখা। ‘মৃত্যু’ বলতে তখন কেবল দেহ ধ্বংস হয়ে যাওয়াকেই বোঝায়। কারণ, কেউ মারা গেলে সেই দেহ বাদ দিয়ে নতুন এক দেহে সেই ‘স্ট্যাক’ (Stack) লাগিয়ে দেয়া মাত্রই ফিরে আসবে তার সব স্মৃতি, নতুন দেহে পুরাতন সেই মানুষ! একই অস্তিত্ব। নতুন দেহকে ডাকা হয় ‘স্লিভ’ (Sleeve) বলে। আর এ নতুন দেহে নিজেকে স্থানান্তর করবার প্রক্রিয়াকে ‘রিস্লিভিং’ (Resleeving) বলে। যাদের টাকা অনেক, তারা তরুণ দেহ থাকতে থাকতেই প্রবেশ করে নতুন দেহে, আর যাদের টাকা কম তারা পুরো বুড়ো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, এরপর জীবনের সঞ্চয় দিয়ে আরেক দেহে প্রবেশ করে। যার যত টাকা সে তত সুন্দর স্লিভ কিনতে পারবে। ধনী ব্যক্তিরা নিজেদের জন্য অনেকগুলো স্লিভ প্রস্তুত রাখে, বেঁচে থাকে শত শত বছর, কারো আবার রয়েছে একাধিক ক্লোন। বাইবেল অনুযায়ী, হযরত ইদ্রিস (আ) এর পুত্র মেথুসেলাহ (מְתוּשֶׁלַח) বেঁচে ছিলেন ৯৬৯ বছর! সেই নামকে সংক্ষেপ করে শত শত বছর বেঁচে থাকা ধনীদের ডাকা হয় ‘মেথ’ (Meth)।

নায়ক তাকেশি কোভাচ; Source: IMDb

আন্তঃনাক্ষত্রিক যুদ্ধের কথা তো কিছু আগেই বলা হলো। এ যুদ্ধে যাদের পাঠানো হত সে বিশেষ সৈন্যদের নাম ‘এনভয়’ (Envoy)। এত দূরের জায়গায় যেতে যেতে সেনারা বুড়িয়ে যাবে, তাছাড়া মারা গেলে এত দিনের পরিশ্রম করে শেখা স্কিলগুলোও হারিয়ে যাবে। নতুন দেহে প্রবেশের পর পুরনো স্কিল ফিরে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এজন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয় এনভয়দের। তাদের স্মৃতি ডিজিটাল ডাউনলোড করে যেকোনো স্লিভে প্রবেশ করালেই তারা অতিমানবীয় ক্ষমতা দেখাতে পারে।

সিরিজের একটি দৃশ্য; Source: IMDb

কিন্তু এই পুরো জন্ম-জন্মান্তর বেঁচে থাকাতে বাধ সাধে ধার্মিকেরা। ক্যাথলিক গোষ্ঠী বেঁকে বসে এই বলে যে, মৃত্যুর পর আত্মার ঠিকানা হলো স্বর্গ, মোটেও অন্য দেহ নয়! তাই তারা কখনো রিস্লিভিং করবেই না। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান রাখা হয়, তাদেরকে নতুন স্লিভে স্থানান্তর করা হয় না। কিন্তু বিধি বাম, সন্ত্রাসীরা বুঝতে পারে, এটাই হলো মোক্ষম সুযোগ খুন-খারাবির। অন্য কোনো মানুষকে খুন করলে সে নতুন দেহে যাওয়া মাত্রই বলে দিতে পারবে কে তার পুরনো দেহকে খুন করেছিল, কারণ তার স্ট্যাকে তো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সব স্মৃতি রক্ষিত। কিন্তু ক্যাথলিকদের কী হবে? তাদেরকে খুন করলে তো তাদের ফিরিয়ে আনা যাবে না, আর ধরাও পড়বে না খুনীরা। এই সুযোগ কাজে লাগালো খুনীরা।

সিরিজের একটি দৃশ্য; Source: IMDb

এরকমই একটা খুনের সুরাহা করবার জন্য খুব দরকার পড়ল মৃত ক্যাথলিক নারীকে অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও একটি স্লিভে আনার, যেন সে খুনীর নামটা অন্তত বলতে পারে। জাতিসংঘ কি এ বিল পাশ করবে?

কাছাকাছি সময়ে সুদূর ভবিষ্যতের স্যান ফ্রান্সিস্কো (তখন ‘বে সিটি‘ নামে পরিচিত) নগরীর ধনী মেথ লরেন্স ব্যানক্রফট মারা যান। ঠিক পরপরই তিনি ফিরে আসেন, একই চেহারার আরেকটি স্লিভে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, তিনি একদমই মনে করতে পারছেন না কে তাকে খুন করল, তা-ও নিজের বাসায়! নিজের একটি কক্ষে!

অল্টার্ড কার্বনের একটি দৃশ্য; Source: IMDb

কে থাকে খুন করবে? কেন? এর সাথে কি জাতিসংঘের যোগসাজশ আছে? এই খুন রহস্য সমাধান করবার জন্য ২৫০ বছর পর জেগে তোলা হলো তাকেশি কোভাচ (Takeshi Kovacs) নামের এক এনভয়কে, মানে নতুন স্লিভে। এই স্লিভে আগে ছিল যে লোকটি ছিল সে ছিল এক পুলিশ অফিসার, যার নাম ইলায়াস রাইকার (Elias Ryker), কিন্তু কোনো এক ষড়যন্ত্রে পরে তাকে হারাতে হয় এ দেহ। এজন্য নতুন আসা কোভাচের সাথে শীঘ্রই ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায় রাইকারের গার্লফ্রেন্ড ক্রিস্টিন ওর্তেগার। কিন্তু কোভাচ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি, একটি খুনের রহস্য সমাধান করতে গিয়ে তার এনভয় স্কিলের এত ব্যবহার লেগে যাবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত কি সে পারবে রহস্য উদঘাটন করতে? কাহিনীর পরতে পরতে আমরা চমকের দেখা পাই, ফিরে দেখি কোভাচের অতীত জীবনের দিকে। অতীত আর ভবিষ্যৎ যেখানে মিলে একাকার, আর দর্শক অবাক তাকিয়ে থাকে! এরকমই কি হবে ভবিষ্যতের ডিস্টোপিয়ান পৃথিবী?

ছোটবেলায় নায়ক ও তার বোন; Source: IMDb

ষাট মিনিট করে ১০ পর্বের এ নেটফ্লিক্স সিরিজটি রিচার্ড কে মরগান রচিত ২০০২ সালে প্রকাশিত সিরিজের প্রথম বই অল্টার্ড কার্বন অনুযায়ী নির্মিত। উপন্যাসটি ২০০৩ সালে Philip K. Dick Award জিতে নেয়। ব্যাপক সাফল্যের পর তিনি সিকুয়েল হিসেবে ২০০৩ সালে প্রকাশ করেন ‘ব্রোকেন অ্যাঞ্জেলস’ (Broken Angels) এবং ২০০৫ সালে প্রকাশ করেন শেষ বই ‘ওকেন ফিউরিজ’ (Woken Furies)।

নায়িকা ক্রিস্টিন ওর্তেগা; Source: IMDb

সিরিজটির বিষয়ে নেটফ্লিক্স একদমই হতাশ করেনি। চমৎকার সাউন্ডট্র্যাক তো আছেই, তার চেয়ে বড় কথা এই সায়েন্স ফিকশন সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলবার জন্য একটি দৃশ্যও বাদ যায়নি যেখানে দুর্দান্ত কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কাজ ছিল না! প্রত্যেকের অভিনয় ছিল অসাধারণ। সুইসাইড স্কোয়াড এবং হাউজ অফ কার্ডস খ্যাত Joel Kinnaman রয়েছেন তাকেশি কোভাচের চরিত্রে। এছাড়া ওর্তেগার চরিত্রে মার্থা হিগারেদা এবং ব্যানক্রফটের চরিত্রে আছেন জেমস পিওরফয়। সিরিজের প্রত্যেক পর্বের নাম রাখা হয়েছে ৪০ কি ৫০ এর দশকের জনপ্রিয় মুভিগুলোর প্রতি রেফারেন্স হিসেবে।

নিঃসন্দেহে র‍্যাভেন ও হোটেলের এআই ‘পো’ আসলে এডগার অ্যালেন পোর প্রতি একটি রেফারেন্স; Source: IMDb

সিরিজের ট্যাগলাইন হলো “No body lives forever“, কোনো দেহই বাঁচে না চিরকাল। অমরত্ব নিয়ে করা একটি সিরিজের জন্য বেশ মানানসই চরণ বটে (লক্ষণীয় যে, Nobody লেখা হয়নি ট্যাগলাইনে! অর্থাৎ ‘কেউই বাঁচে না চিরকাল’ এটা কিন্তু বলা হয়নি)। সিরিজের শুরুটা কারো কারো কাছে অদ্ভুত ঠেকতে পারে, খুব তাড়াতাড়ি অনেক কিছু হয়ে যেতে থাকে। কিন্তু একটু সয়ে আসতেই আর অতীতের ঘটনাগুলো পরিষ্কার হতে শুরু করলেই দেখা যাবে সিরিজটি আসলে খুবই চমৎকার! ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ১৮+ রেটেড সিরিজটি।

এখন কেবল পরের সিজনের অপেক্ষা। আইএমডিবি-তে ১০ এ ৮.৫ রেটিং আর রটেন টমেটোজে ৯২% অডিয়েন্স স্কোর পাওয়া সিরিজটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

ফিচার ইমেজ: DeviantArt

Related Articles